২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ শাবান ১৪৪৬
`
তৃতীয় নয়ন

শার্লক হোমস ও বাংলাদেশ

-

বাংলা সাহিত্যে রহস্য সিরিজের মধ্যে ড. কাজী মোতাহের হোসেনের ছেলে কাজী আনোয়ার হোসেনের লেখা ‘মাসুদ রানা’ সিরিজ, বগুড়ার লেখিকা রোমেনা আফাজের লেখা ‘দস্যু বনহুর’, সাংবাদিক আসফ-উদ্-দৌলা রেজার ‘দস্যু স্বপনকুমার’- বইগুলো উল্লেখযোগ্য। ঠিক তেমনি প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতে রহস্যোপন্যাস রয়েছে। বাংলা ভাষায় আরো রয়েছে বিভূতিভূষণের বই ‘তারানাথ তান্ত্রিক’ প্রভৃতি। ইংরেজি সাহিত্যে আগাথা ক্রিস্টির বই এবং ডা: আর্থার কোনান ডয়েলের অমর গোয়েন্দা সৃষ্টি ‘শার্লক হোমস’ আজও রহস্যোপন্যাস জগতে জ্বলজ্বল করছে। শার্লক হোমস ইংরেজি সাহিত্যের এক অভিনব সৃষ্টি, এক অমর গোয়েন্দাচরিত্র।
লেখক একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি ডাক্তার ওয়াটসনকে দিয়ে সব কাহিনী বলিয়েছেন। এতে শুধু শার্লক হোমস গোয়েন্দার অভিনয় করেননি; তিনি নির্বাচনী প্রহসন নিয়েও লিখেছেন। শার্লক হোমসের অনেকগুলো কাহিনী আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, নির্বাচনী প্রহসন নিয়ে লেখাটি।
শার্লক হোমসের এই কাহিনীর নায়ক যুক্তরাজ্য থেকে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান জাহাজে। সেখানে গিয়ে দেখেন নির্বাচনের নামে অদ্ভুত কারবার, যার সাথে পতিত হাসিনার আমলের বাংলাদেশের মিল আছে। প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেমের আদর্শ হিসেবে বিবেচিত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের অধোগতি ডা: আর্থার কোনান ডয়েল ছাড়া আর কেউ লিখতে পারতেন কি না সন্দেহ।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলায় ভাষান্তর করে প্রকাশ করা হয় ‘শার্লক হোমসের বিচিত্র কাহিনী’ বইটি। অনুবাদে এ সবের উল্লেখ আছে। যেখানে বাস্তবতা সম্পর্কে পরিষষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। আমেরিকার দীর্ঘ দিন আগের গণতন্ত্রের নামে পেশিতন্ত্রের প্রচলন সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশেও এমনটি ঘটেছে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার শেখ হাসিনার জমানায়। আমেরিকার তখনকার শ্রমিকজগতের সাথে বাংলাদেশে হাসিনার শাসনামলের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার অদ্ভুত মিল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালে নিশিরাতের নির্বাচন এবং পরবর্তী ২০২৪ সালে প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। সরকারের মদদে নির্বাচন কমিশন কোনো সাংবিধানিক কাজ করেনি। নির্বাচন কমিশন নিজের ক্ষমতা ত্যাগ করে। শার্লক হোমসের ওই নায়কও নির্বাচনের প্রহসন লক্ষ করেছেন, যেখানে পেশিতন্ত্রের জয়জয়কার। আমেরিকায় তখন বেআইনি অস্ত্র, অর্থ এবং পেশিতন্ত্রের মাধ্যমে সবকিছু করা হতো। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকনেতারা নির্বাচনের ওয়াদা করতেন; কিন্তু পালন করতেন না। ঠিক বাংলাদেশেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ফ্যাসিবাদী শক্তি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবকিছু করায়ত্ত করেছিল।
নির্বাচন কমিশন ওদের বশংবদ হিসেবে কাজ করেছে; কিন্তু এই ধামাধরা দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল না। ফ্যাসিস্ট নেতারা ওয়াদা করতেন; কিন্তু পালন করতেন না। আমেরিকাতেও নির্বাচনের নামে প্রহসন হতো। বেআইনি অর্থ ও অস্ত্রের জোরে সন্ত্রাসীরা জিতে যেত। ২০০ বছর আগে সে দেশের অবস্থা এমনি ছিল, বাংলাদেশে তার পুনরাবৃত্তি ঘটে ১০০ বছর পরে।
বাংলাদেশে চব্বিশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শক্তি তাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এ জন্য চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। এক হাজার ৪০০ জনের প্রাণহানি হয়েছে, যাদের মধ্যে ১১৮ জন শিশু। আহত হয়েছেন শত শত মানুষ। জাতিসঙ্ঘও এ জন্য তদানীন্তন ফ্যাসিবাদী অপশক্তিকে দায়ী করেছে। পতিত হাসিনা সরকারের শীর্ষশক্তিরা সরাসরি নির্দেশ দিয়ে মানুষ হত্যা করিয়েছেন। আমেরিকায় এ রকম ঘটনা ঘটেনি। এর চেয়ে বাংলাদেশের নজির নিকৃষ্ট। বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা হাসিনার আমলে পুরোপুরি ধ্বংস হয়। ফ্যাসিবাদী সরকার এ কুকর্ম করেছে। নিজের স্বার্থের জন্য তারা যেকোনো কিছু করতে পারতেন।
আমেরিকাতে তাও নির্বাচনের অবয়ব ছিল; কিন্তু বাংলাদেশে তা ছিল না। বাংলাদেশে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থেকে নির্বাচন কমিশন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমেরিকাতে শ্রমজগৎ থেকে জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়েনি; কিন্তু বাংলাদেশে খোদ জাতীয় নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এ দেশে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনব্যবস্থা কায়েম হয়নি। আমেরিকাতে অর্ধশিক্ষিত শ্রমিকরা যা করতেন, এ দেশে উচ্চশিক্ষিত আমলারা তাই করেছেন। আমলা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের অপসম্মিলনে মধুচক্র গড়ে উঠেছিল, যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিলেন। এখন বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনাই সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চেষ্টা করছে; কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এতে সন্তুষ্ট না। তারা ত্বরিত নির্বাচন চায়।
সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করেছে। এই ইসি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ কমিশনের ওপর যাতে না পড়ে, কমিশন সেই চেষ্টা করছে। আশা করা যায়, চলতি বছরের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সে লক্ষ্যে কাজ করছে। নির্বাচন কমিশনকে সবার সহযোগিতা করা উচিত। নির্বাচন কমিশন গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। অনেক যাচাই-বাছাই করে এ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement