২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
উৎসের উচ্চারণ

ইসলামী আন্দোলন : জরুরি কথাসূত্র

-

জীবন গতিশীল। এর মানে হলো সে সক্রিয়তার মধ্যে থাকে। সক্রিয়তার মধ্যে থাকাই আন্দোলনের মধ্যে থাকা। সক্রিয়তার নানা মাত্রা আছে। তা হতে পারে ব্যক্তিক অথবা সামষ্টিক। উভয়েরই নানা দিক আছে, ধরন আছে। ব্যক্তি বহুমুখী সক্রিয়তায় থাকে। তার শারীরিক সক্রিয়তা চলমান না থাকলে জীবন অচল হয়ে যেত। তার মনোজাত সক্রিয়তাও গতি হারাত। মস্তিষ্কও কাজ করে জীবনযাপনের হাত ধরে। সক্রিয়তা জীবন সংগ্রামের প্রয়োজনে চলমান থাকে। লক্ষ্য পূরণের জন্য এবং সঙ্কট মোকাবেলার জন্য চলমান থাকে।
এই যে জীবন সংগ্রাম, লক্ষ্য পূরণ, সঙ্কট মোকাবেলা, তা কোনোভাবেই একা একজনের কাজ নয়। এজন্য তার চাই সমষ্টি। এজন্য সে তৈরি করে পরিবার। কিন্তু পরিবার দিয়েও সব প্রয়োজন পূর্ণ হয় না। ফলে মানুষ তৈরি করে সমাজ। এই যে প্রয়োজন পূরণ ও সমস্যা মোকাবেলায় সমবেত প্রচেষ্টা, এটাই মানুষের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা। এই অগ্রযাত্রা নিশ্চিত হয়েছে অনেক ধারায়। শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবি রহ: তার হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগায় এই ক্রমধারাকে দিয়েছেন একটি নাম; ইরতিফাকাত। সেখানে ধারাবাহিকতাগুলোর অসাধারণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই ধারাবাহিকতা নিশ্চিত হয় জীবনের বিকাশের পক্ষে প্রাকৃতিক ও সহজাত আনুকূল্যের ফলে। এই আনুকূল্য না থাকলে বিকাশ ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত হতো না। ইরতিফাকাত-এর মানে হলো সহনীয়, দয়ালু, পরোপকারী, লাভজনক, সুবিধাসম্মত ইত্যাদি। সে বোঝাতে চায় জীবনের সব আয়োজন সুবিধাজনক পথ নির্মাণ করছে, সাহায্যকারী উপাদান সরবরাহ করছে, লাভজনক পথের প্রস্তাব করছে, কার্যকর প্রযুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হচ্ছে এবং জীবনের কৃষ্টিকে অনবরত সহায়তা করছে। যার দাবি হলো জীবনের বিকাশের আনুকূল্য। এর মধ্যে সহজতা আছে, আছে সামর্থ্যরে জোগান। যা গড়ে দিয়েছে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রাকৃতিক ধারাবাহিকতা। এই ধারায় মানুষ গ্রাম্য সমাজ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায় অবধি উপনীত হয়েছে। তার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন চারটি পর্যায় পাড়ি দেয়। প্রথম পর্যায়ে মুখ্য গুরুত্ব পায় অর্থনৈতিক সংগ্রাম। শেষ পর্যায়ে কেন্দ্রীয় গুরুত্বে আছে আর্থ-সামাজিক সুরক্ষার দাবিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি ও ইনসাফ কায়েমের রাজনীতি। শুরু থেকেই শেষ অবধি যে যাত্রা, তা মুখ্যত সমবেত মানুষের যাত্রা, রাজনৈতিক যাত্রা।
মানুষের পরিবার গঠন, সমাজ নির্মাণ, রাষ্ট্র গঠনের ক্রমধারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিপ্রকাশ। রাজনীতি মানুষের জীবনে সেই প্রভাব রাখে, প্রকৃতিতে যে প্রভাব রাখে সূর্য। কারণ এর সাথে যুক্ত আছে জীবনের ব্যক্তিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রনৈতিক বিষয়াদির বিস্তৃত পরিসর। বর্তমান বিশ্বে রাজনীতি আরো গুরুত্বপূর্ণ। সে কেবল জরুরি নয়, অবধারিত।
ইসলাম চায় মানুষের সংঘবদ্ধ জীবন। যেখানে তারা হবে পরস্পরের সহযোগী। পরস্পরের ওপর থাকবে পরস্পরের স্বীকৃত অধিকার। বিশ্বাস, ভালোবাসা, দায়বোধ, সঙ্কট উত্তরণ, বিশ্বস্ততা ও কল্যাণের মধ্য দিয়ে নির্মিত হবে মানুষে মানুষে এই যৌথতা।
চরিত্রগতভাবে ইসলাম মানুষকে দেখে একাত্ম ও সমবেত বন্ধনের সূত্রে। যেখানে প্রত্যেকের উৎস ও আগমনসূত্র একই। গন্তব্যও একই। কাজের বিচারে কেবল পরিণতি হবে আলাদা। ইসলামের এই জীবনদৃষ্টি তার রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণকে দিয়েছে এমন এক স্বাতন্ত্র্য, যা সব মানুষের পরিণতিকেও সাফল্যের দ্বারা চূড়ান্ত করতে চায়। এই সাফল্য কেবল পারলৌকিক নয়, আবার কেবল ইহলৌকিকও নয়। উভয় জগতেই মানুষকে সফল হতে হবে। এর নাম হলো ফালাহ। কিন্তু তা নিশ্চিত হবে কিভাবে? ইহলৌকিক জীবনে তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সেটা হবে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কল্যাণী নীতির ভিত্তিতে, ব্যক্তিক ও সামষ্টিক কর্ম দ্বারা পরিচালনার মাধ্যমে, যার নাম হলো সালাহ্।
সালাহ্ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াকে বলে ইসলাহ আর জীবন, মানুষ, সমাজ ও প্রকৃতির সুস্থতাকে বিনষ্ট করার প্রক্রিয়ার নাম ইফসাদ। ইফসাদ হতে পারে উন্নয়ন বা প্রগতির নামেও। যখন তা অভ্যন্তরীণ কল্যাণকে ধারণ করবে না কিংবা বাহ্যিক কল্যাণের কিছু ধারণ করলেও অন্য অনেক কিছুকে উপেক্ষা করবে। কিংবা যখন সে ক্ষতি ও বিনষ্টিকে জীবনের ওপর প্রতিষ্ঠা দিতে চাইবে।
এই ক্ষতি ও বিনষ্টি আকিদা-বিশ্বাসে যেমন ঘটে, তেমনি ঘটে ব্যক্তির জীবনাচারে। ঘটে বৃহত্তর সমাজে, রাষ্ট্রে।
ইফসাদের বাহন হয় হেদায়েতবর্জিত পক্ষাঘাতগ্রস্ত চিন্তা-মতবাদ। যা জীবনকে অভ্যন্তরীণভাবে বিনষ্ট করে, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের জগতে। বাহ্যিকভাবে বিনষ্ট করে সামগ্রিকতা ও ইনসাফের অভাবের কারণে। আল্লাহর অবতীর্ণ সর্বশেষ হেদায়েতের জীবনব্যবস্থা ইসলাম যেখানে সমাজ-সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে চালক ভূমিকায় থাকে না, সেখানে ইফসাদের জয়জয়কার। ইসলামের চালক ভূমিকা হলো এর বিজয়ের প্রকাশিত রূপ। বিজয়ী বা গালিব অবস্থানে থাকাই ইসলামের আবির্ভাবের অন্যতম উদ্দেশ্য। ইসলামকে গালিব করা ও রাখার সমন্বিত যে প্রয়াস, তার নাম তাগলিবে দ্বীনের প্রচেষ্টা বা আন্দোলন। আমরা একে ইসলামী আন্দোলন বলতে পারি।
এই আন্দোলন আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চায়। নতুন ব্যবস্থার প্রবর্তন ও প্রতিষ্ঠা তার অভিপ্রায়। যে ব্যবস্থা একটি সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট জীবনাদর্শের শৃঙ্খলায় জীবনকে সজ্জিত করে, গতিমান করে, গন্তব্য অভিসারী বানায়। এই শৃঙ্খলা হলো সাবিলিল্লাহ; আল্লাহর পথ। ফলে এই পথে দাওয়াত হলো দাওয়াত ফি সাবিলিল্লাহ, সাধ্যের সর্বোত্তম ব্যবহার করে শরয়ী প্রক্রিয়ার সংগ্রাম হলো জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ, প্রশিক্ষণ ও দীক্ষাদান হলো তারবিয়াত ফি সাবিলিল্লাহ।
এই পথে তাকে এগিয়ে যেতে হয় আন্দোলনের বৃহত্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। ব্যক্তি গঠন ও নেতৃত্ব সৃষ্টিতে তাকে সমাজের অন্যান্য আন্দোলন ও প্রবণতাসমূহের চেয়ে অগ্রসর হতে হবে। কিন্তু তা হলেই চলবে না। বরং ইসলামের কাক্সিক্ষত অবয়বে তার বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। এই বিকাশের প্রধান ক্ষেত্র হবে (ক) সদাজাগ্রত, যথার্থ ও প্রভাবশালী ঈমান (খ) উচ্চতর ও সমন্বিত আখলাক (গ) অগ্রসর ও নির্ধারক দক্ষতা। এই তিন ক্ষেত্রের চরিত্র গড়ে দেবে ১. কুরআন-সুন্নাহর সেই রূপায়ণ, যা কিতাবে বিবৃত এবং সালাফে সালেহীনের অনুশীলনে চর্চিত। ২. সমসাময়িক চ্যালেঞ্জের বিপরীতে অগ্রগামী ও প্রাধান্যসূচক মাত্রা। ৩. সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই অগ্রগতি ও ৪. ধারাবাহিকতা। গাঠনিক এই বৈশিষ্ট্য ব্যক্তি যেমন ধারণ, অনুশীলন ও প্রয়োগ করবে, তেমনি আন্দোলনের সব স্তর ও মাত্রায় এর প্রভাব হবে নির্ধারক ও নির্ণায়ক।
এই সামগ্রিকতার পটভূমিতে আন্দোলন গঠন ও বহন করবে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, ঐক্যবোধ ও সমন্বিত কর্মধারা, আত্মিক ও বস্তুগত সমৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সেবাধর্মী অনন্যতা, ঐতিহাসিকতা ও সমসাময়িকতার ভারসাম্য, ভূমি ও ভাষার দাবিকে আত্তীকরণ, সমাজ ও সময়ের প্রবাহের সাথে ইতিবাচক একাত্মতা, স্থানিকতা, আঞ্চলিক পটভূমি ও বৈশ্বিকতার প্রতি যথার্থ জ্ঞানীয় সাড়ার ঐতিহ্য। সে কাজ করবে জীবন ও জীবিকা নিয়ে, যাকে কল্যাণী ক্রমধারায় নিয়ে যাওয়া ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য, সে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও পরিগঠনকে দেবে বুনিয়াদি গুরুত্ব। জনযোগাযোগ ও মানুষের জীবনবোধ-জীবনধারার রূপান্তর ও পরিগঠনের ময়দান হবে তার পরীক্ষার বড় ক্ষেত্র। নিজেদের ও রাষ্ট্র-জনতার সুরক্ষা-নিরাপত্তার সামর্থ্যকে অনন্য বিকাশ না দিয়ে সে সাফল্য স্পর্শ করতে পারবে না, এগিয়ে নিতে পারবে না।
সে সমাজ ও জীবনকে দেবে আদল বা ন্যায়ের নিশ্চয়তা। একটা আন্দোলন হিসেবে নিজের মধ্যে এবং নিজের বক্তব্য, দাবি, আচার ও অভিব্যক্তিতে সে এই আদলকে দেবে প্রতিষ্ঠা। এসবের মধ্য দিয়ে বিকশিত হবে তার চরিত্র ও স্বাতন্ত্র্য। যা নিয়ে সে ১. দ্বীনের সামগ্রিক দাওয়াহকে সমাজের জ্ঞান, চিন্তা ও যাপনে গালিব বা ডমিনেট করার কাজ জারি রাখবে। ২. মানবতা ও জাতির জন্য সত্যের সাক্ষ্য হিসেবে তাকে রাখতে হবে যথার্থ ভূমিকা, শাহাদাহ আলান্নাস নামে যাকে অভিহিত করে আল কুরআন। ৩. দ্বীনকে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি-হঠকারিতা (গুলু) বিকৃতি ও অজ্ঞ অপব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে বোঝার চেষ্টা করবে না। বরং এসব প্রবণতার সক্ষম ও যথার্থ মোকাবেলা হবে তার দায়িত্ব। ৪. মানুষের নিত্য-নৈমিত্যিক সমস্যার প্রতিকারে সে হবে এক আশা ও বিশ্বস্ত ঠিকানা। ৫. আন্দোলন হিসেবে সে ব্যক্তি, সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে মারুফ তথা কল্যাণের আহ্বায়ক হয়ে উঠবে, একে প্রতিষ্ঠার জন্য ক্রমবর্ধমান আনুকূল্য, সক্রিয় মতামত ও সক্ষমতা তৈরি করবে এবং মুনকার তথা প্রত্যেক মন্দের মোকাবেলায় সে সক্রিয় থাকবে, শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং তার ইসলাম নির্দেশিত প্রয়োগ নিশ্চিত করার শর্ত পূরণ করবে।
এর মধ্য দিয়ে সে মানুষের উমরান তথা জীবনের অনুশীলনকে ইসলামের ঠিকানায় প্রতিস্থাপিত করার অব্যাহত পদক্ষেপকে সংগঠিত ও চালিত করবে। একটা আন্দোলন হিসেবে তাকে স্বাভাবিক ধারাবাহিকতায় বিপ্লবাত্মক কর্ম-প্রয়াস নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের জীবন ও এর সাথে সম্পর্কিত সব উপাদানের উত্তম, গঠনমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক পরিচালনা নিশ্চিত করা এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্র প্রস্তুত করার দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। এই যেসব কিছুর ন্যায়ভিত্তিক ও কল্যাণী চালনা, রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের আগে সেই সুযোগ থাকে সীমিত অর্থে, তখনকার কাজ মূলত ক্ষেত্র প্রস্তুত করার কাজ। যা সামাজিক সাড়া, আধ্যাত্মিক পবিত্রতা, আখলাকি অনন্যতা, দক্ষতার নৈপুণ্য এবং নেতৃত্বগুণের অসাধারণত্ব ছাড়া নিশ্চিত করা যায় না। এসবের মধ্য দিয়ে আন্দোলন হিসেবে সম্মিলিত জীবনকে সে তৈরি করবে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি গঠনের অনুকূলে। ইমাম মাওয়ার্দি রহ:- এর মতে, ইসলামী রাষ্ট্রনীতির বুনিয়াদি সূত্র হলো-
ক. জনগণের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহে আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়তের অনুসরণ করার সঙ্কল্প।
খ. আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়ত বা পথ নির্দেশগুলো রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবনে সুন্নাহরূপে যে বাস্তব বিকাশ লাভ করেছিল, তাকে অবলম্বন, অনুসরণ এবং এর ভিত্তিতে জীবন গঠন।
গ. মানবজাতিকে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করার জন্য রাসূলুল্লাহ সা: আল্লাহর নিকট থেকে প্রেরিত, নেতৃত্বের মহিমা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি ইন্তেকালের আগে বিশেষ কাউকেই এই দায়িত্ব দ্বারা চিহ্নিত করেননি।
ঘ. ফলে অন্যান্য দায়িত্বের মতো নেতৃত্ব বাছাইয়ের দায়িত্বও মুসলিম সমাজের ওপর বর্তায়।
ঙ. সুতরাং, এই ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করার জন্য মুসলিম সমাজ সর্বসম্মতিক্রমে নেতৃত্ব নির্বাচন/মনোনয়ন করলে, পদাধিকার বলে তিনি রাসূলুল্লাহ সা:-এর নেতৃত্বের স্থলাভিষিক্ত বা খলিফা হয়ে যান। রাসূলের সা: খলিফা হওয়ার অর্থ হলো- নবুয়তের প্রতিনিধিত্ব; খিলাফত। যাকে বলে খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নবুওয়াহ। মুসলিম উম্মাহ এই চরিত্রের খেলাফতের বরকত লাভ করেছে খুব অল্প সময়। দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় যে খেলাফতগুলো চলমান ছিল, তারা খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নবুয়ত (নবুয়তের আদলে খেলাফত) নয় বরং ছিল খিলাফাহ আলা মিন ওয়াজহিন, তথা ক্ষেত্রগত বিবেচনায় খেলাফত। কিন্তু এই খেলাফতগুলোও মুসলিম উম্মাহর কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা পালন করেছে ব্যাপক অর্থে।
ইসলামী রাষ্ট্র অবধি উপনীত হওয়ার এই যে ধাপগুলো, এর প্রথম তিনটি মুখ্যত প্রস্তুতি ও সক্ষমতার। যা দুনিয়াজোড়া মুসলিম প্রাধান্যের আমলেও পূরণ করতে হতো। ইমাম মাওয়ার্দি ছিলেন সেই সময়ের মনীষী, যখন সভ্য পৃথিবীর সর্বত্র মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রতিপত্তি ও প্রাধান্য ছিল অপ্রতিহত। তখনো সামাজিক ক্ষেত্র তৈরির এই শর্তগুলো ছিল অবধারিত।
আজকের দুনিয়ায় এই প্রস্তুতি আরো বহুমুখী, বহুবিস্তারি। এখন জ্ঞান, চিন্তা, অর্থনীতি, গণযোগাযোগ মাধ্যম, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সামরিকতা-নিরাপত্তা, রাষ্ট্র ও সমাজের চালক শ্রেণী, দেশীয় ও আঞ্চলিক বাস্তবতা, প্রশাসনিক বিন্যাস ও ব্যবস্থাপনা, সাংস্কৃতিক বাস্তবতা ও অভিমুখ ইত্যাদি ঔপনিবেশিক ধারাবাহিকতায় আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, সেখান থেকে বাস্তবতাকে ইসলামের অনুকূলে নিয়ে আসার কাজে দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে ইসলামী আন্দোলনগুলোকে। এতে সে যে মাত্রায় পিছিয়ে থাকবে, সেই মাত্রায় অধরা থাকবে রাষ্ট্রকাঠামোর ইসলামী পরিগঠনের সম্ভাবনা।
লেখক : কবি, গবেষক
72.alhafij@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement