১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নয়া মেরুকরণ

-

এক
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ক্ষমতার আকস্মিক পরিবর্তন ভারতের জন্য একটি দ্বিধা বা সংশয় হিসেবে হাজির হয়েছে। ঢাকায় নতুন একটি সরকার ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে, যা দেশটির বাণিজ্য, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।
৫ আগস্ট হাসিনার সাথে দোভালের সাক্ষাৎ গুরুত্বপূর্ণ। এটা হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সাথে ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। হাসিনা সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মোদি। হাসিনার সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করতে এবং যৌথ নদীর পানি ভাগাভাগির জটিল ইস্যুতে ভারতের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক ছিল, ভারতের কৌশলগত উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের, মূলত ‘চিকেন নেক’ সংক্রান্ত নিরাপত্তা শঙ্কার বিকল্প করিডোরের নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুত ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত মোদি হাসিনা সরকারের অনেক ভুলত্রুটি উপেক্ষা করতে প্রস্তুত ছিলেন।
আগস্টের মাঝামাঝি ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’ সাময়িকীতে পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষক শ্রীরাধা দত্ত এক নিবন্ধে লেখেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত কখনো নাক গলায় না, এই মিথটাকে বেআব্রু করে দিয়েছিল শেখ হাসিনাকে ভারতে নিরাপদ আশ্রয় দেয়ার ঘটনা।’ ভারতের সমর্থনেই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে ছিলেন বিগত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে জল্পনার আকারে থাকা এই মতবাদটা এখন একধরনের ‘কনফার্মেশন’ পেয়ে গেছে বলে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন এবং এ কারণেই ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক তিক্ত থেকে তিক্ততর হচ্ছে।
বস্তুত নিউ ইয়র্কে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠক ছাড়া দু’দেশের মধ্যে শীর্ষপর্যায়ে এখনো কোনো ‘ইন্টারঅ্যাকশন’ই হয়নি। ভারতের হয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে যাবতীয় আদানপ্রদান করছেন ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত প্রণয় কুমার ভার্মা, যা কূটনৈতিক সম্পর্ক ‘স্কেল ডাউন’ করারই ইঙ্গিত!
ধর্মীয় কারণে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ব্যাপক অপপ্রচার ভারতে চালানো হচ্ছে। মর্মান্তিক সত্য হলো, ভারতীয় গণমাধ্যম হঠাৎ করে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কথিত হামলা নিয়ে সরব হয়ে ওঠে। এসব মিডিয়ার ভাষা যথেষ্ট আপত্তিকর ও উসকানিমূলক। আরো আশ্চর্যের বিষয়, এ বিষয়ে বাংলাদেশ কী ব্যাখ্যা দিচ্ছে তা নিয়ে ভারতের মিডিয়া আলোচনা করতে রাজি নয়।
গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল বলেছেন, ‘সংবিধান মেনে চলা দাসত্ব নয়, বরং তা মেনে চলাই মুক্তির পথ। বিপন্ন রাজনীতি এবং গণতন্ত্রের বিপন্ন অসাংবিধানিক দর্শন কোনো সুরাহার পথ নয়, বরং এটাই সুস্থ রাজনীতি ও গণতন্ত্রের চলার পথকে পিচ্ছিল, কণ্টকাকীর্ণ ও সঙ্কীর্ণ করে তোলে।’ ভারতের প্রশ্রয়ে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসন তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
প্রতিবেশীদের সাথে ভারতের নীতি আধিপত্যবাদী। তাই হাসিনার শাসনাবসান তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এটি বাংলাদেশের জন্য একই সাথে একটি সুযোগ এবং একটি ঝুঁকির মুহূর্ত এনে দিয়েছে। বিষয়টি ভালোভাবে উপলব্ধি করতে হলে আমাদের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বিচার করতে হবে। আর ভারতের জন্য যেটি জরুরি, তা হলো বাংলাদেশকে তাদের নিজেদের কাঠামোর মধ্যে ফেলে না দেখে বাংলাদেশের কাঠামোর মধ্যে ফেলে দেখা। নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশ যেন ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে তৎপর থাকা ভারতবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মঞ্চে পরিণত না হয়, সে কারণেও দিল্লিকে বাংলাদেশের প্রতি মনোযোগী হতে হচ্ছে। তবে মনোযোগটি হতে হবে সমতার ভিত্তিতে, আধিপত্যবাদী দৃষ্টিতে নয়।
মোদি সরকার ইসলামফোবিয়াতে ভুগছে। বিশেষ করে ভারতের মিডিয়া বাংলাদেশের সরকারে ইসলামপন্থীদের আধিক্যের বিষয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। কিন্তু এ উৎকণ্ঠা যতটা না ইসলামফোবিয়ার জন্য, তার চেয়ে বেশি বাংলাদেশ থেকে যে একতরফা সুবিধা পেত সেটি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাপ্রসূত।
বর্তমান গ্লোবাল বিশ্বে প্রত্যেক দেশের নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু তা অন্য দেশের অধিকার নষ্ট করে নয়। প্রতিবেশীর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রেখেই সমমর্যাদার ভিত্তিতে নিজ নিজ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারত এ বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। ভারতের এমন কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার কারণে প্রতিবেশী কোনো দেশের সাথেই তার সম্পর্ক ভালো নয়। নতুন পার্লামেন্ট ভবনে ভারতবর্ষকে ভারত রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা ভারতের আধিপত্যবাদী এবং সম্প্রসারণবাদী চরিত্রের সমার্থক কি না সেই প্রশ্ন এখন সবার সামনে চলে এসেছে। ভারতের প্রতিবেশী সব দেশের সাথে তাদের বর্তমান যে টানাপড়েনের সম্পর্ক, তা এই আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করে। এই বিষয়টি ভারত যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবে এবং উভয় দেশের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেবে, তত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নত হবে। বড় দেশ হিসেবে ভারত তা উপলব্ধি করবে জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক বক্তব্যে তা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার দৃঢ়বিশ্বাস, পারস্পরিক সহযোগিতার বাস্তবিকতা আমরা প্রতিবেশীরা সবাই উপলব্ধি করতে পারব। এতেই সবার স্বার্থ নিহিত।’
বাংলাদেশের নতুন নিয়তি প্রসঙ্গে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা অনেকগুলো অবস্থান এবং পরামর্শ দিয়েছেন। কর্তৃত্ববাদী শাসনের ওপর নির্ভরতা, গণতন্ত্রের অবক্ষয়, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অপশাসন ইত্যাদির কারণে শেখ হাসিনার পতন হয়।
সরকার যতই ইতিবাচক কাজ করুক, ভোটের অধিকার হারানোর বিষয়টি মানুষ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। যদিও বিকল্প খুবই কম, তবে ভারতকে মন্দের ভালোটাই বেছে নিতে হবে। তা হলো বাংলাদেশে যারা আড়ালে কলকাঠি নাড়ছে তাদের সাথে নয়, যারা ক্ষমতায় তাদের সাথে সম্পর্ক গড়তে হবে।
ভারতের দু’টি প্রধান উদ্বেগ রয়েছে। প্রথমত, বাংলাদেশের ভূখণ্ড ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে যেন কোনোভাবে ব্যবহার না হয়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থে বাণিজ্য, সংযোগ এবং উন্নয়নমূলক সম্পর্ক বৃদ্ধি করার কাজ চালিয়ে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতকে স্পষ্ট করতে হবে যে, পক্ষপাতমূলক স্বার্থ রক্ষা নয়; নিকটতম প্রতিবেশীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখাকে সে অগ্রাধিকার দেয় পরস্পরের সম-মর্যাদার ভিত্তিতে। নতুন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার- শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে সমর্থন দিয়ে ভারত সুসম্পর্ক গড়ার নতুন পদক্ষেপ নিতে পারে।
২৭ অক্টোবর ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়্যারে লেখা এক নিবন্ধে ভারতীয়-আমেরিকান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিনোদ খোসলা বলেন, ‘আমাদের সবার উচিত ইউনূসের এই গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তীকালীন ভূমিকার অগ্রগতি অব্যাহত রাখার দিকে মনোনিবেশ করা। কারণ, বাংলাদেশের সম্ভাবনার বিকাশ ঘটাতে পারলে ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষিত হবে।’
এ দিকে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোনো একটি ইস্যুতে আটকে থাকতে পারে না। রাজনৈতিক পরিবর্তন যাই ঘটুক, পরস্পরের ও নিজের কল্যাণের স্বার্থেই এ সম্পর্ক এগিয়ে যাবে। নিজের জনগণের স্বার্থে ভারত এ সম্পর্ক স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের প্রতি বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স এবং বিদ্রোহীদের আশ্রয় না দেয়ার বিষয়টি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাংলাদেশের সাথে ভারত একটি স্থিতিশীল, ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্কের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে, যেখানে মূল অংশীজন হবে দুই দেশের জনগণ। ভারত বিশ্বাস করে দুই দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি পরস্পরের সাথে যুক্ত।’
ভারতের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য এবং বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের বক্তব্যে বোঝা যায়, খুব তাড়াতাড়ি দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে। পারস্পরিক সম্পর্কের একটি সুস্থ ধারা সৃষ্টি করবে এবং উভয় দেশের জনগণের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
দুই
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে ইসলামপন্থীদের বিজয় হিসেবে মূল্যায়ন করা
যথার্থ নয়। বুঝতে হবে যে, ’৫০ দশকের পর থেকেই ডানপন্থী দলগুলো এ দেশে কাজ করে যাচ্ছে। ডানপন্থী প্রধান দলগেুলাতে কখনো উগ্রতার স্থান ছিল না। তাই যদি হয়, তবে তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সামাজিক মানসপট শক্তিশালী হওয়া এবং ক্রমেই রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তর হওয়া অনিয়মতান্ত্রিক নয়।
একটি অস্থিতিশীল ও ভারতবিরোধী বাংলাদেশ ভারতের নিজের ভূ-রাজনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং তার রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতকে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক রাখতেই হবে। শেখ হাসিনা মানেই বাংলাদেশ নয়। একটি মাত্র রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভরতা শুধু বিপজ্জনক নয়, বরং তা অযৌক্তিক ও অকার্যকর ভুল পররাষ্ট্রনীতিরই প্রয়াস।
এমতাবস্থায় আমরা মনে করি, ভারতের উপলব্ধির সময় এসেছে ইসলামপন্থী যেকোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক শক্তির সাথে মতবিনিময়ের কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করা এবং তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বোঝার চেষ্টা করা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ বপনের কাজ শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, যা পরে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তৎকালীন পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ যদি বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করত তবে তারা ইতিহাস অন্যভাবে রূপান্তর করতে পারত।
সামাজিক পরিবর্তনের যেসব অনুষঙ্গ শক্তিশালী হয়েছে তাকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ না করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে সরাসরি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বানিয়েছিল এবং রাষ্ট্রের অখণ্ডতার জন্য হুমকি মনে করেছিল যা সঠিক ছিল না। কোনো আলোচনা ছাড়াই সেই সামাজিক এবং রাজনৈতিক শক্তিকে ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে সামরিক কায়দায় মোকাবেলা করার প্রেক্ষাপটে বাঙালিদের সামনে আর বিকল্প ছিল না। জনসাধারণের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করতে হয়েছিল। একটি ন্যায়সঙ্গত স্বাধিকার অর্জনের জন্য এই মুক্তিযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এখানেও এটা মূলত কোনো ধর্মবিরোধী যুদ্ধ ছিল না।
একইভাবে বর্তমান বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারত যেন পাকিস্তানের মতো একই ভুল না করে। ভারত বড় দেশ হিসেবে যত বেশি এগিয়ে আসবে বাংলাদেশীদের মধ্যে তত বেশি ভারতের বিষয়ে আস্থা তৈরি হবে। ভারতের পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনেক অমীমাংসিত বিষয় আছে যেগুলোর সমাধান হতে হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। জাতীয় স্বার্থ হবে তার দিকনির্দেশনা, সার্বভৌমত্ব হবে তার প্রধান দাঁড়ানোর জায়গা।
বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার চালাচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের এ অভ্যুত্থানকে একধরনের ইসলামী উগ্রবাদের সাথে মেলানোর চেষ্টা করছে। কারণ, বাংলাদেশে ইসলামী উগ্রবাদ তৈরি হলে ভারতের যারা উগ্রবাদী রয়েছে, তাদের জন্য সহায়ক হয়। সেই জায়গা থেকে এই অপপ্রচার চালানো হয়ে থাকতে পারে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এবং ভারতীয় মিডিয়ার এলার্জি হওয়ার মূল কারণটি হলো এই আন্দোলনটি গড়ে উঠেছিল ভারতের আস্থাভাজন শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারত চলে যাওয়ার পর ভারতীয় মিডিয়ার অধিকাংশই বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
যদিও কলকাতা পুলিশ বিবৃতিতে আগে জানিয়েছিল, ‘কিছু স্থানীয় টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যেভাবে রিপোর্টিং হচ্ছে, তা সাম্প্রদায়িক এবং ভারতের প্রেস কাউন্সিলের নিয়মাবলির পরিপন্থী’।
বাংলাদেশ এখন ভারতের ছায়াতল থেকে বেরিয়ে এসে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় কর্তৃপক্ষ এমন একটি সামাজিক এবং রাজনৈতিক অগ্রগতির ইতিহাস সৃষ্টি করবে।
লেখক : গবেষক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক


আরো সংবাদ



premium cement