২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কমলার পরাজয় কী বার্তা দেয়

-

নারী স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতা নিয়ে অত্যন্ত সরব যে যুক্তরাষ্ট্র সে দেশের নির্বাচনে ২৩৬ বছরে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়নি। এটা সত্যিই বিস্ময়কর। নারীর প্রতি বৈষম্যের এমন সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ বিশ্বকে হতবাক করেছে। যেখানে যোগ্যতা-অযোগ্যতা বা চারিত্রিক মান বা সৌন্দর্য কোনো বিবেচ্য বিষয় হলো না। আমেরিকান জাতির জন্য সত্যিই দুঃখজনক।
যুক্তরাজ্যের কবল থেকে ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় আড়াই শ’ বছর পার হয়ে গেল, তবুও কোনো নারী প্রেসিডেন্ট আমেরিকা দেখতে পায়নি। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশটির নারীরা কেন এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে তা অনেককেই বিস্মিত করে। অন্যান্য ক্ষেত্রে এত প্রগতিশীল হয়েও মার্কিনিদের কেন এত রক্ষণশীল মনোভাব? এ প্রশ্ন এখন বিশ্বজুড়েই।
বর্তমানে জাতিসঙ্ঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩টিতে নারী সরকারপ্রধান রয়েছেন। ১৯৯০ সাল থেকে এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাবো, প্রায় আড়াই শ’ বছরের ইতিহাসে হোয়াইট হাউজের ক্ষমতা পাওয়ার মূল দৌড়ে অংশ নিয়েছেন এ পর্যন্ত মাত্র তিনজন নারীপ্রার্থী। এদের মধ্যে সর্বপ্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন রিপাবলিকান মার্গারেট চেস স্মিথ। তিনি ১৯৬৪ সালে প্রথম নারী হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অন্যজন ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়া নারীপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দেন তিনি। ৩০ লাখের বেশি পপুলার ভোট পেয়েও ইলেক্টোরাল কলেজের নিয়মে পরাজিত হন ট্রাম্পের কাছে। তৃতীয় জন কমলা হ্যারিস এবারেও বড় ব্যবধানে পরাজিত হলেন।
মার্কিন নির্বাচনে নারীদের এই পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নারী নেতৃত্ব মেনে নেয়ার অবস্থায় এখনো আসেনি আমেরিকার জনগণ। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসেও নারীর উপস্থিতিও আগের তুলনায় বাড়েনি।
বিভিন্ন মার্কিন জরিপ অনুযায়ী, ৫০ শতাংশ জনগণ মনে করেন, নারীরা আবেগি সিদ্ধান্ত নেয়। সেজন্য তাদের রাষ্ট্রপরিচালনায় না আসাই ভালো। যে কারণেই বিশ্লেষকরা বলছেন, সব যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকার পরও শুধু নারী হওয়ায় বৈষম্যের শিকার হন হিলারি।
হিলারির পর এবার নারী নেতৃত্বের অগ্নিশিখা হয়ে হাজির হয়েছিলেন কমলা হ্যারিস। জুলাইয়ে নির্বাচনী বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে জো বাইডেনের হেরে যাওয়ার পর আমেরিকান জনগণের ভোট পেতে মাঠে নামেন কমলা। অনেকের বিশ্বাস ছিল এবার হয়তো একজন নারী প্রেসিডেন্টকে বেছে নেবেন মার্কিনিরা। কমলা হবেন দেশটির ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। যেহেতু কমলা হ্যারিস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এমন একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে, যিনি দুবার কংগ্রেসে অভিশংসিত হয়েছেন এবং ৩৪ বার ফৌজদারি অপরাধে দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ জেনারেল জন কেলি ট্রাম্পকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে অভিহিত করেছেন। সাবেক রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির কন্যা ও এক সময়ের প্রভাবশালী রিপাবলিকান নেত্রী লিজ চেনি স্পষ্ট বলেছেন, এই লোকটা কোনোভাবেই প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন। অথচ আমেরিকার জনগণ তাকেই আবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছে। তারা ট্রাম্পকে একজন বলবান ও পুরুষোচিত নায়কের প্রতিরূপ বলে মনে করে। কারণ আততায়ীর গুলিতে রক্তাক্ত হওয়ার পরও তিনি নুইয়ে না পড়ে হাত উঁচিয়ে বলেছেন, ফাইট, ফাইট।
এই নির্বাচনী এ ফলাফল এটাই প্রমাণ করে যে, আমেরিকার জনগণ এখনো একজন নারীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করতে প্রস্তুত নয়। নারীদের ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছতে হলে একটি অদৃশ্য বাধা, যেটা হিলারি ক্লিনটনের ভাষায়, ‘গ্লাস সিলিং’ সেটা ভাঙতে হবে। হিলারি চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ভাঙতে পারেননি। সব ধরনের পজিটিভ পার্সোনালিটি ধারণ করেও কমলা হ্যারিস সেই একই চ্যালেঞ্জের মুখে আবারো পরাজিত হয়েছেন।
আমেরিকার রাজনীতির বিশেষত্ব হচ্ছে, রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে পুরুষের তুলনায় নারীর ক্ষমতা এবং দক্ষতা সম্পর্কে জনসাধারণ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে নেতিবাচক ভূমিকার মুখোমুখি হতে হয়। লিঙ্গবৈষম্য, রাজনীতিতে সীমিত অংশগ্রহণ এবং তাদের যোগ্যতার অবমূল্যায়নের কারণে পুরুষের তুলনায় নারীদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা বরাবরই কম থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, দেশটির জনসংখ্যার ৫১ শতাংশই নারী এবং ৪২ শতাংশ বিভিন্ন বর্ণের মানুষ। আর আমেরিকান নারীরা আয়-উপার্জন এবং সরকার ও ব্যবস্থাপনায় প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়েও অনেক এগিয়ে।
তবুও অক্টোবরে চালানো রয়টার্স ও ইপসোসের এক জরিপে দেখা যায়, ৫৫ শতাংশ ভোটারই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে লিঙ্গবৈষম্য একটি গুরুতর সমস্যা। অন্যদিকে নারী প্রেসিডেন্টের বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করেন ১৫ শতাংশ ভোটার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অন্যান্য দেশের তুলনায় জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতা বেশি, যা নারীর জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেখানে নারী নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে সাফল্যের পথে নতুন করে বাধা সৃষ্টি করেছে ২০২৪ সালের নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের দুর্ভাগ্যজনক পরাজয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় ঘটনা, যেখানে একটি প্রধান রাজনৈতিক দল নারীপ্রার্থী মনোনীত করেছে এবং দ্বিতীয়বারেও তারা একই প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে পরাজিত হয়েছে। ২০১৬ সালেও হিলারি ক্লিনটন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছেই পরাজিত হন।
নারীপ্রার্থীর পরপর এমন পরাজয়ে ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আর কোন নারী প্রার্থী হতে চাইবেন কিনা সন্দেহ। অনেকেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন নিশ্চয়ই।
যে আমেরিকার জনগণ নারী ক্ষমতায়নের মুখরোচক বটিকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তারাই আবার তৃতীয় বিশ্বকে উচ্ছিষ্ট ও মেয়াদোত্তীর্ণ বটিকা প্রচলনের Experimental field বানিয়ে নিয়েছে। আর আমরা তাদেরকেই আইডল বানিয়ে নিয়েছি। কান নিয়েছে চিলে, বলে তাদের সাথেই জিগির তুলছি।
তৃতীয় বিশ্বকে এই অন্ধ অনুকরণের পথ থেকে সরে আসতে হবে। বৈশ্বিক এসব ঘটনা থেকে আমাদের জাগ্রত চোখে সত্যানুসন্ধানে তৎপর হতে হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের অযৌক্তিক ও অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে বলেননি। মহান রব আমাদের সবাইকে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে নির্ধারিত মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সক্রিয় রাখুন।
লেখক : নির্বাহী সদস্য, লিগ্যাল এইড বাংলাদেশ


আরো সংবাদ



premium cement
প্রথম সেশনে ১ উইকেট হারিয়ে ৬৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনে শহীদ রিপনের লাশ সাড়ে ৩ মাস পর উত্তোলন নির্বাচনের জন্য জনগণের আস্থা অর্জন করাই ইসির প্রধান কাজ : রিজভী পাইকগাছা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত প্যানেলের নিরঙ্কুশ জয় কক্সবাজার সৈকতে গোসলে নেমে মৃত ১, নিখোঁজ ২ জাপান নতুন বাংলাদেশেরও বন্ধুই রয়েছে : রাষ্ট্রদূত পরীক্ষা দিতে এসে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেতা প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় জয় জিম্বাবুয়ের আদানির বিরুদ্ধে এবার সমন জারি করল যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সহযোগিতায় বাংলাদেশের বড় অগ্রাধিকার চীন : বাণিজ্য উপদেষ্টা হাটহাজারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধ নিহত

সকল