বিএনপির ৭ সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা থেকে সাতটি সিদ্ধান্ত এসেছে। গতকাল শনিবার বিকেলের এ ভার্চুয়াল বৈঠক থেকে নেয়া ৭ সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে-

১। সভায় বিগত ২৭ মার্চ ২০২১ ও ৩১ মার্চ ২০২১ অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো পঠিত ও অনুমোদিত হয়।

২। সভায় মহান স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনে হেফাজত ইসলাম আহূত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে হামলা ও গুলি বষর্ণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি’র ২৭ ও ২৮ মার্চ আহূত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা ও নির্বিচারে টিয়ারগ্যাস শেল নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণে দলের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আহত ও গ্রেফতার, পরবর্তীকালে প্রায় ২০ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রদান এবং অজ্ঞাতনামা আসামির অজুহাতে সারাদেশে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়।

অন্যদিকে বিএনপি’র কেন্দ্রী কমিটির সদস্য নারী নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরীকে মিথ্যা সাজানো মামলায় গ্রেফতার এবং তিন দিনের রিমান্ড শেষে জামিন না দেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা নিপুণ রায় চৌধুরী, যুবদল ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মজনুসহ সকল নেতা-কর্মীর মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

সভায় তথাককথিত জাতীয় সংসদে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এবং শেখ সেলিমের বক্তব্যের নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভা মনে করে, আওয়ামী নেতৃবৃন্দের এই ধরনের উষ্কানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরো অবনতি ঘটাতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামী লীগ তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে একটি সন্ত্রাসী দল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সভায় এই ধরনের দায়িত্বহীন বক্তব্য প্রদান ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।

৩। সভায় কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও এ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেলসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা ও কর্মীদের এবং অনেক ক্ষেত্রে কারো স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যসহ জনসাধারণ ব্যাপক হারে আক্রান্ত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং তাদের আশু রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয়। ইতিমধ্যে বিএনপি ৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে সরা দেশে নেতা-কর্মীদের রোগ মুক্তির জন্য দোয়া প্রার্থনার ঘোষণা দেয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

৪। বর্তমানে সরকারের চরম উদাসীনতা, অব্যবস্থাপনা, অযোগ্যতা ও করোনা নিয়ে দুর্নীতির কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপাত্তসহ একটি প্রেস কনফারেন্সের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীকে এবং জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই ভয়ংকর মহামারীর মোকাবেলা করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। কার্যকরী ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা সেবা এবং ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং লক ডাউন কালে অসহায় দরীদ্র, নিম্নআয়ের মানুষকে ত্রাণ সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

৫। সভায় পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগেই টিসিবি কর্তৃক দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি এবং গণপরিবহণের ভাড়া শতকরা ৬০ ভাগ বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী আখ্যায়িত করে বলা হয় সরকারের ভ্রান্তনীতি ও ব্যর্থতায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবনে নাভির্শ্বাস উঠেছে। সভায় অবিলম্বে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য হ্রাস এবং গণপরিবহনের ভাড়া কমানোর জন্য সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

৬। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিদেশী মেহমানদের সফরকে কেন্দ্র করে বিটিআরসি কর্তৃক ফেসবুকসহ সব ধরনের ডিজিটাল প্লাটফর্ম নিয়ন্ত্রণে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একদিকে ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টের মাধ্যমে মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করা অন্যদিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণের সংবিধান সম্মত মৌলিক অধিকার হরণ করার জন্য সরকারকে ধিক্কার জানানো হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ, গণতান্ত্রিক সকল অধিকার রক্ষার সংগ্রামকে আরো বেগবান করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

৭। আলোচনা শেষে সভাপতি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা মুলতবি করেন।

বিএনপির দফতরের চলতি দায়িত্বে থাকা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষিরিত এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বৈঠকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য যথাক্রমে ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।