১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে ধর্ম উপদেষ্টা

সংস্কার শেষে জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া হবে

মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনকে দৈনিক নয়া দিগন্তে পুষ্পস্তবক দিয়ে স্মাগত জানাচ্ছেন সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, সাথে আছেন পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ। - ছবি : নয়া দিগন্ত

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বৈষম্যহীন ও ইনসাফের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। আমরা কতদিন দায়িত্বে থাকবো তা এখনি বলা যাচ্ছে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রী না আসা পর্যন্ত আমরা দায়িত্ব পালন করবো। এর আগে আমরা একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে চায়। এজন্য নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। মানুষ অনেক বছর ধরে ভোট দিতে পারেনি। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে কাজ করছে সরকার। বর্তমানে যারা অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন তাদের দল করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি।

বুধবার নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ধর্ম উপদেষ্টা সন্ধ্যায় টিকাটুলির নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে এলে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে নয়া দিগন্তের বিভিন্ন সেকশন পরিদর্শন করেন। এ সময় ধর্ম উপদেষ্টা নয়া দিগন্তের সাথে নিজের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন এবং দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকার জন্য নয়া দিগন্ত কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি নয়া দিগন্তের উত্তরোত্তর সাফল্য ও সম্মৃদ্ধি কামনা করেন এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে নয়া দিগন্ত আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর, নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, জয়েন্ট নিউজ এডিটর খায়রুল বাশার, সিটি এডিটর আশরাফুল ইসলাম, চীফ রিপোর্টার আবু সালেহ আকন, অনলাইন এডিটর হাসান শরীফ, সাহিত্য সম্পাদক কবি জাকির আবু জাফর, হেড অব মার্কেটিং আনোয়ারুল ইসলাম জয়, সার্কলেশন ম্যানেজার মিছবাহুদ্দিন হেলাল প্রমুখ।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ধর্মমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর রাতদিন পরিশ্রম করে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ওয়াকফ প্রশাসনসহ সব জায়গা থেকে অনিয়ম-দুর্ণীতি বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে সবার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে। এদেশ আমাদের সবার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশে সবার শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অধিকার রয়েছে। কিন্তু সুসংবদ্ধ একটি চক্রান্তকারী গোষ্ঠি মন্দির, মাজারে আঘাত করে সরকারকে বিব্রত করতে চায়।
তিনি বলেন, এ দেশ অলি-আউলিয়ার দেশ। কবর জিয়ারত একটি সুন্নত কাজ। কিন্তু সেখানে যেন শিরক বা অন্য ধরনের কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড না হয় সেটি দেখবে আইনশৃংখলা বাহিনী। আমরা কেউ যেন আইন নিজ হাতে তুলে না নেই। এতে বিদেশী পত্রিকায় আমাদের মৌলবাদী হিসেবে দেখানোর একটি সুযোগ পায়।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সামনে দুর্গাপূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যাতে নির্বিঘ্নে পালন করতে পারেন সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারকে এ ব্যাপারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। বিগত সময়ে পূজার জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখা হতো, একবার তিন কোটি টাকা করা হয়েছিল। কিন্তু এবার চার কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। এখান থেকে মন্দিরের খরচের পাশাপাশি অস্বচ্ছল হিন্দুদেরও আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হবে।

আগামী পবিত্র হজে সরকার খরচ কমানোর চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, হজের ক্ষেত্রে বিমানভাড়া, সৌদিতে আবাসন ছাড়াও সৌদি সরকারকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ফিস দিতে হয়। এছাড়া এনবিআরকে টাকা দিতে হয়। বিমানভাড়া নিয়ে হাজীদের নিয়ে ব্যবসা কারো কাম্য নয়। এটি কমানো হবে। আমি ইতোমধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার সাথে কথা বলে আরো কিভাবে হজের খরচ কমানো যায় সে ব্যাপারে কথা বলেছি। এছাড়া আগামী সপ্তাহে সৌদি আরবে যাব। সেখানে সৌদি সরকারের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবো। কোনো সিন্ডিকেট থাকলে সেটিও খতিয়ে দেখে ভেঙ্গে দেয়া হবে।

এবার হজে দু’টি প্যাকেজ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, খরচ সহনীয় পর্যায়ে নেয়ার পাশাপাশি মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য আমরা বেসরকারি এজেন্সি মালিকদের আগে থেকেই হজযাত্রীদের সাথে চুক্তি করতে বলেছি। আবাসন ঠিক করতে বলেছি।

তিনি বলেন, একটি ভুল কথা প্রচলিত আছে, ধর্মমন্ত্রণালয় হাজীদের সাথে ব্যবসা করে। কিন্তু এটি ঠিক নয় সরকার হাজীদের সাথে কোনো ব্যবসা করে না। বরং আমরা হাজীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এজন্য চিকিৎসক, নার্সসহ বিভিন্ন টিম নিয়ে যেতে হয়। সেজন্য সরকারের অনেক খরচ হয়। তবে এবার বিভিন্ন টিমের নামে যাতে ব্যাপক বহর না যেতে পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা আমাদের মাঝে আসায় আমরা অনেক খুশি হয়েছি। আমরা তাকে অনেক ধন্যবাদ ও কতৃজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি যাতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং দেশ-জাতির সেবা করতে পারেন সে ব্যাপারে নয়া দিগন্ত সব সময় তার পাশে থাকবে।

স্বাগত বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা দায়িত্ব নিয়েই একটি সাম্যের সমাজ কায়েমের কথা বলেছেন। তিনি সব ধর্মের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এতে আমরা আশান্বিত হয়েছি। তিনি সাংবাদিক হিসেবে আমাদের পাশে ছিলেন সব সময়। বর্তমানেও তিনি আমাদের পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবেন সে প্রত্যাশা করি।

নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা একজন প্রকৃতই স্কলার মানুষ। তার শিক্ষা ও জ্ঞানের মান উন্নতস্তরের। তিনি পেশার শুরুতে সাংবাদিক ছিলেন। মাঝে অধ্যাপনা করেছেন। অবসরের পর আবার সাংবাদিকতায় ফিরেছেন। এখন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের ক্রান্তিকালে মানুষকে পথ দেখানোর কাজ করেছেন। বর্তমান দায়িত্বে থেকেও তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু করবেন এটা আমরা প্রত্যাশা করি।


আরো সংবাদ



premium cement