প্রস্তাবিত ‘দেবোত্তর সম্পত্তি অধ্যাদেশ’ নিয়ে কিছু কথা
- মোহাম্মদ আজিজুল হক
- ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নামে একটি ফোরাম দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত আইনের একটি খসড়া প্রস্তুত করে তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী মাওলানা নুরুল ইসলামের কাছে পেশ করে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় ওই প্রস্তাবের তেমন কোনো অগ্রগতি তৎসময়ে হয়নি। তবে ঐক্য পরিষদের অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্তসহ আরো কিছু ব্যক্তি চেষ্টা করতে থাকেন। বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার গঠন হলে বিষয়টি উহ্য রাখা হয়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ফের ক্ষমতায় এলে, ঐক্য পরিষদের সংশ্লিষ্ট নেতাদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের একটি খসড়া তৈরি করে সরকারের কাছে উপস্থাপন করে।
বর্ণিত খসড়ার ওপর মতামত সংগ্রহের ধারাবাহিকতায় তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা আইনে পরিণত করার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে পাঠানো হয়। ‘দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১৩’ সংসদে পাস হতে যাচ্ছে- এমন খবর প্রকাশ হলে সনাতন ধর্মাবলম্বী বেশির ভাগ মানুষ প্রতিবাদ জানান। তারা প্রস্তাবের পক্ষের সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের, স্বধর্মের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনেন। দেশব্যাপী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
ওই সময় প্রস্তাবিত দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা আইন নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়াসহ তাদের উদ্যোগে ধারাবাহিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দৈনিক সংবাদে ৩০ জুন ২০১৩ তারিখে একটি দীর্ঘ সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়। সম্পাদকীয়তে বলা হয়, প্রস্তাবিত দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন করে সরকার নতুন করে আরেকটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে তারা। এ জন্য মঠ, মন্দির ও দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণ ও পুনরুদ্ধার জাতীয় কমিটি, জাতীয় যুব মহাজোট, হিন্দু মহাজোটসহ, বেশ কয়েকটি সংগঠন প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।
ওই সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, প্রস্তাবিত লিখিত আইনটি মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলেছে, প্রস্তাবিত এ আইন দেবোত্তর সম্পত্তি পরিচালনার ক্ষেত্রে হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা ধর্মীয় অনুশাসনভিত্তিক পথ ও পদ্ধতিকে নস্যাৎ করে দেবে। গোটা ব্যবস্থাটাই আমলাতন্ত্রের অধীনে নিয়ে এসে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার একটি হীন প্রচেষ্টা, যা ধর্মীয় অনুশাসনের সাথে সাংঘর্ষিক। এমনকি সনাতন বিশ্বাসীদের ধর্মীয় অধিকার ক্ষু্ণ্ণ করবে। তাদের অভিযোগ, এ আইনের মাধ্যমে সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী, সাধু, মহন্ত, সেবায়েতরা মুক্তভাবে আরাধনা ও প্রচার করতে পারবেন না। তারা তখন হবেন বেতনভুক সরকারি কর্মচারী। ফলে তাদের ভাষায় ভগবানের বিধান নয়, বরং নিয়োগকর্তার ইচ্ছা- অনিচ্ছার ইশারাতে চলবে মন্দির ও মঠ। প্রতিটি ধর্মালয় চলে তার নিজস্ব বিধিবিধান অনুযায়ী। সেখানে নির্ধারিত কমিটি রয়েছে; যারা নিজ নিজ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দেখভাল করে যাচ্ছে। সনাতন শাস্ত্রীয় বিধান অনুযায়ী শত শত বছর ধরে এভাবে চলে আসছে।
সম্পাদকীয়ের শেষে পরামর্শ দেয়া হয়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য আইনটি প্রণয়নের দরকার নেই বলে আমরা মনে করি। আমরা আশা করব জাতীয় সংসদে এই আইন পাস করা হবে না। মাননীয় সংসদ সদস্যরা এই আইনের অসারত্ব উপলব্ধি করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
মন্ত্রিপরিষদে পাস করা খসড়া আইনটি, সংসদে উত্থাপনের জন্য ১২ সেপ্টেম্বর/২০১৩ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে শেষপর্যন্ত তখন ওই বিল আর সংসদে উত্থাপন করা হয়নি। এরপর থেকে বিষয়টি ঝুলে যায়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এলে, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসীন-সনাতন ধর্মীয় হিন্দু নেতৃত্বের পূর্বোক্ত অংশটি আবার বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা আইনটি সংসদে পাসের জন্য অবিরাম চেষ্টা চালাতে থাকেন। ২০২২ সালের প্রস্তাবিত খসড়ার তুলনামূলক পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেষোক্ত প্রস্তাবনায় মৌলিক বিষয়াদি ছাড়াও এর বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে।
মৌলিক বিষয়াদির মধ্যে ‘দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রয়/হস্তান্তর যোগ্য নয়’ মর্মে সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশন কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তা সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, আপিলেট ডিভিশন ২০০৯-এর ১৬৩ নম্বর আপিল আবেদনটি ১২ এবং ১৯ জানুয়ারি/ ২০১৬ তারিখে শুনানির মাধ্যমে ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখে বিস্তারিত এক রায় প্রকাশ করেন আদালত। যাতে বলা হয়েছে, ‘একবার যে সম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়েছে বা হবে, তা কখনো সেকুলার সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে না’। এ ছাড়া দেবোত্তর সম্পত্তির বিভিন্ন গতি-প্রকৃতি নিয়মে, উক্ত আপিল আবেদনের বিপরীতে বিস্তারিত রায় প্রদান করা হয়।
প্রস্তাবিত আইনটির বিপরীতে কিছু ধারণা নিম্নে পরিবেশন করা হলো :
ক. হিন্দু দেবোত্তর সম্পত্তিগুলো পরিচালনা সংক্রান্ত আইন হিন্দু আইনের Religion and Charitable Endowment এবং Religion Endowment Act 1863 সর্বোপরি Charand Religion Trust Act 1920 মতে পরিচালিত হয়ে আসছে। এসব আইন প্রণয়নের উৎস হচ্ছে বিখ্যাত আইন প্রণেতা মুলারের ‘বেদ’ অনুসৃত বিধিবিধান মোতাবেক; যার দ্ধারা হিন্দু দেবোত্তর সম্পত্তিগুলো সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত আছে। তাই হিন্দু দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষায়, নতুনভাবে আর কোনো আইন প্রণয়নের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।
খ. প্রস্তাবিত আইন বলবৎ হলে, সনাতন ধর্মের অপরিবর্তনীয় ধর্মীয় নীতিগুলো পূর্ণমাত্রায় লঙ্ঘিত হবে। একই সাথে এসব মঠ, মন্দির যদি ধর্ম-দর্শনে অনভিজ্ঞ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দ্ধারা পরিচালিত হয়, তা হলে সনাতন ধর্মের নিয়মশৃঙ্খলা, পবিত্রতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা বিনষ্ট হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। যাতে করে সনাতন ধর্মীয় অনুসারীদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও মর্মবেদনার জন্ম নেবে; যা সরকার এবং দেশের জন্য কোনোভাবে মঙ্গল বয়ে আনবে না। অধিকন্তু অদূর ভবিষ্যতে স্বার্থান্ধরা সরকারি কর্মচারীদের ব্যবহার করে এসব সম্পত্তি সর্বনাশ করার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
গ. শত শত বছর ধরে হিন্দুদের সব মঠ, মন্দির, মিশন, ধাম পরিচালিত হয়ে আসছিল ব্রাহ্মণ, ঋষি, মহন্ত ও তাদের ধর্মীয় গুরু দিয়ে। কিন্তু এই আইনের মাধ্যমে এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা সম্পৃক্ত হবে; যারা ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে খুব একটা সম্পৃক্ত নন।
ঘ. এ আইনের দ্বারা গঠিত দেবোত্তর বোর্ড, সরকারের সাথে সমন্বয় করে যেকোনো দেবোত্তর স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল করার ক্ষমতা পাবে। ফলে মঠ, মন্দির, মিশনের স্থাবর সম্পত্তি ক্রমে সঙ্কুচিত হবে। ভবিষ্যতে এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় কাজের সম্প্রসারণ ব্যাহত হবে।
ঙ. এ আইনের দ্ধারা মঠ, মন্দির, আশ্রমের ভক্ত প্রদত্ত প্রণামীর টাকা থেকে একটি অংশ সরকার সৃষ্ট দেবোত্তর বোর্ডে জমা দিতে হবে। স্মরণযোগ্য যে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত সব প্রণামীর অর্থ কেবল পূজা ও দুস্থ ভক্তদের সেবার কাজে ব্যবহৃত হওয়ার রেওয়াজ। তা অন্য কোনো কাজে ব্যবহৃত হওয়া ধর্মীয় শাস্ত্রের পরিপন্থী।
চ. এ আইনের দ্বারা সব মঠ, মন্দির, মিশনের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের পূর্ণ ক্ষমতা ও এখতিয়ার থাকবে দেবোত্তর বোর্ডের ওপর। এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের, ওই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় ভক্তি ভাবধারা ও শ্রদ্ধা সম্পন্ন হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে এসব ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য নির্বাচন, প্রশাসনের দেবোত্তর বোর্ডের ওপর ন্যস্ত থাকবে। এতে সংশ্লিষ্ট আশ্রম, মিশনের ধর্মীয় প্রধানের উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা থাকবে না। ফলে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে ধর্মীয় ভাবধারা বর্জিত লোকদের অন্তর্ভুক্তি হবে; যা আশ্রম পরিচালনায় ধর্মীয় ভাবধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না।
ছ. হিন্দুদের মঠ, মন্দির পরিচালিত হয় তাদের ধর্মগ্রন্থ বেদের নিয়মানুসারে। প্রস্তাবিত আইন বাস্তবায়িত হলে এসব মঠ, মন্দির, মিশন, সরকারের নিয়মে পরিচালিত হবে।
জ. হিন্দুদের সব মঠ, মন্দির, মিশন ইত্যাদি সনাতনী নীতি ও শাস্ত্রগুলোর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং স্বাধীন; যা কোনোভাবে কোনো শাসনতন্ত্রের অধীন হতে পারে না। তাই হিন্দুদের মতে, প্রস্তাবিত আইন হবে ভগবান প্রদত্ত নিয়মাবলীর উপর হস্তক্ষেপ।
ঝ. প্রস্তাবিত এ আইন বাস্তবায়িত হলে মঠ, মন্দির, মিশনের আধ্যাত্মিক ভাবধারায় নিয়োজিত সাধু, সন্ন্যাসী, ঋষিদের ভাবধারা ও ও চিন্তাচেতনার ওপর অবাঞ্ছিত প্রভাব পড়বে। ফলে সংক্ষুব্ধ এসব মনীষীদের মধ্যে ক্ষোভ ও মর্ম যাতনা এমন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে যে, তারা এসব কার্যক্রমের প্রতিবাদ করতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না। এমন কী আত্মহুতিও দিতে পারেন। যদি এ ধরনের ঘটনা একটিও সংঘটিত হয়, তাহলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে; যা দেশের জন্য কখনো মঙ্গলজনক নয়। অধিকন্তু এর ফলে সারা দেশকে অশুভ পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে। একই সাথে এ আইন পাস বা কার্যকর করার ধারাবাহিকতায়, স্বার্থান্ধরা এর অপব্যবহারেরও সুযোগ পাবে। লক্ষণীয় যে, দ্বিতীয় পর্বে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’ সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে এটি সংশোধন করতে গিয়ে সম্ভাব্য সব অংশীজনসহ বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে তা সম্পাদন করা হয়।। কিন্তু এ সংশোধনী বাস্তবায়নে গিয়ে পরবর্তীতে হিন্দুসমাজের কষ্ট কোনো অংশে কমেনি।
মূলত ব্রিটিশ শাসনামলে সমাজের বিভিন্ন বিবর্তনের সূত্র বিবেচনায় নিয়ে প্রায় দুইশত বছরে যেসব আইন পাস করা হয়, তার সবগুলো উপনিবেশিক হিসেবে ধরে নিয়ে, তা বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। অন্তত গত সত্তর বছরে তা প্রমাণিত। এ পটভূমিতে প্রস্তাবিত ‘দেবোত্তর সম্পত্তি অধ্যাদেশের’ মতো স্পর্শকাতর আইন পাস করার ক্ষেত্রে, পর্যাপ্ত সময় নিয়ে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি প্রণীধানযোগ্য বলে আমরা মনে করি। এতদ ব্যতীত সরকার যদি যেকোনো মূল্যে এ আইন পাস করতে বদ্ধপরিকর হয়, তাহলে ইতঃপূর্বে বর্ণিত বিষয়াদি নিষ্পত্তি করে তা সম্পাদনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এখানে আর একটা বিষয় প্রাসঙ্গিক যে, ইতঃপূর্বে ‘দেবোত্তর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১৩’-এর খসড়ার ওপর আলোচনা/মতামত প্রদানে সে সময়কার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত সচিব (পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বিগত ১৪ জুন, ২০১২ তারিখে, বর্ণিত মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়; যাতে অনেক হিন্দু বিশেষজ্ঞ তাদের অভিমত তুলে ধরেন। ওই সব অভিমত বর্তমানে প্রস্তাবিত আইনেও নিষ্পন্ন করা হয়নি বলে জানা গেছে।
খসড়া আইনে প্রতি জেলায় দেবোত্তর কমিটিতে ট্রাস্টির পরামর্শ গ্রহণ করে এর সদস্য মনোনয়নের কথা বলা হয়েছে। যেহেতু প্রতি জেলায় ট্রাস্টি নেই, অন্য দিকে যেহেতু হিন্দুদের সর্ববৃহৎ সংগঠন তথা ‘বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির কেন্দ্র হতে ইউনিয়ন পর্যন্ত শাখা রয়েছে; সেহেতু জেলা দেবোত্তর কমিটিতে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি/সম্পাদক বা প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থাসহ প্রাইভেট ও পাবলিক দেবোত্তর কমিটিতে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। একই সাথে প্রাইভেট ও পাবলিক দেবোত্তর শব্দগুলো আরো স্পষ্ট করার ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। হিন্দু সমাজের ‘হিত’ সাধনের প্রচেষ্টা, অংশীজনদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া, নতুন সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাবনা ইত্যাদি; বিবেচনায় নিয়ে প্রাসঙ্গিক আইনটি প্রণয়নে অধিকতর সতর্ক হয়ে পর্যাপ্ত সময় গ্রহণপূর্বক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা জরুরি। একই সাথে নিম্নোক্ত বিষয়াদিও বিশেষভাবে বিবেচনা যোগ্য বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে;
হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা হিন্দু সংস্কৃতির ওপর আঘাত আসে, এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে যেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, নিজের অজান্তে জড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিতকরণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
সাধু, সন্ন্যাসী, মোহন্ত, ঋষি ইত্যাদি পুরোহিতদের আস্থায় নেয়ার লক্ষ্যে, তাদের সংগঠনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মতামত সংগ্রহপূর্বক প্রাসঙ্গিক ব্যক্তিদের ধর্মীয় চেতনা প্রশমিতের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পার।
সনাতন ধর্মী নেতাদের যে অংশ, আইনটি পাসের ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহী, তাদের মাধ্যমে উত্থাপিত আপত্তিগুলো নিষ্পত্তি করার পদক্ষেপ নেয়াসহ পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে।
অংশীজনদের কাছে থেকে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ইতিবাচক সমাধান অন্তর্ভুক্ত করে, আইনের প্রস্তাবিত খসড়াটি অধিকতর উন্নত করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ আইন পাসে ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রস্তাবিত ‘দেবোত্তর সম্পত্তি আইন’ আপাতত অধ্যাদেশ আকারে পাসের চূড়ান্ত ব্যবস্থা না করে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট মতামত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উত্তম হবে।
লেখক : নিরাপত্তা গবেষক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা