১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

জামিন পেলেও এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল - ফাইল ছবি

রাজধানীর পল্টনে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা নয়টি মামলায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন পেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তবে, এখনই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি মিলবে না বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

বুধবার প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানার আরেকটি মামলায় তাকে জামিন দেয়নি হাইকোর্ট। এ মামলায় এর আগে বিচারিক আদালত জামিন না দিলে হাইকোর্টে জামিন চাওয়া হয়।

এছাড়া, বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রুহুল কবির রিজভী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, শাহজাহান ওমর, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ শীর্ষস্থানীয় সব নেতার বিরুদ্ধেই ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় নাশকতার মামলা হয়।

মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন
হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচবার জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর, নাশকতা ও পুলিশ হত্যার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন ও রমনা থানায় মোট ১১টি মামলা হয়। গ্রেফতারের পর থেকে ৭৩ দিন ধরে কারাগারে রয়েছেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি নেতাদের আইনজীবীদের অভিযোগ, ‘১১টি মামলা করলেও গ্রেফতারের সময় মির্জা ফখরুলকে মাত্র একটি মামলা দেখানো হয়। তখন এক আদালত থেকে জামিন পেলে আবার আরেক মামলায় গ্রেফতার দেখাবে। অর্থাৎ এক আদালত থেকে আরেক আদালতে ঘুরতে হবে। আইনি প্রক্রিয়াকে কিভাবে অপব্যবহার করা যায় এটা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সরকার তাকে দীর্ঘমেয়াদী কারাগারে রাখার জন্য এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করছে।’

ওই আইনজীবীরা আরো বলছেন, ‘পরে হাইকোর্টে আবেদন করে বিচারিক আদালতকে সবগুলো মামলার জামিন শুনানি করতে নির্দেশনা নিতে হয়েছে। এভাবে সময় ক্ষেপণের প্রক্রিয়া করছে সরকার।’

বুধবার দুপুরে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পল্টন ও রমনা থানার নয়টি মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলামের জামিন আবেদনের শুনানি হয়।

প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এ শুনানিতে তার আইনজীবী আসাদুজ্জামান নয়টি মামলার এজাহার ধরে বিশ্লেষণ করেন।

তিনি আদালতকে বলেন, ‘এসব মামলায় সুনির্দিষ্টভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। ঘটনা ঘটার স্থান এবং সময় প্রত্যেকটা মামলায় একই ধরনের। মনগড়াভাবে তাকে আসামি করা হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ থাকতে হবে, এজাহারে বলতে হবে কোথায়, কখন, কিভাবে কী করেছে।’

এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এক আসামির জামিন আদেশের রেফারেন্স টেনে তিনি জামিনের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘আইনানুযায়ী বয়স ও অসুস্থ বিবেচনায় তার জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।’

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শুনানি দ্রুত শেষ করতে তাগাদা দেন। তখন আদালত বলেন, ‘শুনানি করতে দেন।’

আদালতের এজলাসে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ভিড় ছিল।

এর আগে, মঙ্গলবার মির্জা ফখরুলকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির করা হলে এই নয়টি মামলায় গ্রেফতার দেখাতে আদেশ দেয় আদালত।

গত ২৯ অক্টোবর তাকে গ্রেফতারের পরদিন পল্টন থানার একটি মামলায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালত এবং হাইকোর্টে তিন দফায় জামিন আবেদন খারিজ হয়।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর যত মামলা
নাশকতা, পুলিশ-হত্যা ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগে রমনা ও পল্টন থানায় ১০টি মামলা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

গত ৩ নভেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়।

১০টি মামলার মধ্যে একটি মামলায় হাইকোর্টে ও আরেকটি মামলায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়েছে।

তার আইনজীবী সগির হোসেন লিওন জানান, ‘হাইকোর্ট বাকি আটটি মামলায় জামিন আবেদন গ্রহণ করে তা নিষ্পত্তি করতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে। সরকার বিচারিক প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করতে একেকজনের বিরুদ্ধে অনেক মামলা থাকলেও গ্রেফতারের সময় আদালতে মাত্র একটি মামলায় হাজির করে। যেন জামিনের আবেদন একটিতে হয়। ফলে বাকি সব মামলায় জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবার রিট করে বিচারিক আদালতকে নির্দেশনা নিতে হয়েছে বেশিরভাগ বিএনপি নেতার মামলায়।’

মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আটটি মামলা
নাশকতা ও পুলিশ হত্যাসহ নানা অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহজাহানপুর, রমনা, পল্টন ও কমলাপুর রেলওয়ে থানায় আটটি মামলা হয়েছে।

এসব মামলায় এরই মধ্যে হাইকোর্টে একটি ওচিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আরেকটি মামলায় জামিনের আবেদন করা হয়েছে।

হাইকোর্টে আগামী সপ্তাহে জামিন আবেদনের শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

বাকি মামলাগুলোতেও একটা পর একটা আবেদন করা হবে।

গত ৩১ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় তাকে। এসব মামলা ছাড়াও দুদকের করা দুর্নীতির মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করেছিল বিএনপি। ওই সমাবেশের পর সংঘর্ষের বিভিন্ন ঘটনায় পরদিনই ২৮টি মামলা হয়।

এসব মামলায় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় বেশিরভাগ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। একেকজনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা, পুলিশ হত্যা, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়া, হাসপাতালে আগুনসহ নানা অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে।

গ্রেফতার হন বিএনপির মহাসচিবসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

পরদিনই সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে বিএনপি। পরে আরো কয়েক দফায় হরতাল ডাকা হয়। ৭ জানুয়ারি ভোটের দিনসহ ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকে বিএনপি।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement