বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক
- প্রফেসর এম এ রশীদ
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চীন বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য গত কয়েক দশকে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। চীন মূলত বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ করে, যেমন- বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, গার্মেন্টস শিল্পের উপকরণ, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চীনে তৈরী পোশাক রফতানি করে থাকে। এছাড়া চামড়াজাত পণ্য ও কিছু কৃষিজাত পণ্যও চীনে রফতানি করা হয়। ২০২০ সাল থেকে চীন বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। এটি বাংলাদেশী রফতানিকারকদের জন্য বড় সুযোগ। এই শুল্কমুক্ত সুবিধা চীনের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। উভয় দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক যেমন হওয়া সম্ভব
ভবিষ্যতে চীনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী ও বহুমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিচে এ সম্ভাবনার প্রধান দিকগুলো তুলে ধরা হলো :
১. বিনিয়োগ বৃদ্ধি : ভবিষ্যতে চীন বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ আরো বাড়াতে পারে, বিশেষ করে অবকাঠামো, যোগাযোগ, প্রযুক্তি ও উৎপাদন খাতে। বাংলাদেশ চীনা বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে, কারণ এখানে সস্তা শ্রমশক্তি ও বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার রয়েছে।
চীনের বিনিয়োগ প্রকল্প, যেমন- বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI), বাংলাদেশে আরো বেশি অবকাঠামো ও শিল্পোন্নয়নের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
২. রফতানি ও আমদানি বৃদ্ধি : বাংলাদেশের রফতানিকারকরা চীনের বড় বাজারে প্রবেশের সুবিধা পাচ্ছেন, বিশেষ করে পোশাক, কৃষিজাত পণ্য, চামড়া এবং হস্তশিল্পের মতো পণ্যে। আমদানির ক্ষেত্রেও চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উৎস হয়ে থাকবে। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত ও শিল্পজাত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে।
৩. প্রযুক্তি ও দক্ষতা স্থানান্তর : ভবিষ্যতে চীন থেকে উচ্চপ্রযুক্তি ও দক্ষতা স্থানান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশের উৎপাদন ও শিল্প খাতের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। বিশেষ করে আইটি, ইলেকট্রনিক্স, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং অটোমেশনের ক্ষেত্রে চীন থেকে আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হতে পারে।
৪. বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা : চীনের অভিজ্ঞতা ও কারিগরি সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার উৎপাদনশীলতা ও পণ্যের গুণগত মান উন্নত করতে পারে। এতে বাংলাদেশী পণ্য বিশ্ববাজারে আরো প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে তৈরী পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও কৃষিজাত পণ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বমান অর্জন করতে পারলে দেশের রফতানি আয় আরো বাড়বে।
৫. পর্যটন ও সাংস্কৃতিক বিনিময় : দুই দেশের মধ্যে পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ এবং প্রচারণা চালানো হলে, পর্যটক বাড়বে। চীন থেকে বাংলাদেশে পর্যটন বাড়লে এর অর্থনৈতিক প্রভাব দেশের পর্যটন খাত সমৃদ্ধ করতে পারে।
৬. টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ : ভবিষ্যতে বাংলাদেশ চীনের সাথে টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, যেমন- সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুশক্তিতে চীনের অগ্রগতি বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতা বাড়লে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
অবকাঠামো উন্নয়ন
বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলছে।
১. পদ্মা সেতু : পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর একটি। এই প্রকল্পের নির্মাণকাজে চীনা প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সেতু যোগাযোগব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
২. পায়রা সমুদ্রবন্দর : পায়রা সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর এবং এর উন্নয়নে চীনের অবদান বড়। এই বন্দরটি নির্মিত হলে এটি দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং আমদানি-রফতানি খরচ কমবে।
৩. কর্ণফুলী টানেল : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম টানেল। নদীর উভয় তীরকে সংযুক্তকারী এই প্রকল্পে কাজ করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান।
৪. বিদ্যুৎ প্রকল্প ও জ্বালানি খাত : বাংলাদেশের বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অন্যান্য বিদ্যুৎ প্রকল্পে চীনের প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা বিদ্যুৎ খাতের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। চীনের সহযোগিতায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পেও কাজ শুরু হয়েছে।
৫. রাস্তা ও রেলপথ উন্নয়ন : দেশের রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় চীনের বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত উচ্চগতির রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে চীনের সহযোগিতা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ঢাকা-বাংলাবান্ধা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং চট্টগ্রামের রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পে চীন কাজ করছে।
৬. বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ : চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তর অর্থনৈতিক প্রবাহের সাথে সংযুক্ত করছে। এর আওতায় বাংলাদেশের অবকাঠামো, বিশেষ করে বন্দর, রেলপথ, মহাসড়ক এবং বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
সামরিক সহযোগিতা
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সামরিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বিদ্যমান এবং তা ক্রমবর্ধমান। সামরিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক রয়েছে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী চীন থেকে বিভিন্ন অস্ত্র, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানি করে, যা বাংলাদেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে।
১. অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানি : বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী চীন থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে। বিশেষ করে চীন থেকে ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, গাইডেড মিসাইল সিস্টেম এবং নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধজাহাজসহ অন্যান্য সরঞ্জাম আমদানি করা হয়েছে। এসব আধুনিক সরঞ্জাম বাংলাদেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
২. প্রশিক্ষণ ও সামরিক শিক্ষাবিনিময় : বাংলাদেশের সামরিক কর্মকর্তা ও সদস্যরা চীনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেন। চীনা সামরিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশী সামরিক কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করছেন। এভাবে চীনের সাথে সামরিক শিক্ষা বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশের সামরিক বাহিনী কৌশলগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করছে।
৩. প্রযুক্তি ও গবেষণা সহযোগিতা : চীনের সামরিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশও তার সামরিক প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে পারছে। চীনা প্রযুক্তি সহযোগিতার মাধ্যমে সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নে বাংলাদেশ নতুন উদ্ভাবনী সক্ষমতা অর্জন করছে।
৪. নৌবাহিনী ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা : চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী আধুনিক যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন পেয়েছে, যা সমুদ্র সীমানা নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে, যা বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য সহায়ক।
৫. সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনে সহযোগিতা : ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও চীন যৌথভাবে কিছু সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন করতে পারে। এতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত আরো স্বনির্ভর হবে এবং সামরিক সরঞ্জামের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরতা কমবে।
বাংলাদেশ ও চীনের এই সামরিক সহযোগিতা দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াচ্ছে এবং একে অপরের কৌশলগত সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি
শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা বিদ্যমান, যা দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়া বৃদ্ধি করছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন এবং এতে করে দু’দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সম্পর্ক আরো দৃঢ় হচ্ছে।
১. উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি : চীন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বৃত্তি প্রদান করছে, যা উচ্চশিক্ষার জন্য চীনকে আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে। চীনা সরকার প্রতি বছর বেশ কয়েকটি শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা চীনের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিসিন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং ব্যবসায় শিক্ষা লাভের সুযোগ পান।
এই শিক্ষা বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণার ক্ষেত্রে উন্নত মানের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
২. কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট : চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও বোঝাপড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। এই ইনস্টিটিউটে চীনা ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে বিভিন্ন কোর্স চালানো হয়, যা বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের কাছে চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভের সুযোগ তৈরি করেছে।
কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ইভেন্ট, ভাষা প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে দুই দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক মজবুত করছে।
৩. শিক্ষক ও গবেষক বিনিময় প্রোগ্রাম : বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে শিক্ষক ও গবেষক বিনিময় প্রোগ্রামের আওতায় দুই দেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা পারস্পরিক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ভাগাভাগি করছেন। এতে গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে যৌথ গবেষণার পথ খুলছে।
৪. সাংস্কৃতিক উৎসব ও ইভেন্ট : বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নিয়মিত সাংস্কৃতিক উৎসব ও ইভেন্ট আয়োজন করা হয়। এতে করে দুই দেশের জনগণ একে অপরের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারছে এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরো গভীর হচ্ছে। চীনা নববর্ষ, কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট দিবস এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক ইভেন্টের মাধ্যমে চীনের শিল্প, সাহিত্য ও ঐতিহ্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে দুই দেশ একে অপরকে সমর্থন করে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা উভয় দেশের জন্যই অর্থনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে লাভজনক।
১. আন্তর্জাতিক সমর্থন : বাংলাদেশ ও চীন জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় একে অপরের স্বার্থকে সমর্থন করে। উদাহরণস্বরূপ, জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন ভোট ও আলোচনা পর্বে বাংলাদেশ ও চীন প্রায়ই একে অপরের অবস্থানকে সমর্থন জানায়। এতে করে উভয় দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়।
২. রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে চীনের ভূমিকা : রোহিঙ্গা সঙ্কটে চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এ সমস্যার সমাধানে চীন তার কূটনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি, তবে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
৩. বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে অংশগ্রহণ : কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুই দেশ অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে অংশীদার হয়েছে, যা বাংলাদেশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য রুটে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে।
৪. আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা : আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও দুই দেশ একসাথে কাজ করছে। বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও শান্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ উভয় দেশই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আগ্রহী।
৫. কৌশলগত অংশীদারিত্ব : বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক কেবল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়; বরং সামরিক ও কৌশলগত ক্ষেত্রেও পরস্পরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে উভয় দেশ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে লাভবান হচ্ছে।
লেখক : সিনিয়র ফেলো, এসআইপিজি, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি
e-mail : [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা