ভারতে ‘বুলডোজার পলিটিক্স’
- মো: বজলুর রশীদ
- ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বুলডোজার পলিটিক্স বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন সংযোজন। এর জন্মস্থান ভারতে, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হাতে। বুলডোজার রাজনীতি বলতে বুলডোজারকে রাজনৈতিক হাতিয়ার ও প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করাকে বোঝানো হয়েছে। বিজেপি সরকার ‘অবৈধ’ বিবেচিত কাঠামো ধ্বংস করতে বুলডোজার ব্যবহার করছে। প্রায়ই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষত মুসলমানদের সম্পত্তিকে লক্ষ্যবস্তু করে সরকার বুলডোজার নীতি অনুশীলন করছে।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই নীতি প্রবর্তনের গুরু। তার ভাষায় ‘বুলডোজ করুন’ শব্দগুলো বিশিষ্টতা অর্জন করেছে। সমালোচকরা যুক্তি দেখান যে এই পদ্ধতি আইনের শাসন ক্ষুণœ করেছে। বিষয়টি খোদ ভারতে সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে বুলডোজার বাবা ও মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে বুলডোজার মামা নামকরণ করেছে ভারতীয় লোকজন।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে প্রকাশ : নাগরিক অধিকারের অ্যাডভোকেসি গ্রুপ অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটসের আইনজীবী নাজমুস সাকিব বলেন, ‘অননুমোদিত অবকাঠামো নির্মাণের দাবিগুলো অসঙ্গত এবং বিশেষভাবে বারবার একটি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে। এমন পরিস্থিতিতে, আমাদের সম্প্রদায়কে বিচারিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা রাখতে বোঝানো কঠিন, যখন তারা সর্বত্র আশাহীনতা ও ভারসাম্যহীনতা প্রত্যক্ষ করে আসছে।’ হাজারো ঘটনার ভিড়ে দু-একটি ভাইরাল উদাহরণ তুলে ধরা যায়।
২০২২ সালের জুনে, উত্তর প্রদেশের শহর প্রয়াগরাজের কর্তৃপক্ষ জাভেদ মোহাম্মদের বাড়ি ভেঙে দেয়। তাকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে অভিযুক্ত করা হয়। নবী মুহাম্মদ সা:-এর বিরুদ্ধে তৎকালীন-বিজেপি মুখপাত্র নূূপুর শর্মার অবমাননাকর মন্তব্যের পরে এই সহিংসতা শুরু হয়। ২০২৪ সালের জুন মাসে উত্তরপ্রদেশের আকবর নগরে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া এক হাজার ৬০০টি বাড়ির মধ্যে সালমা বানুর বাড়ি ছিল। লখনৌতে কুকরাইল রিভারফ্রন্ট উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এক হাজারটিরও বেশি মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। জঙ্গল তৈরির জন্য তাদের ভাঙা ঘরের ওপর চারা রোপণ করা হয়েছিল। সালমা বানু বলেন, ‘আমাদের আশপাশের পুরো এলাকা বুলডোজারবেষ্টিত ছিল এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সবকিছু ধুলায় পরিণত হয়েছিল। পরের দুই-তিন দিন খোলা আকাশের নিচে আমাদের খাওয়ার মতো কিছুই ছিল না। আমার পাঁচটি সন্তান। যখন আমার বাড়ি এবং আমার জগৎ সব ভেঙে গেছে তখন আমি কিভাবে তাদের খাওয়াব?’ মুসলিম সোসাইটির ঘরবাড়ি ছাড়াও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ মাদরাসাও ‘বুলডোজড’ হয়েছে। অহিংসার কথা বলা হলেও বিজেপির গর্ব করার মতো কিছু নেই।
ভারতে ঠিক কতগুলো মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন, বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে, ২০১৬ থেকে গত আট বছরে (২০১৪-২০২৪ মোদির দশ বছর) মসজিদসহ মুসলিম মালিকানাধীন হাজার হাজার সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শুধু ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ১২৮টি স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে, যার বেশির ভাগই মুসলমানদের মালিকানাধীন। এই ধ্বংসযজ্ঞ প্রায়ই অবৈধ নির্মাণের অজুহাতে ‘বুলডোজড’ করা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন যে, ‘বুলডোজিং’ মুসলিম মালিকানাধীন সম্পত্তিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়, বুলডোজার ব্যবহারে কাঠামো তাড়াতাড়ি ভেঙে পড়ে ও কর্তৃপক্ষ তাড়াতাড়ি স্থানত্যাগ করতে পারে ফলে সহসা কোনো প্রতিরোধ সৃষ্টি হয় না।
মসজিদ ভাঙচুরের এলাকাভিত্তিক তথ্য না থাকলেও উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট ও দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ভারতীয় মিডিয়ায় রিপোর্ট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন, গুজরাটে সোমনাথ মন্দিরের নিকটবর্তী বেশ কয়েকটি ধর্মীয় কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছিল, যার মধ্যে মসজিদ এবং কবরস্থান ছিল। দিল্লির মেহরৌলি এলাকায় শত বছরের পুরোনো মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই ঘটনাগুলো বিভিন্ন অঞ্চলজুড়ে ইস্যুটির বিস্তৃত প্রকৃতিকে তুলে ধরে। মসজিদ-মাদরাসা ভাঙচুরের সাথে যুক্ত হয়েছে গো-হত্যা বা গো-মাংস ভক্ষণ ইস্যু।
দেখা যায়, গরুর মাংস রেখে খাওয়ার জন্য মুসলিমদের কিছু বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, এমনকি অনেককে হত্যা করা হয়েছে, যদিও ভারত বিশ্বের দ্বিতীয়, কোনো কোনো হিসাবে তৃতীয় বৃহত্তম গরুর মাংস রফতানিকারক দেশ। গরু জবাই বা গরুর মাংস খাওয়ার অভিযোগে মুসলমানদের লক্ষ্য করে সহিংসতা ও সম্পত্তি ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে অসংখ্য । বলতে হয়, এই বৈষম্য ভারতের জটিল সামাজিক-রাজনৈতিক গতিশীলতাকে তুলে ধরে, যেখানে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুভূতি প্রায়ই অর্থনৈতিক অনুশীলনের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এই সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন যা সব নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার ও সমতা নিশ্চিত করার সময় সাংস্কৃতিক বিশ্বাসকেও সম্মান জানাবে। এসব ঘটনার সাথে যুক্ত হচ্ছে দাঙ্গা হাঙ্গামা, মিছিল বিক্ষোভ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি।
বুলডোজের সাথে একটি অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে দাঙ্গা। দাঙ্গা বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘটিত হয়। ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ভারতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দাঙ্গা বেধেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে চার লাখ সাত হাজারেরও বেশি দাঙ্গার মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। প্রতি বছর মামলার সংখ্যা পরিবর্তিত হয়, ২০২০ সালে ৫১ হাজার ৬০৬টি মামলা হয়েছিল। এই সময়কালে বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। যেমন ২০২০ সালের দিল্লি দাঙ্গা, যা নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইনের বিরুদ্ধে প্রতিপালিত হয়।
অতি সম্প্রতি ভারতীয় মিডিয়ায় অনেক বাড়িঘর ও মাদরাসা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। বাড়িঘর ও মাদরাসাগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনাকে ভারতীয় সাংবাদিকরাই ‘বুলডোজার রাজনীতি’ হিসেবে অভিহিত করেছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ ব্যাখ্যা দিচ্ছে যে, অবৈধ নির্মাণ বা দখল অপসারণের অজুহাতে প্রায়ই মুসলিম মালিকানাধীন কাঠামোগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে সম্পত্তি ধ্বংস অভিযান চলছে। সমালোচকরা বলছেন যে, এই পদক্ষেপ বৈষম্যমূলক এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষত মুসলমানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছে। স্থানীয় সরকার যুক্তি দেখান যে নগর উন্নয়ন, সৌন্দর্যায়ন অভিযান বা অবৈধ দখলদারিত্ব প্রতিকার করার জন্য প্রায়ই এই ধ্বংসযজ্ঞকে ন্যায়সঙ্গত বলছে। সমস্যা হলো, বুলডোজ বেশির ভাগই পূর্ব নোটিশ বা আইনি ডকুমেন্টেশন ছাড়াই ঘটছে, যার ফলে অবিচার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং সম্প্রদায়ের ওপর মারাত্মক প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরে অবিলম্বে এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এই সমস্যাটি ভারতের বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক গতিশীলতাকে প্রতিফলিত করেছে, যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো ক্রমবর্ধমান প্রান্তিক এবং লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ায়, এই ধরনের পদক্ষেপের ন্যায্যতা এবং বৈধতা নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্ক এবং সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
বুলডোজার ইস্যুতে ভারতীয় মুসলমানদের নীরবতার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিশোধের ভয় এবং আরো নির্যাতন প্রধান কারণ। ন্যায়বিচার বা সুরক্ষা প্রদানের আইনি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অসহায়ত্ব এবং আস্থার অভাবও প্রকট। অনেকে মনে করেন যে, বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক আবহাওয়ায় তাদের কণ্ঠস্বর শোনা যায় না বা মূল্য দেয়া হয় না। বেদনাদায়ক ঘটনার পরে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার দিকে মনোনিবেশ করতে হয় পরিবার পরিজনদের জন্য। লড়াই চালিয়ে যাওয়া অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীর পক্ষে সম্ভব হয় না। বেঙ্গালুরুভিত্তিক মনোবিজ্ঞানী জুলেখা শাকুর রাজানি বলেন, ‘এই ধ্বংসের একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব, যা ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক ট্রমায় জটিল হচ্ছে এবং এটি সারা ভারতে অনেক মুসলমানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তারা নিজেদের পরিত্যক্ত বোধ করছে এবং তাদের বাস্তবতাবোধ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ তারা তাদের নিজেদের বাড়িতেই আর নিরাপদ নয়।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, বুলডোজার দিয়ে ধ্বংসের ঘটনা বারবার ঘটার কারণে এটা ভারতের মুসলমানদের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ হিসেবে কাজ করছে। দেওবন্দ কর্তৃপক্ষ সম্পত্তি ধ্বংস করার জন্য বুলডোজার ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে। তারা এই পদক্ষেপগুলোকে অন্যায় ও বৈষম্যমূলক বলে নিন্দা জানিয়েছে, জোর দিয়ে বলেছে যে, প্রায়ই যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই এ রকম ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। দেওবন্দ প্রশাসন প্রায় হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর হুমকি ও উসকানিমূলক বক্তব্যের সম্মুখীন হয়েছে, এসব চরমপন্থী ও উগ্রবাদীরা দেওবন্দ মাদরাসা ভেঙে ফেলারও আহ্বান জানিয়েছে। এমপি ওয়েইসি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শাস্তির উপায় হিসাবে বুলডোজার ব্যবহারের সমালোচনা করেছেন।
সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য বাবু অবধেশ প্রসাদ বলেছেন যে, এই পদ্ধতিতে বুলডোজার ব্যবহারের কোনো আইনি বিধান নেই এবং এই পদক্ষেপগুলো আইনের শাসনের বাইরে বলে নিন্দা জানিয়েছেন। বিরোধী নেতারা এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না তা নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপও চেয়েছেন। আনন্দবাজার পত্রিকা রিপোর্ট করে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকে হাতিয়ার করে ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের প্রধান ও হায়দরাবাদের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এমপি আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বলেন, ‘ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে হামলা নিয়ে মোহম্মদ ইউনূস সরকারের সঙ্গে কথা বলা।’ জনাব ওয়েইসি ১৪ ডিসেম্বর লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ওয়াকফ সম্পত্তি কেড়ে নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি ভাষণে বলেন, ‘সংবিধানের ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদটি পড়ুন। তাতে ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোকে তাদের ধর্মীয় এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠিত করার ও বজায় রাখার অধিকার দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ওয়াকফের সাথে নাকি সংবিধানের কোনো সম্পর্ক নেই! তাকে এসব কে শেখাচ্ছেন? তাকে আগে ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদটি পড়তে বলুন।’ এক জ্বালাময়ী ভাষণে তিনি বলেন, ‘মোদির উচিত হাসিনাকে তালাক দেয়া এবং বাংলাদেশের জনগণকে ভালোবাসা।’
ভারতে একটা ট্রেন্ড চলে আসছে বহুদিন ধরে, ছোট-বড় নানা আকারের হিন্দুপন্থী সংগঠন কিংবা কোনো হিন্দু নেতা বা ব্যক্তি আবেদন জানাচ্ছে মসজিদের স্থানে কোনো যুগে সেখানে মন্দির ছিল কিনা। ফলে দেশের নানাপ্রান্তে অশান্তি, সাম্প্রদায়িক ও হিংসা ছড়িয়েছে। এটি এতই বিরক্তিকর যে, খোদ আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও এমন আচরণের তীব্র ধিক্কার জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই কাজ একেবারেই ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। ভগবত বলেন, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, ভারতের সেই নজির গড়ে তোলা উচিত। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায়ের এক পর্যবেক্ষণে বলেছে, পুলিশ বা প্রশাসন কেউ বিচারক নন। প্রশাসনের কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার এক্তিয়ার নেই। কোনো বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে হলে করণীয় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
ভারতে, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বুলডোজারের ব্যবহার তাৎপর্যপূর্ণ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সমর্থকরা যুক্তি দেখান যে এটি অবৈধ নির্মাণ এবং অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অবস্থানের প্রতীক। তবে, সমালোচকরা তুলে ধরেছেন যে এই পদ্ধতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষতঃ মুসলমানদের অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং আইনের শাসনকে ক্ষুণœ করেছে। এই নীতির চূড়ান্ত ফলাফল মেরুকরণ বৃদ্ধি এবং আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা হ্রাস করছে অনেক বেশি।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা