২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ব্যারিস্টার সুমনকে যুবলীগ থেকে অব্যাহতি

- ছবি- সংগৃহীত

আওয়ামী যুবলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে সাময়িক অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের দফতর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ।

সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে যুবলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি একজন ওসির দলীয় স্লোগান দেয়া নিয়ে করা ফেসবুক লাইভের বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি সংগঠন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকতে পারে।

গত বছরের ১৪ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগের ২০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই কমিটিতে আইনবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে জায়গা পান সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

ব্যারিস্টার সুমন হিসেবে পরিচিত এই আইনজীবী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে নিয়মিত লাইভ করে আলোচনায় আসেন। তবে সেই লাইভের কারণেই এবার দলীয় পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

ওসির বিরুদ্ধে কী বলেছিলেন ব্যারিস্টার সুমন?
শরীয়তপুরের পালং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শোক দিবসের কর্মসূচি জয় বাংলা ও দলীয় শ্লোগান দিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সুমন শুক্রবার ফেসবুক লাইভে তীব্র সমালোচনা করেছেন।

লাইভে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘শেখ কামাল সাহেবের জন্মদিনে শরীয়তপুরের পালং থানার ওসি আক্তার হোসেনের আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান দেয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই জিনিসটা দেখার পর আমার কাছে মনে হয়েছে দু-একটা কথা বলা দরকার। আওয়ামী লীগের স্লোগান দেয়ার মানুষ কী এতই কম যে একজন ওসি সাহেবের এই স্লোগান দিতে হবে। আমি খেয়াল করে দেখলাম যে উনি বলছেন আবেগ থেকেই স্লোগান দিয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে, আপনি যখন সরকারি দায়িত্বে থাকবেন কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আবেগ দেখানোর সাথে সাথে কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে পানিশমেন্ট নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু তিনি এখনো ওই জায়গাতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন।’

আইনজীবী সুমন আরো বলেন, ‘আবেগ দেখানো ভালো। কিন্তু আপনি যখন আবেগ দেখাতে গিয়ে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিলেন, তখন সরকারের কিন্তু অনেক ক্ষতি করে দিলেন। অনেক ওসি ও পুলিশ কর্মকর্তারা দলমতের ঊর্ধ্বে দেশের সেবা করে যাচ্ছেন। এই ওসির কর্মকাণ্ডের কারণে তাদের অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?’

সবাইকে সতর্ক করে যুবলীগের সদ্য বহিষ্কৃত নেতা ব্যারিস্টার সুমন শুক্রবারের লাইভে বলেন, ‘আপনারা জানেন যে সামান্য চাকরিজীবী লীগের কারণে সরকার কতো কঠোর। হেলেনা জাহাঙ্গীরকে সরকার আটক করেছে এমন ভুঁইফোঁড় চাকরিজীবী লীগ সংগঠন করায়। এখন এমন অবস্থা হইছে, এধরনের ওসি সাহেবরা দু’দিন পরে বলবেন, একটি পুলিশ লীগ করা যায় কি-না।’

তিনি এ সময় বলেন, ‘সতর্ক হওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় এখন। পঁচাত্তর সালে আমরা সতর্ক হতে পারিনি বলেই বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। আপনি যদি দলকে সত্যি ভালোবাসেন, তাহলে দলের প্রতি এমন কোনো আবেগ দেখাতে পারবেন না, এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যে কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনি যদি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের হয়ে কাজ করবেন, তখন এমন কোনো আবেগ দেখাতে পারবেন না, এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যে কারণে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে বিব্রত করেছেন।’

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপির কাছে অনুরোধ করব, রাষ্ট্র-দল সবগুলাকে একাকার করার জন্য এবং বিশেষত এই সরকারকে কলঙ্কিত করার জন্য, বিব্রত করার জন্য, পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে বিব্রত করার জন্য তার (ওসির) বিরুদ্ধে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যাকশন নিতে হবে।’

অবশ্য বিষয়টি নিয়ে দলীয় নেতাদের প্রশ্নের মুখে পড়ায় এরই মধ্যে ফেসবুক থেকে ওসিকে নিয়ে করা ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আর দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি এ নিয়ে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ব্যারিস্টার সুমনের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। 


আরো সংবাদ



premium cement