জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ও জন-অভিপ্রায়
- ড. মিয়া মুহাম্মদ আইয়ুব
- ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
এ সপ্তাহের সবচেয়ের আলোচিত বিষয় ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ। বিপ্লবের প্রধান শক্তি তরুণ শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী’ আন্দোলনের ব্যানারে ৩১ ডিসেম্বর বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের কথা জানিয়ে বিপুল ছাত্র-জনতার সমাবেশ করার কথা জানিয়েছিলেন। কিছু নাটকীয়তার পরে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে দেন-দরবার করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপুল ছাত্র-জনতার সমাবেশ ঘটান। আগামী ১৫ জানুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশে সরকারকে সময় বেঁধে দেন। সমগ্র জাতি এখন অপেক্ষা করছে, যে ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তাতে কী কী থাকছে। মূলত ঘোষণাপত্রটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল। জাতির আগামী দিনের পথচলার একটি দিকনির্দেশনা।
গত সপ্তাহের একই কলামে যুক্তি তুলে ধরেছিলাম যে, ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারের অকস্মাৎ যে পতন ঘটেছে; তা ইতিহাসের মানদণ্ডে একটি বিপ্লব। যদিও বিপ্লব-পরবর্তী সরকারের বৈশিষ্ট্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলে থাকেন। একইসাথে অনেকের মতে এটি একটি দুর্বল সরকার যাকে বৈপ্লবিক সরকার বলা যায় না। তাদের কথায় যুক্তি আছে সন্দেহ নেই। তবে সরকার ইতোমধ্যে দুটো গুরুত্বপূর্ণ কাজ হাতে নিয়েছে, যাকে অসাধারণ বলতে হবে। প্রথমত, পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের দ্বারা মানবতাবিরোধী যে নির্মম হত্যাকাণ্ড ও নানাবিধ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার ন্যায্যবিচারের উদ্যোগ নেয়া। নিয়তির কী পরিহাস, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যে ট্রাইব্যুনাল ও বিধি-বিধান হাসিনা সরকার তৈরি করেছিল প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের বিচারে, ওই আদালত ও আইন-কানুন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বর্তমান সরকারের একটি সাহসী উদ্যোগ। চিফ প্রসিকিউটর বলেছেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে ন্যায়বিচার করা হবে। যদি বিচারের কাজটি সঠিকভাবে করা যায় তাহলে সেটি একটি বিপ্লবী সরকারেরই সাফল্য হবে। দ্বিতীয়ত, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার সর্বক্ষেত্রে দেশ ও জনগণের যে ক্ষতি করে গেছে তার প্রতিবিধানে ব্যাপক সংস্কার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। দশটি কমিশন নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিবেদন প্রণয়নে এবং সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে দু-একটি বাদে বাকি প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে আশা করা যায়। অতীতে যেসব সংস্কার কমিশন বা কমিটি গঠিত হয়েছিল সেগুলো ছিল সরকারের প্রভাবান্বিত। সরকারের অভিপ্রায় প্রতিবেদনগুলোতে প্রতিফলিত হয়েছিল। যদিও সুপারিশগুলোর সামান্য বাস্তবায়িত হয়েছিল। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দৃঢ় অঙ্গীকারের অভাব এবং স্বার্থান্বেষী আমলাদের অসহযোগিতা ও বিরোধিতায় অতীতের অনেক সংস্কার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সঠিকভাবে উপলব্ধি করে বিপ্লবের শুরুতে বলেছিলেন যে, সমাজ ও রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ এসেছে তা বারবার আসবে না; এবার সুযোগের সদ্ব্যবহারে ব্যর্থ হলে নিকট ভবিষ্যতে আর সুযোগ পাওয়া যাবে না। আর সেজন্য ড. ইউনূসের সরকার উল্লিখিত দু’টি কাজ অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছে, যাকে বৈপ্লবিক কাজ বলতে হবে। আমাদের বিশ^াস জনগণের বৃহদংশ সরকারের এ দু’টি উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
এখন কথা হচ্ছে, যে কোনো বিপ্লবের একটি জনপ্রত্যাশা থাকে। তার একটি প্রেক্ষাপট থাকে। যে প্রেক্ষাপটে জুলাই বিপ্লব ঘটেছে তা সবার জানা আছে। তথাপি সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে ঘোষণা করা অত্যন্ত জরুরি। এরূপ ঘোষণা বিপ্লবের পূর্বে অথবা অব্যবহিত পরে দেয়া দরকার ছিল। আমরা দেখতে পেয়েছি যে, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পতনে বিরোধী দলগুলো এক যুগ ধরে সক্রিয় আন্দোলন পরিচালনা করলেও ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে যে জুলাই বিপ্লব ঘটেছে তা ছিল এক কথায় মিরাকেল। কিছু বুঝে ওঠার আগে বিপ্লব ঘটে যায়। এমনকি আগে থেকে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোও ত্বরিত সাফল্যের ধারণা করতে পারেনি। ফলে আগেভাগে বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা বাস্তবসম্মত ছিল না। তবে ৫ আগস্টের পরে দেয়া দরকার ছিল। এবারের বিপ্লবে দল-মত নির্বিশেষে সমাজের সব স্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে একটি জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সুতরাং সে পরিবেশই ছিল বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের মাহেন্দ্রক্ষণ। ধন্যবাদ বিপ্লবী শিক্ষার্থীদের যারা বিলম্বে হলেও সেটি প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। এজন্য কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে সরকারকে সম্মত করাতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে- বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে কী বয়ান থাকবে। বাংলাদেশ তিনটি ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বারবার রাষ্ট্র গঠন, আত্মপরিচয় বিনির্মাণ ও নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করেছে। প্রথমত, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হয়ে পাকিস্তান গঠন ছিল একটি বিরাট স্বপ্ন; আমাদের পূর্ব-পুরুষ নবাব সলিমুল্লাহ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রমুখ নেতা তাদের জীবন-যৌবনের মূল সময় ব্যয় করেছেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ও কুচক্রী রাজনীতিকদের স্বার্থবাদী মানসিকতা ও উন্নাসিকতায় পূর্ব বাংলার জনগণ বিক্ষুব্ধ হন এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে দেশ স্বাধীন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনাপতিসহ অনেকে তখন প্রতিবেশী দেশের কুমতলব বুঝতে পারলেও বৃহত্তর স্বার্থে তা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। বিগত ৫৩ বছরে বাকিরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন, ভারত আমাদের সত্যিকারের বন্ধু নাকি বন্ধুবেশী শত্রু। তারা নিজ দেশে গণতন্ত্রের চর্চা করলেও বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমূলে ধ্বংস করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে গেছে।
বাংলাদেশের জনগণ অন্তত তিনবার গণতন্ত্র রক্ষায় আন্দোলন-সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন। ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশালের বিরুদ্ধে, ১৯৯০ সালে সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদের পতনে। প্রতিটিতে জনগণ জয়লাভ করেছেন। সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিন তিনটি শয়তানি শক্তির জুলুম-নির্যাতনের যে তিক্ত ও অভিশপ্ত শাসন আমরা প্রত্যক্ষ করেছি তার ফল হচ্ছে জুলাই বিপ্লব। বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে নিশ্চয় এসবের প্রতিফলন থাকবে।
আমেরিকান বিপ্লবের সময় আব্রাহাম লিঙ্কন গেটিসবার্গের ঐতিহাসিক ভাষণে গণতান্ত্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যা বলেছিলেন তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হয়ে আছে : জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য, জনগণের সরকার।
১৭৮৯ সাল থেকে ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত ১০ বছরব্যাপী লড়াইয়ের পর ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়। ১৭৯২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে তিনটি প্রধান নীতির কথা বলা হয় : স্বাধীনতা, সমতা ও ভ্রাতৃত্ব। রুশ কমিউনিস্ট বিপ্লবের অব্যবহিত পরে ১০ নভেম্বর ১৯১৭ সালের সরকারি দলিলে বলা হয় যে, দেশের জনগণ সকলে রাশিয়া প্রজাতন্ত্রের নাগরিক এবং সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রের বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে তারা সমান অধিকার পাবেন। ১৯৪৯ সালে মাও জে দঙয়ের নেতৃত্বে চীনে যে কমিউনিস্ট বিপ্লব হয় তার পেছনে ছিল মার্কসবাদ-লেনিনবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা ও সর্বহারার সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
১৯৭৯ সালে সংঘটিত ইরানের ইসলামী বিপ্লবের উদ্দেশ্য সম্পর্কে দেশটির সংবিধানে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ইসলামের আলোকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারের কথা বলা হয়। ২০১০-২০১১ সালে সংঘটিত আরব বসন্ত বা গণ-আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছিল : ‘বাংলাদেশের জনগণ ১৯৭০ সালে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যেই ম্যান্ডেট প্রদান করিয়াছে সেই ম্যান্ডেট অনুযায়ী আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ আমাদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠন করিয়া পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ-এ রূপান্তরিত করার ঘোষণা প্রদান করিতেছি। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রস্তাবে বলা হয়, ‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে।’ এটি ছিল স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সাথে বিশ^াসঘাতকতা। যা হোক, বাংলাদেশের মূল সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১১তে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের আংশিক প্রতিফলন ঘটেছিল। পরবর্তীতে অবশ্য ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা ও নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণ করে জাতির সাথে চরম প্রতারণা করা হয়।
উল্লেখ করা যেতে পারে, শুরু থেকে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা নিয়ে তীব্র বিতর্ক ছিল। সর্বোপরি সংবিধান গ্রহণের বিষয় জনগণের ম্যান্ডেট নেয়া হয়নি। সম্প্রতি সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেছেন, ‘১৯৭২ সালে একটিমাত্র দল সংবিধান প্রণয়ন করেছিল।’ এরপর বহুবার ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা দলীয় স্বার্থে সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এমন হাল হয়েছে যে, একে হুবহু বহাল রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এরূপ দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো ব্যক্তি ও দল সংবিধান বাতিল করে নতুন করে রচনার কথা বলছেন। কারো কারো মতে, প্রয়োজনীয় সংশোধন করলে চলবে। যেটাই হোক না কেন, সংবিধান রচনা বা সংশোধন করতে গেলে প্রথমে আসবে সংবিধানে ভূমিকা ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া বয়ান রাখা হবে নাকি বাতিল হবে। বাতিল হলে তার প্রতিস্থাপন কী দিয়ে হবে।
২০২৪ সালের বিপ্লবকে অনেকে দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলছেন। সুতরাং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে ইতিহাসের কী বয়ান থাকবে তা বেশ প্রাসঙ্গিক। শিক্ষার্থী ও জনতা যে বৈষম্যবিরোধী ও ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা নিয়ে লড়াই করেছিলেন তার বহিঃপ্রকাশ নিশ্চয় বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে স্থান পাবে। তবে দেশের তথাকথিত সুশীলসমাজের যে অংশটি সেক্যুলার ধারণায় বিশ^াসী; তারা কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে তা দেখতে উৎসুক হয়ে রইলাম। আবার দেশের ইসলামী ধারার রাজনৈতিক ও আধা-রাজনৈতিক শক্তিগুলোও চাইবে, বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে তাদের চেতনা ও মূল্যবোধ স্থান পাবে। জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যে, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ‘আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ^াস’ অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন বিএনপি তার বাইরে যেতে পারবে না। তবে এ নিয়ে বর্তমান বিএনপি নেতৃত্বেও বিশেষ আগ্রহও দেখা যায় না। জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য সব ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোর সাথে জিয়াউর রহমানের আদর্শের মিল রয়েছে। এখন দেখার বিষয়- সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের ভূমিকায় জনগণের সম্মিলিত অভিপ্রায় ও অঙ্গীকারকে কোন বয়ানে পেশ করে।
আমাদের ধারণা, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার যে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সেটি তুলে ধরাই হতে পারে সব পক্ষকে শান্ত রাখার একটি কৌশল।
সুতরাং আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে জাতীয় ঐক্য ও জনগণের বৃহদংশের অভিপ্রায় সঠিকভাবে তুলে ধরবে এবং তাই হবে আগামী বাংলাদেশের পথচলার পথনকশা।
লেখক : গবেষক ও সাবেক সচিব
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা