লেবানন পরিস্থিতি কেমন?
তৃতীয় নয়ন- মীযানুল করীম
- ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ইসরাইল লেবাননে হামলা চালিয়েছে। কয়েক হাজার লোক সেখানে নিহত হয়েছে। লেবাননের রাজধানী আধুনিক নগরী বৈরুত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বৈরুতে গোলা পড়েছে বহু। লেবাননের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত অনেক পুরনো। ২.৫ বছর শূন্যতা থাকার পরে এবার নতুন প্রেসিডেন্ট পেল লেবানন। ১৯৮৯ সালের তায়েফ চুক্তির পরে লেবাননের প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতা হারান। লেবাননের প্রেসিডেন্ট নামমাত্র টিকে আছেন। তায়েফ চুক্তি লেবাননের ১৫ বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল। এটি ঠিক, লেবাননের প্রেসিডেন্ট ছিলেন চরম ক্ষমতার অধিকারী। তখন তাকে অভিযুক্ত করা যেত না। তিনি ডিক্রির মাধ্যমে দেশ চালাতেন। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা এত কমে যায় যে, দুই বছর প্রেসিডেন্ট না থাকাতে কিছু যায় আসে না। এর আগে ২০০৭ সালে মেয়াদ শেষে প্রেসিডেন্ট এমিল লাহুদ পদত্যাগ করলে একই অবস্থা হয়েছিল। লেবানন অধিক গণতন্ত্রী আরব রাষ্ট্র হলেও, এমনকি ইসরাইলের চেয়ে বেশি গণতন্ত্রী এই দেশটি; কিন্তু লেবাননের মুসলমানদের শিয়া ও সুন্নি গোষ্ঠীতে ভাগ করা হয়েছে। সুন্নি মুসলমানরা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। স্পিকার হতে হবে একজন শিয়া মুসলিম এবং খ্রিষ্টানরাই হবেন প্রেসিডেন্ট। লেবাননের খ্রিষ্টান প্রেসিডেন্ট প্রথা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে ফরাসি দখলদারিত্বের সময়ে চালু হয়। তায়েফ চুক্তির সময়ে পার্লামেন্টের সিস্টেম সম্পূর্ণ চালু হয়নি; বরং খ্রিষ্টান পাদ্রিরা প্রভাব খাটাতে থাকেন লেবাননে। তায়েফ সুন্নি প্রধানমন্ত্রীর নিশ্চয়তা দিলেও তার হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা ছিল বলে অভিযোগ আছে। লেবাননের পার্লামেন্টে সদস্য সংখ্যা ১২৮। এতে বাইরের হস্তক্ষেপের সুযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এই সুযোগে দুর্নীতিপরায়ণ এমপিরা টাকা বানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে রাহুমুক্ত রাখাই হচ্ছে বড় কাজ। লেবাননের মতোই এর রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুরনো।
দেশটিতে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ নতুন নয়। ১৯৪৩ সালে দু’টি খ্রিষ্টান বামপন্থী দল প্রতিযোগিতা করে। একটির পেছনে ছিল ব্রিটিশদের মদদ, আরেকটির পেছনে ছিল ফ্রান্স। লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যবসিত হয় ফ্রান্স আর ব্রিটেনের প্রতিযোগিতায়। ব্রিটেন জেতে। এভাবেই লেবানন জাতীয় স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৫৬ সালের সুয়েজ খাল সঙ্কটের পরে আমেরিকাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় যদিও ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকে। কিন্তু লেবাননে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা কমার কারণে ফ্রান্স তাদের সমর্থন দেয় সুন্নিদেরকে। অপর দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লেবাননের প্রতিটি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কামিল শামুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুলে পরিণত হন। তিনি ১৯৪৩ সালের জাতীয় চুক্তি লঙ্ঘন করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী মুসলমানরা দেশের সীমারেখাকে মেনে নেবে এবং লেবানন নিরপেক্ষ থাকবে। লেবানন পাশ্চাত্য জোটে যোগ দেবে না। কিন্তু শামুন এই নিয়ম ভঙ্গ করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন। যুক্তরাষ্ট্র অর্থ এবং অস্ত্রের বৃষ্টি বর্ষণ করে। দেশটি লেবাননের গৃহযুদ্ধের জন্য দায়ী। সিআইএ এতে হস্তক্ষেপ করেছিল। এরপর লেবাননে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন মিসরে পরলোকগত প্রেসিডেন্ট গামাল আব্দুল নাসের। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমঝোতা করেন। যারা লেবাননের প্রেসিডেন্ট ফুয়াদ শিহাবকে যুদ্ধে নিরপেক্ষ রাখেন। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ফুয়াদ শিহাব ক্ষমতায় ছিলেন। পরবর্তী সময়ে চার্লস হেলু খ্রিষ্টানদের প্রতি ও পাশ্চাত্যের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন। পাশ্চাত্যের প্রতি শক্তিশালী সমর্থনের মাধ্যমে তিনি নাসের থেকে দূরে সরে যান। ১৯৬৯ সালে লেনাননের সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় সোভিয়েত চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেয়। কিন্তু লেবাননের সামরিক গোয়েন্দারা অপারেশনে অংশ নেয়। এতে রাশিয়ার সাথে লেনাননের কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা আহত হন। ফলে ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সোলেমান ফ্রানজি মাত্র এক ভোটে জয় পান। এভাবে রুশপন্থী কামাল জুমলাত পাশ্চাত্যজোটকে সমর্থন দেন। ১৯৭৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফ্রানজির মেয়াদ শেষে তাকে পরিত্যাগ করে সিরিয়া ও সৌদি আরব ইলিয়াস আর্কিসকে সমর্থন জানায়। এভাবে আস্তে আস্তে সিরিয়া লেবাননে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। হিজবুল্লাহ সিরিয়ার সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অপ্রতিরোধ্য হয়ে দাঁড়ায়। সিরিয়া লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে থাকে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা