জাতীয় পার্টি নিজেই নিজের আস্থা হারিয়েছে
- মীযানুল করীম
- ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ছিলেন চট্টগ্রামে হাটহাজারীর এমপি, বিএনপি থেকে জিয়ার আমলে। এরপর বিচারপতি আবদুস সাত্তারের আমলে ‘লাইন করেন’ এরশাদের সাথে। এরশাদ ক্ষমতায় এলে তিনি এরশাদের দলের অন্যতম নেতা হন। বর্তমানে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে মিলে তার দল কাজ করবে। একই দিনে টিভির খবর, বরিশালের দলের এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু ঢাকা কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। ব্যবসায়সংক্রান্ত ব্যাপারে তাকে গ্রেফতার করা হয়। দলের একজন ঊর্ধ্বতন নেতা বলেছেন, বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে মিশে কাজ করবেন। আর একজন নেতা গ্রেফতার হলেন।
জনদল থেকে জাতীয় পার্টিতে রূপান্তরের সময় অনেকে যোগদান না করায় দলটির প্রতি জনগণের আস্থায় চিড় ধরাও ’৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যোগ না দেয়া তাদের আরেকটি ব্যর্থতা। এর আগে উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়নি। আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন করলেও জাপা জনগণের আস্থা ফিরে পায়নি। জনগণ সে নির্বাচনও বর্জন করেছে। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার প্রয়াসেও কাজ হয়নি। ১৯৮৮ সালের প্রথম দিকের সংসদ নির্বাচন সব বড় দলই বর্জন করে। ফলে জাতীয় পার্টির প্রতি জনগণের আস্থা আবার নষ্ট হয়। ১৯৯০ সালে জনগণ কর্তৃক ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের অধীনে প্রথম কেয়ারটেকার সরকারের আমলে সংসদ নির্বাচনে ৩৫টি আসন লাভ এরশাদের প্রতি ব্যক্তিগত আস্থার শামিল। জাতীয় পার্টির দলীয় কোনো আস্থার ব্যাপার নয়। এরপর আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়ে কেয়ারটেকার আন্দোলন এবং ’৯৬-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতা জাতীয় পার্টিকে দল হিসেবে কোনো সুফল দেয়নি; বরং দলের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়েছে।
আওয়ামী লীগবিরোধী চারদলীয় জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিল জাতীয় পার্টি। কিন্তু এরশাদ জোটের উদ্বোধনী জনসভায় আসেননি। এটি জনগণকে হতাশ করে। এরপর জাতীয় পার্টির ভূমিকা ছিল আওয়ামী লীগের সহযোগীর। এটি জনগণকে বিস্মিত করে। এর পর থেকে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এরশাদ শেখ হাসিনার দক্ষিণহস্তরূপ আবির্ভূত হন। একপর্যায়ে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসেবে মনোনীত হন। কিন্তু জাতীয় পার্টির অবস্থা ভেতরে ভেতরে খারাপ হতে থাকে। জামায়াতে ইসলামীর চেয়ে তাদের অবস্থান নিচে চলে যায়। রংপুরে জাতীয় পার্টি তার নিজস্ব আসনগুলোও হারিয়ে ফেলতে থাকে। এরশাদ দুই ভাইকে রাজনীতিতে এনেও সুবিধা করতে পারেননি; বরং এরশাদের ভাই জি এম কাদের এবং দলের সিনিয়র নেতা জিয়াউদ্দীন বাবলু ভারতের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হন। এই জুটি অনেক খেলে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আওয়ামী লীগ এরশাদকে নিয়ে ফাঁদ পাতল। তারা নির্বাচনের প্রাক্কালে এরশাদকে রোগী সাজিয়ে হাসপাতালে পাঠায়। এরশাদও ‘রোগী’ হয়ে তাদের ফাঁদে পা দেন। ফলে জনগণের আস্থা আবার নষ্ট হয়। বাবলু এবং কাজী ফিরোজ রশীদরা রওশন এরশাদের সাথে মিলে এরশাদের পক্ষ নেন। জি এম কাদের সুবিধা করতে না পেরে ভারতবিরোধী রূপ ধারণ করেন। এরশাদের মৃত্যুর পরে দলের অধিকাংশ নেতা নির্বাচনের বিরোধী হলেও জি এম কাদের নির্বাচনকে মেনে নিতে হয়। ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের সহযোগী দল জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টি বিএনপি নেতা শফি বিক্রমপুরীর কাছ থেকে কাকরাইলের অফিস ভবনটি কিনে নেন। এই ভবনটির সামনেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল হয় জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে। জি এম কাদের দলীয় কাজী ফিরোজদের নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেও পারেননি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাতীয় পার্টিকে প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেয়। এই পরিস্থিতিতে আনিসুল ইসলামের উপরিউক্ত উক্তিতেও মানুষের আস্থা ফেরেনি জাতীয় পার্টির প্রতি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা