শিক্ষার্থীদের উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:৫৯
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দায়ীদের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, উস্কানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল পথে নেয়াকে কেউ মেনে নিতে পারে না। যারা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে উচ্চ শিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠান সরকারি অর্থে পরিচালিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উস্কানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপদগামী করে আবার মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা কখনো মেনে নেয়া যায় না। আর তা যদি করতে হয় তাহলে নিজেদের অর্থ নিজেদের জোগান দিতে হবে।’
তিনি আরো বলেন,‘নিজেদের বেতন নিজেরা দেবে এবং নিজেদের খরচ নিজেরাই চালাবে, সরকার সব টাকা বন্ধ করে দেবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। সরকার কেন টাকা খরচ করবে। সেটাও তাদের চিন্তা করতে হবে, তারা কোনটা করবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ অপরাহ্নে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় শ্রমিক লীগের ১৩ তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্ধোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শ্রম এবং কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এবং আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা’র (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর তুয়োমো পটিয়াইনেন, আন্তর্জাতিক টেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন এশিয়া প্যাসিফিক’র (আইটিইউসি-এপি) সাধারণ সম্পাদক শোভা ইওশিদা এবং দক্ষিণ এশিয় আঞ্চলিক ট্রেড ইউনিয়ন কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক লক্ষন বাহাদুর বাসনেত ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন। দলের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
তাঁর সরকারের লক্ষ্য দেশের মানুষের কল্যাণ এবং উন্নয়ন করা, যে লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে স্বল্প ব্যয়ে উচ্চশিক্ষার যে সুযোগ সরকার দিচ্ছে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সরকার প্রধান বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শায়ত্ত্বশাসন আছে একথা সত্যি। কিন্তু টাকাটা তো সরকার দিচ্ছে। সরকারের দেয়া টাকা ইউজিসিতে (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন) যায়, সেখান থেকে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয় এবং সমস্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, যা কিছু তারা পাচ্ছেন তা দেওয়া হয়।
বিশ্বের আর কোথাও বাংলাদেশের মত এত স্বল্প খরচে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর মাসে শিক্ষা ব্যয় দেড়শ’টাকার বেশি হয় না। যদি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যান তবে, দেখবেন কত লাখ টাকা লাগে প্রতি সেমিস্টারে। প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয় এক একজন শিক্ষার্থীর পেছনে। প্রকৌশল বা কারিগরি শিক্ষায় আরো বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। কাজেই সেখানে শৃঙ্খলা থাকতে হবে।
আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় শিক্ষা ব্যয়ের জোগান সরকারকেই দিতে হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘ সেখানে ডিসিপ্লিন থাকবে,শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত শিক্ষা পাবে এবং নিজেদের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে সেটাই আমরা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কী আমরা তা বুঝি না। যারা পড়াশোনা নষ্ট করে সেখানে ধর্মঘট করে দিনের পর দিন কর্মঘন্টা নষ্ট করবেন। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা ব্যহত করবেন, তারাই সব বুঝবেন। আর আমরা বুঝবো না, এটাতো হয় না।’
সরকার প্রধান বলেন,‘অর্থ সরকার দেবে। সবরকম উন্নয়ন প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করবে। আর সেখানে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না, এটাও হতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কথায় বলে স্বাধীনতা ভাল কিন্তু তাহা বালকের জন্য নহে। এটাও মাথায় রাখতে হবে।’
দাবি মেনে নেওয়ার পরেও ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া এবং শিক্ষার সময় যেন নষ্ট না হয়। উপযুক্ত সময়ে তাঁরা ভাল রেজাল্ট করবে এবং তাঁরা জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে, সেটাই আমরা চাই।’
তিনি বলেন,‘ দেশের আইনে আছে কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে এবং সেটা যদি প্রমাণিত না হয় অভিযোগকারির ঐ আইনে বিচার হয়,সাজা হয়। কাজেই যারা কথা বলছেন তারা আইনগুলো ভালভাবে দেখে নেবেন।’
তিনি বলেন,‘আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলাম এবং পড়াশোনা করেই এতদূর এসেছি। এটাও ভুলে গেলে চলবে না।’
‘যে বাংলাদেশে ’৭৫ এর পরে প্রতি রাতে ক্যু হতো। যেখানে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চলতো সেই বাংলাদেশ বিগত প্রায় এক দশকে অনেক দূর এগিয়েছে’.-এমন অভিমত ব্যক্ত করে করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন,‘আজকে যারা বড় বড় কথা বলেন তাদের কোনদিন ঐ সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনিনি বরং তাদের পদলেহন করতেই দেখেছি, এটা হলো বাস্তবতা।’
‘আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ ভাগে আমরা উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি ’উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘মাথাপিছু আয় এক হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি এবং শতভাগ শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শিখছে।’ সূত্র : বাসস।