২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দেশ গড়ার এখনই সময়

-

মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই সামাজিক বন্ধনে বিকশিত হয়েছে মানব সভ্যতা। রাষ্ট্রের ধারণা, দেশপ্রেম, রাষ্ট্রীয় আচার, ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বলয়ে লালিত হয়েছে দেশ। দেশের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার, দেশের গৌরবে গৌরবান্বিত হওয়ার মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত করার প্রবণতা সভ্যতার প্রথম থেকেই মানবসমাজের সহজাত প্রবৃত্তি। সভ্যতার প্রয়োজনে একটি রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত ও বিকশিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই নিজেকে বিধৃত করেছে মানুষ। গোত্রীয় রাষ্ট্র, নগর রাষ্ট্র, ধর্মীয় আদর্শে অথবা অন্য কোনো আদর্শিক চেতনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র বা দেশের ধারণা এগিয়েছে হাজার বছরের পথ পরিক্রমায়।
দেশ তৈরি করতে গিয়ে এর বৈশিষ্ট্য এবং অবয়ব সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তিত হলেও মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। স্থায়ী জনসংখ্যা, যা সবসময়ই পরিবর্তনশীল হলেও সভ্যতার সূচনা থেকেই অন্যতম মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই জনসংখ্যা বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাস, চিন্তা এবং ভাষাকে ধারণ করেছে অবলীলায়।
নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখা ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনাতীত। জনসংখ্যা এবং ভৌগোলিক সীমারেখাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে সংবিধান ও প্রশাসনিক কাঠামো। রাষ্ট্রীয় সংবিধান যত বেশি উদার, প্রশাসনিক কাঠামো যত বেশি গণমুখী ও মেধানির্ভর, দেশের ভিত্তি ততই মজবুত। এক্ষেত্রে বহুদলীয় রাষ্ট্রীয় অবয়বে যেসব দেশ বিকশিত হয়েছে, মেধানির্ভর হয়েছে, সেসব দেশ তত বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে। সভ্যতার অগ্রযাত্রায় এসব দেশ নেতৃত্ব দিয়েছে; প্রভাবিত করেছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় মেধা সম্পৃক্ততা ও সাধারণ নাগরিকের চিন্তাচেতনার প্রতিফলন যেসব দেশে যত বেশি, সেসব দেশের অবস্থান জ্ঞান বিজ্ঞানে, বিশ্বসভায় তত বেশি উঁচু। বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম বিশ্বাস, গোত্রীয় স্বাতন্ত্র্য ও জীবনাচার ধারণ করে বিভিন্ন দেশ ও জাতি একক জাতিসত্তার পরিচয়ে বিশ্ব সভায় সম্মানের আসন করে নিয়েছে। সাধারণ জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি শাসিত সরকারব্যবস্থা দেশের সম্মান আরো উজ্জ্বল করেছে; আরো অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় করেছে। এই চেতনা আরও শাণিত করেছে, উদ্দীপ্ত করেছে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বানুভূতি ও দেশপ্রেম; যা দেশের প্রতি আনুগত্য ও দায়বোধ শেখায়, দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রেরণা তৈরি করে। এই প্রেরণা সাহস জোগায় ভৌগোলিক সীমারেখার নিরাপত্তা বিধান এবং অপর রাষ্ট্রের সাথে মর্যাদাশীল সহাবস্থানের। শেখায় সর্বত্র, সর্বাবস্থায় নিজের পরিচয় জানান দিতে। সময়ের বিবর্তনে বিভিন্ন দেশের পরিচালন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এলেও দেশপ্রেম, একক জাতিসত্তার চেতনা কখনোই বিভাজিত হয়নি। বিশ্বাস বোধ বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির আলোকে সঙ্কীর্ণ জাতিবোধে বিভক্ত হয়নি। সার্বজনীন মানবাধিকার, সুবিচার, মেধাভিত্তিক ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রাধান্য পেয়েছে দেশের বিকশিত হওয়ার প্রয়োজনে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং ক্ষমতার উচ্চাভিলাষ কলঙ্কিত করেনি দেশ ও জাতির যাত্রাপথকে।
১৭৫৭ সালের বিপর্যয়ের পর আমাদের জাতীয় সত্তাকে শাসকগোষ্ঠী বিভাজিত করেছে Divide and Rule নীতির আলোকে। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার প্রয়োজনে তৈরি করেছে আমলা শ্রেণী ও আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা। ক্ষমতার মালিক কখনো পরোক্ষভাবে, কখনো প্রত্যক্ষভাবে আমলাকেন্দ্রিক হয়ে থেকেছে। অন্যায় অবিচার অত্যাচারের নিগঢ়ে বন্দি হয়েছে মানবিক মূল্যবোধগুলো। ১৯৪৭ সালের নতুন স্বপ্নের প্রত্যাশায় স্বাধীনতা এলেও তৈরি হয়নি দেশের কল্যাণমুখী অবকাঠামো। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির পাঠ থেকে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বেরিয়ে আসতে পারেননি একক জাতিসত্তার চেতনায়। ভাষা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের আলোকে অর্থনৈতিক সক্ষমতার চেতনায় বর্ণ, গোষ্ঠী ও আভিজাত্য দেশ গঠনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরিণতিতে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। ১৯৪৭ এর ব্যর্থতার ধারায় এবারো দেশ তৈরির ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে। শুরু থেকেই জাতিসত্তা বিতর্ক, মৌলিক মানবীয় গুণাবলির বিকাশে প্রতিবন্ধকতা দেশ নির্মাণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মুজিব ও অমুজিব নগরী বিভাজন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অস্তিত্ব অস্বীকার, স্বাধীনতার চেতনা ও ধারণাকে দলীয়করণের মাধ্যমে দেশ তৈরির চেষ্টা ব্যর্থতায় পরিণত হয়। ১৯৭৫ সালের সিপাহি-জনতার বিপ্লব দেশ তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি করলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় নানামুখী দেশী-বিদেশী চক্রান্তে। মৌলবাদী সন্ত্রাসী তকমায় জাতিকে সবসময়ই শঙ্কিত করে রাখার ফলে একক জাতিসত্তার চিন্তা বিকশিত হতে পারেনি। ক্ষমতার সিঁড়ি দেশের বাইরে নির্মিত হওয়ায় জনগণের আশা আকাক্সক্ষা উপেক্ষিত হয়েছে বারবার। স্বাধীনতার পঞ্চাশোর্ধ্ব সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে জাতিসত্তা ও দেশপ্রেম। ‘স্বাধীনতার চেতনা’ নামে একদলীয় জমিদারিতে পরিণত করা হয়েছিল দেশ ও জাতিকে। ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান আবারো সুযোগ এনে দিয়েছে দেশ তৈরির। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনো দেশ তৈরির মৌলিক উপাদানগুলোকে বিভাজিত করে রাখা হয়েছে। বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে ভাবার পরিবর্তে সাম্প্রদায়িক ও অন্যান্য বিভাজক সুড়সুড়ি দেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ছাত্র গণবিপ্লবের মূল চেতনা উপেক্ষিত হওয়ায় আমাদের জাতীয় নেতৃবৃন্দ ভিন্ন ভিন্ন পথের পথিক। এভাবে দেশ তৈরি হয় না। দেশ তৈরিতে প্রয়োজন ঐকমত্যের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। সময়ের এই সঙ্কটকালে জাতীয় নেতারা এগিয়ে আসবেন দেশ গড়ার একমুখী চিন্তায় ও প্রয়াসে এটাই জাতি প্রত্যাশা করে। ছাত্র যুবসমাজের সর্বোচ্চ কোরবানির অন্তর্নিহিত পাঠ সবাইকেই বুঝতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দায় জাতীয় নেতাদের। দেশ গড়তে প্রয়োজনীয় সংস্কার এড়িয়ে গেলে ভবিষ্যতে দেশের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আবারো হুমকির মুখে পড়বে নিঃসন্দেহে।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
shah.b.islam@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
প্রথম সেশনে ১ উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনে শহীদ রিপনের লাশ সাড়ে ৩ মাস পর উত্তোলন নির্বাচনের জন্য জনগণের আস্থা অর্জন করাই ইসির প্রধান কাজ : রিজভী পাইকগাছা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত প্যানেলের নিরঙ্কুশ জয় কক্সবাজার সৈকতে গোসলে নেমে মৃত ১, নিখোঁজ ২ জাপান নতুন বাংলাদেশেরও বন্ধুই রয়েছে : রাষ্ট্রদূত পরীক্ষা দিতে এসে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেতা প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় জয় জিম্বাবুয়ের আদানির বিরুদ্ধে এবার সমন জারি করল যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সহযোগিতায় বাংলাদেশের বড় অগ্রাধিকার চীন : বাণিজ্য উপদেষ্টা হাটহাজারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধ নিহত

সকল