০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনে স্থবিরতা

১৬ জেলাকে কারণ দর্শাও নোটিশ
- ফাইল ছবি

বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের হামলা-মামলা, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল-গ্রুপিং, দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের অসহযোগিতাসহ নানা কারণকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ দিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে যেসব জেলা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি, সেসব জেলার শীর্ষ নেতাদেরকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। মূলত ১৬টি জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের এই নোটিশ দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে ইস্যুকৃত নোটিশ হাতে পেয়ে কয়েকটি জেলার নেতারা ইতোমধ্যে নোটিশের জবাবও দিয়েছেন। কেননা তৃণমূল পুনর্গঠনে বিএনপির হাইকমান্ড খুবই কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে।

দল পুনর্গঠনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা ছিল জেলায় ৩ মাসের জন্য প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা। তারা ইউনিয়ন-থানাসহ সংশ্লিষ্ট জেলার সব পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে অথবা কাউন্সিলে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব ঠিক করবেন। সবশেষে জেলায় কাউন্সিল করে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রেও প্রায় একই প্রক্রিয়া মানা হবে। কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সংগঠন শক্তিশালী হওয়ার বদলে আরো স্থবির হয়েছে। ফলে তিন মাসের পরিবর্তে সাত মাস বা প্রায় বছর পার হতে চললেও একাধিক জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপিসহ কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তারেক রহমানকে সহযোগিতা করছেন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুগ্মমহাসচিব বা ভাইস চেয়ারম্যানরা কমিটি গঠনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নানাভাবে সহায়তা করছেন। কিন্তু তারেক রহমানের এই উদ্যোগ যেমন প্রশংসা পেয়েছে তেমনি নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কমিটি গঠনের দীর্ঘসূত্রতার কারণেই এই প্রতিক্রিয়া। তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রশ্নÑ যেভাবে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পুনর্গঠন কার্যক্রম চলছে তা কবে শেষ হবে কিংবা আদৌ শেষ হবে কি না? খোদ স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কেননা কিছু ক্ষেত্রে কমিটি গঠনের বিষয়টি তারা জানে না।

জানা গেছে, বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে ২৬টির আহ্বায়ক কমিটি এবং ১০টির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারী, হবিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নওগাঁ, যশোর, বগুড়া, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সৈয়দপুর, পাবনা, রাজশাহী, নেত্রকোনা, পঞ্চগড়, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলাসহ কয়েকটি জেলা কমিটির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়া জেলা কমিটির শীর্ষ নেতাদেরকে কেন্দ্রীয় দফতর থেকে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, কেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হলো না তা ব্যাখ্যাসহ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত জবাব দিতে হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলার নেতারা নোটিশের জবাব দিয়েছেন। তারা জবাবে বলেছেন, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে সারা দেশেই বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার হিড়িক পড়ে। ফলে বেশির ভাগ সময় তাদেরকে আদালতের বারান্দায় দৌড়াতে হয়েছে। তা ছাড়া দলীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গিয়েও সময় মেলেনি। কোথাও কোথাও সম্মেলন করতে গেলে সরকারি দলের বাধা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন গ্রুপিংয়ের কারণে কমিটি গঠনে বিলম্ব হয়েছে।

মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব নোটিশের জবাবে বলেছেন, প্রথমে মাদারীপুর জেলার ৪২ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করা হলেও জেলার সব কমিটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন হাওলাদারকে ক্ষমতা অর্পণ করে এবং ১ জন ইতালি প্রবাসীকে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে ৪৩ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। জেলার ৪টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ৪ জনকে জেলা কমিটিতে সদস্য করা হলেও অন্যদেরকে কোনো সদস্য পদ দেয়া হয়নি। তা ছাড়া, মাদারীপুর জেলা বিএনপির ৪৩ সদস্যের মধ্যে অধিকাংশ নিষ্ক্রিয়, প্রবাসী, ঢাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করার কারণে জেলার নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি ক্ষুব্ধ মনোভাব পরিলক্ষিত হয় এবং একপর্যায়ে ব্যাপক অসন্তোষের কারণে দলীয় কার্যক্রম স্থবিরতার সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে জেলার আহ্বায়ক ও প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ককে দায়ী করে বলা হয়- আহ্বায়ক ও ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক কোনো প্রকার রেজুলেশন ছাড়াই অধীনস্থ কারো সাথে আলোচনা না করেই বিভিন্নভাবে ও সুবিধা ভোগীদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে চেষ্টা অব্যাহত রাখে। এমনকি জেলার সদস্য সচিব ও মাদারীপুর-৩ (কালকিনি) আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আনিসুর রহমান খোকন তালুকদারকে বহিষ্কারের চেষ্টা করেন।

নেত্রকোনা জেলা বিএনপি নোটিশের জবাবে বলেছে- জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে হামলা-মামলার কারণে তারা দল পুনর্গঠনে খুব বেশি সময় পায়নি। তা ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় কোন্দল, সম্মেলনের জন্য হল ভাড়া না পাওয়া, দীর্ঘ দিন ধরে কমিটি পুনর্গঠন না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তারা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। এই জেলায় ১৫টি সাংগঠনিক শাখার মধ্যে অর্ধেকের কমিটি হয়েছে। অন্যান্য কয়েকটি জেলার নেতারা জানান, তারা সশরীরে আসতে না পারলেও পত্রবাহক বা ডাকের মাধ্যমে কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব দেবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, যেসব জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি সেসব জেলার নেতাদেরকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেয়া হয়েছে। কেননা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময় বলা হয়েছিল তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুই-তিন মাস এদিক-সেদিক হলে হতে পারে। কিন্তু প্রায় সাত থেকে এগারো মাসেও অধিকাংশ আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। ফলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদেরকে শোকজ নোটিশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলার নেতারা নোটিশের জবাবও দিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল