তাহলে ব্যাংকে কি মাস্তান-মাফিয়ারা ঢুকবে : কাদেরকে রিজভী
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ১৯ মে ২০২৪, ১৩:৩৫, আপডেট: ১৯ মে ২০২৪, ১৩:৫৫
ব্যাংকে সাংবাদিকরা ঢুকবে কেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কি মাফিয়া, মাস্তান, ঋণ খেললাপিরা ঢুকবে?
আজ রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পঞ্চপল্লীতে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে সহায়তা দেয়ার আগে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের একটি কালী মন্দিরে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থানরত নির্মাণ শ্রমিকদের ওপর হামলা করা হয়। তারা সেখানে একটি স্কুলের টয়লেট নির্মাণের কাজ করছিলেন। সেখানে পিটুনিতে দুই শ্রমিক নিহত হন। তাদের পরিবারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়।
রিজভী বলেন, এক মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দেশ তার দিন অতিক্রম করছে। অতিক্রম হওয়া দিন কোনোটিই সুখকর নয়। এখানে জীবন ও সম্পদের কোনো নিরাপত্তা নেই। জনগণের মনোভাব ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সরকার একের পর এক পন্থা অবলম্বন করছে। মধুখালীতে শ্রমিকদের পিটিয়ে হত্যা, এটি একটি পন্থা। এরা মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে না। এরা মানুষের লাশ ও রক্তপাতের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে ভালোবাসেন। গোটা জাতিকে একটি গোরস্থান বানানোর প্রক্রিয়ায় তারা লিপ্ত থাকে। আজ লাশ হচ্ছে জীবন্ত মানুষ। এর একটি ঘটনা মধুখালীতে। এগুলো পরিকল্পিত নাশকতার এক একটা নাটক, সরকারের পক্ষ থেকে এগুলো তৈরি করা হচ্ছে। সরকার তার বহুমুখী ব্যর্থতা ঢাকতেই একের পর এক এগুলো করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা একটা শূন্য গহ্বরের ভিতর যেন বসবাস করছি। আমাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। কিসের ওপর দাঁড়িয়ে আছি, তা নিজেরাই বলতে পারব না। আমাদের জিডিপি ১২ শতাংশ নাই হয়ে গেছে। ৯২ হাজার কোটি টাকা শুধু ব্যাংক থেকে লোপাট হয়ে গেছে। লোপাটকারি কারা, এরা সবাই ক্ষমতাসীনের আত্মীয়-স্বজন কাছের লোক।
রিজার্ভ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার উধাও করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, এখন তলানিতে রিজার্ভ। সরকার বলছে, ১৩ বিলিয়ন ডলার আছে। অথচ যারা সচেতন মানুষ তারা বলছেন সাত থেকে আট বিলিয়ন ডলার আছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎখাতের ঋণ পরিশোধ করতে চার বিলিয়ন ডলার যাবে। রিজার্ভ তো তলানিতেই।’
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, এক ক্ষুধায় জরাজীর্ণ কৃষ্ণনারীর মুখে লিপিস্টিক দিলে যা হয়, এ সরকারের উন্নয়ন হচ্ছে সেই ধরনের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া রিজভী বলেন, ব্যাংক, সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্ট, রেস্ট্রিক্টেড ক্যান্টনমেন্ট? ক্যান্টনমেন্ট তো বৈধ মানুষ যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক তো জনগণের আমানত রক্ষার প্রতিষ্ঠান। এখানে সাংবাদিকরা তো যেতে পারে। সাংবাদিকতার দেশের বাইরে কানাডা, মালেশিয়া, দুবাইয়ে বাড়ি করেনি। ওবায়দুল সাহেব আপনি এসব কী কথা বলছেন! আপনাদের কাছের লোক যারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন, দেশের বাইরে বাড়ি করেছেন, তাদের কথা সাংবাদিকরা যেন না জানতে পারেন সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
ঘটনা তো নিশ্চয়ই ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় একটি পত্রিকা লিখল বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হ্যাক হয়ে গেছে। ব্যাংক তো একটা স্ট্রেটমেন্ট দিলো, কারণ তারা সরকারের চাকরি করেন। সরকার যা বলবে তাদের তাই শুনতে হবে। কিন্তু মূল ঘটনা কি আড়াল করা যাবে, সাংবাদিকদের ঢুকতে না দিয়ে? কাদের সাহেব কত দিন আপনি মুখ লুকিয়ে রাখবেন। যে নাশকতার কথা একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, সেটি তো দিনকে দিন ফুটে উঠছে। এটার তো দৃষ্টান্ত আছে, কয়েক বছর আগে আট শ’ ১০ মিলিয়ন ডলার হ্যাক হয়েছে, তারপরও বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিপোর্ট দিতে পারেনি। সেজন্য ঢুকতে না দেয়ার মধ্যেই তো রহস্য লুকিয়ে আছে। ওবায়দুল কাদেরের সাহেব আপনি আর কতদিন লুকিয়ে রাখবেন।
ব্যাংকে সাংবাদিক ঢুকবে না, তাহলে কি মাফিয়া, মাস্তান, ঋণ খেললাপিরা ঢুকবে- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে এমন প্রশ্ন ছুড়েন রিজভী।
শিক্ষা, সামাজিকতা সব ধ্বংস করে ফেলছে সরকার- এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দ্রুত বেশি পাস দেখানোর এটি রাজনৈতিক কারণে করছে সরকার প্রধান। ছাত্রছাত্রীদের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এ কাজ করছে না। রাজনৈতিক বেনিফিট নিতে এ কাজ করছেন।
পাড়া মহল্লায় কিশোর অপরাধ বেড়েছে বলেও জানান রিজভী।