১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে ভারতের কৌশলগত পদক্ষেপ

সময়-অসময়
-


গত ২ ডিসেম্বর একটি চরমপন্থী হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে আক্রমণ করে জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগ করেছে। উগ্রপন্থী বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সহযোগী সংগঠন সংগ্রাম সমিতি বাংলাদেশে হিন্দুবিরোধী সহিংসতার মিথ্যা দাবি এবং ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে কমিশনের চত্বরে বিক্ষোভ ও সম্পত্তি ভাঙচুর করে। এই নির্লজ্জ কাজ শুধু কূটনৈতিক প্রোটোকলের লঙ্ঘনই নয়, একই সাথে এটি শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনারও প্রকাশ ।

দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে, হাসিনার অধীনে বাংলাদেশে ভারত নজিরবিহীন প্রভাব বিস্তার করে শাসনব্যবস্থা, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, মিডিয়া ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি ছদ্ম-ঔপনিবেশিক আধিপত্য সৃষ্টি করে। এ সময় হাসিনার প্রশাসন ভারতের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় সর্বোতভাবে সুবিধা দিয়েছে। আর হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর বাংলাদেশে ভারতের সযতে্ন নির্মিত অধিপত্যের সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে শুরু করে। দিল্লি তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।
হাসিনার বিদায়ের পর থেকে ভারত বাংলাদেশে তার প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার বহুমুখী কৌশল নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাকৃত মিডিয়ার মাধ্যমে আক্রমণাত্মক প্রচার-প্রচারণা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মিথ্যা বর্ণনা এবং প্রবল কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি। আগরতলা হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ভারতীয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ক্রমবর্ধমানভাবে বাংলাদেশবিরোধীদের সাথে সারিবদ্ধ হওয়ার একটি সঙ্কেত।

কৌশলগত বিনিয়োগ ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক
হাসিনা আমলে বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ গতানুগতিক অর্থনৈতিক এলাকা ছাড়িয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেলপথ এবং আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য রুটের মতো অবকাঠামো প্রকল্পগুলো পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। একই সাথে অর্থনৈতিক বন্ধনকে নির্ভরতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ভারতীয় কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করে। টেলিযোগাযোগ ও পরিবহন এমনকি গার্মেন্টের মতো খাতেও নিজস্ব অবস্থান তৈরি করে ভারতীয়রা।
একই সাথে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, বিশেষ করে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং- র বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গভীর নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এই নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয় রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন, জাতীয় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ নেটওয়ার্ক ও অপারেশনাল কর্মকাণ্ড এবং আইন প্রয়োগকারী ও নিরাপত্তাবাহিনী পর্যন্ত।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় মিডিয়া ও বিনোদনের বিস্তার এমন একটি সূক্ষ্ম উদ্যোগ ছিল যা সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তারে হয় কার্যকর হাতিয়ার। ভারতীয় টেলিভিশন, সিনেমা ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো বাংলাদেশে সর্বব্যাপী প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। এসব স্থানীয় জনমতকে প্রভাবিত করে এবং ভারতের নমনীয় ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। বাংলাদেশে ভারতীয় অনুদানপ্রাপ্ত মিডিয়া চ্যানেলগুলো ভিন্নমতের কণ্ঠ পাশ কাটিয়ে হাসিনাপন্থী ন্যারেটিভ বা আখ্যান ছড়িয়ে দেয়।

রাজনৈতিক লিভারেজ তৈরি
হাসিনার সরকার আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য ভারতের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করেছিল, বিশেষ করে বিতর্কিত নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে দিল্লিনির্ভর হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার। বিনিময়ে একপ্রকার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের মূল্যে হাসিনার সরকার আঞ্চলিক এজেন্ডায় ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যার মধ্যে রয়েছে : * উত্তর-পূর্বে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট রুটের সুবিধা। * অভিন্ন নদীর পানি-বণ্টনসংক্রান্ত চুক্তি যা ভারতকে অসমভাবে উপকৃত করেছে। * ভারতের প্রভাবের সমালোচনাকারী বিরোধী দলগুলোকে দমন করে প্রান্তিক করে ফেলা।
শেখ হাসিনার পতন ভারতের স্বার্থে যে কৌশলগত ধাক্কা দেয় তার জবাবে ভারত তার টুলসগুলোকে একত্রিত করে একটি আক্রমণাত্মক বহু-স্তরীয় প্রচারণা সক্রিয় করে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য ঐতিহ্যগত প্রচার এবং উন্নত পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধকৌশল নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে তার প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা বজায় রাখে।

ভারতীয় প্রভাব ফেরানোর জন্য এ দেশে তাদের প্রোপাগান্ডা নেটওয়ার্ক সক্রিয় করা হয়। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্ত থেকে ভারতীয় রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো জনসাধারণের এবং আন্তর্জাতিক ধারণা গঠনের জন্য সচল করা হয়। এর অংশ হিসেবে বানোয়াট হিন্দুবিরোধী বয়ান তৈরির জন্য ভারতীয় মিডিয়া ব্যাপকভাবে মিথ্যা দাবি ও গুজব প্রচার করেছে, যাতে ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় বাংলাদেশ নিয়ে।
এর পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান ইসলামিক চরমপন্থার বর্ণনা, চীনা প্রভাব এবং ভারতবিরোধী মনোভাব ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশকে দিল্লির স্বার্থ বিবেচনায় অস্থির এবং প্রতিকূল হিসেবে চিত্রিত করার জন্য। বিজেপি, আরএসএস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস এই আখ্যানগুলোকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখে।
জাতীয় পর্যায়ে বিজেপি নেতৃত্ব ও কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্যে বাংলাদেশবিরোধী উপাদান প্রায় কাছাকাছি। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের জাগিয়ে তুলে বাংলাদেশে অভিযান চালানোর কথা বলেন রাজ্য বিধান সভায় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বাংলাদেশে শান্তি সেনা মোতায়েনের কথা বলেন। বাংলাদেশকে জাতীয় নিরাপত্তায় ঝুঁকি হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা পুরো রাজনৈতিক কাঠামোতে প্রসারিত করা হয়েছে বলে মনে হয় ।

পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধের কৌশল ও প্রচারযুদ্ধ
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সঙ্কটকে গভীরতর করার জন্য অত্যাধুনিক বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার কৌশল গ্রহণ করেছে। সোস্যাল মিডিয়াকে ম্যানিপুলেশন করে হাজার হাজার ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে তাতে বিভ্রান্তিকর বিষয়বস্তু, বানোয়াট ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট ও গুজব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি সিটিজেন জার্নালিজম এবং প্রক্সি নেটওয়ার্কের একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যা ভারত-সমর্থিত কর্মীরা গোপনে ব্যবহার করছে প্রোপাগান্ডা করার জন্য।
এই প্রচারযুদ্ধের পেছনে ভারতের প্রধান লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে হেয় করা এবং এর ক্ষমতার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করা। এই লক্ষ্যে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উপদলের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করার একটি কৌশলও নেয়া হয়েছে। এটি করে প্রতিবেশী দেশটি বাংলাদেশের জন্য নিজেকে অপরিহার্য হিসেবে অবস্থান সৃষ্টি করতে চাইছে। যাতে বাংলাদেশ এমন একটি অবস্থান গ্রহণ করতে বাধ্য হয় যেখানে ভারতের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে।
সফট পাওয়ার, নন-কাইনেটিক কৌশল এবং ডিভাইড-অ্যান্ড-রুল নীতি হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে ভারতের অস্থিতিশীলকরণের অন্যতম কর্মপন্থা। এ জন্য সফট পাওয়ারের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করা হচ্ছে। নন-কাইনেটিক কৌশলের ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। নন-কাইনেটিক কৌশল হলো সামরিক ও কৌশলগত প্রক্রিয়া যা বাস্তব শক্তি বা প্রচলিত অস্ত্র ব্যবহার না করে লক্ষ্য অর্জনের টার্গেট রাখে। কৌশলগুলো আধুনিক দ্বন্দ্বগুলোতে বিশিষ্ট হয়ে উঠছে এবং এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে : সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের যোগাযোগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া ব্যাহত করা; শত্রুদের বিভ্রান্ত করার জন্য তথ্যের হেরফের করা; মনস্তাত্ত্বিক অপারেশনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণকে হ্রাস করা; ইলেকট্রনিক জ্যামিংয়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ক্ষমতা ব্যাহত করা; ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষমতা হ্রাস করা। এ পদক্ষেপগুলো এখন প্রতিবেশী দেশকে নিতে দেখা যাচ্ছে।

বিভাজন করে নিয়ন্ত্রণে আনা
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংহতি নষ্ট করতে ভারত পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক ফল্ট লাইনগুলোকে দুর্বল করার কৌশল গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে আগস্ট বিপ্লবের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত প্রভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করা হচ্ছে ।
এর পাশাপাশি ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য মসজিদ, মন্দির ও উপাসনালয়ে হামলা চালানো, হিন্দু-মুসলিম সহিংসতা সৃষ্টি এবং আন্তঃমুসলিম বিভাজন উসকে দেয়া হচ্ছে। ইসলামী দল ও সুফি সম্প্রদায়ের মতবাদের বিরোধ আরো গভীর করার মাধ্যমে মূলধারাকে টার্গেট করা হচ্ছে।
একই সাথে শ্রেণী ও অর্থনৈতিক বিভাজন তৈরির জন্য সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত ঘটিয়ে শ্রেণিউত্তেজনা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সে সাথে দ্রব্যমূল্য স্ফীতি এবং অর্থনৈতিকভাবে অসন্তোষকে উসকে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভারত অসন্তোষ তৈরি করতে এবং জনগণের আস্থা নষ্ট করতে আরো অর্থনৈতিক হাতিয়ার ব্যবহার করছে। ভারতীয় নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট ব্যবহার করে চালের মতো প্রধান খাদ্যসহ অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি করছে। টেক্সটাইল ও ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের মতো মূল খাতগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে, যাতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা ব্যাহত করা যায়।

প্রাতিষ্ঠানিক আস্থা নষ্ট করা
ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি হলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বিনষ্ট করা। এ জন্য বিচার বিভাগ ও পুলিশের ওপর জনগণের আস্থা দুর্বল করতে ভিত্তিহীন দুর্নীতি সম্পর্কে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যাতে বিগত দেড় দশকের লুটপাটকারীদের আড়াল করা যায়। ধর্মীয় নেতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে অবিশ্বাস সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টাকে দুর্বল করা হচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত মিডিয়া ব্যবহার করে বাংলাদেশকে চরমপন্থা এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি বিদ্বেষী ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে ।
সুশাসন ও স্থিতিশীলতার পরিবর্তে সঙ্ঘাত উসকে দেয়ার একটি বড় কারণ হলো অন্তর্বর্তী সরকারকে অভ্যন্তরীণ দিকে মনোনিবেশ করতে বাধ্য করা। সেই সাথে জনগণের ঐক্যকে দুর্বল করে স্থায়ী সামাজিক ফাটল প্রতিষ্ঠা করা। এর মাধ্যমে বাইরের হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের মতো জনঐক্য সৃষ্টিতে বাধা তৈরি হবে। এসব পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে একটি নির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করা, যে রাষ্ট্র ভারতীয় আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার অবস্থানে থাকবে না।

