১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

শাহ আবদুল হান্নান বহুমুখী প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব ছিলেন : ওয়েবিনারে বক্তারা

শাহ আবদুল হান্নান - ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) কর্তৃক আয়োজিত শাহ আবদুল হান্নানের স্মরণ উপলক্ষে তার জীবন ও কর্ম শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) রাতে জুমে এই ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। বিআইআইটি’র মহাপরিচালক ড. এম আবদুল আজিজের সভাপতিত্বে ও ড. ইবরাহিম খলিল আনোয়ারীর পরিচালনায় ওয়েবিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন বিআইআইটি ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু খলদুন আল-মাহমুদ।

ওয়েবিনারে প্রধান আলোচক ছিলেন সাবেক সচিব ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, শাহ আবদুল হান্নান বহুমুখী প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি যা বলতেন তার জীবনে তার প্রতিফলন ছিল, ফলে অন্যরা তার প্রতি আকৃষ্ট হতেন। উনার সততার চেহারা তার অনেক অসাধারণ গুণ।

বিআইআইটি’র মহাপরিচালক ড. এম আবদুল আজিজ বলেন, হান্নান চাচা প্রতিষ্ঠান গড়াকে গুরুত্ব দিতেন, প্রকাশনা ও গবেষণাকে গুরুত্ব দিতেন। তাঁর দিক-নির্দেশনা বিবেচনায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি মনে করতেন, চিন্তার প্রক্রিয়া ভারসাম্যপূর্ণ হলে কাজ-কর্মও ভারসাম্যপূর্ণ হয়। তিনি সকল মহলের কাছে নন্দিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি সবাইকে তুলনামূলক পড়াশোনার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। তিনি সবার মেন্টর, ভিশনারি লিডার। তিনি প্রতিভা ও দক্ষতাকে প্রসফূটিত করতে ভীষণভাবে তাগাদা দিয়েছেন। তিনি হাতে-কলমে অনেক বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করতে শিখিয়ে দিয়েছেন। সমসাময়িক সমস্যার সমাধানে দক্ষ ছিলেন। দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়ার গুণ উনার ছিল। তিনি ছিলেন একজন মহানায়ক, ভবিষ্যত প্রজন্মেও জন্যও একজন নেতা।

অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, শাহ আব্দুল হান্নানে পরের মঙ্গল কামনায় নিবেদিত ছিলেন। তিনি আলোকিত মানুষ ছিলেন, এবং অনেকেই তার সংস্পর্শে এসে আলোকিত হয়েছেন। তিনি মানবতার আলো জ্বালিয়েছিলেন, ইসলামের আলো জ্বালিয়েছিলেন। তিনি সাদা মনের মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন অতিথিপরায়ণ, গুণী ব্যক্তিত্ব, বিনয়ী মানুষ। অন্য ধর্মের মানুষকেও তিনি প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা বিলিয়েছেন। আমার জীবনে এমন মানুষ আর দেখিনি। মানবিক মূল্যবোধ ছিল, অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন। পরের জন্য নিজের সুখ বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক ড. মো. কবির হাসান, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ ওমর ফারুক, অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল-আহসান, ড. মোহাম্মাদ আবদুল বারী, ড. আফরোজা বুলবুল, ড. শারমিন ইসলাম, ড. মো. মাহমুদুল হাসান, ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজাদ তাসফিয়া, মো. সিদ্দিকুর রহমান, মো. সফি উদ্দিন, মুসা খান এবং রফিকুন নবী।

আলোচকরা বলেন, শাহ আব্দুল হান্নানের সততা, কর্মদক্ষতা ও ব্যক্তিগত জীবন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি আলোকবর্তিকা। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা-বিকাশ ও জাতিগঠনে তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। মানবিক এই স্কলার বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যবেক্ষণ দিয়ে সবসময় মানবতার পক্ষে কাজ করে গেছেন। তিনি শিক্ষকদেরও শিক্ষক, স্কলারদেরও প্রশিক্ষক। তিনি সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন, অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন, পরিচ্ছন্ন জীবনের অধিকারী ছিলেন। তিনি একজন বড় মনের পজিটিভ মানুষ ছিলেন, সব সময় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতেন। তার চরিত্র মাধুর্যে সবাই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি সবার সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিশতেন, আলোচনায় অংশ নিতেন এবং সবাইকে পড়াশুনা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য দাওয়াত দিতেন। তিনি কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান নিয়ে ইসলামের উদার ব্যাখ্যা ও সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরেছেন। তিনি নিজেই একটি ইন্সটিটিউট ছিলেন।

তারা আরো বলেন, তিনি ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ। কথা কম বলতেন। একজন দায়ী ইলাল্লাহ হিসেবে যা জানতেন সেটি সবাইকে জানাতে চেষ্টা করতেন। একজন স্কলার কতটা মানবিক হতে পারে তিনি তার উদাহরণ। তিনি ছিলেন জ্ঞানভিত্তিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনের পথপ্রদর্শক। পড়া, দাওয়াহ ও লেখা ছিল তার মিশন। লেখালেখির ব্যাপারে উৎসাহিত করতেন। তিনি ছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন এবং কিংবদন্তীতূল্য এক গণমুখি চরিত্র। তিনি ছিলেন কাজের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ও সমাজের পরিবর্তনের জন্য তিনি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। তার এই আদর্শকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌছে দিতে হবে। তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমেই নতুন প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। তাঁর জীবন-চিন্তা-কর্মকে দল-মতের উর্ধ্বে উঠে বিশ্লেষণ করার মধ্য দিয়েই দেশ, জাতি ও মানুষ প্রকৃতভাবে উপকৃত হবে।

দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন পেশাজীবী, তরুণ চিন্তক, লেখক, গবেষকসহ ও শাহ আব্দুল হান্নানের কয়েক শ’ ভক্ত ও অনুসারী ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। কুরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে মরহুমের ওপর ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করা হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement