পাহাড়ে আদিবাসী ও সেটেলার নিয়ে ষড়যন্ত্রের পাঠ
- আব্দুর রহমান তরফদার
- ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় ‘আদিবাসী’ শব্দটি বহুল প্রচারিত হচ্ছে। বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ নামে অভিহিত করার একটি প্রবণতা রয়েছে তথাকথিত প্রগতিশীলদের মধ্যে। এর পেছনে যে ভয়ঙ্কর দেশী-বিদেশী চক্রান্ত রয়েছে সেটি দেশের কমসংখ্যক মানুষ অবগত। এমনকি শিক্ষিত ও সচেতন জনগোষ্ঠীও এ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অনবহিত। আদিবাসী অভিধার মধ্যে লুক্কায়িত বিপদ সম্পর্কে তাদের ধারণা প্রায় শূন্য!
ঐতিহাসিকভাবে আমাদের দেশের পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের আদিবাসী না হয়েও নিজেদের আদিবাসী বা পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিপুত্র হিসেবে দাবি করে। একই সাথে সেখানের বাঙালিদের ডাকা হচ্ছে সেটেলার। আদিবাসী ও সেটেলার শব্দ যুগল ব্যবহারের এই অপচেষ্টা একই ষড়যন্ত্রে গাথা। মিডিয়ায় শব্দ দু’টির প্রচার-প্রসারে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিকের এজেন্ডা রয়েছে। বাকি মিডিয়াগুলো এ শব্দ যুগল ব্যবহারে খুব ধারাবাহিক নয়। ২০০৮ সাল থেকে আদিবাসী ও সেটেলার শব্দ দু’টি ব্যবহারের পেছনে রয়েছে দেশী-বিদেশী গভীর ষড়যন্ত্র!
উপজাতি পরিচয়
পার্বত্য চট্টগ্রামের অবাঙালি মঙ্গোলয়েড নৃতাত্ত্বিক অধিবাসীরা ব্রিটিশ শাসনামল থেকে উপজাতি হিসেবে পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ব্রিটিশ আমল থেকে অসংখ্য দলিল-দস্তাবেজ ও বইপুস্তক, গবেষণা ইত্যাদি লেখা হয়েছে, সর্বত্র উপজাতি বা ট্রাইব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। পার্বত্য এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তারা স্থানীয়ভাবে ‘পাহাড়ি’ হিসেবেও পরিচিত। আমাদের সংবিধানেও তাদের উপজাতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত শান্তি চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘উপজাতি অধ্যুষ্যিত অঞ্চল’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সে চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্যাঞ্চলের নেতারা উপজাতি শব্দটি মেনে নিয়েছেন।
কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে হঠাৎ করে পাহাড়িরা নিজেদের উপজাতি পরিচয় প্রত্যাখ্যান করে আদিবাসী হিসেবে পরিচয়ের দাবি শুরু করেন এ বলে যে, উপজাতি শব্দটি মর্যাদাহীনকর, তারা প্রধান নৃগোষ্ঠী বাঙালি থেকে উদ্ভূত কোনো জাতি নয়! অথচ, উপজাতি হলো এমন জনগোষ্ঠী যারা আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি। কিন্তু নিজস্ব একটি আলাদা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে, অর্থাৎ অপ্রধান নৃগোষ্ঠী। বস্তুত ১৯৭৩ সাল থেকে তাদের স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলনের কোনো পর্যায়ে তারা নিজেদের আদিবাসী দাবি করেননি, উপজাতি পরিচয়েও লজ্জতবোধ করেননি।
আদিবাসীর দাবি
আদিবাসীর দাবির সূত্রপাত নভেম্বর ২০০৭ এ, যখন জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ‘আদিবাসীদের অধিকারসংক্রান্ত ঘোষণাপত্র’ (ইউএনডিআরআইপি) গৃহীত হয়। এ ঘোষণাপত্রে কিছু ভয়ঙ্কর বিষয় রয়েছে, যা যেকোনো দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এই ইউএনডিআরআইপি ঘোষণার পথ বেয়ে যেকোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন অনায়াসে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে স্বাধীন হয়ে যেতে পারে, কষ্ট করে সশস্ত্র যুদ্ধও করা লাগবে না! আমাদের সামনে জ্বলজ্বলে উদাহরণ হলো, ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব তিমর ও সুদান থেকে সাউথ সুদানের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।
‘সিএইচটি কমিশন’ নামে তথাকথিত একটি এনজিও ১৯৯১ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সুশাসন ইত্যাদির নামে কাজ শুরু করে। এই এনজিওর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী ভূমিকা পালনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। বেসরকারি এ সংস্থাটি তখন লাইফ ইস নট আওয়ার’স শিরোনামে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উপজাতিদের মানবাধিকার হরণের অভিযোগ এনে এক কুখ্যাত, একপক্ষীয় এবং মিথ্যা ও অতিরঞ্জনে ভরা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ১৯৯৯ সালে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর এনজিওটি কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ইউএনডিআরআইপিকে পুঁজি করে ২০০৮ সাল থেকে ফের কাজ শুরু করে। উপজাতি নেতারা ও দেশ-বিদেশের তাদের সহানুভূতিশীল গোষ্ঠী এ লক্ষ্যে ‘আদিবাসী পরিচয়ের’ নতুন ইস্যুর অবতারণা করে। আদিবাসী ঘোষণাপত্রের ওপর ভর করে ষড়যন্ত্রের প্রথম ধাপ ছিল, সরকারকে দিয়ে ওই ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করানো। এ লক্ষ্যে তারা তৎকালীন ক্ষমতায় সম্ভাব্য আগমনকারী আওয়ামী লীগের ভুঁইফোড় রাজনীতিক দীপুমনিকে টার্গেট করে, দীপুমনি আদিবাসী দাবির পক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে যোগদান করেন। পরবর্তীতে বিদেশনীতি তথা দাফতরিক বিষয়ে অনভিজ্ঞ ও নবাগত দীপুমনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন, যার পেছনে এ ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে প্রতীয়মান। সৌভাগ্যক্রমে এই সময় সেনাবাহিনী এ ষড়যন্ত্রের রূপরেখা উদঘাটন করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আদিবাসী ঘোষণার বিপদ সম্পর্কে অবহিত করে। যার জন্য দীপুমনি ওই ঘোষণায় স্বাক্ষর করা থেকে বিরত হন।
আদিবাসী পরিচয়ের অসারতা ও বাঙালিদের সেটেলার পরিচিতি
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কোনো এলাকার বিশেষ জনগোষ্ঠী যদি ওই এলাকায় বসবাস করেন তাহলে তাদের ওই এলাকার আদিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয়। অভিবাসী কখনো আদিবাসী হতে পারে না, কারণ তারা সেখানে ইতিহাস পূর্বকাল থেকে বসবাস করছে না। আদিবাসী কারা, এ সংজ্ঞা ইউএনডিআরআইপি দেয়নি, শুধু তাদের অধিকারের কথা উল্লেখ করেছে! তবে জাতিসঙ্ঘের আদিবাসীবিষয়ক স্থায়ী ফোরাম (ইউএনপিএফআইআই) আদিবাসীর সংজ্ঞা দিয়েছে যাতে তিনটি শর্ত রয়েছে, যা হলো :
১. যারা কোনো উপনিবেশ স্থাপনের আগে থেকে ওই ভূখণ্ডে বাস করছিলেন।
২. যারা ভূখণ্ডের নিজস্ব জাতিসত্তার সংস্কৃতি ধরে রেখেছেন এবং তা ভবিষ্যৎ বংশধরদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
৩. যারা নিজেদের স্বতন্ত্র মনে করেন।
এ সংজ্ঞায় অস্ট্রেলিয়ার বুমেরাংম্যানরা হলো ভূমিপুত্র তথা আদিবাসী বা অ্যাবোরিজিন। একইভাবে মাউরিরা নিউজিল্যাণ্ডের আদিবাসী, রেড ইন্ডিয়ানরা আমেরিকার আদিবাসী। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিরা এসব সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নন। তারা মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া থেকে এসে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অংশে আশ্রয় নিয়েছেন ১৫ শ’ ও ১৮ শ’ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে। ওই সময় চট্টগ্রাম মোগল সাম্রাজ্যের সুবে বাংলার অংশ ছিল। এমনকি সীমান্ত পাহারায় রাঙ্গামাটিতে একটি সামরিক দুর্গও ছিল, যা ঘিরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চাটগাঁর বাঙালি বসবাস করতেন। পাহাড়ি ও জঙ্গলপূর্ণ হওয়ায় বাঙালি জনগোষ্ঠী যদিও সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন না, কিন্তু সেখান থেকে নিয়মিত কাঠ, বাঁশ ও শন প্রভৃতি সংগ্রহ করতেন। খালি পড়ে থাকায় বাঙালিরা এসব উপজাতিগোষ্ঠীর আগমন ও বসতি স্থাপনে আপত্তি জানাননি। বর্তমানের পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্বের বৃহত্তম চট্টগ্রামের অংশ, প্রশাসনিক কারণে ইংরেজরা সেখানের পাহাড়ঘেরা অংশকে পৃথক করে পার্বত্য চট্টগ্রাম নামকরণ করে। অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় আদিবাসীদের ক্ষেত্রে যে ধরনের পরিস্থিতি হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে সে ধরনের কিছু হয়নি।
প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে বাঙালিরা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করছেন, এ এলকায় তারা-ই ভূমিপুত্র! স্বাধীনতার পরে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি গোষ্ঠী, বিশেষ করে চাকমারা সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম শুরু করে, শেখ মুজিবের মৃত্যুর পরে ক্ষুব্ধ ভারত শান্তিবাহিনীকে কথিত জুম্মল্যান্ড স্বাধীন করতে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, রসদ, নিরাপদ অবস্থানসহ সর্বাত্মক সহায়তা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত সেনা মোতায়েন বিপদ এড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না, পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তার কৌশলের অংশ হিসেবে বাঙালি-উপজাতি জনতত্ত্বের ভারসাম্য পরিবর্তের প্রয়োজন পড়ে, এ অবস্থায় তৎকালীন সরকার বিশ্বের সবচেয়ে ঘন জনবসতির এ দেশে নদীভাঙা উদ্বাস্তু বাঙালি জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের সুযোগ দেয়। এ স্থানান্তরিত, পুনর্বাসিত বাঙালি জনগোষ্ঠী কোনো ভিনদেশ থেকে আসেননি, এদের তাই সেটেলার হিসেবে আখ্যায়িত করা অনুচিত। কিন্তু স্থানান্তরিত বাঙালিসহ আদি বাঙালি নির্বিশেষে সবাইকে সেটেলার হিসেবে পরিহাস করা কাওরানবাজার থেকে প্রকাশিত একটি ইংরেজি ও একটি বাংলা দৈনিকের একই এজেন্ডার অংশ, যাতে উপজাতিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়। এবং বাঙালির অধিকার খারিজ করা যায়! তিন-চার শতক আগে বিভিন্ন এলাকা থেকে বসতি গড়া বিভিন্ন অভিবাসী উপজাতি গোষ্ঠীকে আদিবাসী বানিয়ে ভূমিপুত্র বাঙালিকে সেটেলার বানানো তাই কোনো অনিচ্ছাকৃত সাধারণ বিষয় নয়।
আদিবাসী দাবিকারী মহলটি পাহাড়ে বসতির ইতিহাস অস্বীকার করার উপায় নেই দেখে তারা আদিবাসীর আভিধানিক বা জাতিসঙ্ঘের সংজ্ঞা এড়িয়ে ভিন্ন যুক্তির পথে গেছে। হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিরা দেওয়ান বলেছেন, কে আগে এসেছে কে পরে এসেছে, সেটি বিষয় নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের চেয়ে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও রীতিনীতি আলাদা হিসেবে তারা আদিবাসী।
আদিবাসী পরিচয়ের বিপদ
ইউএনডিআরআইপি প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের কনভেনশন ১০৭ ও ১৬৯-এর ধারাবাহিকতা। আদিবাসী ঘোষণা কেন শ্রম আইনের পরিমার্জন ও পরিবর্ধন দিয়ে হবে, সে বিতর্ক শুরু থেকে ছিল, এখনো আছে। রাষ্ট্রগুলোর শ্রম আইনের কনভেনশন পরিপালনের বাধ্যবাধকতা আছে, কিন্তু আদিবাসী ঘোষণা মানার বাধ্যবাধকতা এখন পর্যন্ত নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে সে বাধ্যবাধকতা আরোপিত হবে না, নিশ্চিত বলা যায় না। যাহোক, আদিবাসী ঘোষণার ধারাগুলো এবং সেগুলোর ক্ষতিকারক দিকগুলো নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হলো :
১. ধারা ৩-এ আদিবাসীদের স্বায়ত্তশাসনের এবং স্বনিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন করার বিষয়ে বলা হয়েছে। বাঙালিরা ইতোমধ্যে শান্তিচুক্তির বদৌলতে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে আছেন, তাদের শিক্ষা, চাকরি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ যাবতীয় বিষয়াদি উপজাতির করুণার ওপর নির্ভর করবে।
২. ধারা ২৫-২৯-এ ঐতিহ্যগত ভূমি ও সম্পদের ওপর আদিবাসীদের মালিকানা, ব্যবহার, আইন ও ঐতিহ্য, পরিবেশ, সুরক্ষা ইত্যাদির নিরঙ্কুশ অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এসব ধারা পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের জমি ও সম্পদের ওপর সরকারের অধিকারকে সম্পূর্ণত খর্ব করবে।
৩. ধারা ৩০-এ উল্লেখ করা হয়েছে, আদিবাসীদের মুক্ত ও পূর্বসম্মতি ছাড়া তাদের ভূমিতে কোনো সামরিক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করা যাবে না; অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা মোতায়েন ও অভিযান চালানোর বিষয়গুলো উপজাতি নেতাদের মর্জির ওপর নির্ভর করবে। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে জানি, উপজাতি নেতারা কখনো সেনা মোতায়েন অনুমোদন করবেন না, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
৪. ধারা ৩৩-এ পরিচয়, সদস্যপদ ও নাগরিকত্ব বিষয়ে বলা হয়েছে। তাদের নিজস্ব রীতিনীতি ও ঐতিহ্য অনুযায়ী তাদের সদস্য কারা তা সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারও তাদের রয়েছে। এ ধারা অত্যন্ত বিপজ্জনক! পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাগ্যবিধাতা হয়ে উঠবে উপজাতিরা, ভোটাধিকারসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালির নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেবে তারা! এ লক্ষ্যে বাঙালিদের বহিরাগত ও নাগরিকত্বের অযোগ্য প্রমাণে চক্রান্তকারী গোষ্ঠী ক্রমাগত ‘সেটেলার’ ট্যাগ দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি উদাহরণস্বরূপ, যদি মুরং উপজাতি চাকমাদের বশ্যতা স্বীকার না করে, তবে তাদের আদিবাসী স্ট্যাটাস বাতিল করে দিতে পারে মুরং ও সরকারের কোনো আপত্তি আমলে না নিয়েই!
ইউএনডিআরআইপির আওতায় আদিবাসী পরিচয়ে স্বায়ত্তশাসন পেয়ে উপজাতিরা শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র কার্যক্রম পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় করলে কিংবা বাঙালি নিধনে লিপ্ত হলে কিংবা ভারতীয় আগ্রাসনকে আমন্ত্রণ জানালে নাগরিক ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনা মোতায়েনও করা যাবে না তাদের অনুমতি ছাড়া- এমন পরিস্থিতির প্রায় শতভাগ আশঙ্কা বিরাজমান থাকাবস্থায় উপজাতিদের ভুয়া ‘আদিবাসী স্বীকৃতি’ দেয়া হবে বাংলাদেশের জন্য আত্মহত্যার শামিল!
ইউএনডিআরআইপি যদিও আদিবাসীদের অধিকারের সমর্থনে কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব অগ্রাহ্য করে না বা সরকারি সম্মতি ছাড়া শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা নেয় না, বাস্তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কূটনৈতিক চ্যানেল, অ্যাডভোকেসি ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে আদিবাসীদের সমর্থন করতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় শক্তিমান ও প্রভাবশালী রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগুলোর প্রভাবে জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী মেতায়েন করে গণভোটের আয়োজন করে আদিবাসীদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব, যেটা পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদানের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে মুসলিমপ্রধান দেশ হলে অভিজ্ঞতার আলোকে ঝুঁকি বেশি বলে প্রমাণিত। স্বাধীনতার এত বছরে উপজাতিদের বিরতিহীন রাষ্ট্রবিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ ও মনোভাব যদি আমরা অনুধাবন করি, যদি ভারতের লাগাতার বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড বিবেচনা করি এবং যদি কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্র, ইউএনডিপি, সিএইচটি কমিশন প্রভৃতির বিভিন্ন কার্যক্রম আমলে নিই, তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন ও ভূমির ওপর উপজাতিদের আদিবাসী ঘোষণার বিভিন্ন ধারায় একক কর্তৃত্বের পরিণতি কী ভয়াবহ হতে পারে, তা সহজে অনুমেয়!
সরকারের করণীয়
সরকার ২০১০ সালে উপজাতি পরিচয়ে আপত্তি ও আদিবাসী পরিচয়ের বিপদ অনুধাবন করে তাদের ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ পরিচয়ে অভিষিক্ত করে এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ২৩ নম্বর আইন) প্রণয়ন করে। এ অভিধার বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি ও অজুহাত উত্থাপন করতে না পারলেও চিহ্নিত গোষ্ঠী এখনো আদিবাসী ষড়যন্ত্রে অবিচল রয়েছে। সম্প্রতি ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনের পতনের পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ডামাডোলে আদিবাসী পরিচয়ের পক্ষে মহলটি আবার পূর্ণোদ্যম নিয়ে নেমেছে। ইতোপূর্বে তথ্য মন্ত্রণালয় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে চিঠি দিয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার নির্দেশনা দিয়েছে। এ অবস্থায় সরকারিভাবে ও মিডিয়ায় আদিবাসী শব্দ ব্যবহারে শাস্তিযোগ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পরিবর্তে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অভিধা ব্যবহারের পক্ষে আইন বা আদেশ জারি করতে হবে। একই সাথে পাহাড়ের বাঙালিদের ক্ষেত্রে সেটেলার শব্দ ব্যবহার না করে শুধু বাঙালি অথবা পাহাড়ি বাঙালি ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।
পাহাড়ি উপজাতিদের আদিবাসী দাবির কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। এ দাবির সত্যাসত্য নির্ণয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইতিহাসবেত্তা ও নৃবিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। এতে মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হবে, চক্রান্তকারীরা খামোশ হবে।
সিএইচটি কমিশনের লক্ষ্য ও কার্যক্রমের আওতায় রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান আছে কি না, তা সরকারকে নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। সম্ভব হলে নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা