১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১, ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

খালেদা জিয়া : গণতন্ত্রের পক্ষে সংবিধান সংশোধনী

-

সামরিক বাহিনীর হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হওয়ার পর বিএনপির পরবর্তী নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ও ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের পক্ষে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা এবং ইমেজ বিএনপির সবচেয়ে বড় সম্পদ।
জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক উত্থান এ দেশের ইতিহাসে এক কৌতূহোদ্দীপক অধ্যায়। ঝড়ের বেগে এসে আবার দ্রুত গতিতে চলে গিয়েছিলেন। স্বল্প এই সময়ে তিনি অনেক বেশি কাজ করেন যার অধিকাংশ ছিল দেশের জন্য অত্যন্ত মৌলিক, সুদূরপ্রসারী ও স্পর্শকাতর।
১৯৮২ সালে গণতান্ত্রিক সরকারকে অস্ত্রের মুখে হটিয়ে জেনারেল এরশাদ সামরিক শাসন জারি করেন। শুরু থেকে দেশের জনগণ এরশাদের সামরিক শাসন মেনে নেননি। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর তার বিরুদ্ধে পরিচালিত গণ-আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, জাতীয়তাবাদী দলসহ বাম ও ইসলামপন্থী দলগুলো সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। ১৯৯১ সালে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটে। একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএসপি জয়লাভ করে। জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে সরকার গঠন করে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পার্লামেন্টে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। এরপর ২০০১ সালে আবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হয়।
একাদশ সংশোধনী : ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট জাতীয় সংসদে সংবিধানের একাদশ সংশোধনী বিল গৃহীত হয়। একাদশ সংশোধনী বিলের মাধ্যমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার গৃহীত সব কার্যক্রম বৈধকরণ এবং প্রধান বিচারপতি পদে তার প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা হয়। এ বিল অনুমোদনের ফলে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ২০ অনুচ্ছেদের পর ২১ অনুচ্ছেদ নামে একটি নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয় এবং উল্লিখিত বিধান তাতে সন্নিবেশিত হয়েছে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর আলোকে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে কার্যভার গ্রহণের পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীনের প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
দ্বাদশ সংশোধনী : ১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থার বিধান রাখা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে তা সংশোধন করে রাষ্ট্রপতিশাসিত পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতিশাসিত পদ্ধতি বহাল রাখেন। সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পুনরায় দেশে সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
সরকার গঠনের পর খালেদা জিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা দেয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সংবিধান অনুযায়ী তখন রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার বিধান ছিল। বিএনপি সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে স্বাচ্ছন্দ্যে উতরে যেতে পারবে, এমন নিশ্চয়তা দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। সরকার গঠনে জামায়াতের সমর্থন পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও বিএনপি জামায়াতের সমর্থন প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু জামায়াত রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছিল বলে বিএনপির প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। ফলে বিএনপি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে। এ দিকে দেশের রাজনীতি সচেতন মহল থেকেও সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে দাবি উত্থাপিত হয়। বৃহত্তম বিরোধী দল আওয়ামী লীগও সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে সোচ্চার হয়। অবশ্য ১৯৭৪ সালে এ দলটি সংসদীয় পদ্ধতি বাতিল করে রাষ্ট্রপতির একনায়কতন্ত্র চালু করেছিল। তবু ভালো যে, রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে তারা সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে সোচ্চার হয়। বিএনপির জন্য বিষয়টি ছিল একটু স্পর্শকাতর। কারণ তাদের দলীয় প্রতিষ্ঠাতা ও দলের গঠনতন্ত্র সংসদীয় পদ্ধতির পক্ষে ছিলেন না। অবশ্য রাজনৈতিক বাস্তবতা ও জনগণের মনোভাব বিবেচনা করে খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রর্বতনের লক্ষ্যে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। বামপন্থী ও অন্যান্য ক্ষুদ্র দলের পক্ষ থেকেও এ সংশোধনীর পক্ষে কথা বলা হয়।
খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়ের পর সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তনে সংসদে বিল উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ২ এপ্রিল ’৯১ সংসদ নেত্রী বেগম জিয়া সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী বিল পেশ করেন। এই ঐতিহাসিক বিলে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার এবং আরেকটি পৃথক বিলে প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের স^পদে ফিরে যাওয়ার বিধান প্রস্তাব করা হয়। বিলে দুটো বাছাই কমিটি ও সংসদের পূর্ণাঙ্গ আলোচনার পর ৬ আগস্ট ’৯১ সংসদে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। সাড়ে ১৬ বছরের প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশকে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে নেয়ার মুহূর্তটি ছিল বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে একটি মাইলফলক। দেশের সংবিধানের যতগুলো সংশোধনী হয়েছে তার মধ্যে দ্বাদশ সংশোধনী ছিল সবচেয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ও জাতীয় ঐক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বসম্মতভাবে সংসদীয়ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে। দেশের প্রধান দুটো বড় রাজনৈতিক দলের দুই নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা সেদিন সংসদের লবিতে একত্রে ফটোসেশন করেন। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর মতিউর রহমান নিজামী ও ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন সেদিন আনন্দে কোলাকুলি করেন, যা ছিল বিরল ঘটনা। বস্তুত দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে তার যাত্রা শুরু করে এবং জনগণের দীর্ঘলালিত স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার বাস্তব রূপায়ন ঘটে। ১৯৯১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী বিল সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। এ সংশোধনীর ফলে দেশের ১৬ বছরের রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটে। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
ত্রয়োদশ সংশোধনী : ১৯৯৬ সালের ২৮ মার্চ জাতীয় সংসদ সংবিধানের ৫৮(ক) অনুচ্ছেদের পরে ৫৮(খ), ৫৮(গ), ৫৮(ঘ) ও ৫৮৫ অনুচ্ছেদ সংযোজন করে একটি ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হয়। ওই বিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেয়ার পর বা মেয়াদ অবসানের পর একজন প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার বিধান করা হয়। এ ছাড়া সংবিধানের ৬১ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে প্রতিরক্ষা বিভাগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়ন্ত্রণের বিধান করা হয়।
১৯৯৬ সালের ৩ মার্র্চ জাতীয় সংসদে সংবিধানের এয়োদশ সংশোধনী অনুমোদিত হয়, যা বাংলাদেশের সংবিধান ও রাজনীতির ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি এই সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তন করা হয়। এ পদ্ধতি বিশ্বের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি ব্যতিক্রমী নতুন সংযোজন।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ইতিবৃত্ত
বিএনপি শাসনামলে ১৯৯৪ সালে মাগুরার একটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উত্থাপিত হয়। অভিযোগের ব্যাপকতা ও সত্যতা এতটা প্রবল ছিল যে, বিএনপি সরকার সে অভিযোগ খণ্ডাতে ব্যর্থ হয়। ওই সময় বিএনপি প্রার্থী স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারতেন। কিন্তু বিএনপির অতি উৎসাহী নেতাকর্মীরা অনেকটা বেপরোয়াভাবে কারচুপির আশ্রয় নেন। বিএনপি সরকারের উপনির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো আন্দোলন গড়ে তোলে। এ সময় জামায়াতের উত্থাপিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা গুরুত্ব পায়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ এই ধারণা গ্রহণ করে রাজনৈতিক দাবি হিসেবে উত্থাপন করে।
জামায়াত বিএনপি সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি প্রধান দাবি হিসেবে উত্থাপন করে। বিএনপি সরকার জামায়াতের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ঘিরে জামায়াত ও আওয়ামী লীগের মধ্যে যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। উভয় দল একযোগে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে থাকে। বিএনপি সরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য বিবেচনা করে তা মেনে না নেয়ার ব্যাপারে অনড় থাকে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি দীর্ঘদিন সংসদ বর্জনে সংসদ প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ে। এ দিকে সংসদের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে সরকার সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। সরকার সে দাবিতে কর্ণপাত না করে একতরফাভাবে নির্বাচনের আয়োজন করে। এর প্রতিবাদে আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে ওঠে। এরূপ অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে বড় দলগুলোর অংশগ্রহণ ব্যতীত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল নামমাত্র। বস্তুত জনগণ এই নির্বাচন বর্জন করে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচন প্রহসনে পরিগণিত হয়।
কেয়ারটেকার সরকারের দাবির সাথে একাত্ম হয়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং বামফ্রন্ট একই দাবিতে আন্দোলনে যোগ দেয়। ক্ষমতাসীন বিএনপি ওই দাবি উপেক্ষা করায় ১৯৯৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিরোধী দলের ১৪৭ জন সদস্য একযোগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। সংসদের স্পিকার পদত্যাগপত্রগুলো বৈধ বলে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। সংসদের স্পিকার পদত্যাগপত্রগুলোর গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের অভিমত চাওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট পদত্যাগপত্রগুলো বৈধ বলে ঘোষণা করেন। ইতোমধ্যে ৯০ দিন সংসদে অনুপস্থিত থাকায় বিরোধীদলীয় সদস্যদের আসন শূন্য হয়ে যায়। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শে রাষ্ট্রপতি মেয়াদ পূর্তির ১৩৩ দিন আগে পঞ্চম জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
১০ জানুয়ারি ১৯৯৬ নির্বাচন কমিশন বিরোধী দলগুলোর সাথে অর্থপূর্ণ আলাপ-আলোচনা ছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দেয়। ২৩ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন কোনো প্রার্থী না থাকায় ১৪ মন্ত্রীসহ ৪২ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। দেশী ও বিদেশী পর্যবেক্ষকদের মতে, ঢাকায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভোটার ভোটদান করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ১৪ জনের মৃত্যু এবং সহস্রাধিক ব্যক্তির আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে জয়লাভ করে। দেশ-বিদেশের পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে নাকচ করে দেন।
২১ মার্চ বিএনপি সরকার সংসদে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের লক্ষ্যে একটি বিল উত্থাপন করে। ২৬ মার্চ বিলটি সংসদে আলোচিত হয়। সারা রাত আলোচনার পর ২৭ মার্চ সকাল বেলা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী হিসেবে বিলটি গৃহীত হয়।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বল্পতম স্থায়ী সংসদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ মাত্র চার দিন স্থায়ী হয়। সবগুলো আসনের নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার আগে এবং সংসদ মুলতবি থাকাকালে তা বাতিল হয়ে যায় ।
নবগঠিত কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ১২ জুন, ’৯৬ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসে বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
চতুর্দশ সংশোধনী : ২০০৪ সালের ১৭ মে সংসদে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ৩০ থেকে ৪৫-এ বৃদ্ধি করা হয় এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বয়স ৬৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৬৭ বছর করা হয়।
লেখক : গবেষক ও সরকারের সাবেক সচিব
ayubmiah@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement

সকল