২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জবাবদিহির জন্য রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলো রিট অধিক্ষেত্রে আনা অপরিহার্য

-


রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলো কি ক্ষমতাসীন দল বা সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার নয়? ক্ষমতাসীন দলকে কেন ঘোষিত ইশতেহারে কোথাও জবাবদিহি করতে হয় না। পাঁচ বছর পরপর এক দিনের ভোট আয়োজন করে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখা যায় না বা জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়ন হয় না। রাজনৈতিক দলগুলোকে পেশিশক্তির মহড়া থেকে বুদ্ধিশক্তির চর্চায় ফিরিয়ে আনতে হলে এবং দলের অভ্যন্তরে থিংক ট্যাংক সংস্কৃতি চাঙ্গা করতে হলে জেলায় জেলায় মানবাধিকার আদালত গঠন অপরিহার্য বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।

দেশে এ জাতীয় কোনো জবাবদিহি কাঠামো সৃষ্টি করা না হলে চাঁদাবাজি, লুটপাট, টাকা পাচার, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও শোষণের অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করা কোনোভাবে সম্ভব নয়। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের মূলনীতিগুলোর সাথে তৃতীয় ভাগের মৌলিক অধিকারগুলোর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। একইভাবে রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলোর সাথে একটি রাজনৈতিক দলের ইশতেহারের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। একটি রাষ্ট্রের মূল উপাদান চারটি- জনগণ, সরকার, একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্ব। জনগণ বাকি তিনটি উপাদানের মালিক। কাজেই জনগণের ক্ষমতায়ন ছাড়া রাষ্ট্রে ইনসাফ কায়েম সম্ভব নয়। রাষ্ট্রক্ষমতা জনগণের হাতে থাকলেও জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করেন না। রাষ্ট্রের চালকের আসনে থাকে সরকার। আবার সরকার গঠন করে ক্ষমতাসীন দল। ফলে ক্ষমতাসীন দল পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতার মধ্যস্বত্বভোগী হয়ে যায়। রাষ্ট্রক্ষমতা মানে ব্যাংক ও শেয়ার মার্কেট লুটপাটের ক্ষমতা, উন্নয়ন বাজেট লোপাটের ক্ষমতা, গুম ও খুনের ক্ষমতা, গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দেয়ার ক্ষমতা, আয়নাঘর বানানোর ক্ষমতা, বিনাবিচারে অনন্তকাল জেলে আটকে রাখার ক্ষমতা, হেফাজতে নিপীড়নের ক্ষমতা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির অবাধ ক্ষমতা, টাকা পাচারের ক্ষমতা ইত্যাদি। জবাবদিহি ছাড়াই সরকার ও ক্ষমতাসীন দলকে রাষ্ট্রক্ষমতা দিলে এসব ঠেকানো অসম্ভব।
পৃথিবীতে রাষ্ট্রক্ষমতা অপপ্রয়োগের নজির অনেক বেশি। এসব রোধ করতে হলে জেলায় জেলায় মানবাধিকার আদালত ও মানবাধিকার কমিশন গঠন অপরিহার্য। এ মর্মে ৪৪ অনুচ্ছেদে সাংবিধানিক ম্যান্ডেট আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে এগুলো জনতার আদালত বা গণ-আদালত হিসেবে মানবাধিকার সুরক্ষার ঢালস্বরূপ কাজ করবে। এগুলো সরকার বা ক্ষমতাসীন দলকে হেফাজতে নেবে না বা কারাগারে নিক্ষেপ করবে না। শুধু জবাবদিহির জন্য আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে যাতে ক্ষমতাবানরা ক্ষমতাহীনদের জুলুম না করেন।

গ্যাং রাজনীতিকে আইন ও জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব নয়। এ রাজনীতি চায় না সংবিধানের মূলনীতিগুলো আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য হোক। এ রাজনীতি জেলায় জেলায় মানবাধিকার আদালত চায় না। জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতির প্রাণশক্তি জবাবদিহি। গ্যাং রাজনীতিতে ভালো মানুষের কোনো প্রবেশাধিকার নেই। এ রাজনীতির আগাগোড়া মিথ্যাচারে ভরা। গ্যাং রাজনীতি মানে খুনখারাবি, ধাপ্পাবাজি ও ভেল্কিবাজি। এটি আসলে অপরাজনীতি। অপরাজনীতি জনগণের ক্ষমতায়ন চায় না; বরং জনগণকে সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতাহীন বানিয়ে রাখতে চায়। অপরাজনীতির সংবিধান রচনা করেন জ্ঞানপাপীরা যারা মানুষের ক্ষতি করতে জ্ঞানার্জন করে। এই অপরাজনীতির সব নেতাই মাফিয়া ডন। অবৈধ টাকা কামাই এবং পাচার করা তাদের নেশা ও পেশা।
জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতিতে খারাপ মানুষের কোনো প্রবেশাধিকার নেই। কেউ এখানে এক পয়সাও হারাম উপার্জন করতে পারবেন না। কেননা, এখানে পদে পদে অডিট ও জবাবদিহি থাকবে। এ রাজনীতি জেলায় জেলায় মানবাধিকার আদালত চায়। টাকা কামাই করার ধান্দা নিয়ে কেউ এখানে ঢুকতে পারবেন না। ঢুকলেও টিকতে পারবেন না। এ রাজনীতির সংবিধান বানান ন্যায়বান থিংক ট্যাংক যাদের মাথায় মানুষের ক্ষতি করার কোনো চিন্তা কখনো আসে না। এ রাজনীতি চায় আদালতের মূলনীতিগুলো আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য হোক। এ রাজনীতি জনগণের ক্ষমতায়ন চায় এবং জনগণকে সাংবিধানিকভাবে বলীয়ান দেখতে চায়।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮(১) এ বলা আছে- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এ নীতিসমূহ এবং তার সাথে এ নীতিসমূহ থেকে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সব নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলে পরিগণিত হবে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮(২) এ বলা আছে- এ ভাগে বর্ণিত নীতিসমূহ বাংলাদেশ পরিচালনার মূল সূত্র হবে, আইন প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তা প্রয়োগ করবে, এ সংবিধান ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যা দানের ক্ষেত্রে তা নির্দেশক হবে এবং রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কাজের তা ভিত্তি হবে, তবে এসব নীতি আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হবে না।
এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে জবাবদিহির দায় থেকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিগত ৫৩ বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা বলছে- রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূল সূত্র হয়নি, আইন প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তা প্রয়োগ করেনি এবং তা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কাজের ভিত্তি হয়নি। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত মূলনীতিগুলো সংবিধান বন্দনায় সাইনবোর্ড হিসেবে ঝুলিয়ে জনগণকে বোকা বানানো হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে সাংবিধানিক বা মানবাধিকার আদালতের ক্ষমতা রহিত করা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে ‘তবে’ যুক্ত করে সরকারকে দায়মুক্ত করা হয়েছে এবং নীতি বা ইশতেহার বাস্তবায়ন না করার সাংবিধানিক লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর হাকিকত হলো- সরকারের আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ তথা আমলাতন্ত্রকে জবাবদিহির দায় থেকে সাংবিধানিকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

অনুচ্ছেদ-১০। সমাজতন্ত্র ও শোষণ মুক্তি। মানুষের উপর মানুষের শোষণ হতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজ লাভ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকার তা করেনি; বরং উপরে সমাজতন্ত্রের লেবেল লাগিয়ে ভেতরে ভেতরে ধনতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ-১১। প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। ৫৩ বছরে প্রজাতন্ত্র একটি গণতন্ত্র হয়নি। গুম, খুন ও আয়নাঘরের ভয়ে মানুষ মুখ খুলতে পারেননি। পুলিশের অনুমতির শর্ত আরোপ করে বিরোধী দলগুলোকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে স্থানীয় প্রশাসন ন্যস্ত করা হয়নি।

অনুচ্ছেদ-১৩। মালিকানার নীতির ক্ষেত্রে করপোরেট মালিকানার কোনো উল্লেখ নেই। আবার ব্যক্তি ও সমবায়ী মালিকানার ক্ষেত্রে আইনের দ্বারা সীমা নির্ধারণ করার সাংবিধানিক নির্দেশনা থাকলেও তা প্রতিপালন করা হয়নি।
অনুচ্ছেদ-১৪। রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হবে মেহনতী মানুষ-কৃষক ও শ্রমিক এবং জনগণের অনগ্রসর অংশকে সব প্রকার শোষণ হতে মুক্তি দান করা। বিগত ৫৩ বছরের সরকারগুলো এর বিপরীত কাজ করে ধনী-গরিবের অর্থনৈতিক বৈষম্য আকাশচুম্বী করেছে।
অনুচ্ছেদ-১৫। মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা। রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদন শক্তির ক্রমবৃদ্ধি সাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতি সাধন, যাতে নাগরিকদের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্জন নিশ্চিত করা যায়-
ক. অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবন ধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা।
খ. কর্মের অধিকার, অর্থাৎ কর্মের গুণ ও পরিমাণ বিবেচনা করে যুক্তিসঙ্গত মজুরির বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার।

গ. যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার এবং
ঘ. সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতা-পিতাহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার।
শিক্ষিত বেকারত্ব প্রকট আকার ধারণ করলেও কাউকে বেকার ভাতা দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের দায়িত্ব কেউ গ্রহণ করছেন না। নানা প্রতিবন্ধকতা আরোপ করে বিপন্ন করা হচ্ছে বেসরকারি খাত।
অনুচ্ছেদ-১৬। গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষিবিপ্লব। নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তরে রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

অথচ অসম উন্নয়নে গ্রাম ও শহরের বৈষম্য দিন দিন আরো বাড়ছে। এ জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে আদালতে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
অনুচ্ছেদ-১৭। অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা। রাষ্ট্র-
ক. একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সব বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা দানের জন্য-
খ. সময়ের প্রয়োজনের সাথে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করতে এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য-
গ. আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গত ৫৩ বছরেও সরকার সদিচ্ছা প্রণোদিত হয়ে একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা দেশে চালু করেনি। এ জন্য কোনো আদালতে বা জনগণের কাছে সরকারকে জবাদদিহি করতে হয়নি।

অনুচ্ছেদ- ১৯। সুযোগের সমতা-
১. সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা সৃষ্টি করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে।
২. মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করতে, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধা দান নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৫৩ বছরে নানা কিসিমের বৈষম্য বহুগুণ বেড়েছে। অথচ কোনো আদালতে সরকারকে এর কৈফিয়ত, জবাব বা ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে না।
৩. জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ এবং সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।

অনুচ্ছেদ-২০। অধিকার ও কর্তব্য রূপে কর্ম-
১. কর্ম হচ্ছে কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের পক্ষে অধিকার, কর্তব্য ও সম্মানের বিষয় এবং প্রত্যেকের কাছে হতে যোগ্যতানুসারে এবং প্রত্যেককে কর্মানুযায়ী- এ নীতির ভিত্তিতে প্রত্যেকে স্বীয় কর্মের জন্য পারিশ্রমিক লাভ করবেন।
২. রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করবে যেখানে সাধারণ নীতি হিসেবে কোনো ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে সমর্থ হবেন না এবং যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কায়িক- সব প্রকার শ্রম সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসের ও মানবিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণতর অভিব্যক্তিতে পরিণত হবে। অথচ একটি লুটেরা শ্রেণী অনুপার্জিত আয় শুধু ভোগ করছে না, বিদেশে অবাধে পাচার করছে।

অনুচ্ছেদ- ২১। নাগরিক ও সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য-
১. সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। এর জন্য কখনো কোনো নাগরিককে দায়িত্বে অবহেলায় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি।
২. সব সময় জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। এর জন্য কখনো কোনো সরকারি কর্মচারীকে দায়িত্বে অবহেলায় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি।
অনুচ্ছেদ-২২। নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ। রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গ হতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। রাষ্ট্র অবশ্য ইতোমধ্যে এটি নিশ্চিত করেছে আদালতের রায় পাওয়ার পর। এর থেকে এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে, রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলো আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করা সম্ভব।
অনুচ্ছেদ-৪৪। মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ-
১. এ ভাগে প্রদত্ত অধিকারসমূহ বলবৎ করতে এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট মামলা রুজুর অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হলো।

২. এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটিয়ে সংসদ আইনের দ্বারা যেকোনো আদালতকে তার এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ওই সব বা তার যেকোনো ক্ষমতা দান করতে পারবে।
জনগণের সার্বভৌমত্ব সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর প্রতি অনুচ্ছেদে বিন্যস্ত করতে না পারলে দিন শেষে জনগণকে রাষ্ট্রের অসীম নিপীড়ন শক্তির কাছে পরাস্ত হতে হবে। অনেক সময় রাষ্ট্র, সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দল ও জনগণের বিপক্ষে কাজ করতে পারে। সে সময় জনগণ ও বিরোধী দলগুলোর আত্মাহুতি দেয়া ছাড়া করার আর কিছু থাকে না। জবাবদিহি ছাড়া কোনো মানুষকে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্পণ করা উচিত না। রাষ্ট্রক্ষমতা পেলে ভালো মানুষও হালাকু ও চেঙ্গিস খান হয়ে যেতে পারেন। মাফিয়া রাজনীতি থেকে মুক্তি পেতে হলে সবল সিভিল সমাজ এবং স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন ও আদালত গঠন জরুরি।
লেখক- অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব

 

 


আরো সংবাদ



premium cement