বিসিএসসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ছাত্রশিবিরের উদ্বেগ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ জুলাই ২০২৪, ১৯:০১
৩৩তম থেকে ৪৬তম বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডারসহ অন্তত ৩০টি পরীক্ষায় কতিপয় বিপিএসসি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
সোমবার (৮ জুলাই) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের প্রতিটি সেক্টরে যে অনিয়ম, দুর্নীতি, ধোঁকাবাজি ও জালিয়াতিতে ভরে গেছে, তারই সর্বনিকৃষ্ট নজির জাতি আরো একবার প্রত্যক্ষ করল। দেশের লাখো-কোটি মেধাবী, পরিশ্রমী ও স্বপ্নবাজ শিক্ষার্থীর আস্থার জায়গা, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) দ্বারা পরিচালিত বিসিএস পরীক্ষা। যেখানে মেধাবীদের মেধার সর্বোচ্চ মূল্যায়ন হবে বলে সবার বিশ্বাস ছিল, সেখানেও মেধাবীদের সাথে চরম ধোঁকাবাজির প্রমাণ মিলেছে।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল২৪-এর অনুসন্ধানী রিপোর্টে দেখা যায়, ৩৩তম থেকে ৪৬তম বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডারসহ অন্তত ৩০টি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি গত ৫ জুলাই রেলওয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যাতে বিপিএসসির উপ-পরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলমসহ প্রায় ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আরো ভয়ংকর বিষয় হলো এই সংস্থার অধীনে ৫১০টি পদের জন্য নিয়োগ পরীক্ষা হয়, সেখানে প্রশ্নই ফাঁস করা হয় এর অধিক সংখ্যক! এরপর ফাঁস করা প্রশ্ন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বুথ তৈরি করে পরীক্ষার আগের রাতেই মুখস্থ করিয়ে প্রার্থীদের পরীক্ষা দিতে পাঠানো হয়। মেধাবীদের সাথে এ কেমন ধোঁকাবাজি! যেখানে মেধাবীদের সাথে মেধাবীদের প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা, সেখানে জালিয়াতির সাথে জালিয়াতির প্রতিযোগিতা চলে! প্রশ্ন জাগে, লড়াই মেধাবীদের নাকি প্রশ্নপত্র ফাঁসকৃতদের? যারা নিজেদের স্বপ্নকে পিএসসির হাতে তুলে দিয়ে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, তাদের সাথে এ কেমন প্রহসন?’
নেতৃদ্বয় বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নতুন নয়। দেশের প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় এমন হীন ও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। কিন্তু এসব প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে খোদ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। অনিয়মের রাজ্যে বসবাস করার পূর্ণ ফায়দা নিয়ে এসব অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী বহাল তবিয়তে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ডামি সরকার সব অনিয়মের ক্ষেত্রেই নীরব। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সৎ, দক্ষ ও মেধাবী কর্মী খোঁজার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানই যখন দুর্নীতিবাজদের আখড়া, সেখানে মেধাবীদের মূল্যায়ন আশাতীত!
একটি রাষ্ট্রব্যবস্থায় সরকার সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে থাকে, সে সরকারই যদি হয় অবৈধ, তাহলে তার অধীনে থাকা কোনো কিছুই ন্যায়নীতি রক্ষা করতে পারে না। তারই একটি নজির আমরা প্রত্যক্ষ করলাম।’
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ‘আমরা আরো একটি ঘটনা সম্প্রতি লক্ষ করেছি ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনের মুখে সরকার প্রধান সংসদে দাঁড়িয়ে কোটাব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এতে দেশের তরুণসমাজ তাদের মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন হওয়ার ব্যাপারে আশান্বিত হয়। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ করছি, ডামি সরকার আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কোটাব্যবস্থা পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে যখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, তখন সরকারের সেই কর্তাব্যক্তি আন্দোলন নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে। আমরা মনে করি, এটা তরুণ মেধাবী প্রজন্মের সাথে চরম প্রতারণা ও অবমাননামূলক আচরণ।
এসব ঘটনায় দেশের মানুষের বুঝতে বাকি থাকে না যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা কেন ঘটে এবং কোটাব্যবস্থা কাদের স্বার্থে ফিরিয়ে আনা হয়। মূলত অবৈধ ক্ষমতা প্রলম্বিত করতেই দলীয় ক্যাডারদের সুবিধা দেয়া আর প্রকৃত মেধাবীদের বঞ্চিত করে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়া।
অতএব, আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি, এসব অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথাযথ বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। জালিয়াতির মাধ্যমে যারা বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেয়েছে, তাদের নিয়োগ বাতিলসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে মেধাবীদের মূল্যায়ন ও রাষ্ট্রীয় কাজে মেধাবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় সৃষ্ট যেকোনো পরিস্থিতির দায়ভার ডামি সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তি