সামরিক তৎপরতা ও অস্থিতিশীলকরণ প্রচেষ্টা
হাসিনা-পরবর্তী সময়ে ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর কিছু বর্ধিত তৎপরতা দেখা যায়, যার লক্ষ্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ভয় দেখানো এবং অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করা। এর অংশ হিসেবে ভারত তার সীমান্ত সামরিকীকরণকে উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করেছে, একটি বহুস্তরযুক্ত প্রতিরক্ষা আবহ তৈরি করেছে। বিদ্রোহবিরোধী অভিযানের জন্য পরিচিত আরআর ইউনিটকে সংবেদনশীল সেক্টরে সংগঠিত করা হয়েছে। বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স)-এর অতিরিক্ত ব্যাটালিয়ন রাখা হয়েছে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে। আর শক্তির প্রকাশ্য প্রদর্শন করতে তাদের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সাথে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার অ্যাসেটসের অ্যাডভান্সড রাডার এবং গুয়েন্দা তথ্য এবং আন্তঃসীমান্তের অবস্থা নিরীক্ষণের জন্য নজরদারি ও রিকনসান্স সিস্টেম মোতায়েন করা হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড উচ্চ মাত্রায় তাদের প্রস্তুতি বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্ত বরাবর সিমুলেটেড অপারেশন অপারেশনাল সমন্বয় এবং দ্রুত স্থাপনার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী, বিএসএফ এবং রাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয় হাইব্রিড এবং গতিশীল কৌশল চালানোর জন্য যৌথ অপারেশন প্রস্তুতির কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে।

এর পাশাপাশি ভারত কৌশলগতভাবে নিজেকে মিত্রবাহিনীর জন্য একটি অভয়ারণ্য হিসেবে তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। পতিত সরকারের মন্ত্রী, নেতা ও পালিয়ে যাওয়া সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের অনেকের আশ্রয় মিলেছে সেখানে। বাংলাদেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য রাজনৈতিক ও আধা সামরিক বাহিনী সংগঠিত করা ও প্রশিক্ষণ দেয়ার তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কট টিকিয়ে রাখার জন্য পরিকল্পিত বহু-স্তরীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশটি। ভারতের এসব প্রচেষ্টার মধ্যে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থার ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের সুবিধা দেয়াও অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে লাইন বি এবং লাইন সি অপারেটিভসও রয়েছে। এরা রাজনৈতিক, আইনপ্রয়োগ সংস্থা এবং জনপ্রশাসনে রয়েছে এবং প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত নয়; কিন্তু ভারতীয় স্বার্থের সাথে মিশে আছে। ভারত তাদের প্রমোট করতে চায়, যাতে তার অবশিষ্ট প্রভাব ব্যবহার করে মূল অবস্থানে চলে যেতে পারে।
এর মাধ্যমে একটি প্রতিবেশী দেশের পক্ষে গভীর ক্ষমতাবলয় পুনঃপ্রতিষ্ঠাই লক্ষ্য। এই অপারেটিভদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে, ভারত তার প্রভাব পুনর্গঠনের লক্ষ্য রাখে এবং দীর্ঘমেয়াদে নিশ্চিত হতে চায় বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে এর গোপন প্রভাবের নেটওয়ার্ক জটিল সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলোর ওপর যাতে থাকে।

শেষ কথা
ভারত হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল করা এবং তার প্রভাব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তার বিপরীতে ঐক্য, কার্যকর শাসন ও ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের মধ্যে বাংলাদেশের অগ্রগতির পথ নিহিত রয়েছে। নিরপেক্ষ বৈশ্বিক শক্তির সাথে জোট শক্তিশালী করা বাহ্যিক হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। যদিও ভারতের কৌশলগুলো স্বল্পমেয়াদি লাভ সুরক্ষিত করতে পারে, তবে তারা ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিবেশীদের বিচ্ছিন্ন করা আর বৃহত্তর আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতাকে আমন্ত্রণ জানানোর ঝুঁকি নেবে না।
বাংলাদেশের জন্য স্থিতিস্থাপকতা এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপই সার্বভৌমত্ব রক্ষার চাবিকাঠি এবং তার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যাবে।
[email protected]

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement