বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা
- প্রফেসর এম এ রশীদ
- ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে সামরিক প্রতিরক্ষা, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতাসহ অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
সামরিক প্রতিরক্ষা : বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। বাইরের হুমকি থেকে দেশ রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশন ও দুর্যোগ মোকাবেলায়ও তারা প্রশংসনীয় অবদান রাখছে।
শান্তিরক্ষা মিশন : বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। এই মিশনগুলোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবেলা : প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের সময়েও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিধস বা অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী দ্রুত ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং জনগণের সুরক্ষায় সাহায্য করে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তাদের কার্যক্রম দেশবাসীর জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সামগ্রিকভাবে, বাহ্যিক প্রতিরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর চ্যালেঞ্জ : বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীনও হয়। এই চ্যালেঞ্জগুলো কার্যক্ষমতা, আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত।
১. সীমিত প্রযুক্তি ও আধুনিকায়নের প্রয়োজন : সশস্ত্র বাহিনীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং সামরিক কৌশলগত সক্ষমতা বজায় রাখতে আধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের প্রয়োজন রয়েছে। তবে প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক ক্ষেত্রে বাহিনী এখনো উন্নত দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে, যা বাহ্যিক হুমকি মোকাবেলায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
২. অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা : সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো ও অন্যান্য খাতে ব্যয়ও গুরুত্বপূর্ণ, যা সামরিক বাজেটে সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। ফলে নতুন সরঞ্জাম কেনা এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
৩. আঞ্চলিক নিরাপত্তার পরিবর্তন : দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সামরিক শক্তি বৃদ্ধি বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। আঞ্চলিক সামরিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়মিতভাবে নিজেদের উন্নত করতে হয়, যা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। শত্রু দেশগুলোর কথা চিন্তায় রেখে দ্রুত দেশের সব নাগরিককে সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা উচিত। শত্রু দেশগুলোর শত্রুদের সাথে দ্রুত সামরিক কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে হবে।
৪. পেশাগত প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন : আধুনিক যুদ্ধকৌশল এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উন্নত প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। তবে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আন্তর্জাতিক মানের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সমস্যায় পড়তে পারেন।
৫. মাল্টি-রোল কার্যক্রম : দুর্যোগ মোকাবেলা, শান্তিরক্ষা মিশন এবং অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়মিতভাবে বাহিনীকে ব্যস্ত রাখা হয়। বহুমুখী কাজের চাপে মূল প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে প্রভাব পড়তে পারে। এ ধরনের বিভিন্ন ভূমিকা পালনের ফলে মূল প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
৬. সাইবার নিরাপত্তা হুমকি : বর্তমান বিশ্বে সাইবার হামলা এবং তথ্যযুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশের সাইবার নিরাপত্তা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী সাইবার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা গড়ে তুলতে হচ্ছে, যা এখনো সম্পূর্ণরূপে উন্নত নয়।
সশস্ত্র বাহিনীকে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে নিয়মিতভাবে আধুনিকায়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং কৌশলগত প্রশিক্ষণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে বাহিনীকে আরো সক্ষম ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা-
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা : জাতীয় নিরাপত্তার জন্য স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ অত্যাবশ্যক। রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অস্থিরতা নিরাপত্তা প্রচেষ্টাকে দুর্বল করতে পারে; শাসন ও রাজনৈতিক পুনর্মিলনকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে পারে। বিশেষ করে ভারতীয় আরএসএস-এর আদলে বাংলাদেশে ইসকনের উত্থান এখন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি। এর পেছনে আমাদের শত্রু দেশের কঠিন ইন্ধন আছে বলে মনে করা হয়।
অর্থনৈতিক নিরাপত্তা : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার অন্যতম প্রধান উপাদান, যা জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী অর্থনীতি, টেকসই প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যাবশ্যক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমগুলো নিম্নরূপ-
১. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, ঋণ পরিশোধ ও জরুরি প্রয়োজন পূরণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসী আয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় সহায়ক শক্তি।
২. রফতানি শিল্পের উন্নয়ন : রফতানি খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প (RMG), অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। এই শিল্প দেশের মোট রফতানি আয়ের প্রধান উৎস। তবে রফতানির ওপর বেশি নির্ভরশীলতা একটি ঝুঁকি, তাই উৎপাদন বৈচিত্র্যকরণ এবং নতুন বাজার খোঁজার জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।
৩. বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ : বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করা বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক।
৪. অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ : অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে দেশে বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের সুযোগ তৈরি করা অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, পর্যটন ও অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রাখার সহায়ক।
৫. কর্মসংস্থান সৃষ্টি : জনসংখ্যার একটি বড় অংশ যুব সমাজ, যাদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অন্যতম চ্যালেঞ্জ। বেকারত্বের হার কমাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই), প্রযুক্তি খাত এবং স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেতে পারে।
৬. প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা ও দক্ষ ব্যবহারে মনোযোগ : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রাকৃতিক সম্পদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভূমি, জল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা এবং দক্ষ ব্যবহার অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক। বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ বাড়ছে, তাই পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা : দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা। সুশাসন এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। সরকারি খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করলে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হয় এবং আর্থিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।
৮. সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি : দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক। এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে দুর্যোগ বা আর্থিক সঙ্কটের সময় জনগণকে আর্থিক সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়।
৯. সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল অর্থনীতি : ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশ এবং সাইবার নিরাপত্তা অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর্থিক সেবা, ই-কমার্স এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং সিস্টেমগুলোতে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অর্থনীতিকে ডিজিটাল হুমকি থেকে রক্ষা করবে।
সারসংক্ষেপ : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, প্রবাসী আয় ও রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি এবং সাইবার নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল, টেকসই ও নিরাপদ অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের আঞ্চলিক সহযোগিতা
আঞ্চলিক সহযোগিতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা, আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা এবং কৌশলগত অর্থনৈতিক জোট গঠন করে বাংলাদেশ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে।
১. সার্ক (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) : সার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য কাজ করছে। সার্কের মূল লক্ষ্য হলো আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, তবে রাজনৈতিক ও দ্বিপক্ষীয় সমস্যা প্রায়ই এর কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে।
২. বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন) : বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে বিমসটেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ এই জোটের মাধ্যমে সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার, পর্যটন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিবহন ক্ষেত্রে সুবিধা লাভ করতে চায়।
৩. বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল ইনিশিয়েটিভ) : বিবিআইএন চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে বাণিজ্য ও পরিবহন যোগাযোগের উন্নয়ন হচ্ছে। এই চুক্তির উদ্দেশ্য হলো- পণ্য, সেবা এবং জনগণের সহজে চলাচল নিশ্চিত করা, যা চার দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরো গভীর করে তুলছে।
৪. আইওআরএ (ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন) : বাংলাদেশের জন্য ভারত মহাসাগরের গুরুত্ব বিবেচনায় আইওআরএতে অংশগ্রহণ একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। সামুদ্রিক সম্পদ, বাণিজ্য, জাহাজ চলাচল এবং সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণায় এই সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সুরক্ষা সহযোগিতা পাচ্ছে।
৫. চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) : চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সুবিধা লাভ করছে। তবে এই উদ্যোগে অংশগ্রহণে অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার ঝুঁঁকি এবং ঋণ বোঝা বিষয়ে সমালোচনা রয়েছে, যা সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
৬. ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক : ভারত বাংলাদেশের প্রধান প্রতিবেশী এবং বাণিজ্য ও নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সীমান্ত নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন, নদীর পানিবণ্টন, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা ও মতভেদ রয়েছে, তবে সামগ্রিকভাবে উভয় দেশ পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী।
৭. আন্তর্জাতিক নদী সহযোগিতা : বাংলাদেশের নদী-নির্ভর অর্থনীতির জন্য আন্তর্জাতিক নদী ব্যবস্থাপনায় আঞ্চলিক সহযোগিতা জরুরি। গঙ্গা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে, যা কৃষি, মৎস্য এবং পানির উৎস হিসেবে বাংলাদেশকে সহায়তা করে। তবে পানিবণ্টন নিয়ে বিরোধ নিরসনে আরো কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।
৮. মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক : মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং মিয়ানমারের সাথে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর সমর্থন ও কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।
৯. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ : বাংলাদেশ আঞ্চলিক বাজারে প্রবেশ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে কাজ করছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ রফতানি বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়।
সারসংক্ষেপ : বাংলাদেশের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং কৌশলগত সুবিধা এনে দিচ্ছে। তবে আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশের জন্য একটি টেকসই আঞ্চলিক সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন, যা দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
লেখক : সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, এসআইপিজি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা