আমাদের সংবিধান ও পার্বত্য শান্তিচুক্তি
- মোহাম্মদ আজিজুল হক
- ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
‘আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান’-এ মহান নীতিতে বাংলাদেশ সংবিধান স্বমহিমায় ভাস্বর হলেও এর ২৮(৪) ধারায় সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশকে সমপর্যায়ে তুলে আনার জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের কোনো অংশের অনুকূলে সমতার নীতি ভেঙে অতিরিক্ত সুবিধাদান যেকোনো সরকারের জন্যই অবৈধ নয়। বর্ণিত ধারার আওতায় কখনো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, কখনো বা অনগ্রসর কোনো জেলার বাসিন্দা, কখনো বা দেশের নারী সমাজের অনুকূলে, রাষ্ট্র কর্তৃক বিশেষ সুবিধা দান বৈধ।
এরই সূত্র ধরে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের সময়, পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও নারীদের ক্ষেত্রে তা এসএসসি পাস ছিল। একইভাবে প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোর অনুকূলে বিশেষ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার ন্যূনতম ৫৫ শতাংশ জেলা কোটাসহ বিবিধ কোটা নির্ধারণ করে আসছিল।
সংবিধানের উপরিউক্ত ধারার আওতায় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর, পার্বত্য চট্টগ্রাম (শান্তি) চুক্তি সম্পাদিত হয়। ওই চুক্তির আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১১টি জাতিগোষ্ঠীর অনুকূলে বেশ কিছু বিশেষ সুবিধা দেয়ার বিষয়ে পক্ষদ্বয় একমত হয়। এর বিপরীতে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী একটিমাত্র শর্ত তথা অস্ত্র হাতে না নেয়ার কথা দেয়।
এরপর গত হয়েছে প্রায় ২৭ বছর। এ সময়ে পাহাড়ের অন্যতম উপজাতি ‘চাকমা’ সম্প্রদায়ের উত্থান বেশ প্রণিধানযোগ্য। এ সময়ে তারা শিক্ষা, চিকিৎসাসহ, সামাজিক বিভিন্ন সূচকে অন্যান্য উপজাতির তুলনায় তো বটেই; এমনকি মূল জনগোষ্ঠী বাঙালিদের চেয়েও ভালো অবস্থানে উঠে এসেছে।
দেশের ১৭ কোটি জনগণের মধ্যে কতজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী ‘বাঙালি’ রয়েছে, তা বিবেচনায় নিয়ে বিপরীত পক্ষে কয়েক লাখ মাত্র চাকমার বিপরীতে কতজন সরকারি কর্মচারী দেশে কর্মরত রয়েছে, তার পরিসংখ্যান দেখলেই সেটি স্পষ্ট হয়ে যায়।
১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম (শান্তি) চুক্তির কিছু কিছু ধারা/উপধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণার দাবিতে মহামান্য হাইকোর্টে রিট নং ৬৪৫১/২০০৭ এবং ২৬৬৯/২০০০ রুজুর প্রেক্ষাপটে শুনানি চলাকালে চাকমা রাজা (চাকমা সার্কেল চিফ) ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় এ বিষয়ে তার এলাকায় বসবাসরত চাকমা জাতিসংক্রান্ত যে পরিসংখ্যান পেশ করেছিলেন তা প্রণিধানযোগ্য। সে সময় তিনি বিবাদিদের তথা উপজাতিদের পক্ষে নিম্নোক্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত আদালতের সামনে উপস্থাপন করে সংবিধানের ২৮(৪) এবং ২৯(৩) অনুচ্ছেদের আলোকে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসরত সব উপজাতীয় গোষ্ঠীকে ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা চালান।
আদালতকে তিনি জানান, ‘জনগোষ্ঠীর পিছিয়ে পড়া অংশকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত ১৪ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিবেচনার জন্য কিছু নির্দেশক প্রস্তুত করা হয়েছিল। সে নির্দেশকগুলোর মধ্যে ছিল :
‘১. যোগাযোগব্যবস্থা; ২. চাষাবাদহীন ভূমি; ৩. শিক্ষা; ৪. বিদ্যুতায়ন; ৫. স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন; ৬. নিরাপদ খাবার পানি; ৭.বার্ষিক মাথাপিছু আয়; ৮. সমতল ভূমির পর্যাপ্ততা। ’
জনাব রায় অন্যান্য নথিপত্রের মধ্যে আরো কিছু পরিসংখ্যান তখন উপস্থাপন করেন। যেমন-
‘ক. মোট আয় ও দারিদ্র্য : ডিরেক্ট ক্যালরি ইনটেক (ডিসিআই) পদ্ধতি অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৬৫.১ শতাংশ (চাকমা বাদে) উপজাতি ‘হতদরিদ্র’ (hardcore poor) শ্রেণীর আওতাভুক্ত।
খ. স্বাস্থ্য : চাকমা ব্যতীত অন্যান্য উপজাতি জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার, বাঙালি জনগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক কম। ৫০ শতাংশ বাঙালি স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করে, যেখানে মারমাদের ২৯ শতাংশ, ত্রিপুরাদের ১০.৮ শতাংশ, বমদের ১৩.২ শতাংশ, ম্রোদের ৯.১ শতাংশ ও তঞ্চংগ্যাদের ৮ শতাংশ স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করে। ডায়রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে বাঙালি জনগণের মধ্যে ৬৮ শতাংশের, যেখানে চাকমা ছাড়া অবশিষ্ট উপজাতি অধিবাসীদের মধ্যে এ জ্ঞান রয়েছে ৬৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর। চাকমা ব্যতীত মাত্র ৩৪ শতাংশ উপজাতীয় জনগোষ্ঠী জানে, কিভাবে Oral Re-Hydration স্যালাইন প্রস্তুত করতে হয়। অপর দিকে একই বিষয়ে বাঙালিদের ৬৫ শতাংশ অবগত। যেখানে বাঙালিদের মধ্যে শিশুকে টিকা দেয়ার জ্ঞান রয়েছে ৩৭.৭ শতাংশের, সেখানে চাকমা ব্যতীত সংশ্লিষ্ট উপজাতিদের মধ্যে এ জ্ঞান রয়েছে ২৯.২ শতাংশের। গর্ভধারণকালে বাঙালিদের ৭৩.৬ শতাংশ টিকা গ্রহণ করলেও চাকমা ব্যতীত অন্যান্য উপজাতিদের মধ্যে এ সেবা গ্রহণের হার মাত্র ৩৭.৯ শতাংশ। ৮.২ শতাংশ বাঙালি নারী প্রসব-পরবর্তী সেবা পেলেও চাকমা ছাড়া অন্য সব উপজাতি নারীদের মাত্র ৩ শতাংশ এ সেবা পেয়ে থাকে।
গ. নিরাপদ খাবার পানি : শতকরা ৬০ জন বাঙালির বিপরীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা বাদে ৩৬ শতাংশ উপজাতীয় জনগোষ্ঠী বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য টিউবওয়েল ব্যবহার করে থাকে। রান্নার পানির জন্য চাকমা ছাড়া অন্যান্য উপজাতীয় অধিবাসীদের ৩৩ শতাংশ এবং বাঙালিদের ৪২ শতাংশ টিউবওয়েল ব্যবহার করে।
লক্ষণীয় যে, উপরিউক্ত প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই, সংশ্লিষ্ট উপজাতিদের পশ্চাৎপদতার বিষয়টি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে যে পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়েছে সেখানে ‘চাকমা জাতিগোষ্ঠী’কে উহ্য রেখেই তা সম্পাদন করা হয়েছে; আর এটি করা হয়েছে এ কারণেই যে, ওই এলাকায় বসবাসরত চাকমা জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা এতই উন্নত জীবনযাপন করে যে, তাদের প্রকৃত পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হলে পাহাড়িদের জীবনযাত্রার মান আর পশ্চাৎপদ মনে হবে না। প্রকৃৃতপক্ষে বাংলাদেশে বসবাসরত চাকমা উপজাতির জনগোষ্ঠীকে বর্তমানে আর কোনোভাবেই পশ্চাৎপদ ভাবার সুযোগ নেই। অথচ তারাই এখন বাংলাদেশ সংবিধানে পশ্চাৎপদদের অনুকূলে দেয় ‘সমতা নীতি’র ব্যত্যয় ঘটানোর অধিকারকে নিজেদের অনুকূলে প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার করে চলেছে। অনৈতিকভাবে ‘পশ্চাৎপদ’ অংশের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। শুধু তাই নয়, তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের অপরাপর প্রকৃত পশ্চাৎপদ ১০টি উপজাতি গোষ্ঠীর প্রাপ্য সুবিধা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করছে। এরই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় বঞ্চিতরা ক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।
হালআমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম (শান্তি) চুক্তির বিরোধিতা করে ছয়টি উপজাতি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আলাদা দাবিনামা উত্থাপন এরই স্বাভাবিক ফল। বেশ কিছু দিন ধরে পাহাড়ে ‘কেএনএফ’ তথা কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের নানা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার প্রধান কারণও এখানে নিহিত। এ কারণে অনেকে বলেন, ‘এ চুক্তির মধ্যেই এর ধ্বংস বা ব্যর্থতার বীজ লুকানো আছে।’
এ বক্তব্যের অনুকূলে বড় প্রমাণ হচ্ছে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ’-এর গঠন; যা প্রাসঙ্গিক চুক্তির মূল প্রতিপাদ্যর একটি অনুসঙ্গ। ২৫ সদস্য নিয়ে গঠিত এ পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে একজন উপজাতি এবং উপজাতীয় মহিলা সদস্য হিসেবে দুজন মহিলা সদস্য, প্রায়ই সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘চাকমা’ জাতি থেকে পূরণ হতে দেখা যায়। অবশিষ্ট উপজাতীয় কোটায় মোট ১২ জনের মধ্যে ১০ জনই সংরক্ষণ করা রয়েছে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা উপজাতির জন্য। অবশিষ্ট আটটি উপজাতির (ম্রো, তঞ্চংগ্যা, লুসাই, বম, পাংখুয়া, খুমি, চাক, খিয়াং) জন্য মোট সংরক্ষিত কোটা মাত্র দুটি। এ কারণেই পাহাড়ি এলাকার কেবিনেট নামে কথিত এ পরিষদের অসম আচরণ নিয়ে পিছিয়ে পড়া উপজাতিরা নিজেদেরকে বঞ্চিত ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।
এ ছাড়া এ পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে প্রণীত ‘ইলেক্টোরাল কলেজে’ও একইভাবে তাদের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি; ১০২ সদস্যের এ ফোরামে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত ৯০টি। এর মধ্যে ‘চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরাদের জন্য সংরক্ষিত মোট ৭৮টি, অবশিষ্ট আটটি জাতিগোষ্ঠীর জন্য আছে মাত্র ১২টি; যা আবার প্রভাবশালী চাকমারাই নিয়ন্ত্রণ করে।
আঞ্চলিক পরিষদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। সেখানেও রয়েছে একই রকম অসমতা। যেমন- খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠনে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের জন্য ২১টি সদস্য পদ সংরক্ষিত হলেও অন্যান্য উপজাতির কোনো প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে উপজাতীয়দের জন্য ২০টি সংরক্ষিত পদের মধ্যে শুধু চাকমা ও মারমাদের জন্য নির্ধারিত কোটা ১৪টি; অবশিষ্ট ৯টি উপজাতির জন্য রয়েছে মাত্র ছয়টি।
সর্বোপরি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে উপজাতীয়দের জন্য সংরক্ষিত মোট ১৯টি পদের মধ্যে শুধু চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাদের জন্য নির্ধারিত মোট ১২টি পদ; অবশিষ্ট সাতটি পদ সংরক্ষণ করা রয়েছে বাকি আটটি উপজাতির জন্য।
মূলত যে চুক্তির (পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি) মাধ্যমে, প্রাসঙ্গিক আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়েছিল, তার নির্মোহ পর্যালোচনা বা এর প্রয়োগ পরবর্তী অবস্থা বিবেচনার জন্য গত ২৭ বছরেও কোনো টাস্কফোর্স বা জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়নি। অথচ এ চুক্তিতে সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেছিলেন জাতীয় সংসদের তৎকালীন হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ। চুক্তিটি পাশ হওয়া থেকে শুরু করে আজ অবধি মহান সংসদকে এতদবিষয়ে কিছুই অবহিত না করার কারণে এটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে, তিনি সংসদের হুইপ হিসেবে এ চুক্তির একটি পক্ষ হয়ে স্বাক্ষর করেছিলেন কি না। অবশ্য আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে তিনি এ স্বাক্ষর করে থাকলে ভিন্ন কথা। একইভাবে চুক্তির অপর পক্ষের হয়ে স্বাক্ষর করেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। তিনিও পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে নিজেকে উপস্থাপন করে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের ৪৯ শতাংশ অধিবাসী বাঙালি হওয়ায় এবং অবশিষ্ট ৫১ শতাংশ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নেতারা প্রধানত চারটি আলাদা আলাদা সংগঠনের নেতৃত্বে বিভক্ত থাকায় এবং সন্তু লারমাও বিশেষ একটি সংঠনের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সব অধিবাসীর নেতা বা প্রতিনিধি হিসেবে এ চুক্তিতে তার স্বাক্ষর করাটা অনেকটাই অনৈতিক ও অনধিকার চর্চার শামিল। কারণ চুক্তি সম্পাদনের দীর্ঘদিন পরও তিনি সংশ্লিষ্ট অধিবাসীদের মতামত গ্রহণ করেননি।
শুধু তাই নয়, চুক্তিতেও রয়েছে মৌলিক কিছু ত্রুটি। মোটাদাগে চুক্তির স্টেকহোল্ডার হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘পাহাড়ি ও বাঙালি অধিবাসীরা’। ওই সম্প্রদায় দু’টির বিবিধ ‘বিরোধ মীমাংসা’ করাই এ চুক্তির প্রধানতম লক্ষ্য। লক্ষণীয় যে, বিরোধ নিরসনের উদ্দেশ্যে পাঁচ সদস্যের যে কমিটি গঠনের কথা চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের সবাই উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। অর্থাৎ বাঙালিদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই; যা অন্যায্য।
এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদসহ সব কর্তৃপক্ষকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মতামত গ্রহণের বাধ্যবাধকতার যে বিষয়টি এ চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত, তা পরিষ্কারভাবে সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। এ ছাড়া এটি এককেন্দ্রিক বাংলাদেশের চরিত্রবিধ্বংসী।
দেশের একটি জনগোষ্ঠীকে বিশেষ সুযোগ দানের লক্ষ্যে অপর একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকার হরণ করা কোনো অবস্থাতেই রাষ্ট্রসহ কারো স্বাভাবিক কাজ হতে পারে না।
সার্বিক পটভূমিতে দেশের নাগরিকদের পশ্চাৎপদ অংশ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্র কর্তৃক উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর অনুকূলে যে সুযোগ সুবিধা ১৯৯৭ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে তার মেয়াদ আদৌ বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কি না তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে চাকমাদের বিষয়ে। তাদের বিপরীতে দেয় সুবিধাদি, বঞ্চিতবোধ নিয়ে মানসিকভাবে জরাগ্রস্ত উপজাতিগুলো তথা- লুসাই, বম, পাংখুয়া, ইত্যাদির অনুকূলে প্রদান করা হলে, সমতানীতি পালনের পাশাপাশি বর্তমানে ওই বিশেষ উপজাতিদের মধ্যে বিদ্যমান বঞ্চনাবোধকে প্রশমিত করা সম্ভব। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তিরও সময়োপযোগী পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে তা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
লেখক : নিরাপত্তা গবেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা