০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`

সন্দর্শনে অন্তর্বর্তী সরকার

-

যদি, কিন্তু আর স্বপ্নের ঘেরাটোপে কি বন্দি হয়ে পড়েছেন ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার? সরকারের পাঁচ মাসের মাথায় নির্বাচন নিয়ে একটি রোডম্যাপ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যেখানে তিনি তার স্বপ্ন আর যদি, কিন্তুর কথা উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা প্রত্যাশী বিএনপিও এ রোডম্যাপকে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন বলে উল্লেখ করেছে। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরানোর কথা জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন। প্রমাণস্বরূপ তিনি রিজার্ভের পতন ঠেকানো ও প্রায় দেউলিয়া হতে যাওয়া কয়েকটি ব্যাংক বাঁচানোর কথা উল্লেখ করেছেন। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও বর্তমানে আর কোনো বিধিনিষেধ নেই বলেছেন। এর সবই সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান সমস্যা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। বাণিজ্য উপদেষ্টা কী করছেন কে জানে? ক’দিন আগেও দ্রব্যমূল্য লাফিয়ে বাড়ছিল। একেক দিন একেকটা পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ব্যবসা বাণিজ্যের স্থবিরতার কথা বলছেন অনেকেই।
দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে রাস্তার এখনো চাঁদাবাজিকে অনেকেই দায়ী করছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পাঁচ মাসের মাথায় এখনো পুলিশকে যথেষ্ট সক্রিয় করতে পারেননি। ফলে জান-মালের নিরাপত্তাই যেখানে বিঘিœত সেখানে চাঁদাবাজি রুখতে যাবে কে? ব্যবসা বাণিজ্যের নিরাপত্তাও বিঘিœত হচ্ছে প্রায়শই। গার্মেন্ট শ্রমিকরা হঠাৎ হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠছেন এক এক প্রতিষ্ঠানে। সেগুলো দমন বা নিয়ন্ত্রণে শ্লথগতি সবার চোখেই দৃশ্যমান। ফলে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। ধর্ম উপদেষ্টা শুরুতে বেশ সক্রিয় থাকলেও সম্প্রতি তিনি কী করছেন সেটিও প্রশ্ন। সংখ্যালঘুরা রাজপথে নেমে আসছিলেন নানা দাবিতে।

মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে শুরু করেন কামড়াকামড়ি। মাজার-দরগা ভাঙতে যান তো আবার ইজতেমার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। এখন পর্যন্ত ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন ধর্মীয় স্টেকহোল্ডারদের যে কমিটিগুলো ছিল সেগুলোরও পুনর্গঠন সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি। জনপ্রশাসন নিয়ে নানা রকম অসন্তোষ ও অভিযোগ উঠছে প্রতিদিন। আমলাদের অসহযোগিতায় নাকি অনেক মন্ত্রণালয় কাক্সিক্ষত গতিতে কাজ করতে পারছে না। বদলি আর পদায়ন ছাড়া জনপ্রশাসনকে ছোঁয়া যাচ্ছে না। ড. ইউনূস সরকারের একমাত্র সাফল্য আর গতিশীল মন্ত্রণালয় হিসেবে মনে করা হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। যদিও ধারণা করা হয়, ড. ইউনূসের তৎপরতা এ সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। ভারতীয় অপপ্রচার ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে যথেষ্ট সক্ষমতা দেখাচ্ছে মন্ত্রণালয়টি। ভারতকে এখন অনেকটাই নমনীয় করতে পেরেছে বাংলাদেশ। ভারতের ভেতর থেকেও এখন কথা উঠতে শুরু করেছে ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের। ভারতীয় বিদেশ সচিব বাংলাদেশ সফরকালে বলতে বাধ্য হয়েছেন পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের সাথে ভারত একমত নয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভারতনির্ভরতা উল্লেখযোগ্য হারে হ্র্রাস করতে পেরেছে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি ছাড়াই। সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনতে পেরেছে বাংলাদেশ। ভারতকে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বাংলাদেশ আপসহীন।
ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত এক আহ্বানেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো বাংলাদেশে তাদের ভিসা সেন্টার খুলে দিয়েছে। ফলে ইউরোপের ভিসার জন্য ভারতে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়েছে। অপর দিকে আইন উপদেষ্টাকে নিয়ে বিতর্ক শুরুর যাত্রা সেই প্রথম থেকে। বিপ্লবী সরকার গঠন না করা নিয়ে এই বিতর্কের সূত্রপাত। সর্বশেষ জাতির উদ্দেশে ভাষণে ড. ইউনূস জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তে গণ-অভ্যুত্থান বলে উল্লেখ করেছেন তাকে। এখনো বিচার বিভাগের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা যায়নি। হাসিনার সময়কার লাখ লাখ মিথ্যা মামলাও প্রত্যাহার হয়নি বিরোধীদের। যা জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি করে চলেছে। স্বৈরাচারী হাসিনা ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে ১/১১ সরকারের সময় দায়েরকৃত মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারত।
৫ আগস্টের পরে যারা লুটপাট করেছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত বলেই জনগণ মনে করেন। রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে, সংবিধান সংশোধনে, বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিষয়ে এবং পতিত সরকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো প্রশ্নগুলোর সমাধান স্রেফ গণভোটের মাধ্যমে করাটা সময় উপযোগী হতে পারত। অথবা জাতীয় ঐক্যের একটি কার্যকর প্রয়াস হয়ে উঠতে পারত একটি গণপরিষদ অধ্যাদেশ। আইন মন্ত্রণালয় সেই সম্ভাবনাও ফেলে দিয়েছে গভীর অন্ধকারে। জনগণের আকাক্সক্ষাকে অপেক্ষা করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার ওপর। এ বিষয়ে অতীত অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। অথচ রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষমতার বাইরে রেখেই তাদের অংশগ্রহণে গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের রাষ্ট্র মেরামতের আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়ন করা যেত খুব সহজেই।
লেখক : রাজনীতিক, সভাপতি, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন


আরো সংবাদ



premium cement
শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে ৩ বিভাগের সব বিষয় ঢাবি পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পুনর্মিলনী হাসপাতালে অভিনেতা প্রবীর মিত্র ও মুশফিক জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ফলে ন্যায্য কাজের স্বাধীনতা পেয়েছি নাফ নদীতে ‘গোলাগুলিতে মাদক কারবারি’ নিহত অনৈতিক সম্পর্কের সময় কান্না করায় ৬ মাসের শিশুকে হত্যা ফরিদপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার অসুস্থ স্ত্রীকে কুপিয়ে জখম ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে : ঢাবি ভিসি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূলভবন উদ্বোধন মঙ্গলবার আ’লীগের ব্যর্থতার কারণে ’৭৪ এর দুর্ভিক্ষ হয়েছিল : অধ্যাপক ফজলুল হক শেখ হাসিনার অনুগত আমলাদের অপসারণ করুন : মুসলিম লীগ

সকল