ডা: শফিকুর রহমানের একটি আলোচিত সাক্ষাৎকার
- রাজু আলীম
- ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সম্প্রতি চ্যানেল আইয়ের ‘মেট্রোসেম স্ট্রেট কাট’ অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন উপস্থাপক দীপ্তি চৌধুরী। অনুষ্ঠানে তিনি খোলাখুলি কথা বলেছেন, জামায়াতে ইসলামের রাজনীতি, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে। জামায়াতে ইসলামের আমির ডা: শফিকের বর্তমান সময় ও আন্দোলন নিয়ে কথা বলার বিশেষ তাৎপর্য বিবেচনা করে সাক্ষাৎকারের মুখ্য বিষয়গুলো এখানে তুলে ধরা হলো।
‘মেট্রোসেম স্ট্রেট কাট’ অনুষ্ঠানে ডা: শফিকুর রহমান শুরুতেই ১৯৭১ ও ২০২৪-এর নতুন স্বাধীনতা বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। বলেন, ‘আমরা আগে একটি স্বাধীনতা পেয়েছিলাম ১৯৪৭ সালে। ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আমাদের এই উপমহাদেশ শোষণ করেছিল ব্রিটিশরা। তখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অনেক আন্দোলন হয়েছে। সিপাহি বিদ্রোহ থেকে শুরু করে অনেক কিছুই হয়েছে। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে অখণ্ড ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়- ভারত ও পাকিস্তান। সে স্বাধীনতা একটি থিমকে সামনে রেখে হয়েছিল। বিশেষ করে আমি পাকিস্তানের কথা বলছি। পাকিস্তান আন্দোলনের নেতারা বলেছিলেন, আমাদের একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রয়োজন। কেন প্রয়োজন? কারণ তারা ১৯০ বছর ব্রিটিশ শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে বুঝতে পেরেছিলেন যে, মুসলমানরাই কার্যত ভারতে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত, অবহেলিত। এই জায়গা থেকেই তারা অনুভব করেছিলেন, একটি মুসলিম রাষ্ট্র কায়েম হওয়া দরকার। তারা কথা দিয়েছিলেন, এমন একটি রাষ্ট্র কায়েম হলে সেই দেশটি চলবে কুরআনের সংবিধান অনুযায়ী। কিন্তু এটি তারা করেননি। না করার কারণে তারা কার্যত প্রতিশ্রুতির প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। সর্বশেষ ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৩টি আসন ছিল পূর্ব পাকিস্তানে, যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পূর্ব পাকিস্তানে বসবাস করত। বাকি ১৪৭টি আসন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। এই ১৬৩ আসনের মধ্যে ১৬১টি আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পূর্ব পাকিস্তানে হওয়া সত্ত্বেও তারা পুরো পাকিস্তানেরও সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ছিল। সেই সময়ে ভুট্টো সাহেবের আজগুবো দাবি উদ্ভট চিন্তা ও হঠকারিতার কারণে তিনি সারা পাকিস্তানে শেখ মুজিব সাহেবের নেতৃত্বে সরকার মেনে নিতে রাজি হলেন না। তিনি যুক্তি দেখালেন, শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে সব আসনে জিতেছেন কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে এক আসনেও জয়লাভ করেননি। এ কারণে তিনি পুরো পাকিস্তান এককভাবে শাসন করতে পারেন না। একইভাবে ভুট্টো বলেছিলেন, আমার পিপলস পার্টিও পূর্ব পাকিস্তানে কোনো আসন পায়নি। কাজেই আমিও সারা পাকিস্তান শাসনের এখতিয়ার রাখি না। এ দিক থেকে দুই অংশে দু’জন প্রধানমন্ত্রীর দাবির কথা তিনি উল্লেখ করেন।’
ডা: শফিক বলেন, ‘ভুট্টোর দাবিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রকাঠামো ও সংবিধান কোনোটাই সাপোর্ট করেনি। এখান থেকেই মূলত সঙ্কট শুরু হয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানুষের ভোটের স্বীকৃতি না দেয়ায় শেষ পর্যন্ত সঙ্ঘাত একটি যুদ্ধে পরিণত হলো। মানুষ তো যুদ্ধ করার জন্য ভোট দেয়নি। মানুষ ভোট দিয়েছিল তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আর আওয়ামী লীগ অনেক কথা বলেছিল। পাকিস্তান আন্দোলনের নেতারা যেমন কথা দিয়ে কথা রাখেননি, তেমনি পরবর্তী পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতারাও কথা দিয়ে কথা রাখেননি।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল কি না, এ বিষয়ে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘যুদ্ধটা তো পাকিস্তানিরা চাপিয়ে দিয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানিরা ও সামরিক শাসনের ব্যর্থতার কারণে যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু এই যুদ্ধে সরাসরি ভারত আশ্রয় ও সাপোর্ট দিতে থাকায় যুদ্ধের প্রেক্ষাপট জটিল হয়ে গেল। আমি তখন বলতে গেলে একজন শিশু ছিলাম। তখন বাংলাদেশে ধর্মীয় বা মুসলিম জাতীয়তাবাদী অনেক ইসলামিক দল ছিল। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী একটি। জামায়াতে ইসলামীর নীতি আদর্শ ও বক্তব্য এসব দলের মধ্যে একটু বেটার মনে হয়েছে বলে অল্প কিছু ভোট মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দিয়েছে। অন্য কেউ তেমন ভোট পায়নি বললেই চলে। বাকি সব ভোটই পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জামায়াতে ইসলামীই প্রথম দল ভুট্টো সাহেব যখন এমন দাবি করলেন তখন এর প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররম থেকে প্রফেসর গোলাম আযমের নেতৃত্বে মিছিল বের হলো এবং দাবি করা হলো যে নির্বাচিত নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। আওয়ামী লীগ তখনো জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন ছিল। কিন্তু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সম্মান করে তখন জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তানের আমির এই দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে সেটি আর হলো না। শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও চেয়েছিলেন, অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে। আর ২৩ বছরে পাকিস্তান যেসব বঞ্চনার শিকারে পরিণত হয়েছে, সেগুলোতে সমতা আনার তিনি চেষ্টা করবেন। যার কারণে গ্রেফতার হওয়া পর্যন্ত তার মুখ থেকে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা আসেনি।’
২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন তার ঘনিষ্ঠতম ব্যক্তি। তার মেয়ের লেখা বই- ‘নেতা ও পিতা’। তাতে উল্লেখ আছে, শেখ মুজিবের কাছে স্বাধীনতার ঘোষণার একটি ড্রাফট নিয়ে গিয়েছিলেন তাজউদ্দীন। বলেছিলেন- নেতা, আপনি এটিতে স্বাক্ষর করেন। তাহলে আপনার স্বাক্ষর করা এই লেখা আমরা সব জায়গায় পৌঁছে দিতে পারব। দেশী-বিদেশী মিডিয়ার কাছেও। শেখ মুজিব রাজি হননি। শেষ মুহূর্তেও রাজি না হওয়ায় তাজউদ্দীন মন ভাঙা অবস্থায় সেই ৩২ নম্বর ত্যাগ করে চলে এসেছিলেন। এর প্রতিবাদ আওয়ামী লীগ করেনি। আর তাজউদ্দীনের ফ্যামিলি তো এখনো আওয়ামী লীগের সাথে আছে। আওয়ামী লীগেরই রাজনীতি করে। তার এক মেয়ে তো আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। এর আগে ছেলে তো প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। বই তো ওই সময়েই লেখা। সে বইয়ের প্রতিবাদ আওয়ামী লীগ করেনি। আমি বলব কেন করেনি! তাদের নিজেদের সাক্ষ্যই তো তাদের নিজেদের জন্য যথেষ্ট।’
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কতটা ওন করেন, সেই প্রসঙ্গে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা শতভাগ ওন করি। শুধু ওন করি না। স্বাধীন এ দেশের জন্য সম্ভবত আমাদের মতো এত বেশি মূল্য পরিশোধ আর কারো করতে হয়নি। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কারো কাছে বিক্রি হোক এটি আমরা চাই না।’
বাংলাদেশের ’২৪-এর নতুন স্বাধীনতা আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা বিষয়ে ডা: শফিক বলেন, ‘এ আন্দোলনটা আসলে কোনো দলের নয়, কোনো গোষ্ঠীরও নয়। এ আন্দোলন ছিল আপামর নির্যাতিত জনগণের আন্দোলন। তবে হ্যাঁ, এ আন্দোলন যে ২০২৪-এ এসে হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। এ আন্দোলন শুরু হয়েছে আরেকটি রক্ত পরিশোধের বেদনাদায়ক ঘটনার মধ্য দিয়ে। সে ঘটনাটা আপনারা জানেন, ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার ঠিক পরের মাসে, ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় যে ৫৭ জন কমিটেড চৌকস সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল, তার মধ্য দিয়ে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়। আর এ জাতির ত্যাগের রাজনীতি শুরু হয়। এই যে ১৫ বছর আগে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর এতগুলো চৌকস কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল এবং তার পরের বছর জামায়াতে ইসলামীর নেতাদেরকে যেভাবে ক্যাঙ্গারু কোর্টে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, তা বাংলাদেশের জনগণ শুধু নয় গোটা দেশবাসী দেখেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। সরকার সেসব কানে তোলেনি। তখন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত এই সরকারের হাতে জাতির রক্ত লেগে আছে। আমরা দফায় দফায় স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আপনারাও করেছেন। আপনি মুখোমুখি হয়েছেন এমন একটি বেদনাদায়ক ঘটনার, যেটার প্রতিবাদ করার সুযোগ আপনি পেয়েছেন। আপনার আমন্ত্রণে আসা একজন অতিথি আপনার সাথে যে হঠকারী আচরণ করেন সেটি জাতি ও বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এরকমই ছিল তাদের আচরণ। তার পর যখন ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করল তখন প্রধানমন্ত্রী রাগ ক্ষোভ অভিমানে বললেন, এখন থেকে আর কোনো কোটাই থাকবে না। আর সেটিকেই আবার নিয়ে আসা হলো ২০২৪ সালে। যখন এটি ফিরিয়ে আনা হলো তখন ছাত্রদের মধ্যে আবারো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো। কাটছাঁট ছাড়াই কোটা আগে যা ছিল তাই চলে এলো। এর আগেও তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনী, হাতুড়ি বাহিনী, পেটোয়া বাহিনী দিয়ে যেভাবে দমন করেছিলেন, এবারো তিনি একইভাবে আন্দোলন দমন করতে চাইলেন। চীন থেকে ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি যে খেদ ঝেড়েছিলেন এবং গোটা তরুণ সমাজকে যেভাবে রাজাকার বলেছিলেন তা তাদের রক্তে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছিলেন, এ ধরনের আন্দোলন দমনের অভিজ্ঞতা তাদের আছে। এ জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। ছাত্রলীগকে আবার অস্ত্র হাতুড়ি হাতে দিয়ে ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে দেয়া হলো। সে দিন ছেলেদেরই কেবল আক্রমণ করা হয়নি। মেয়েদেরও অনেককে অপদস্থ করা হয়েছে। এই দুই ঘটনা বলতে পারেন কার্যত আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। হঠকারী মানসিকতার কারণেই তারা এমন দাম্ভিকতা প্রদর্শন করেছিল। তার পর রংপুরে আবু সাঈদের ঘটনাটা ছিল তৃতীয় টার্নিং পয়েন্ট। এ ছেলেটা তো নিরস্ত্র ছিল। তার হাতে একটি সিম্পল স্টিক ছিল। কিন্তু সেই স্টিক নিয়ে সে কারো দিকে তেড়ে যায়নি। সে বলেছিল আমার অধিকার দাও, নইলে আমাকে গুলি করো। তারা বলেছে, অধিকার নয়, তোমাকে গুলি করব। একের পর এক গুলি করে তারা ছেলেটিকে মেরে ফেলল। এরপর তার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলানোর পাঁয়তারা হয়েছে, এফআইআরও তিনবার চেঞ্জ করে দেখানো হয়েছে, সে পুলিশের গুলিতে মারা যায়নি, সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা গেছে। এ রকম বিষয় নিয়েও নানা নাটক হয়েছে।
ডা: শফিক উল্লেখ করেন, এ আন্দোলনটি ছিল সামগ্রিক আন্দোলন। কোনো দলের নয়। আপনারা সবাই জানেন, যারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে, এমনকি কেজি স্কুলের ছাত্ররাও সে আন্দোলনে শহীদ হয়েছিল। দেড় মাসের শিশু কোলে নিয়ে উত্তরায় এক মা চলে এসেছিলেন। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি এভাবে এলেন কেন? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, আমার তো একটি বাচ্চা নাই ওদের মতো আন্দোলন করার জন্য। যেটি ছিল তাকে নিয়েই চলে এসেছি আন্দোলনে। এ আন্দোলনে কোনো দল-মত ছিল না। জামায়াতে ইসলামী যেহেতু সবচেয়ে বড় মজলুম সংগঠন, সে কারণে আমরা আগেও আন্দোলন করেছি, এ আন্দোলনেও আমরা সমন্বিত ছিলাম। কিন্তু আলাদাভাবে এ আন্দোলনের কোনো পজিশন আমরা দাবি করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। আমরা সবসময় বলে আসছি সব কৃতিত্ব মহান আল্লাহ তায়ালার। আমরা কখনো কল্পনাও করিনি ৫ তারিখে এমন একটি পরিবর্তন হবে, আর স্বৈরশাসক বলেছিল, অমুক পালায় না। তিনি এমনভাবে চলে যাবেন দেশ থেকে এটি আমরা কেউ কল্পনা করেনি। দেশ এগোবে, স্বৈরশাসনমুক্ত হবে, জনতার জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে, এটিও তো আমরা কল্পনা করিনি।’
আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের অংশগ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সবার মতো আমরা ছিলাম’। আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে অন্য সংগঠনে শিবিরের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘ছাত্ররা এটি ভালো বলতে পারবেন। এটি তাদের কৌশল। কিন্তু কৌশলের আগে একটু চিন্তা করেন। একটি ছেলের দাড়ি আছে মুখে। সে নামাজ পড়ে। সে শিবির। একটি ছেলের দাড়ি নেই, নামাজ পড়ে। আরেকটি ছেলেকে বলছে, চলো বন্ধু নামাজে যাই। সে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র, আবরার ফাহাদ। তাকে শিবির বলে মেরেই ফেলল। শিবির হলে কি কোনো অসুবিধা আছে? একজন ছাত্রলীগ করবে সেটি তার চয়েস, একজন শিবির করবে সেটিও তার চয়েস। এটি তো তার কনস্টিটিউশনাল রাইট। এমন একটি ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করে রাখা হয়। সেখানে শিবিরের ছেলেদের প্রকাশ্যে কাজ করার কী পরিবেশ ছিল?’
জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরকে একসময় নিষিদ্ধ করা এবং পরবর্তীকালে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গে ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘দুই নিষিদ্ধ এক নয়। যখন জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন ছাত্র ও জনতার আন্দোলন একটি পরিণতির দিকে যাচ্ছিল। একটি ইস্যু তৈরি করার জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। তাও ছিল হাস্যকর। ১৪ দলের মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৪ দল কে, একটি ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ করার? এটি বিচারের মাধ্যমে হবে অথবা সংসদে আইন করে কিছু একটা করবে। এর বাইরে কী কোনো সুযোগ আছে? হ্যাঁ, নির্বাহী আদেশে পারে। তো নির্বাহী আদেশ দেয়ার মালিক কি ১৪ দল? নির্বাহী আদেশ তো দেবে রাষ্ট্রের নির্বাহী কর্তৃপক্ষ। তারা বুঝতে পেরেছিল, জনগণের আন্দোলন এবার প্রতিরোধ করতে পারবে না। এ জন্য ইস্যুটিকে সামনে এনে আন্দোলন ব্যর্থ করার একটি চেষ্টা তারা করেছিলেন।’
‘জনগণ তাদের এই চাতুর্য ধরে ফেলেছিল। যার কারণে তারা এখান থেকে আর উঠতে পারেননি। সেই দিন সব দল এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে। এখন ছাত্রলীগকে যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেটি আপনি দেখবেন যে- হাতুড়িকাণ্ড, আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মানুষ খুন করা, পুলিশের সাথে এক লাইনে দাঁড়িয়ে জনতার বুকে গুলি করার অপরাধে। এগুলো পরীক্ষিত সত্য। এগুলো থেকে এস্কেপ করার কোনো সুযোগ নেই। হাজার হাজার সিসি ক্যামেরাতে তা আছে। সেই জায়গা থেকে সরকার করেছে আর সরকার প্রশংসাও পেয়েছে।’
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সাথে যুগপৎ আন্দোলন বিষয়েও কথা বলেন ডা: শফিক। তিনি বলেন, ‘বিএনপির সাথে আমরা আন্দোলন যৌথও করেছি, যুগপৎও করেছি। আর আওয়ামী লীগের সাথে আমরা যুগপৎ করেছি। আমাদের মূলত যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয় আওয়ামী লীগের সাথেই। ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকারের সময় সবার আগে কেয়ারটেকার সরকারের একটি ফর্মুলা জামায়াতে ইসলামী ঘোষণা করে। আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিতে। পরবর্তীতে এ দাবি যখন ’৯৬ সালে গতি পেল তখন আওয়ামী লীগ বলল, এটি শেখ হাসিনার ব্রেন চাইল্ড। আমরা অবাক হয়ে গেলাম। দেশবাসী অবাক হলো। জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির অধ্যাপক গোলাম আযম যে ফর্মুলা দিয়েছিলেন সেই ফর্মুলায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছিল। পরবর্তী দু’টি কেয়ারটেকার সরকারও গঠন হয়েছিল। পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের মনে হয়েছে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখা যাবে না। এটি যদি তাদের ব্রেন চাইল্ড হয়, শেখ হাসিনার ব্রেন চাইল্ড হয়, তবে কোনো মা কি তার সন্তানকে জবাই করে? তিনি তো মা হয়ে তার সন্তান জবাই করে দিলেন। আমরা তার দাবির সত্যতা সমর্থন করছি না। পরবর্তীতে নির্বাচন বাদ দিয়ে তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ঘোষণা দিলেন। এটি নতুন নয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ এই কালচারেই বিশ্বাসী ছিল। যে গণতন্ত্রের অধিকারের জন্য বাংলাদেশের সৃষ্টি, সেই গণতন্ত্রকেই তো তারা হত্যা করলেন।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা