খুঁজছি সাইয়েদ মাহবুব মোর্শেদকে
- হাসনাত আরিয়ান খান
- ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সাইয়েদ মাহবুব মোর্শেদ ১৯১১ সালের ১১ জানুয়ারি মুর্শিদাবাদের এক সন্ত্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে তার জীবনী নেই। বাংলাদেশে নেই, পশ্চিমবঙ্গে নেই, আসামে নেই, ত্রিপুরায় নেই, বিহারে নেই, উড়িষ্যায় নেই, আন্দামানে নেই, আরাকানে নেই।
১৯৪৩ সালে তিনি অবিভক্ত বাংলার দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের পাশে ছিলেন। ১৯৪৯ সালে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গাবিধ্বস্ত পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা অঞ্চলের সংখ্যালঘু ও উদ্বাস্তুদের আশ্বস্ত করতে এবং তাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে তিনি ঐতিহাসিক ‘নেহরু-লিয়াকত’ চুক্তি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ষাটের দশকে সুপ্রিম কোর্টে বিচারকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি রেড ক্রসের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তিনি তার মামা অবিভক্ত বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের সাথে ১৪৪ ধারা ভেঙেছিলেন। তখন তিনি ও তার মামা দু’জনেই আটক হয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯৬৪ সালে তিনি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ১৯৬৬ সালের স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি ছয় দফার চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৬৭ সালে ছয় দফা আন্দোলন তুঙ্গে থাকাকালে তিনি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানবাসীর সংখ্যাগরিষ্ঠতার যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৯টি আসন আদায় করেছিলেন।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করাতে রাজি হননি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সার্ক গঠনের পরামর্শ তিনি দিয়েছিলেন। স্কুলের প্রতিটি শ্রেণীতে তিনি প্রথম হয়েছিলেন। ১৯২৬ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তিনি বগুড়া জিলা স্কুল থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। প্রবেশিকা পাসের পর তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন এবং সেখান থেকেই তিনি ১৯৩০ সালে অর্থনীতিতে বিএ (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। এরপর ১৯৩২ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম এ এবং ১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। ১৯৩৯ সালে তিনি বিলেতের লিংকন্স ইন থেকে ‘বার এট ল’ সম্পন্ন করেছিলেন। ওই বছর ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া থেকে ‘বার এট-ল’ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তিনি প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন। ত্রিশের দশকে তিনি উপমহাদেশের বিখ্যাত মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তিনি অন্য অনেক বিষয়ের মতোই রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ইকবাল, শেকসপিয়র, শেলি, কিটস, টেনিসন, হাফিজ ও শেখ সাদীর কবিতা সম্পর্কে অগাধ জ্ঞানার্জন করেন। ১৯৫৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। আইনজীবী হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করলেও তিনি দক্ষ বিচারক হিসেবে আকাশছেঁায়া খ্যাতি পেয়েছিলেন। তিনি নিছক আইনশাস্ত্র অনুশীলন করে আইনের টেকনোক্র্যাট হননি। তার জ্ঞান ও অনুসন্ধিৎসা পরিধি বহুধা বিস্তৃত ছিল।
তিনি রাজনীতিক ছিলেন না কিন্তু দেশের সমস্ত নির্ভেজাল গণতান্ত্রিক রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। আমরা যখন লড়ছি ও সংগঠিত হচ্ছি, তখন একজন সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের অভাব আমরা অনুভব করছি। আমরা তাকে আদালতের ভেতরে খুঁজছি, আদালতের বারান্দায় খুঁজছি, রাজপথে খুঁজছি, টেবিলের আলোচনায় খুঁজছি, শান্তিতে খুঁজছি, সংগ্রামে খুঁজছি, শহর, নগর, বন্দর সব জায়গায় খুঁজছি। কোথায় পাবো তারে। এরকম মানুষ কি আর জন্মাবে বাংলায়? ১৯৭৯ সালের ৩ এপ্রিল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত তিনি শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের যোগ্যতম উত্তরাধিকারী হিসেবে বেঁচে ছিলেন।
লেখক : গবেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা