বাংলাদেশ ট্রাইব্যুনালে ভারতের এজেন্ডা এবং মার্কিন ভিশন
- এহসান এ সিদ্দিক
- ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তিনটি প্রাথমিক কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। প্রথমত, বাংলাদেশের এই বিচারের ব্যাপারে ভারতীয় আগ্রহের বিষয়টি বিশেষ প্রচার পেয়েছিল। আওয়ামী লীগ ভারতপন্থী দল। ভারত বাংলাদেশে নিজের স্বার্থে ক্ষতিকর বলে মনে করেছিল এমন বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা দুর্বল করতে এ বিচার ও মৃত্যুণ্ডের ডিজাইন করেছিল।
২০০৮ সালে নির্বাচনে বিজয়ের পর শেখ হাসিনা প্রথমে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় কথিত অপরাধের জন্য বিরোধী ব্যক্তিদের বিচার করতে দ্বিধা করেছিলেন। কিন্তু পরে তার ভারতীয় পরামর্শদাতাদের কথায় নিশ্চিত হন যে, এটি তাকে করতে হবে। শেখ হাসিনা জানতেন, জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অন্যায় বিচার তার শাসনকে অস্থিতিশীল করতে পারে। কুলদীপ নায়ারের মতো বিশিষ্ট ভারতীয়েরও এ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, যিনি তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন ‘ভবিষ্যতে যা বাংলাদেশকে নাড়া দিতে পারে তা হলো হাসিনার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিধান’। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হিসেবে একটি দেশীয় ট্রাইব্যুনালকে কার্যকর হিসেবে প্রচার করতে আগ্রহী ছিল।
তৃতীয়ত, ডিফেন্স টিমের কৌশলের একটি কেন্দ্রীয় দিক ছিল বিচারকে আন্তর্জাতিকীকরণ করা। ডিফেন্স টিম ট্রাইব্যুনালের পক্ষপাতিত্ব এবং ত্রুটিগুলো উন্মোচন করতে মোটামুটি ভালো সময় ব্যয় করে। বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের প্রতি মূলত বিদ্বেষী স্থানীয় মিডিয়া বিচারের ত্রুটির বিভিন্ন দিক সম্পর্কিত প্রতিবেদন এড়িয়ে যায়। এটি ডিফেন্স টিমকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে বিদেশী সরকারগুলোর সমর্থন চাইতে বাধ্য করে। স্কাইপ কেলেঙ্কারি কভার করতে বেশির ভাগ স্থানীয় সংবাদপত্র ও নিউজ চ্যানেলের প্রত্যাখ্যান এ পক্ষপাত জোরালো করে। স্কাইপ কেলেঙ্কারি আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত সাপ্তাহিক ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ প্রথম ফাঁস করে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে বিদেশী দূতাবাস ও সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ দূতাবাসগুলো প্রায়ই ভেন্যু হিসেবে কাজ করত, যেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের উপদেষ্টা ও মন্ত্রীরা আসন্ন রায় সম্পর্কে খোলাখুলিভাবে তথ্য দিতেন। উদাহরণস্বরূপ, ১৪ জুলাই ২০১৩, অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায়ের আগে, ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ফরাসি দূতাবাসের একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভীর সাথে দেখা করেন। তার সাথে কথোপকথনের সময়, গওহর রিজভী ইঙ্গিত দেন, ব্যারিস্টার রাজ্জাক রায়ে ‘খুশি’ হবেন, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে না। গওহর রিজভঅর এমন ইঙ্গিতে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ট্রাইব্যুনাল স্বাধীন নয় এবং সরকারের নির্বাহী নির্দেশনা অনুযায়ী এটি কাজ করছে।
১৫ জুলাই ২০১৩, ট্রাইব্যুনাল অধ্যাপক গোলাম আযমের মৃত্যুদণ্ড দেয়া থেকে বিরত থাকে। তার রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলে, গোলাম আযম মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য; কিন্তু তার ৯০ বছরের বয়স বিবেচনায় তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়টি ডিফেন্স টিমের জন্য বিস্ময়কর কিছু ছিল না, কারণ গওহর রিজভী আগের দিন যা জানিয়েছিলেন সে সম্পর্কে তারা আগেই অবগত ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্য থেকে কূটনৈতিক চাপ তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়টি আটকে দিয়েছিল। এটি স্পষ্ট যে, রায় ও সাজা আদালতের পরিবর্তে শেখ হাসিনা ও তার সরকার নির্ধারণ করছে।
বিদেশী কূটনীতিকরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময়কে প্রভাবিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাককে জানান, শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। পরের দিন ৮ ডিসেম্বর, সরকারের একজন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার রাজ্জাকের কাছে যান। গুলশান আজাদ মসজিদে নামাজ শেষে উপদেষ্টা জানান, তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে জাতিসঙ্ঘের রাজনৈতিক বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর বাংলাদেশ ত্যাগের অপেক্ষায় ছিলেন। তারানকো ১১ ডিসেম্বর চলে যান। আর আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড পরের দিন ১২ ডিসেম্বর কার্যকর করা হয়।
বিচারে ভারতের প্রভাবকে কোনোভাবে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায় না। প্রাথমিকভাবে, যখন লন্ডনের ৯ বেডফোর্ড সারির বিদেশী আইনি দল নিযুক্ত ছিলেন তখন তারা এ প্রক্রিয়ায় ভারতের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন। তবে, যখন তারা মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে যুক্ত ব্যক্তিসহ আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন তখন তারা নিশ্চিত হন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য বিরোধী নেতাদের বিচার করা ভারতের এজেন্ডার একটি মূল উপাদান। মধ্যপ্রাচ্যের একজন রাষ্ট্রদূতের সাথে জড়িত একটি আকস্মিক ঘটনা এ ধারণাকে আরো দৃঢ় করে। রাষ্ট্রদূত শেখ হাসিনাকে অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানালে তিনি তার চেয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, এটি মেনে না নিলে তিনি ক্ষমতা হারাবেন। এর তাৎপর্য স্পষ্ট ছিল : তার রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকা নির্ভর করে ভারতের দাবি মেনে চলার ওপর।
ভারতের চাপে প্রাথমিকভাবে ট্রাইব্যুনালে প্রখ্যাত আলেম আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। সাঈদীর প্রভাব এবং অনুভূত ভারতবিরোধী অবস্থান তাকে ভারত সরকারের লক্ষ্যে পরিণত করে। তার মামলার উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হলো বিচার চলাকালীন, বাংলাদেশ সরকারের লোকজন অন্যতম প্রধান ডিফেন্স সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে অপহরণ করে, যাকে পরে ভারতে পাওয়া যায়। ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের পর, বালী তার সে সময়ের অবস্থার বিভীষিকাময় বিবরণ প্রকাশ করেন : তাকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর (বিএসএফ) কাছে হস্তান্তর করে। যেখানে তিনি নির্মম মারধর ও নির্যাতনের শিকার হন। এভাবে সাঈদীর বিচারে ভারতের সম্পৃক্ততা নীতি-পর্যায়ের প্রভাবের বাইরে কৌশলের সরাসরি বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রসারিত হয়। ভারত যখন সাঈদীর ফাঁসির উপর জোর দিয়েছিল, তখন ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের পর দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রাণহানি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেটি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে। আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে আরো অস্থিরতার আশঙ্কায় তিনি আপিল বিভাগকে তা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দানের নির্দেশ দেন। সিদ্ধান্তটি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে গভীরভাবে হতাশ করে, যিনি প্রায়ই দুঃখ প্রকাশ করতেন তার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুশোচনা ছিল আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড দেখতে না পারা। এমনকি তিনি শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অনুরোধও করেছিলেন। তবে শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে এটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এ কারণে যে, তিনি বিশ্বাস করেছিলেন এটি তার শাসনকে অস্থিতিশীল করবে।
ট্রাইব্যুনালের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বাংলাদেশে ন্যায়বিচার হওয়া নিয়ে ততটা ছিল না; বরং তা ছিল বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের খেলার একটি বিষয়। ওয়াশিংটনের একটি স্পষ্ট লক্ষ্য ছিল : হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গুরুত্ব কমানো। প্রশ্ন হতে পারে এটি কেন? কারণ যুক্তরাষ্ট্র অবিচলভাবে আইসিসিতে যোগদানে অস্বীকার করে আসছিল। এটি বিশ্বব্যাপী সামরিক হস্তক্ষেপের সাথে জড়িত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে তার নিজের নেতাদের আদালতের সামনে টেনে আনার ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে। আইসিসিকে এড়িয়ে যেতে, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় ট্রাইব্যুনালের ধারণা উৎসাহিত করতে চেয়েছিল, যেন তারা প্রমাণ করতে পারে যে আইসিসির মতো এসব ট্রাইব্যুনাল কার্যকরভাবে ন্যায়বিচার দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুদ্ধাপরাধবিষয়ক মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যাট-লার্জ স্টিফেন জে. র্যাপকে ট্রাইব্যুনাল গঠনে সহায়তা করতে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল, যেন এটি বিশ্বের জন্য একটি নমুনা হিসেবে দাঁড়াতে পারে। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, বিচারগুলোকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। র্যাপ এমনকি আইনি হেভিওয়েট সিয়েরা লিওনের জন্য বিশেষ আদালতের প্রাক্তন প্রধান প্রসিকিউটর ডেসমন্ড ডি সিলভা কিউসির দক্ষতা ধার দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ট্রাইব্যুনালের কাঠামোর উন্নতিতে বেশ কয়েকটি আইনি সংশোধনেরও প্রস্তাব করেছিলেন; কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তার পরামর্শ উপেক্ষা করে এবং স্থানীয় মিডিয়া তার যেকোনো সমালোচনা এড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের মিডিয়া তাকে ট্রাইব্যুনালের চিয়ারলিডার হিসেবে চিত্রিত করে, কিন্তু সেটি সত্য ছিল না। মে ২০১৩ সালে, ওয়েস্টিন হোটেলে একটি খোলামেলা বৈঠকের সময় ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকসহ আমাদের ডিফেন্স টিম, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাসহ র্যাপের মুখোমুখি হয়েছিল। ব্যারিস্টার রাজ্জাক ডিফেন্স কৌঁসুলি দলের ক্রমবর্ধমান হতাশার কথা প্রকাশ করেন। তারা গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ বিচার হিসেবে যা দেখেছেন তা বৈধ করার অভিযোগ করেন র্যাপের বিরুদ্ধে। র্যাপ অবশ্য নিজেকে ডিফেন্ড করেন, জোর দিয়ে বলেন, তিনি এসবের সমালোচনায় সোচ্চার ছিলেন কিন্তু প্রায়ই বাংলাদেশী মিডিয়া তাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে। রাষ্ট্রদূত র্যাপের পরামর্শ সরকারকে গ্রহণ করাতে ব্যর্থতার কারণে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর শেষ পর্যন্ত বিচারের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।
ট্রাইব্যুনালের বিচারগুলো বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রস্তুতি নেয়ার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে। একটি নাটকীয় শেষবারের প্রচেষ্টায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনাকে ফোন করে এ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বন্ধ করার আহ্বান জানান। কেরির আবেদনটি কেবল একটি জীবন বাঁচানোর বিষয়ে ছিল না এটি বিশ্বমঞ্চে দেশীয় ট্রাইব্যুনালগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার বিষয়ও ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার ওপর ভারত সরকারের প্রভাব ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং মার্কিন চাপ সত্ত্বেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এটিকে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রাথমিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্র ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে সতর্কভাবে আশাবাদী ছিল, কিন্তু কুখ্যাত স্কাইপ কেলেঙ্কারি, সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর অপহরণ এবং আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসিসহ একাধিক কেলেঙ্কারি সেই আশাকে ধূলিসাৎ করে দেয়। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দেশীয় ট্রাইব্যুনালগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধের ক্ষেত্রে সঠিক মানের বিচার দিতে পারেনি। দেশীয় ট্রাইব্যুনালের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠার মার্কিন প্রকল্প বাংলাদেশে ব্যর্থ হয়।
কিন্তু ডিফেন্স টিমকে সহায়তা করতে রাষ্ট্রদূত স্টিফেন জে. র্যাপের প্রচেষ্টা স্বীকৃতির যোগ্য, এমনকি যদিও তার সামনে নানামুখী প্রতিকূলতা দাঁড় করানো হয়। ডিসেম্বর ২০১৩ সালে, তিনি আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের কাছে সরাসরি আবেদন করেছিলেন যেন আবদুল কাদের মোল্লাকে আপিল বিভাগের সামনে একটি পুনর্বিবেচনার আবেদন দায়ের করার অধিকার দেয়া হয়। র্যাপের প্রচেষ্টায় আংশিকভাবে সাড়া দেয়া হয়। আপিল বিভাগ ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ সকালে রিভিউ শুনানির জন্য সম্মত হন। কিন্তু বিচারকরা দাবি করেন, ডিফেন্স টিমকে এক দিনের মধ্যে তাদের যুক্তি শেষ করতে হবে। সন্ধ্যা নাগাদ চূড়ান্ত অধ্যায় লেখা হলো : আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে।
ডিফেন্স টিমের জন্য এটি ছিল অকল্পনীয় বানোয়াট অভিযোগ ও মিথ্যা প্রমাণের ভিত্তিতে একজন বিরোধী রাজনীতিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে সরকার ও বিচার বিভাগ কতটা স্বেচ্ছায় পরস্পর সহযোগিতা করেছে তার উদাহরণ। এমনকি রাষ্ট্রদূত র্যাপের জন্যও এটি সে রকম ছিল। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে প্রাথমিকভাবে বিচারের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত এটি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও আন্তর্জাতিক মোহভঙ্গের একটি সতর্ক ঘণ্টা বাজানোর গল্পে পরিণত হয়। ভারতের তীব্র প্রভাব, যুক্তরাষ্ট্রের দেশীয় ট্রাইব্যুনালগুলোকে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার কার্যকরের বিকল্প হিসেবে দেখানোর ব্যর্থচেষ্টা এবং নিরপেক্ষতার জন্য ট্রাইব্যুনালের নির্লজ্জ অবহেলা সবই ন্যায়বিচারের এক অন্ধকার চিত্র অঙ্কন করেছে।
লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালাতের নিবন্ধিত কৌঁসুলি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা