২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২২ শাবান ১৪৪৬
`

ভারতের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি

-


ভারত উপমহাদেশ কখনো একক একটি রাষ্ট্র কাঠামো হিসেবে ছিল না। ইতিহাসের পরিক্রমায় বিভিন্ন রাজ্য বা সাম্রাজ্য গঠিত হয়েছে; আবার কারো দ্বারা বিজিত হয়ে ভৌগোলিক মানচিত্র পরিবর্তন হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা ১৯৪৭ সালে চলে যাওয়ার সময়ও উপমহাদেশে এক হাজারের বেশি প্রিন্সলি রাজ্য আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিরাজ করছিল। এর পরে ভারত ও পাকিস্তান জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। পঁচিশ বছর পরে বাংলাদেশ আরেকটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্মলাভ করে। সুতরাং যারা বলে যে, ভারতকে ভাগ করা হয়েছে তা ইতিহাসের সঠিক তথ্য নয়। এর ভাঙা-গড়ার খেলা সব সময় চালু ছিল।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা প্রায় ২০০ বছর ভারতবর্ষে রাজত্ব করার পর ১৯৪৭ সালে স্বাধীন দুটো রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। এর আরো আগে থেকে ব্রিটিশরা ক্রমান্বয়ে সাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা প্রত্যর্পণ করা শুরু করেছিল। ১৯৩৫ সালের ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্টে’ ভারতের ছোট ছোট দেশীয় রাজ্যগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছিল, ‘তাদের পদমর্যাদা ও স্বাভাবিক কার্যাবলি রাজ্যগুলোর অনুমতি ব্যতীত স্বাধীন ভারতের কাছে হস্তান্তর করা যাবে না।’ এ ছাড়া ১৯৪৭ সালের ১৬ জুলাই ইংল্যান্ডে ভারতবিষয়ক সচিব লর্ড লিস্টোয়েল হাউজ অব লর্ডসে বলেছিলেন, ‘এখন থেকে ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলো থেকে ব্রিটিশরাজ প্রতিনিধি প্রত্যাহার এবং তার দাফতরিক কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করা হলো। দেশীয় রাজ্যগুলো ভারত বা পাকিস্তান ডোমিনিয়নের কোনটিতে যোগ দেবে, অথবা একক স্বাধীন সত্তা বজায় রাখবে, তা সম্পূর্ণ তাদের স্বাধীন ইচ্ছাধীন।’ তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলিও পার্লামেন্টে একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু ভারত শুরু থেকে ব্রিটিশরাজের দেয়া ওই শর্তকে নির্লজ্জভাবে উপেক্ষা করতে থাকে। ফলে ভারতের হাতে প্রথমে হায়দরাবাদ, জম্মু-কাশ্মির এবং পরে সিকিম প্রভৃতি দেশীয় রাজ্যগুলো দিল্লির আগ্রাসনের শিকার হয়। তারা স্বাধীনতা হারাতে বাধ্য হয়।

১৯৪৭ সালের ভারত শাসন আইন কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে হায়দরাবাদের ওপর ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। সেদিন থেকে সেটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে। ভারতবর্ষের দাক্ষিণাত্যের মালভূমির মধ্যভাগে ৮২,৬৯৮ বর্গমাইল আয়তনের নিজাম শাসিত রাজ্যের নাম ছিল হায়দরাবাদ। এর ইতিহাস অনেক সুপ্রাচীন। এখানকার শাসক নিজাম ছিলেন তখনকার বিশে^ অন্যতম ধনী ব্যক্তি। অনেক কিছু লুণ্ঠিত হওয়ার পরেও ভারতের হায়দরাবাদ শহরে অবস্থিত নিজাম মিউজিয়াম ও নিজাম জুয়েলারি মিউজিয়ামে গেলে এখনো তাদের ঐতিহ্য ও প্রতিপত্তির স্মারকচিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। কংগ্রেস নেতারা হায়দরাবাদের স্বাধীন সত্তাকে মেনে নিতে চায়নি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরু বলেছিলেন, ‘যদি এবং যখন প্রয়োজন মনে করব, হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করা হবে।’ এর প্রতিবাদ করে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইস্টন চার্চিল পার্লামেন্টে মন্তব্য করেছিলেন, ‘নেহরুর ভীতি প্রদর্শনের ভাষা অনেকটা হিটলারের ভাষার অনুরূপ যা তিনি অস্ট্রিয়াকে ধ্বংস করার সময় ব্যবহার করেছিলেন।’ যাই হোক, ১৯৪৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ঠিকই সেনা অভিযান চালিয়ে ভারত হায়দরাবাদ দখল করে নেয়। হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করে, লুটতরাজ, ধর্ষণ ইত্যাদি চালিয়ে সেখানে তারা বিভীষিকার রাজত্ব কায়েম করে। একই কৌশলে জুনাগড়, মানভাদর, গোয়া প্রভৃতি ছোট ছোট রাজ্যগুলোকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভারতের সাথে অঙ্গীভূত করা হয়।

সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে কাশ্মির নিয়ে। কাশ্মির ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা। স্বাভাবিকভাবে পাকিস্তানের সাথে যোগ দেয়ার কথা। কিন্তু সেখানকার শাসক ছিলেন হিন্দু রাজা হরিসিং। তিনি চাইলেন ভারত বা পাকিস্তান কোনোটিতে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকবেন। কিন্তু কাশ্মিরের জন্য জওয়াহেরলাল নেহরুর ছিল বিশেষ আকর্ষণ। কারণ তার জন্মস্থান ছিল কাশ্মির। ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন রাজা ষষ্ঠ জর্জের কাছে পাঠানো এক রিপোর্টে লিখেছিলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, কাশ্মির উপত্যকার অধিবাসীদের মধ্যে মুসলমানরা সংখ্যাধিক্য হওয়ায় তারা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হওয়ার মত দেবে।’ কিন্তু কাশ্মির নিয়ে মাউন্ট ব্যাটেনকে নেহরু বললেন, ‘আপনাদের কুইন মেরির হৃদয়াসনে ক্যালের যে স্থান, তেমনি আমার মনের সবটুকুজুড়ে আছে কাশ্মির।’ ল্যারি কলিন্স ও ডোমিনিক লাপিয়ের ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘নেহরুর মনের রক্ষণশীলতা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিপরিষদকে একটি বিশেষ শর্তারোপ করতে রাজি করিয়েছিলেন মাউন্ট ব্যাটেন। নেহরুকে তিনি বোঝালেন যে, ভারতের সাথে কাশ্মিরের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারটি সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে মেনে নেয়া হোক। তবে এ অস্থায়ী ব্যবস্থাটি তখন পাকাপাকি হবে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হবে। গণভোটের মাধ্যমে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এ অন্তর্ভুক্তি সমর্থন করবে।’ এতদসত্ত্বেও মাউন্ট ব্যাটেন বুঝেছিলেন যে, কাশ্মিরে ভারত সরকারের সামরিক হস্তক্ষেপ আসন্ন। নেহরু গভর্নর জেনারেলকে অনুরোধ করেন সামরিক বাহিনী দিয়ে সহায়তা করতে। কিন্তু তিনি নেহরুকে জানিয়ে দেন, সরকারিভাবে কাশ্মির রাজ্যকে ভারতের সাথে অন্তর্ভুক্তির ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত সেখানে কোনো সেনাবাহিনী পাঠানো যাবে না। এদিকে মহারাজা হরিসিং কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের চরম বিরোধ সম্পর্কে আঁচ করতে পেরে জম্মুতে চলে যান। এদিকে নেহরু কয়েকজন সামরিক অফিসারসহ ভিপি মেননকে পাঠান হরিসিংয়ের কাছে।

ছলেবলে কৌশলে তারা রাজার কাছ থেকে একটি কাগজ সই করিয়ে নেন। আনন্দে বলে ওঠেন : ‘কাশ্মির এখন আমাদের। কাগজটি দেখিয়ে বলেন, এটাই তার প্রমাণ। হারামজাদাটি শেষমেশ দস্তখত করে দিয়েছে এটায়। একবার যখন কাশ্মির পেলাম তখন প্রাণ থাকতে একে আর ছাড়ছি না।’ যাই হোক, সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে ভারত কাশ্মির দখল করে নিলো এবং এখানকার মুসলিম জনগোষ্ঠীকে পদানত রাখতে যুগ যুগ ধরে নির্মম নির্যাতন চালানোর নীতিকৌশল গ্রহণ করল। বিষয়টি শেষে জাতিসঙ্ঘ পর্যন্ত গড়ায়। ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ গ্রন্থের লেখকদ্বয় বলেন : ‘শেষে জাতিসঙ্ঘ পর্যন্ত গড়াল দু’তরফ একেবারে। যে মুমূর্ষু মোগল সম্রাট মৃত্যুশয্যায় শুয়ে এ মনোরম পাহাড়ি রাজ্যটির জন্য হা-হুতাশ করেছিলেন, তার ভাগ্য নির্ধারণের দায় গিয়ে পড়ল জাতিসঙ্ঘের হাতে। বার্লিন, প্যালেস্টাইন এবং কোরিয়ার অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর সাথে কাশ্মিরও একটি ইস্যু হয়ে রইল জাতিসঙ্ঘের আলোচনা মঞ্চে। গণভোটের প্রস্তাবটিতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নেহরুর অনুমোদন আদায় করেছিলেন মাউন্ট ব্যাটেন। এখন সেটিও নির্বাসিত হলো এবং ভুলে যাওয়া অনেক অনেক সাধু প্রস্তাবের সাথে এরও কোনো সদগতি হলো না। ফলে ১৯৪৮ সালের যুদ্ধরেখা বরাবর দু’টুকরো হয়ে রইল কাশ্মির। একদিকে পাহাড়ি উপত্যকা যা রইল ভারতের হাতে, অন্যদিকে গিলগিটকে ঘিরে কাশ্মিরের উত্তরাংশ চলে গেল পাকিস্তানের হাতে। পরবর্তীকালে কাশ্মিরের এই বিতর্কিত অধিকারটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধের কারণ হয়ে ওঠে। দুই রাষ্ট্রের সম্প্রীতির পথে এক দুর্লঙ্ঘ বাধার প্রাচীর হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন।’ ঠিকই কাশ্মির নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বারবার যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয়েছে। সর্বদাই সীমান্তে উত্তেজনা লেগে থাকে।

বিষয়টি নিয়ে ভারত প্রথমে নিরাপত্তা পরিষদে গিয়েছিল। দিল্লির দাবি ছিল, কাশ্মির ভারতের অংশ। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করে গণভোটের মাধ্যমে সেখানকার জনগণের মতামত গ্রহণের প্রস্তাব গ্রহণ করে। ১৯৪৭ সালের পর কয়েকবার একই সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ভারত তার প্রতি কর্ণপাত করছে না। বরং কাশ্মিরের মুসলিম জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের বিষয়টি উপেক্ষা করে সেখানে সামরিক শক্তির জোরে শাসন করছে।
শুধু হায়দরাবাদ ও কাশ্মির নয়। ভারতের অন্যান্য ছোটখাটো রাজ্যের মধ্যে আরেকটি হচ্ছে সিকিম। এ পাহাড়ি স্বাধীন রাজ্যটিও দখলে নিতে ভারত ১৯৪৭ সাল থেকে ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে। সেখানকার কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছিল যারা দেশটিতে এমন বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করে ফলে ধর্মরাজা চেগিয়ালের পক্ষে রাজ্য শাসন কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি ভারতের পরামর্শে তথাকথিত গণতন্ত্রের কথা বলে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচিত সেই সরকারপ্রধান কাজী লেন্দুপ দর্জি ১৯৭৫ সালে ১০ এপ্রিল সিকিম পার্লামেন্টে এক প্রস্তাব পাশ করে চেগিয়ালের রাজার পদ বিলোপ করে। একইসাথে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৫ সালের ২৬ এপ্রিল ভারতীয় পার্লামেন্টে সংবিধানের ৩৮তম সংশোধনী এনে স্বাধীন সিকিমকে ভারতের ২২তম রাজ্য হিসেবে গ্রাস করে।

শুধু এখানে শেষ নয়-ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করার উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করে দুর্বল করে দেয়া। ভারতের কংগ্রেস নেতা বল্লভ ভাই প্যাটেল বলেছিলেন, ‘পূর্ব বাংলা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কোনোভাবে অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারবে না, আজ হোক কাল হোক আমাদের সাথে তাদের মিলতে হবে।’ বস্তুত ভারত পাকিস্তানকে দুর্বল করার লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনা নেয়। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ওপর সে পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব অর্পিত হয়।’ (মাসুদুল হক, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ‘র’ এবং সিআইএ)
শ্রীলঙ্কার তামিল বিদ্রোহেও ভারত ব্যাপক সহায়তা দিয়েছিল দেশটিকে কাবু করতে। নেপালেও ভারতের আশীর্বাদপুষ্ট রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে দেশটিতে তার স্বার্থ ও আধিপত্য রক্ষার কাজ চলে আসছে। বহুদিন ধরে ভারতীয় শোষণের বিরুদ্ধে এক পর্যায়ে নেপালিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এখনো নেপালের বেশির ভাগ মানুষ ভারতবিরোধী মানসিকতা পোষণ করেন। বাংলাদেশের সাথে ভারতের জটিল সম্পর্কের কথা সব নাগরিক জানে। ওই দিকে মালদ্বীপের সাথেও ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। পাকিস্তান তো ভারতের শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য।

উপরে উল্লিখিত কয়েকটি ঘটনা থেকে এটা পরিষ্কার যে, ভারত ১৯৪৭ সাল থেকে একটি আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আসছে যার মূল কথা হলো ছলেবলে কৌশলে বৃহত্তর ভারত গড়ে তুলতে সম্প্রসারণবাদী ভূমিকা পালন করা। স্বাধীন ভারতের পররাষ্ট্রনীতির জনক হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরু। তিনি স্বপ্ন দেখতেন প্রশান্ত মহাসাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত সব এলাকা একদিন ভারতের একচ্ছত্র দখলে চলে আসবে। তখন স্বাধীন রাষ্ট্রসত্তা নিয়ে কোনো সংখ্যালঘু জাতি টিকে থাকবে না। মোহন চাঁদ করম চাঁদগান্ধী ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিকে এক ও অভিন্ন বলে মনে করতেন। ভারত মূলত কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে উল্লিখিত পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে। এ নীতির মূল কথা হলো : সব প্রতিবেশীকে শত্রুজ্ঞান করতে হবে। শত্রুরাষ্ট্রের পরবর্তী দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। ভারতের প্রতিবেশী একটি দেশের সাথেও তার সুসম্পর্ক নেই।

তবে প্রতিবেশীসংলগ্ন অন্য দেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত ততটা সাফল্য লাভ করতে পারেনি। আফগানিস্তানে রাশিয়া বা আমেরিকার আধিপত্য বজায় থাকাকালে দেশটির সাথে ভারতের বেশ সুসম্পর্ক ছিল। তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর তাতে ছেদ পড়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমারের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। চীন প্রতিবেশী হিসেবে চরম শত্রু রূপে গণ্য হচ্ছে। সুতরাং ভারত একটি অবন্ধুসুলভ প্রতিবেশী হিসেবে সবার সাথে আচরণ করে। দিল্লির এই আধিপত্যবাদী চিন্তাচেতনা বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আরো তীব্র হয়েছে। এর পেছনেও কারণ রয়েছে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারত উপমহাদেশে শক, হুন, পাঠান, মোগলকে এক দেহে লীন করতে চেয়েছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন তীব্র সাম্প্রদায়িক লেখক ও সাহিত্যিক। তার লেখা গান ‘বন্দে মাতরম’ ভারতের অন্যতম জাতীয় সঙ্গীত। হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা বাল গঙ্গাধর তিলক মনে করতেন, এ উপমহাদেশের মুসলমান অধিবাসীরা হলো বিদেশী দখলদার, কাজেই তাদের শারীরিকভাবে নির্মূল করতে হবে।

উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা সাভারকার একবার বলেছিলেন, প্রথমত, পশ্চিমবঙ্গে একটি হিন্দু প্রদেশ গঠন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, যেকোনো মূল্যে আসাম থেকে মুসলিম বিতাড়ন করে, এরপর এ দু’টি হিন্দু প্রদেশের মাঝে ফেলে পূর্ব পাকিস্তানকে পিষে মারতে হবে। ১৯৪৭ সালে তারা বাংলাকে ভাগ করে পশ্চিমবঙ্গে একটি হিন্দু প্রদেশ গঠন করতে সফল হয়েছে। বিজেপি শাসনামলে আসাম থেকে মুসলিম বিতাড়নের বহু কাণ্ড চলছে। তবে পূর্ব পাকিস্তানকে ভাগ করতে পারলেও সেটিকে পিষে মারতে পারেনি। সেটি এখন স্বাধীন বাংলাদেশ। একেও পিষে মারতে ভারত বহু কূটচাল চালিয়ে যাচ্ছে। হায়দরাবাদ, কাশ্মির বা সিকিমের মতো হবে না বাংলাদেশ। এখানেও তারা সিকিমের মতো বহু দালাল তৈরি করেছে। তবে ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে জাগ্রত জনতা অতন্দ্র প্রহরীর মতো রয়েছে তাদের কুমতলব রুখে দিতে।
লেখক : গবেষক ও সাবেক সচিব
[email protected]

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
মালয়েশিয়ায় অভিবাসনবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশীসহ আটক ৬৩০ গাজায় ৬ ইসরাইলি পণবন্দীকে হস্তান্তরের প্রস্তুতি হামাসের দেশ গঠনে সবাইকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের কাশিয়ানীতে গাছের সাথে বাসের ধাক্কায় নিহত ২ ভালুকায় পিকআপ-সিএনজি সংঘর্ষে হতাহত ৫ আমরা কারো দাবার গুটি হবো না : জামায়াত আমির ক্রিপ্টোকারেন্সির ১৫০ কোটি ডলার চুরি আমাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য-জুলুম এখনো শেষ হয়নি : মাসুদ সাঈদী ব্রাজিলে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে ১২ শিক্ষার্থী নিহত শান্তি আলোচনায় জেলেনস্কির উপস্থিতিকে দরকারি মনে করেন না ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে স্টারমার ও ম্যাক্রঁ ‘কিছুই করেননি’, বললেন ট্রাম্প

সকল