১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নীতি ও আদর্শ সমুন্নত রাখতে হবে

-

নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর এবং প্রত্যাশায় উন্মুখ এই সময়ের পরিবেশ পরিস্থিতি অবস্থা এবং ব্যবস্থা দেখে আমজনতার মনে এ প্রশ্ন জাগতেই পারে, কোনটা আগে বা কোনটা পরে করলে বা পেলে ‘উদ্দেশ্য পূরণ’ হবে? এসব নিয়ে সংশয় সন্দেহ বা দোদুল্যমানতার পরিস্থিতি সৃষ্টিও ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে শত সহস্র্রজনের অয়োময় আত্মত্যাগের নীতি ও আদর্শচ্যুত করার প্রয়াস বলা যায়। এসবের অবসান হওয়াও জরুরি। অনেকে ইতোমধ্যে অর্থাৎ তিন মাসে ‘অগ্রগতি’তে উষ্মা প্রকাশ করতেই পারেন, জনগণ ভুল বুঝতে শুরু করেছে ইত্যাকার মন্তব্য ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত, সর্বোপরি ‘যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন’ দিয়ে জনগণের ক্ষমতা (নিজেদের আয়ত্তে নিতে) জনগণের সামনে ‘যে লাউ সেই কদু’ হিসেবে মূর্তমান হওয়ার খায়েশও প্রকাশ পাচ্ছে। অতীতের মতো এটা অনেকেরই উপলব্ধির চৌহদ্দিতে আসছে না যে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানটি ছিল বৈষম্য বঞ্চনা ও গণপ্রতারণার বিরুদ্ধে, মানবাধিকার হরণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে। যে পথ পদ্ধতিতে, যে উপায় উপলক্ষ করে বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, তার অধিকাংশ অস্বীকার করে প্রকারান্তরে সেই আগের অবস্থায় ফিরে যেতে বা জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসার পক্ষে ওকালতি শুরু হয়ে গেছে। ঘরে ঘরে রোপিত ষড়যন্ত্রের বিষবৃক্ষ মোকাবেলার পরিবর্তে, যাপিত যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানোর জন্য ঘরে বাইরের দুরভিসন্ধি ইন্ধন ও ষড়যন্ত্রের টোপে পা দেয়ার লোভ যদি এখনো সংবরণ করা না যায় তা হলে তা হবে শত সহস্র স্বতঃস্ফূর্ত আত্মত্যাগ স্বীকারের সাথে বড় বেঈমানি। বর্তমানের বাস্তবতা মেনে নিয়ে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যার যার ভূমিকা পালন সম্পর্কে সজাগ ও সক্রিয় থাকাটাই হবে সবার অন্যতম দায়িত্ব। এর জন্য অন্যের অপারগতার সমালোচনার চাইতে আত্মসমালোচনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বেশি। কেননা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবার সরকার। এখানে এ পরিস্থিতির প্রতি আস্থায় টলটলায়মান হওয়ার আবকাশ নেই। আর তাহলে তা হবে নিজের ওপর নিজের আস্থা হারানো। বাংলাদেশের বর্তমান পথ পরিক্রমারস্বরূপ বিশ্লেষণে গেলে দেখতে পাই, এর শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। এর থেকে চটজলদি পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। যথা সংস্কার না নতুন সাধনার পথ সবাইকে দেখিয়ে না দেয়া পর্যন্ত সবাইকে সবার স্বার্থেই পরিস্থিতির প্রতি নিজ নিজ দায় দায়িত্ব গ্রহণ ও করণীয় কর্তব্য পালনই হবে এর থেকে উত্তরণের উপায়। এর কারণ ইতিহাসের পাতাতেই আছে। বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই, ভারতবর্ষে মোগল থেকে ব্রিটিশ, ব্রিটিশ থেকে প্রাক্তন পাকিস্তান, পতিত পাকিস্তান থেকে সাম্প্রতিক পতন ও পলায়ন পর্যন্ত সময়ে শাসক ও শাসিতের মধ্যকার আনুভূমিক (Horizontal) এবং ঊর্ধ্বমুখী (Vertical) সম্পর্কের টানাপড়েন ক্রমশ কমেনি; বরং বেড়েছে। সরকার, সংগঠন ব্যবস্থা, প্রশাসন, শান্তি-শৃঙ্খলা, জননিরাপত্তা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ক্রমশ সংস্কারের মাধ্যমে একটি পর্যায়ে পৌঁছার চেষ্টা সাফল্য-ব্যর্থতার বিবরে এগিয়ে চলে। মোগলদের প্রাসাদ অভ্যন্তরে অনৈক্য, অবসাদ অকর্মণ্যতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউরোপ থেকে আগত ডাচ, পর্তুগিজ ও ইংরাজরা এ দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, গেড়ে বসে এবং তারা ১৯০ বছর শাসন-শোষণ বৈষম্য দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি করে চলে যায়। এই অবস্থা থেকে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অংশ হিসেবে এ দেশ শোষণ বঞ্চনার বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। সেখানেও অনৈক্য, বঞ্চনা, বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করলে ১৯৭১ সালে অভাবনীয় আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭২-২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে একনায়ক, নানা বর্ণে ও প্রকারের স্বৈরাচার এর অধীনে অর্থনৈতিকভাবে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই ৫৩ বছরে রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণ-সরকার-রাষ্ট্র সমন্বয় সংস্থাপিত হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈপরীত্য, বৈষম্য, বিচ্ছিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। ১৯৭৫-এর পটপরিবর্তন, ১৯৯১-এর গণ-আন্দোলন, ২০০৭-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে পরিবর্তন বা সংস্কারের সুযোগ উপস্থিত হলেও দীর্ঘ দিনে জমে ওঠা ক্ষোভ হতাশা থেকে কাক্সিক্ষত মুক্তি মেলেনি। বিশেষ করে বিগত ১৫-১৬ বছরে স্রেফ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থবাদিতা তথা অপ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এমন কিছু ধকল সইতে হয়েছে যাতে স্বয়ং গণতন্ত্রের উত্তরণের রাজনীতি যেমন জটিল হয়েছে, তেমনি অর্থনীতি হয়েছে প্রচণ্ড ক্ষয়ক্ষতির শিকার। বিগত দেড় দশকে অর্থনীতিতে প্রচার সর্বস্ব রেন্টসিংকিং উন্নয়নের ধান্ধার উপায় ও উপলক্ষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার, বিদেশনির্ভরতার নীতি-কৌশলকে নির্বাসনে নিরুদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। বিভেদ, বিভাজনের শিকার হয়েছে প্রশাসন, নিরুদ্দিষ্ট হয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থার কার্যকারিতা। জাতীয় গৌরব ও উন্নয়নের অভিলাষকে দলীয় বাতাবরণে সঙ্কীর্ণ ও সঙ্কটাপন্ন করা হয়েছে।
ঠিক এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন এবং প্রধান প্রধান খাত ও ক্ষেত্রে সংস্কার প্রেসক্রিপশান তৈরিকে অগ্রগণ্য বিবেচনা করা হয়েছে। সঙ্গত ও স্বাভাবিক কারণে এসব কর্মযজ্ঞের ‘কার্যপরিধি’ প্রজ্ঞাপনে উল্লেখমতে, দেশের বিদ্যমান আর্থসামাজিক প্রশাসনিক বিচারিক কার্যধারার সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি সব জনগণের মানবিক মর্যাদা, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সামনের সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং এলডিসি থেকে উত্তরণে করণীয় বিষয়ে প্রতিফলন ঘটবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দিককার সিদ্ধান্তগুলোর অন্যতমটি হলো- রাজনৈতিক-অর্থনীতির সুরতহাল রিপোর্ট জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়নের এই উদ্যোগ।
এটি অনিবার্য যে, নিকট অতীতে কিভাবে এবং কেন এমন ধারা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হয়েছে, কিভাবে রাষ্ট্র ও সরকার কাঠামো ও ব্যবস্থাপনার মৌল সত্তাকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে তার একটি স্ব-ব্যাখ্যাপত্র প্রতিবেদন প্রণয়ন প্রয়োজন। তাহলে এর ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনায় পরিবর্তন বা সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণকে যক্তিযুক্ততার নিক্তিতে মাপা সহজ হবে।
অতীতেও শ্বেতপত্র প্রণয়নসহ বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ গৃহীত হয়েছিল; কিন্তু সেসবের উদ্দেশ্য বিধেয় বাস্তবায়নে ছিল বিস্তর ফারাক। ফলে এবারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন ও সংস্কার কার্যক্রম এর উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন অভিমুখীকরণের প্রশ্নে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে।
অতীতে ক্ষমতাসীন সরকার এবং ক্ষমতারোহণে প্রত্যাশী উভয়কে ‘এ’ টিম ’বি’ টিম মনে হয়েছে। ফলে ২০২৪ সালে জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্রথমে ছাত্র পরে আপামর জনগণের অংশগ্রহণে বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে ওঠে। বশংবদ স্বার্থান্বেষী মহল সফল এই গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টায় থাকায় এটি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে আন্দোলনের উদ্দেশ্য অর্জনের পথে-
১. বিভেদ বৈষম্য সৃষ্টির মৌল কারণ হলো সেই ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর সাধারণ নির্বাচন, কাগমারী সম্মেলনে ভূ-রাজনীতিতে পক্ষ অবলম্বন প্রশ্নে বিভক্তি, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ছিষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরের পটপরিবর্তন, ’৮২-এর নয়া সামরিক সরকারের বেসামরিকীকরণ, নব্বইয়ের গণজাগরণ এবং ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ইতিবাচক দিকগুলো জাতীয় ঐক্যবিরোধী অপশক্তির দ্বারা সৃষ্ট বিভেদ বিভাজন। পাকিস্তান আমলে (১৯৪৭-৭১) এটি ছিল জাতীয় সংহতি বোধকে ধর্ম ও আঞ্চলিকতা বোধ উৎসারিত বিভাজনের শিকার। মহান মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিববাহিনী সৃষ্টি, স্বাধীন বাংলাদেশে জাসদ, রক্ষীবাহিনী, বাকশাল প্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টা দ্বারা জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা, এরপর ’৮২-৯০ সালে সামরিক-বেসামরিক মেলবন্ধনে উন্নয়ন প্রয়াস প্রচেষ্টায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক দুর্নীতি দুঃশাসনের গোড়াপত্তন, নব্বই দশকে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটলেও দলীয় শাসন শোষণের শিকার হওয়া, প্রশাসন দলীয়করণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার নামে আঁতাত প্রতিষ্ঠা, ২০০৯-২০২৪ সালে প্রচণ্ড স্বৈরাচারী, দলীয়, নয়া বাকশালী মনোভাবের বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার প্রয়াস এ সময়ে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি হিসেবে পুরো জাতির চিন্তাচেতনা, মতপ্রকাশ প্রশাসন, দমন-পীড়ন, নীতিনৈতিকতা বিসর্জন সবই চলে। যার পুঞ্জীভূতবাদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মহান মুক্তিযুদ্ধে যে ঐক্য সেই ঐক্য গঠনের প্রতি তীব্র আকাক্সক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সুতরাং এই মুহূর্তে প্রথম ও প্রধান বাঞ্ছনীয় সংস্কার হবে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ মিথের মূল উৎপাটন, সামরিক-বেসামরিক বিচার বিভাগ, আইন ও সংসদ এবং নির্বাহী বিভাগ সর্বত্র এক এবং ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্তার আদর্শ প্রতিষ্ঠা, দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর প্রয়াস থাকবে। আমরা বাংলাদেশী, আমার বাংলাদেশ, আমাদের বাংলাদেশ এই চিন্তাচেতনা প্রোথিত হতে হবে সর্বত্র। জাতীয় পতাকা মাথায় বেঁধে সবাইকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া, অকাতরে প্রাণ দান সেই ঐক্যবদ্ধতার আকাক্সক্ষার প্রতিফলন।
২. দ্বিতীয় করণীয় গণ-অভ্যুত্থানে যারা নিহত, আহত হয়েছে তাদের যথাযথ সম্মান, স্বীকৃতি ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করাই হবে এই মুহূর্তে আশু করণীয়। একেকটি প্রাণ অমূল্য অদম্য ও মুক্তির স্মারক বিবেচনা করতে হবে। পুরো জাতিকে তাদের আত্মত্যাগের যথাযথ প্রতিদান হবে দেশকে বৈষম্য, ষড়যন্ত্র, অপচেষ্টা অপপ্রয়াসের বাধা দেয়া শুধু নয়, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বোধের সংস্কার সাধন করা। গণহত্যার মামলা রুজু করতে নিহত বা আহতদের পরিবারবর্গকে বাধ্য করা হয়েছে, যে মামলা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, আসামির তালিকা বড় করে সেখানে নিকট অতীতের মতো তথাকথিত হয়রানি ও বাণিজ্যের সুযোগ তৈরিতে সময় ও নৈতিক বল ক্ষয় হয়েছে সবার। শোকাহত পরিবারকেই আসামিদের প্রতিপক্ষের দলগত রোষানলে পড়তে হচ্ছে।
৩. রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে স্বরূপ প্রতিষ্ঠা ব্যবধান ও সমন্বয়সাধনের মধ্যে আনা। এ জন্য সংবিধান সংশোধন, নির্বাচনব্যবস্থা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রকৃত নির্ভেজাল জাতীয় মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার পথে দিকনির্দেশনা, সঙ্কলন ও প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটানো। সংস্কার এবং শ্বেতপত্র প্রণয়নকালে খাত ও ক্ষেত্র নির্ধারণে কৌশলী হওয়া বাঞ্ছনীয়। মোটা দাগে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো প্রাধান্য পেতে পারে :
১. শিক্ষা খাতে প্রশাসনিক, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা পদ্ধতি প্রক্রিয়া কারিকুলাম ইত্যাদি সংক্রান্ত (বাস্তব) উন্নতির উপায় উদ্ভাবন;
২. স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রশাসনিক, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো সংক্রান্ত (বাস্তব) পরিস্থিতিপত্র প্রণয়ন করে তার আলোকে সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ। যথাযথ বিনিয়োগের দ্বারা উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারলে খোদ গণস্বাস্থ্য স্বাস্থ্য বাজেটে ব্যয় কমবে, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে সাশ্রয় হবে।
৩. পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, থার্ড টার্মিনাল প্রভৃতি প্রধান ও মাঝারি মেগা প্রকল্পের উদ্যোগ, সম্ভব্যতা যাচাই, রেট অব রিটার্ন অর্জন পরিস্থিতি, প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশী-বিদেশী ঋণের ব্যবহার, অংশীদার নিয়োগ, অর্থায়নের শর্তানাবুদ, পরিবীক্ষণ, নিরীক্ষা পরিস্থিতি প্রতিবেদন। এসব মেগা প্রকল্পের সামাজিক, রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনার সাথে বাস্তবায়নের আর্থিক সংশ্লেষ, সাশ্রয়ী ব্যয় ব্যবস্থাপনা এবং দেশী-বিদেশী ঋণ গ্রহণের শর্ত ও পরিশোধ সক্ষমতার সমন্বয় ও সাদৃশ্য বিশ্লেষণ;
৪. মানবসম্পদ উন্নয়নে দেশে বিদেশে কর্মসংস্থান এবং তদসংশ্লিষ্ট আর্থ-প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার পরিস্থিতি উন্নতি ঘটানো;
৫. কৃষি খাত উন্নয়ন, ভর্তুকি বিতরণ উপায়-উপকরণ লভ্যকরণ, বাজারজাতকরণ এবং দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতির ওপর প্রভাব পর্যালোচনা;
৬. ভূমি সংস্কার, বরাদ্দ ব্যবস্থাপনা, ভূমি জরিপ, সনদ ইস্যুকরণ, দখলদারিত্ব, ভূমিহীনের মধ্যে ভূমি ও গৃহনির্মাণ কার্যক্রম সংক্রান্ত শ্বেতপত্র সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ;
৭. জনপ্রশাসনে নিয়োগ, পদায়ন, অবসর প্রদান, ওএসডি/বাধ্যতামূলক অবসর বৈষম্যের বিভাজন অবসান সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশ;
৮. প্রযুক্তি খাতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সংমিশ্রণ কর্মপরিকল্পনা পন্থা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনাসংশ্লিষ্ট পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রতিবেদন এবং উন্নয়নের পরামর্শ প্রণয়ন;
৯. সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর (বিচার বিভাগ, অডিট, পিএসসি) এখতিয়ারে থাকা কর্মবিভাগে অর্পিত দায়িত্ব পালন পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন;
১০ বৈদেশিক সাহায্য ও বিনিয়োগ ব্যবস্থা অগ্রগতি ও পরিস্থিতি পর্যালোচনা;
১১. আর্থিক খাত, ব্যাংক প্রশাসন ও ব্যবস্থা, টাকাপাচার, ঋণখেলাপি পরিস্থিতির সৃষ্টি ও বিকাশবিষয়ক পরিস্থিতির প্রতিবেদন।
উপরোক্ত তালিকা আরো বড় হতে পারে যেহেতু বিষয়গুলো পরস্পর প্রযুক্ত সামগ্রিকভাবে
বিষয়গুলো সংস্কার কল্পে পর্যালোচনা ও পরামর্শ প্রদান করা শ্বেতপত্র প্রণয়ন সংস্কার
কমিশনগুলোর জন্য কঠিন ও সীমিত হতে পারে। সবকিছুর ওপর এটা ওঠাতে আসতে
হবে। জনগণের জীবন থেকে বৈষম্য (আর্থিক, জনসেবা, পরিষেবা, মানবাধিকার ও জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে) নিরসনের উপায় উপলক্ষ নির্মাণ ও বাস্তবায়নে সবাইকে ধৈর্যধারণ করে এ প্রয়াস-প্রচেষ্টাকে অর্থবহ হতে হবে।
লেখক : সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান


আরো সংবাদ



premium cement