১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৯ শাবান ১৪৪৬
`

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কিভাবে আস্থা হারিয়েছিল বিশ্ব

-

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ উভয়ের বিচারকরা বারবার দাবি করেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারগুলো আন্তর্জাতিক মান পূরণ করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং বিচারিক পক্ষপাত ও পদ্ধতিগত ত্রুটিগুলো তুলে ধরে আইন বিশেষজ্ঞদের তীব্র সমালোচনার জবাবে তারা আখ্যানটি দেশীয়ভাবে প্রচার করেন। ঐতিহাসিকভাবে নুরেমবার্গ, টোকিও আর পরবর্তীতে সাবেক যুগোস্লাভিয়া ও রুয়ান্ডার জন্য ট্রাইব্যুনাল এবং সিয়েরালিওনে বিশেষ আদালতের মতো ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইনের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সুপ্রিম ইরাকি ট্রাইব্যুনাল ও বাংলাদেশ ট্রাইব্যুনাল মৌলিক ন্যায্য বিচারের মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সুপ্রিম ইরাকি ট্রাইব্যুনাল সাদ্দাম হোসেনের বাথ পার্টির সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু করে, অন্য দিকে বাংলাদেশ ট্রাইব্যুনাল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মূলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। উভয়কে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ঠাণ্ডা মাথায় অনিয়ম, বিচারিক স্বাধীনতার অভাব এবং সরাসরি সরকারি হস্তক্ষেপে জর্জরিত বলে এই ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়।

বিশ্বব্যাপী বিচারব্যবস্থাকে শক্তিশালীকারী ট্রাইব্যুনালের বিপরীতে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক আইনি নীতিতে অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখতে স্মরণীয় হওয়ার পরিবর্তে এই ট্রাইব্যুনাল কিভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তার উদাহরণ হিসেবে কাজ করে। এ প্রবন্ধে বাংলাদেশের বিচারের প্রতি আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের প্রধান প্রধান সমালোচনা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আন্তর্জাতিক আইনজীবী সমিতি (আইবিএ)
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের সমস্যাগুলো তুলে ধরা প্রথম দলগুলোর মধ্যে একটি ছিল ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের (আইবিএ) যুদ্ধাপরাধ কমিটি। ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর আইবিএ বিচার পরিচালনাকারী আইন অধ্যয়ন করে ১৭টি পরামর্শ দেয়। তারা যে প্রধান সমস্যাগুলো খুঁজে পেয়েছিল তার মধ্যে একটি ছিল ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর সংজ্ঞা। আন্তর্জাতিক আইনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলতে গেলে এটি অবশ্যই বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে একটি ‘পদ্ধতিগত’ বা ‘ব্যাপক’ আক্রমণের অংশ হতে হবে। তবে এ গুরুত্বপূর্ণ আইনি বিধান বাতিল করা হয়, যার অর্থ ছিল ব্যাপক বা পদ্ধতিগত অপরাধের প্রমাণ ছাড়া শাস্তি দেয়া যেতে পারে। আইবিএ আরো উল্লেখ করে যে, ট্রাইব্যুনালের কাছে পুরনো এবং ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণের কোনো স্পষ্ট উপায় ছিল না, যা প্রমাণগুলোকে অবিশ্বস্ত করে তোলে। একই সাথে এটি বিচারগুলোকে অন্যায্য করে তোলে এবং এর বৈধতাকে দুর্বল করে দেয়। জুলাই বিপ্লবের পর ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক আইনি মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে আইনটি অবশেষে সংশোধন করা হয়। তবে ততক্ষণে অনেক লোককে ভুলভাবে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে একটি এসেছে স্টিফেন জে র্যা পের কাছ থেকে; যিনি ওবামা প্রশাসনের সময় গ্লোবাল জাস্টিস অফিসের প্রধান ও যুদ্ধাপরাধবিষয়ক মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যাটলার্জ ছিলেন। র্যা প সিয়েরালিওনের বিশেষ আদালতের একজন সাবেক প্রসিকিউটরও ছিলেন। ২১ মার্চ ২০১১ তারিখে তৎকালীন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদকে লেখা এক চিঠিতে র্যা প পরামর্শ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর অধীনে অপরাধের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক আইনি মানদণ্ড মেনে সংশোধন করতে হবে। তিনি বিশেষভাবে পরামর্শ দেন, বাংলাদেশের উচিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ব্যবহৃত ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’-এর সংজ্ঞা গ্রহণ করা। শেষ পর্যন্ত এসব সুপারিশ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়। ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার না আসা পর্যন্ত র্যা পের সুপারিশগুলো চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়িত হয়নি, যা ট্রাইব্যুনালের আইনি ত্রুটির দীর্ঘকাল ধরে অমীমাংসিত থাকাকে চিহ্নিত করে।

স্টিফেন জে র্যা পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল- ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য আত্মপক্ষ সমর্থন নিশ্চিত করতে বিদেশী আইনি পরামর্শদাতাদের ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেয়া। আওয়ামী লীগ সরকার কেবল বিদেশী আইনজীবীদের অংশগ্রহণের অনুমতি দিতেই অস্বীকৃতিই জানায়নি; বরং আরো এগিয়ে গিয়ে অভিযুক্তদের দ্বারা নিযুক্ত তিনজন বিদেশী ডিফেন্স আইনজীবীকে কালো তালিকাভুক্ত করে এবং বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দেয়। ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইন সংশোধন করলে বিদেশী ডিফেন্স পরামর্শের ওপর এ বিধিনিষেধ অবশেষে বাতিল করা হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)
১৮ মে ২০১১ তারিখে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠায়, যেখানে জোর দিয়ে বলা হয়- ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সংশোধন করা উচিত। তবে সরকার কোনো ধরনের পরিবর্তন করতে অস্বীকৃতি জানায়, যার ফলে ট্রাইব্যুনালের আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আইনি নিয়মের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

এইচআরডব্লিউ বিচারক ও প্রসিকিউটরদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইনের ওপর যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়ার সুপারিশ করে; কারণ তাদের দক্ষতার অভাব বিচারের বিশ্বাসযোগ্যতায় গুরুতর হুমকি হতে পারে। এ সুপারিশও উপেক্ষা করা হয়। বিচার বিভাগ বা প্রসিকিউশন দলকে প্রয়োজনীয় আইনি জ্ঞান দিয়ে সজ্জিত করার কোনো প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়নি।
ট্রাইব্যুনালের বৈধতা জোরদারের প্রয়াসে স্টিফেন জে র্যা প সিয়েরালিওনের বিশেষ আদালতের সাবেক জাতিসঙ্ঘ প্রধান প্রসিকিউটর স্যার ডেসমন্ড ডি সিলভা, কিউসির কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছিলেন। র্যা প বাংলাদেশ ট্রাইব্যুনালকে আইনি নির্দেশনা দিতে ডি সিলভার কাছে অনুরোধ করলেও ডি সিলভা তা প্রত্যাখ্যান করেন এ কারণে যে, তিনি বিশ্বাস করেন- বিচারগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।

ইকোনমিস্ট এক্সপোজার
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে সম্ভবত সবচেয়ে ক্ষতিকারক তথ্য উঠে এসেছে ৮ ও ১৫ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে দ্য ইকোনমিস্ট প্রকাশিত দু’টি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে। এ প্রতিবেদনগুলো তৎকালীন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: নিজামুল হক (নাসিম) ও ব্রাসেলস-ভিত্তিক আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যে ১৭ ঘণ্টা ধরে রেকর্ড করা স্কাইপ কথোপকথন এবং ২৩০টি ই-মেইলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। এসব যোগাযোগ ট্রাইব্যুনালের দীর্ঘস্থায়ী কার্যক্রমের ওপর বাংলাদেশ সরকারের সরাসরি প্রভাবকে উন্মোচন করে। এটি নিশ্চিত করে বিচারে নিরপেক্ষ বিচারিক প্রক্রিয়ার পরিবর্তে রাজনৈতিকভাবে কারসাজি করা হয়। রেকর্ড ও ই-মেইলগুলো প্রমাণ করে বিচারপতি হক সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে অব্যাহত যোগাযোগে ছিলেন, যারা তাকে বিজয় দিবসের মধ্যে (১৬ ডিসেম্বর, ২০১২) রায় দিতে চাপ দিচ্ছিলেন। প্রতিবেদনগুলোতে আরো প্রকাশিত হয়েছে- আহমেদ জিয়াউদ্দিন, যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইব্যুনালের অংশ ছিলেন না, গোপনে ট্রাইব্যুনালের আদেশের খসড়া তৈরি করেন। জিয়াউদ্দিন প্রায়ই প্রসিকিউটর ও বিচারপতি হক- উভয়ের সাথে যোগাযোগ করতেন এবং পর্দার আড়ালে বিচারের দিকনির্দেশনা কার্যকরভাবে দিতেন।

ফাঁস হওয়া ওই তথ্য প্রমাণ করে যে, বিচারকরা ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের একজন আল্লামা সাঈদীকে দোষী সাব্যস্ত করা এবং সাজা ঘোষণার আদেশ তৈরি করছিলেন, অথচ সে সময় সবেমাত্র আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এই পূর্বনির্ধারিত রায় ট্রাইব্যুনালকে সম্পূর্ণ প্রহসন হিসেবে তুলে ধরে, যা নিশ্চিত করে- বিচারের ফল আগে থেকে নির্ধারিত ছিল।
দ্যা ইকোনমিস্ট সাময়িকীর বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের প্রভাব ছিল। সাময়িকীটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে ট্রাইব্যুনালের বৈধতাকে সম্পূর্ণরূপে ক্ষুণœ করে। এতে ক্রমবর্ধমান চাপ ও জনসাধারণের সমালোচনার মুখে বিচারপতি নিজামুল হককে শেষ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়, যা ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারিগুলোর মধ্যে একটি। তবে ততক্ষণে বাংলাদেশ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে সব বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে।

জিওফ্রে রবার্টসন কেসির সমালোচনা
বাংলাদেশ ট্রাইব্যুনালের সবচেয়ে বিস্তারিত ও প্রামাণিক সমালোচনাগুলোর মধ্যে একটি ২০১৫ সালে এসেছিল সিয়েরালিওনে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ আদালতের সাবেক আপিল বিচারক জিওফ্রে রবার্টসন কেসি থেকে। তার বিস্তারিত প্রতিবেদনে রবার্টসন ট্রাইব্যুনালের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উল্লেখ করেন- এতে আন্তর্জাতিক নাম থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক কোনো উপাদান ছিল না। এটি জাতিসঙ্ঘের সহায়তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, বিদেশী আইনজীবীদের অভিযুক্তদের পক্ষে দাঁড়াতে নিষেধ করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যবস্থার অধীনে ন্যায্য বিচারের অধিকারের মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করে।

রবার্টসন বিচারের পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পর্যবেক্ষণ করেন- সব আসামি জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির মতবিরোধী দল থেকে নেয়া। প্রক্রিয়াটি ইচ্ছাকৃতভাবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিরোধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ও পরে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের তদন্ত ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতার অভাবকে তুলে ধরে।

রাজনৈতিক পক্ষপাতের বাইরেও রবার্টসন বিচারের প্রধান পদ্ধতিগত ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করেন, বিশেষ করে গুজবকে প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা এবং অপরাধবোধের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করতে সহযোগিতা করা। যুদ্ধাপরাধের মামলার জটিলতার কারণে আসামিপক্ষকে প্রস্তুতিতে পর্যাপ্ত সময় না দেয়ায় তিনি ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা করেন। এ ক্ষেত্রে মাত্র তিন সপ্তাহ সময় দেয়া হয়; যা অযৌক্তিকভাবে কম। এ ত্রুটিপূর্ণ বিধানটি অবশেষে ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তী সরকার সংশোধন করে প্রস্তুতির সময় ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

ড. মিরিয়াম বেরিংমেয়ারের অ্যাকাডেমিক সমালোচনা
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের ওপর থিসিস করেন হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক মিরিয়াম বেরিংমেয়ার। এটি ছিল তার পিএইচডির থিসিস। এতে ট্রাইব্যুনালের বিচারিক ত্রুটিগুলোর একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করেন তিনি। ২০১৮ সালের পিএইচডি গবেষণায় তিনি পর্যবেক্ষণ করেন, বিচারকদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব রয়েছে, যার ফলে ট্রাইব্যুনালের রায় আন্তর্জাতিক আইনশাস্ত্রের বিকাশের সাথে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। ড. বেরিংমেয়ার অসংখ্য কেলেঙ্কারির কথাও তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে সাক্ষীদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ ও জোরপূর্বক অন্তর্ধানের ঘটনা, যা প্রসিকিউশনের প্রমাণের বিশ্বাসযোগ্যতা গুরুতরভাবে ক্ষুণœ করে। এ বিরক্তিকর অনিয়মগুলো বিচারিক প্রক্রিয়ার অখণ্ডতা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করে। কারণ প্রায়ই সন্দেহজনক সাক্ষ্য প্রদান এবং কারচুপির মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা হতো। এ গুরুতর পদ্ধতিগত ত্রুটিগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে, তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন- বাংলাদেশে বিচারকে ন্যায়বিচারের প্রকৃত সাধনা হিসেবে বিবেচনা করা কঠিন।

ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী সমালোচনা
ট্রাইব্যুনালের সাম্প্রতিক নিন্দা ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট থেকে আসে। তার রায়ে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট ন্যায্য বিচারের মান বজায় রাখতে ট্রাইব্যুনালের ব্যর্থতা সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট ট্রাইব্যুনালের গুজবকে প্রমাণ হিসেবে নেয়া এবং সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ওপর অত্যধিক নির্ভরতার সমালোচনা করে এর রায়ের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

আল্লামা সাঈদী ও মাওলানা নিজামীর মতো নির্দিষ্ট মামলাগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দোষী সাব্যস্ততার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যেখানে পূর্বনির্ধারিত দোষী সাব্যস্ত রায় নিশ্চিত করতে বানোয়াট বা ভুলভাবে প্রমাণ উপস্থাপন ও ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন- বাংলাদেশ ট্রাইব্যুনালগুলো রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত, ন্যায়বিচার দেয়ার আড়ালে বিরোধী ব্যক্তিত্বদের নির্মূলে হাতিয়ার হিসেবে তা কাজ করেছে। ফলস্বরূপ সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দেয় যে আন্তর্জাতিক মামলায় বাংলাদেশ ট্রাইব্যুনালের রায়কে বৈধ আইনি সিদ্ধান্ত হিসেবে নির্ভর করা যাবে না।

এভাবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, বিচারিক স্বাধীনতার অভাব ও পদ্ধতিগত অসদাচরণে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালগুলো তীব্রভাবে অসম্মানিত হয়েছে। দ্যা ইকোনমিস্ট, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করেছে কিভাবে সরকারি কর্মকর্তারা রায় প্রভাবিত করেছিলেন এবং ন্যায্য বিচারের সুরক্ষা সীমিত করেছিলেন। তবে নবগঠিত ট্রাইব্যুনাল এখন একটি হালনাগাদ আইনের অধীনে কাজ করছেন এবং ন্যায্য বিচার পরিচালনার অবস্থানে রয়েছেন। আশা করা যায়, এ ট্রাইব্যুনালকে নির্বাহী বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করার সুযোগ করে দেয়া হবে।

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলি


আরো সংবাদ



premium cement
কুয়েট ভিসির পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবি, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব মিয়াজী আটক উদ্বোধনী ম্যাচের আগে দর্শকের আনন্দ দেবে পাকিস্তান বিমানবাহিনী শনিবার ৬ ইসরাইলি পণবন্দীকে মুক্তি দেবে হামাস খালেদা জিয়ার নাইকো মামলার রায় আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর্দা উঠছে আজ, মুখোমুখি পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড হাসিনার কলরেকর্ড ট্রাইব্যুনালে প্রধান উপদেষ্টার সাথে ভুটানের রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ ভারতীয় পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে উত্তাল তিস্তা অববাহিকা বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা অগ্রাধিকার পাবে : তারেক রহমান গাজায় ২৬৬ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন ইসরাইলের

সকল