০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

ভোটাধিকারই সিইসির কাছে প্রত্যাশা

-


অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিন গত ২৪ নভেম্বর দেশের চৌদ্দতম চিফ ইলেকশন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। একই সাথে আরো চারজন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তারা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো: আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব বেগম তাহমিদা আহমদ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো: সানাউল্লাহ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নতুন নির্বাচন কমিশনকে শপথবাক্য পাঠ করান। এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি, সার্চ কমিটির সদস্য, নির্বাচন কমিশন সচিব, সিইসি ও চার কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।

৫ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার নিয়োগকৃত সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং তার দল পদত্যাগ করে। পরবর্তী সময়ে ২৯ অক্টোবর সরকার কর্তৃক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে প্রধান এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এবং পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা জিন্নাতুন নিছা তাহমিদা বেগমকে সদস্য করে ইসি গঠনে ছয় সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠিত হয়। এই সার্চ কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে নতুন ইসি গঠনের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ২১ নভেম্বর সিইসি এবং ইসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় এবং ২৪ নভেম্বর তারা শপথ গ্রহণ করেন। এভাবে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়।

ভোটাধিকার একজন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এবং সংসদ নির্বাচনসহ কোনো নির্বাচনেই জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। এসব নির্বাচনে ভোটের নামে স্রেফ একটি তামাশা করা হয়েছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় এসব ভোটের প্রতি জনগণের তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। ফলে অধিকাংশ ভোটারই ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যাননি। তা ছাড়া এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কর্মিবাহিনী ব্যালট বাক্স ছিনতাই করেছে, জাল ভোট মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে এবং নিজেদের ইচ্ছামতো ফলাফল ঘোষণা করে নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। সরকারের প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরাবরই এসব কাজে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা দিয়েছে। আর নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনী ফলাফলকে অনুমোদন করেছে এবং এর মাধ্যমে তারা এসব নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা এবং আগ্রহ এতটাই কমে যায় যে, স্বয়ং আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীও তাদের দলীয় প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে যায়নি এবং ভোট দেয়নি। এখন নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনকে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। সুতরাং নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে।

এ জন্য নির্বাচনবিধিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে এবং নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। তরুণ প্রজন্মসহ অনেক বয়স্ক মানুষ কিন্তু এখনো ভোটার হয়নি। তাদের ভোটার করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং নির্বাচনের আগে সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে ভোটার করতে হবে। এ ছাড়া প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ প্রবাসে কাজ করে এবং বসবাস করে। এসব মানুষের অধিকাংশই প্রাপ্তবয়স্ক এবং তারা সবাই ভোটার। এই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সেই সচল এ দেশের অর্থনীতির চাকা; কিন্তু ভোটের সময় বিদেশে অবস্থানের কারণে তারা ভোট দিতে পারে না। প্রবাসীদের ভোটাধিকার এবং ভোটের সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিটি সংসদীয় আসনের ভোটার এবং প্রার্থীদের প্রতীকসহ তালিকা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে সংরক্ষিত থাকবে। একজন বাংলাদেশী ভোটার যে দেশেই অবস্থান করুক না কেন তিনি অনলাইনে তার নির্বাচনী এলাকার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এটি একেবারেই একটি সহজ বিষয়। দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় এ জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ডেভেলপ করা প্রয়োজন। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ দেশের প্রতিটি মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, এটিই আজকের দিনের প্রত্যাশা। আর এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
লেখক : প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক
ই-মেইল : [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
দেশের ৬৯ কারাগারের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ : কারা মহাপরিদর্শক আমরা হিন্দু-মুসলমান একসাথে লড়াই করে দিল্লির দাসত্বকে খান খান করে দেবো : রিজভী আজমির শরিফ : খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগাহের ইতিহাস জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও আমেরিকার বাকবিতণ্ডা ‘শেখ হাসিনা সরকার সবকিছু ধ্বংস করে গেছে’ পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ১২ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর দেনার দায়ে শক্ত অবস্থান হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করছে : প্রধান উপদেষ্টা নতুন মামলায় আনিসুল-ইনু-রাশেদ-পলকসহ গ্রেফতার ৯ যুবদল নেতা শামীম হত্যা : আ.লীগের রোকেয়া-মোস্তফা রিমান্ডে লেবানন থেকে বৃহস্পতিবার দেশে ফিরবেন ১০৫ বাংলাদেশী

সকল