২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সময়-অসময়

ঢাকায় কেমন রাজনৈতিক বিন্যাস চায় দিল্লি

-

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও ক্ষমতার সমীকরণ নিয়ে নয়াদিল্লির নানামুখী সংশ্লিষ্টতা বাংলাদেশে একটি আলোচিত বিষয়। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে পতিত শাসকদলের অনেক নেতাকর্মী ও হাসিনা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার আশ্রয় মিলেছে। শেখ হাসিনার আলোচিত ১৩ স্যুটকেসের দেশী-বিদেশী মুদ্রা, মূল্যবান সামগ্রীর গন্তব্যও ছিল প্রতিবেশী দেশটি। ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর অল্প ক’দিন নীরব থেকে শেখ হাসিনা অডিও-ভিডিও রেকর্ড ও অনলাইনে সমানে বাংলাদেশ নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন ।
ঠিক এ সময়ে বাংলাদেশে হাসিনার দেড় দশকের বেশি সময়ের শাসনামলে হত্যা, গুম, জঙ্গি নাটক ও পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ইস্যু এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিবেচ্য বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় পতিত প্রধানমন্ত্রীকে বিচারের মুখোমুখি করতে দিল্লির কাছে ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেয়ার এই চিঠি ঢাকার পক্ষ থেকে পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে ভারতের পররাষ্ট্র দফতর। এর মধ্যে বাংলাদেশে দৃশ্যমান ঘটনার অন্তরালে ভারতের নানা তৎপরতার খবরও অনেকটা ওপেন-সিক্রেট। সঙ্গত কারণে আলোচনা হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশটি বাংলাদেশে রাজনীতির কেমন বিন্যাসে কাজ করছে।
দেড় দশকে পরিবর্তন
ভারতের জনগণ ও রাজনৈতিক এলিটদের মধ্যে এক ধরনের বিভাজন রয়েছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সামরিক ও গোয়েন্দা নীতি-প্রণেতাদের চাওয়াই দেশটির নীতিপদক্ষেপে রূপ নেয়। ২০০৬ সালের পরবর্তী সময় থেকে ২০২৪-এর আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ১৮ বছরব্যাপী বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশী দেশটির এক ধরনের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণমূলক প্রভাব বিদ্যমান ছিল। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য প্রতিটি ঘটনায় তার প্রভাব লক্ষ করা গেছে। বিশেষত মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন ও সেখানে বিচারের নামে প্রহসন করে ফরমায়েসি রায়ে রাজনৈতিক নেতাদের ফাঁসি দেয়া, ২১ আগস্ট ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বিরোধী দলের নেতাদের ফাঁসানো, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও জঙ্গি নাটক, আয়নাঘর ও বিডিআর বিদ্রোহ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ইত্যাদির পেছনে এ প্রভাব অত্যন্ত সক্রিয় ছিল। এ ধরনের নিয়ন্ত্রক প্রভাবকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক সময়কার প্রধান শঙ্কর চৌধুরী রাডার নিয়ন্ত্রণ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশকে আর কোনো সময় এ রাডারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে দেয়া হবে না। শঙ্কর চৌধুরীর এ সাক্ষাৎকারের পরের পুরো দশকজুড়ে এর প্রতিফলন দেখা গেছে বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে।
২০০৭ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটকে ক্ষমতায় আনা হয়। বিভিন্ন কূটনৈতিক অংশীদার ও আন্তর্জাতিক পক্ষ ক্ষমতার এ রূপান্তরের সহযোগী হওয়ায় এর অন্তর্নিহিত কারচুপি সেভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। এই মেয়াদকাল ছিল বাংলাদেশ-ভারত অধীনতামূলক সম্পর্কের রচনা বা কাঠামো তৈরির সময়কাল। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র দিল্লির চোখে ঢাকাকে দেখার নীতি নেয়ায় বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা কাঠামোতে স্থান করে নেয়া ভারতের জন্য তেমন একটা কঠিন হয়নি। এ কাঠামো তৈরির একটি অংশ ছিল বলে মনে করা হয় পিলখানা হত্যাকাণ্ড বা বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা।
এ ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাবাহিনী ঢেলে সাজানো হয়। এ প্রক্রিয়া একটি রূপ পাওয়ার মধ্যে ২০১৪ সালে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আসে। আগের নির্বাচনে যেখানে একটি বৃহত্তর কূটনৈতিক সমর্থনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা সম্ভব হয়, এবার সেখানে সরাসরি ভূমিকা রাখে ভারত। আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় শেখ হাসিনা ও তার প্রতিবেশী দেশের উপদেষ্টারা বিরোধী পক্ষকে বাইরে রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরামর্শ দেয়। এ ছক অনুসারে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী পক্ষকে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়।
এর আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতীয় পক্ষের প্রভাব নিশ্চিত করতে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী হিসেবে পরিচিত রাজনীতিবিদদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় আন্তর্জাতিক মানের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ কালাকানুন মার্কা আইনে। এই বিচারের মনগড়া রায় তৈরি ও তা এগিয়ে নিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করে তা দিয়ে রাজনীতির গতিপথ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা নেয়া হয়। একে লক্ষ্য হাসিলের হাতিয়ার করার চেষ্টা করা হয়।
প্রথমত, ভারতের আধিপত্যের বিরোধিতাকারী বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের প্রহসনের বিচার করে দুনিয়া থেকে বিদায় করা। এর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশটি যাদের রাজনৈতিক শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের দুর্বল করা। দ্বিতীয়ত, কথিত জঙ্গি তথা ইসলামী সন্ত্রাসের নাটক তৈরি করে এ শক্তিকে সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে চাপে ফেলা। তৃতীয়ত, ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন অর্থনৈতিক সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দখলে নিয়ে এ শক্তিকে কাঠামোগতভাবে দুর্বল করা। পাশাপাশি প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা খাতে নিয়ন্ত্রক ও প্রভাব তৈরিতে এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এর বাইরে প্রশাসনের ভিত্তিমূলক হিসেবে পরিচিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হয়।
২০২৪ সালের একদলীয় নির্বাচনের পর জনসমর্থনের তোয়াক্কার প্রয়োজন না হওয়ায় এ সময় সরকারের নীতি হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতার মূল সমর্থনকারী প্রতিবেশী দেশকে খুশি করা এবং তাদের চাওয়া পূরণ করা। লক্ষণীয়, এ জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে চীন বাংলাদেশের নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলেও দিল্লির বাধায় তা সীমিত থাকে।
হারানো নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা
আগস্ট বিপ্লব ছিল এক কথায় দেড় দশকের নিবর্তনমূলক ফ্যাসিবাদী শাসন ও ভারতের বাংলাদেশকে ক্রমে গ্রাস করার নীতির বিরুদ্ধে। বিপ্লবের পরে ক্ষমতায় এসে অন্তর্বর্তী সরকার দেড় দশকের রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডকে জবাবদিহির আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাষ্ট্র সংস্কারে প্রথমে ছয়টি ও পরে আরো পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও পদক্ষেপের সুপারিশে একাধিক টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।
এসব জরুরি কাঠামোগত পদক্ষেপ ও নীতি গ্রহণের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশকে অস্থির করতে যেসব অন্তর্ঘাতমূলক কাজ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে উসকে দিয়ে বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করছে; সেগুলো মোকাবেলা করতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। হত্যা, গুম, মানবাধিকার হরণ ও গণহত্যার অপরাধগুলো বিচারের আওতায় আনতে ট্রাইব্যুনালে দেয়া হয়েছে। এই বিচার এগিয়ে নিতে আইন কর্মকর্তা ও পরামর্শক নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। স্বৈরাচারের সাজানো প্রশাসন পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করে সরকারের নীতি বাস্তবায়নের উপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেড় দশকে যেসব কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল তাদের মূলধারায় ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সাথে জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো নতুন করে পর্যালোচনার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে।
এসব পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে পতিত স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দলগুলো ময়দান থেকে ছিটকে পড়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির জন্য অনেকে অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়ে আইনের মুখোমুখি হয়েছেন।
এর সাথে ভারতের যে নিয়ন্ত্রক প্রভাব বাংলাদেশের প্রশাসনে ছিল তা কমতে শুরু করে। তাদের ১৫ বছরের কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে আসায় জনমনে যে বিরূপ অবস্থা ছিল তা আরো তীব্র হতে শুরু করে। ফলে প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের অনেক সদস্য বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। সার্বিকভাবে বাংলাদেশে প্রতিবেশী রাডার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হতে থাকে।
এ অবস্থায় কৌশল হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে প্রথমে পুলিশ-আনসার বিদ্রোহ, পোশাক খাতসহ বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি এবং সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলার চেষ্টা করা হয়। এসব চেষ্টা ব্যর্থ হলে সামরিক চাপ প্রয়োগের প্রচেষ্টাও নেয়া হয়। এ নিয়ে একটি বিস্তৃত কলাম এর আগে নয়া দিগন্তে প্রকাশ হয়েছে।
এখন নতুন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কাঠামোতে প্রভাব বিস্তার করে অন্তর্বর্তী সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব বিদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যেসব লক্ষ্য নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- প্রধান রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনটি বিষয়ে সম্মত করার প্রচেষ্টা নেয়া হচ্ছে।
প্রথমত, ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় প্রতিবেশী দেশটির সাথে যেসব অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও ট্রানজিট-করিডোরের মতো কৌশলগত চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সেগুলোর ধারাবাহিক রক্ষা করতে সম্মত হওয়া, দ্বিতীয়ত, ইসলামী রাজনৈতিক শক্তিকে জোট ও ক্ষমতার অংশীদার না করে যতটা সম্ভব স্বৈরাচারের আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, তৃতীয়ত, পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজনৈতিক পরিমাণে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া। এর বাইরে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রি-ওপেন না করা এবং আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারিক প্রক্রিয়াকে ধীর গতি এনে এক পর্যায়ে বন্ধ করা।
এ লক্ষ্য সামনে রেখে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে চাইছেন প্রতিবেশী দেশের নীতিনির্ধারকরা। তারা মনে করছেন, ২০২৫ সালে নির্বাচন করা হলে রাষ্ট্র সংস্কার ও ট্রাইব্যুনালে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হবে না।
রাডার বিস্তারে কৌশল
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর থেকে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে মৌলিক দুই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশল গ্রহণ করতে দেখছি আমরা । এর মধ্যে দুই ধরনের কৌশল রয়েছে, একটি সফট অ্যাপ্রোচ বা নমনীয় পদ্ধতি আর দ্বিতীয়টি হার্ড অ্যাপ্রোচ বা কঠোর পন্থা।
নমনীয় পদ্ধতির অংশ হিসেবে ভারত প্রকাশ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আলোচনাভিত্তিক এবং কূটনৈতিক পন্থা অবলম্বন করছে। নানা বৈঠক, কূটনৈতিক তৎপরতা, একাত্তরের ইতিহাস ও নানা বিষয় নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে আলোচনা করে আসছে। সে সাথে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতার অংশ হিসেবে পুরনো চুক্তি পুনর্বিবেচনা এবং বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে কঠোর পন্থার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ভারত নানা স্তরে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করছে। এটি তিনটি প্রধান উপায়ে কার্যকর করা হচ্ছে। প্রথমত, প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে ভারত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে। বিশেষভাবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন নিয়ে ভুয়া অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বৈশ্বিক জনমত বিভ্রান্ত করতে বাংলাদেশ একটি উগ্রপন্থী ইসলামী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে বলে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকছে, যা কুয়াড, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে প্রচার করে যাচ্ছে। একই সাথে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ পাকিস্তানের জন্য সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে।
আন্তর্জাতিক চাপের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইইউ ও কুয়াডভুক্ত এবং অন্যান্য দেশের অ্যাম্বাসি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সামনে নিজেদের লোক দিয়ে বিক্ষোভ করানো হচ্ছে।
কঠোর পন্থার অংশ হিসেবে ভারত তার বাংলাদেশ লাগোয়া সীমান্তে সামরিক শক্তি বাড়িয়ে বাংলাদেশের ওপর ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ ব্যাপকভাবে মোতায়েন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ-সংলগ্ন ইন্টার্ন থিয়েটারে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির অংশ হিসেবে মিসাইলের মতো উন্নত অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করা হচ্ছে। রাফায়েল জঙ্গিবিমান ও অন্যান্য যুদ্ধবিমান এবং অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েনের মাধ্যমে সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি ও মিডিয়াতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
কঠোর পন্থার আরেকটি অংশ- গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে অবিশ্বাস ও বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে।
পাশাপাশি বর্তমান সরকারকে দুর্বল করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী সেন্টিমেন্ট, ন্যারেটিভ ও ক্ষোভ সৃষ্টি করে জনগণের আস্থা কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বিশেষভাবে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে আরএমজি সেক্টরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিক্ষোভকে সমর্থন, উসকানি ও পেছন থেকে কলকাঠি নেড়ে অস্থিতিশীলতা বাড়ানো প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা কার্যক্রমের একটি অংশ।
কলকাতা থেকে নিয়মিত কল করে প্রভাবশালী দলের নেতৃত্বকে ভারতীয় স্বার্থে কাজ করতে চাপ দেয়ার সাথে সাথে প্রায়ই ইশারা-ইঙ্গিতে হুমকি দেয়া হয়। দলটির হাইকমান্ডকে ইসলামী ব্যক্তিত্ব, দল ইত্যাদি সম্পর্কে ভীতি সঞ্চার করা ও তাদের বিষয়ে ক্ষোভ সৃষ্টিসহ নানা প্রেসার তৈরি করা হয়।
প্রতিবেশী দেশটি নিজেদের সব ধরনের এসেট ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলতে এবং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র কার্যত অচল করে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এর ফলে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনে সরকারের প্রতি অসহযোগিতার প্রবণতা ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা সৃষ্টি করছে।
কিভাবে এ কৌশল মোকাবেলা করা যাবে
প্রতিবেশী দেশের সর্বব্যাপী কৌশল মোকাবেলা করতে কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স জোরদার করতে হবে। তাদের গোপন কার্যক্রম শনাক্ত ও প্রতিহত করতে গোয়েন্দা ক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রোপাগান্ডা এবং ভারতের অ্যাসেট ও তাদের স্বার্থ রক্ষাকারীদের চিহ্নিত করে তা প্রতিহত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক জোট তৈরি ও পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল সব বৃহৎ আন্তর্জাতিক শক্তির সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করতে হবে। জাতিসঙ্ঘ, কুয়াড ও ইইউসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতীয় প্রোপাগান্ডার জবাব দেয়া দরকার।
জাতীয় ঐক্য যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকসহ সব গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা ও বিশেষত জাতীয় ইস্যুতে সবার পূর্ণাঙ্গ ঐক্যবদ্ধ অবস্থান অত্যন্ত জরুরি। সেই সাথে জুলাই বিপ্লবের চেতনা ধরে রাখা এবং তা মলিন হতে না দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের কৌশলগত চাপ মোকাবেলা করতে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সমর্থ হবে।
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় শার্শা সীমান্তে নারী-শিশুসহ আটক ১৬ ‘আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে তারেক রহমান হবেন প্রধানমন্ত্রী’ টাকা কম পেলেও রহমতগঞ্জে এসে ভালোই হয়েছে : জীবন মধ্য প্রাচ্যের প্রতিপক্ষ খুঁজছে বাফুফে বিএসএফের ধরে নিয়ে যাওয়া ১৪ বাংলাদেশী ভারতের কারাগারে মারা গেছেন পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের মেজো ছেলে গাড়িকাণ্ড : তিন নেতার সদস্যপদ ফিরিয়ে দিলো বিএনপি ‘অবহেলিত জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে সবাই এগিয়ে আসতে হবে’ চুয়াডাঙ্গায় ১৪টি স্বর্ণের বারসহ ৩ চোরাকারবারি আটক ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে : জামায়াত আমির ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ নতুনভাবে গড়ার দায়িত্ব সবার : মির্জা ফখরুল

সকল