দেশের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা : রিজভী
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ১১ জুন ২০২৪, ১২:২০
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের অর্থনীতির এখন টালমাটাল অবস্থা। প্রতিদিনই দেশের অর্থনীতির ধ্বসের কথাই গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। পুঁজি পাচারকারী, হুন্ডিওয়ালা, বিপুল অংকের ব্যাংক ঋণ নিয়ে বছরের পর বছর ফেরত না দিয়ে বিদেশে পাচার করে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী হওয়া, ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য কমে যাওয়া, তীব্র ডলার সঙ্কট, প্রবাসী আয় কমে যাওয়া, রেমিটেন্স কমে যাওয়া, অস্বাভাবিক সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতিসহ সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষদেরকে গভীর সঙ্কটে ফেলেছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দেশে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কালোছায়া পরিব্যাপ্ত। রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান আওয়ামী কতৃর্ত্ববাদী শাসনের অভিঘাতে বিপন্ন প্রায়। আইন আদালত থেকে শুরু করে সর্বত্র আওয়ামী হিংস্রতার আঘাত সুষ্পষ্ট। দুঃশাসনের আঘাতে আইনের শাসন মনে হয় আত্মবলী দিয়েছে। যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বার বার সকল মামলায় জামিন পাওয়ার পরেও জেলগেট থেকে বেরোনোর সময় নতুন মামলা দিয়ে তাকে কারাবন্দী করে রাখা হচ্ছে। সবাই মনে করে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আক্রোশেই সাইফুল আলম নীরবকে কারাগার থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, গত ৫ জুন উচ্চতর আদালতে রিট পিটিশন করলে আদালত কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া মামলা না দেয়ার জন্য আদেশ দিলেও সকল মামলায় জামিনপ্রাপ্ত সাইফুল আলম নীরবকে আজও মুক্তি দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, গত ৫ জুন চতুর্থ দফা ডামি উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিরোধী দলহীন এবং ভোটারশূন্য এই নির্বাচনে নিজেরা নিজেদেরকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে একদলীয় উপজেলা নির্বাচন উপভোগ করেছে। উপজেলায় লুট ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নিতে রক্তের স্রোত বইয়ে দেয়া হয়েছে দেশের বিভিন্ন উপজেলায়। অবৈধ অর্থ হরিলুটের সুযোগ যাতে হাতছাড়া না হয় সেজন্য আওয়ামী ক্যাডাররা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতারত একই দলের দুই প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে ব্যাপক সহিংস সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়েছে, হত্যা করেছে এবং শারীরিকভাবে গুরুতর আহত করেছে। নির্বাচনের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই উপজেলা নির্বাচনেও প্রাণহানি হয়েছে সাতজনের। হাজার হাজার মানুষ তাদের হামলার শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা এখনো গুরুতর।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, জনগণ কতৃর্ক পরিত্যক্ত দল এখন আওয়ামী লীগ। এই দল সংখ্যালঘুসহ গরিব মানুষদের বাড়ি-ঘর, সহায়-সম্পদ এবং অবৈধভাবে টাকা লুটকারী পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভরশীল। তাই ভোটারশূণ্য জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে ডামি সরকার ও তাদের গৃহপালিত নির্বাচন কমিশন মোটেও লজ্জিত নয়। আওয়ামী সরকার ও তাদের নির্বাচন কমিশনকে জনগণ বিবেচনা করে শতাব্দির শ্রেষ্ঠ বেহায়া।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির এখন টালমাটাল অবস্থা। প্রতিদিনই দেশের অর্থনীতির ধ্বসের কথাই গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। পুঁজি পাচারকারী, হুন্ডিওয়ালা, বিপুল অংকের ব্যাংক ঋণ নিয়ে বছরের পর বছর ফেরত না দিয়ে বিদেশে পাচার করে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী হওয়া, ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য কমে যাওয়া, তীব্র ডলার সংকট, প্রবাসী আয় কমে যাওয়া, রেমিটেন্স কমে যাওয়া, অস্বাভাবিক সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতিসহ সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষদেরকে গভীর সঙ্কটে ফেলেছে। ক্ষমতাঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীকে ব্যাংক থেকে অন্যায় সুবিধা দেয়ার কারণে ব্যাংকগুলো এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে এবং লক্ষ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করে স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপী সেজেজেন তারা। ঋণখেলাপীরা এখন উল্লাসে মেতে উঠেছে। ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ থেকে তার প্রয়োজনীয় টাকা ঈদের প্রাক্কালে তুলতে পারছেন না বলে ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহকরা মাথা কুটছেন আর ব্যাংকের স্টাফদের মাছি মারা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনো কাজ নেই।
তিনি আরো বলেন, সরকার বার বার ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনার অজুহাত দিয়ে বর্তমান অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণ হিসেবে চালানোর চেষ্টা করছে। অথচ যুদ্ধের আশেপাশের কোনো দেশে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়নি এবং খাদ্যপণ্যের দামও মানুষের আয়সীমার মধ্যে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি এখন কোনো উন্নশীল দেশেই প্রকট নয়। এমনকি পাশ্বর্বর্তী দেশ ভারতেও মূল্যস্ফীতি ৪.৮ শতাংশ। ভারতের বর্তমান রিজার্ভ যদি ৬৪৩ বিলিয়ন ডলার হয়, তাহলে সেই হিসেবে বাংলাদেশের রিজার্ভ থাকা উচিত ৮০ থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু তা এখন শূণ্যের দিকে নেমে আসছে। লুটপাট, টাকা পাচার, অপচয় এবং মহাদুর্নীতি বাক্সের মধ্যে রেখে মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব নয়। দিন দিন উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাও কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। ব্যক্তিগত আয় ও জীবনযাত্রার মান দিন দিন প্রকট হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষরা এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
নেতাকর্মীদের এখনো হয়রানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা ও বাঁশখালী উপজেলাধীন গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীকে বেশ কিছুদিন আগে গ্রেফতার করার পর এখনো পর্যন্ত নতুন নতুন মামলায় তাকে জড়িত করে হয়রানি করা হচ্ছে। গত ৯ জুন তারিখে পল্টনের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তাকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে ঢাকায় আনা হয় শুধুমাত্র হয়রানি করার জন্য। চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানায় মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়ে গ্রেফতার দেখানো হয় ক্ষমতাঘনিষ্ঠ কোনো প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে। তার স্ত্রী-সন্তান সন্ততিরা অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছে, তার ওপর ভয়াবহ জুলুম ও হয়রানী বন্ধ করা হোক। তিনি লিয়াকত আলীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের মনোনীত ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানকে গত ২৮ মে ২০২৪ তারিখ রাতে কল্যাণপুর থেকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা তুলে নিয়ে গিয়ে কয়েকদিন গুম করে রাখার পর আদালতে সোপর্দ করে। বর্তমানে পল্টন থানায় রিমান্ডের নামে তার ওপর চালানো হচ্ছে ব্যাপক নির্যাতন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা