ঘোষণার আগেই ফাঁস কমিটি : বাদ পড়ছেন জেল বন্দীরা!
- আবুল বাশার, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম)
- ০৭ জুন ২০২১, ০৮:৫৩, আপডেট: ০৭ জুন ২০২১, ১২:৫৭
আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই কমিটিতে কারা কারা স্থান পাচ্ছেন, তা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। কওমি মাদরাসাভিত্তিক অরাজনৈতিক হলেও সংগঠনটি এখন সারা দেশে আলোচনার বিষয়। ফলে এই কমিটিতে কারা স্থান পাচ্ছেন, সে দিকে সবার নজর ছিল।
আজ সোমবার বেলা ১১টায় রাজধানীর খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদরাসায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন এ কমিটি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। তবে ঘোষণার আগেই ফাঁস হয়ে যায় নতুন এ কমিটির খসড়া তালিকা। এতে দেখা যায়, কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন জেলে বন্দী নেতারা। অবশ্য, ফাঁস হওয়া তালিকা কতটুকু সত্য, সে ব্যাপারে কিছুই বলছেন না সংগঠনটির নেতারা।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ৩৮ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় এ কমিটিতে রাখা হয়েছে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমীর মরহুম আল্লামা শাহ আহম্মদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউছুফসহ নতুন অনেককে।। শোনা যাচ্ছে, পরে এই কমিটির পরিধি আরো বাড়ানো হবে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে হেফাজতের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরাসরি রাজনৈতিক দলের পদে আছেন এমন কাউকে খসড়া কমিটিতে রাখা হয়নি।
কমিটিতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও মহাসচিব রাখা হয়েছে মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে। জিহাদী বিগত বিলুপ্ত কমিটিতেও মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফাঁস হওয়া কমিটির খসড়া তালিকায় নায়েবে আমির রাখা হয়েছে মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মাওলানা মুহিব্বুল হক (সিলেট) ও মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুবকে (বরিশাল)।
যুগ্ম মহাসচিব রাখা হয়েছে মাওলানা সাজিদুর রহমান (বি-বাড়িয়া), মাওলানা আবদুল আউয়াল (নারায়নগঞ্জ) ও মাওলানা আরশাদ রহমানীকে (বসুন্ধরা)। সহকারী মহাসচিব দু'জন। তারা হলেন মাওলানা আবু তাহের নদভী (পটিয়া), মরহুম আমীর শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ মাদানী।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে মাওলানা মীর ইদরিসকে।
রিমান্ড শেষে মামুনুল হক সম্পর্কে যা বলল পুলিশ
সহকারি সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন দু'জন। তারা হলেন মাওলানা মাসউদুল করীম (গাজীপুর), মাওলানা শামসুল ইসলাম জিলানী (কুমিল্লা)। অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আলী মেখল। সহ-অর্থ সম্পাদক দু'জন। তারা হলেন মাওলানা হাবীবুর রহমান কাসেমী (নাজিরহাট), মাওলানা কিফায়াতুল্লাহ আজহারী (উত্তরা, ঢাকা)। প্রচার সম্পাদক
মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী (সাভার), সহ-প্রচার সম্পাদক মাওলানা খোবাইব (জিরি)।
দাওয়াহবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান (উত্তরা, ঢাকা)। সহ-দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ওমর ফারুক। ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া মাদানী (চট্টগ্রাম)।
সদস্য আছেন সাতজন। তারা হলেন, মাওলানা মুবারক উল্লাহ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মাওলানা ফয়জুল্লাহ (মাদানী নগর পীর), মাওলানা মুশতাক আহমদ (খুলনা), মাওলানা রশীদ আহমদ (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা আনাস (ভোলা), মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী।
তবে এ কমিটির খসড়া তালিকায় নাম নেই বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় নেতা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, হাসান জামিল, মুফতি হারুন ইজহারসহ নেতাদের। আরো বাদ পড়ছে আল্লামা শাহ আহমদ শফী হত্যা মামলার অভিযুক্ত নেতাদের নাম।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ নভেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট হেফাজতের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
বিশেষ পরিস্থিতির কথা বলে হেফাজত আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরী চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল হেফাজতের এ কমিটির বিলুপ্তি ঘোষণা করে পাঁচ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ আগমনকে কেন্দ্র করে গত মার্চের ২৫, ২৬ ও ২৭ তারিখ দেশজুড়ে সহিংস ঘটনায় অন্তত ১৭ জনের প্রাণহানি হয়। এসব নাশকতার পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত এক ডজন হেফাজত নেতা গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলে বন্দী রয়েছে।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টের আলোচিত ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত।
এককথায়, সরকারের কঠোরতার কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়ে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম
ও এর নেতারা। বলা হয়ে থাকে, এ পরিস্থিতি কেটে উঠতে শীর্ষ নেতারা সরকারের সাথে সমঝোতার চেষ্টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন।