ঐক্যের বিকল্প নেই
- অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
- ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বহমান সময়ের সাথে সততই আবর্তিত হচ্ছে দেশ, সমাজ ও পৃথিবী। সময় আমাদের অভিজ্ঞতায় পুষ্ট করে, সমাজকে নতুন করে সাজায়, সভ্যতার পূর্ণতা দেয়। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন দেশ, জাতি নিজেকে সমৃদ্ধ করে। এই সমৃদ্ধকরণের প্রধান নিয়ন্ত্রক জাতীয় ঐক্য। জাতিসত্তাবোধে উদ্বুদ্ধ ঐক্যবদ্ধ জাতি একদিকে নিজেকে সমৃদ্ধ করে, অন্যদিকে পৃথিবীকে সামনে এগিয়ে নেয়ার নেতৃত্ব দেয়। তারা সভ্যতার অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করে, নতুন দিকনির্দেশনা দেয়।
ঐক্যবদ্ধ চেতনা ও জাতিসত্তাবোধের স্বাতন্ত্র্য ১৯৪৬ সালের গণভোটে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের রচনার অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিল, এ কথা ইতিহাসের অমোঘ সত্য। পরে অবহেলা ও বঞ্চনার পথ ধরে বিভাজিত জাতিসত্তায় জন্ম নেয় ’৬৯-এর ছাত্র-গণআন্দোলন, যার পথ ধরে অনিবার্যভাবেই রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় নতুন দেশ ও পতাকার, বাংলাদেশ নামের নতুন দেশের। ’৪৬-এর গণভোট, ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর ছাত্র-গণআন্দোলন, প্রতিটি ক্ষেত্রে লক্ষণীয় তারুণ্যের বিকাশ, তরুণ নেতৃত্ব। নতুন সম্ভাবনার চেতনায় উদ্বুদ্ধ তারুণ্য এসব আন্দোলনে, সংগ্রামে অগ্রবর্তী থেকেছে। পাশাপাশি প্রাজ্ঞ, শাণিত, অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিয়েছে রক্ষণশীল ভূমিকা। তারুণ্যের চোখের ভাষা, হৃদয়ের আকাক্সক্ষা বোঝার ব্যর্থতা তাদের পেছনে ফেলে। এগিয়ে যায় তরুণরা। রচিত হয় নতুন ইতিহাস।
সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল চেতনাবোধ ধারণ করতে প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বের ব্যর্থতা বারবার তরুণ প্রজন্মকে বিদ্রোহী হওয়ার অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। অধুনা মধ্যপ্রাচ্যের জেসমিন বসন্ত, বাংলাদেশের জেন-জি বিপ্লবের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা লক্ষণীয়। রক্তাক্ত বিপ্লবের সিঁড়ি বেয়ে বাংলাদেশ এখন প্রত্যাশার নতুন সোনালি ভোরের দ্বারপ্রান্তে। এই বিপ্লবের অভূতপূর্ব ছাত্র গণজাগরণে মূল নিয়ামক ছিল তারুণ্য। সুদীর্ঘ ১৮ বছরে অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ এবং চেতনায় ঋদ্ধ রাজনীতিবিদরা যা করতে পারেননি, তা সম্মিলিত তারুণ্য তিন মাসের ঐক্যবদ্ধ চেতনার ভিত্তিতে সফলতার সোপানে পৌঁছে দিয়েছে।
এবারো তারুণ্যের শক্তি, তাদের ঐকতানের অপরিহার্যতায় সর্বস্তরের, সব বিশ্বাসের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন প্রমাণ করে ঐক্যের বিকল্প নেই। দেশপ্রেমের চেতনা, দেশ গড়ার অনুভূতি, সব ধরনের বৈষম্যের অবসানের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ঐক্যই যে একমাত্র শক্তি তা আবারো প্রমাণিত হলো জুলাই বিপ্লবে। যে চেতনায় সংঘটিত হয়েছে এই রক্তাক্ত বিপ্লব, তার বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।
রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় বিশ্বাস, ভাষা এবং গোত্রীয় বেড়াজালের বাধা পেরিয়ে গড়ে ওঠা অক্ষয় ঐক্যই পারে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে। নির্মম গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা এবং নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাঙ্গনে ফেরত পাঠানো, জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক কার্যক্রমে শৃঙ্খলা বিধান, পাচার হয়ে যাওয়া সম্পদের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার, সীমান্তের হুমকি সব কিছুর জন্য প্রয়োজন সুকঠিন জাতীয় চেতনা ও ঐক্য।
এখন দেশের অস্তিত্বের লড়াই, সুবিচারের লড়াই, বৈষম্য অবসানের লড়াই। এ লড়াইয়ে জিততে হলে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। জাতীয় ঐক্যের কেন্দ্রীয় নিয়ামক রাজনৈতিক সংহতি, সমঝোতা। প্রয়োজন বিপ্লবের অগ্রসৈনিক তরুণদের আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন অনুধাবন করা। এখন বিভেদ বা মান-অভিমানের সময় নয়। সময় জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার, জাতির চেতনা ধারণ করার। দেশের আপামর জনগণকে এক মোহনায় একত্র করার সময় এখন। দলীয় সঙ্কীর্ণতার বেড়া ভেঙে জাতীয় নেতায় পরিবর্তিত হওয়ার সময়। সময়ের প্রয়োজনে নতুন চেতনায় অভিষিক্ত হওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সময়। এর ব্যর্থতা আগামীতে জাতিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য গোলামির সঙ্কটে ফেলবে নিঃসন্দেহে।
আপামর ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক-জনতা এখন কষ্টার্জিত মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার প্রত্যাশায় চেয়ে আছে জাতীয় ঐক্যের প্রতিভূ রাজনৈতিক নেতাদের দিকে। ’৪৭, ’৬৯, ’৭১, ’৭৫, ’৮৯-এর চেতনা বারবার ছিনতাই হয়েছে জাতীয় অনৈক্যের কারণে। ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ায়। পুরো জাতি এখন ব্যক্তিগত, পারিবারিক, দলীয় প্রভাব বলয়ের বেড়া ডিঙিয়ে জাতীয় ঐক্যের প্রত্যাশায়। সবার সহমত, সহযোগিতার ভিত্তিতে দেশপ্রেমের আলোয় সৃষ্টি হতে পারে এই ঐক্য। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে। এখন সময় নয় একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর। সব ভুলে গিয়ে সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যের মাধ্যমে জাতীয় সমস্যার সংস্কার করে নির্বাচনমুখী হওয়ার এটিই একমাত্র পথ।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা