জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরানো হবে : ফখরুল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:৫৮, আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৩৫
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগনের প্লাটফর্ম হচ্ছে বিএনপি। সেই জনগনকে সাথে নিয়েই জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে বর্তমানে চেপে বসা ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো হবে। রোববার বিকেলে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সরকার কোনো বিদেশী বন্ধু পাচ্ছে না। তারা কূটনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তিনি বলেন, সরকারের হাটুতে জোর নেই। নতজানু পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে তারা গোলামী করছে। তারা আজকে বাংলাদেশের অধিকারগুলো, বাংলাদেশের স্বার্থ তারা জলাঞ্জলি দিচ্ছে। আমি জানি, আমার এই কথাগুলো তাদের একদম ভালো লাগবে না। ইতিমধ্যে তারা বলতে শুরু করেছে বিএনপি নাকী রোহিঙ্গাদের যেতে বাঁধা দিচ্ছে। যেটা হয় আর কী নিজের ব্যর্থতা অন্যের ওপর চাপাতে চায়।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, তিনি এখন হাটতে পারেন না, তার ব্লাড প্রেসার সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এই অবস্থাও তিনি মাথানত করেননি। তিনি বার বার একই কথা বলছেন যে, এই অন্যায়ের বিচার হবে, অন্যায়কারীরা টিকবে না। আসুন, আজকে আমরা আমাদের মধ্যে ছোট-খাটো ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ভুলে গিয়ে আমরা নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করি। জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
বর্তমান নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দল সম্পূর্ণভাবে সংগঠিত হবে এবং জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে অবশ্যই এই দাণব, এই ফ্যাসিস্ট সরকার যারা আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে তাদেরকে সরিয়ে জনগনের পার্লামেন্ট, জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে আজ ক্রান্তিকাল। বাংলাদেশ গণতন্ত্র নেই, আইননের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীন নেই। কোনো সমস্যার এই সরকার কোনো সমাধান করতে পারছে না। সেই প্রেক্ষাপটে আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছি। আজকে আমাদের ওয়াদাবদ্ধ হতে হবে যে, দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার অংশ হিসেবে প্রথমে আমাদের গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের শ্লোগান হোক, স্বৈরাচার হটাও, দেশ বাঁচাও।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, আগে জানতাম পুলিশের নির্যাতন-নিপীড়ন, সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন। এখন শুরু হয়েছে বিচারিক নির্যাতন। বিচারালয়ে গিয়ে আমরা বিচার পাই না, আমরা সুবিচার পাই না। কেনো? আমরা বিরোধী দল করি সেজন্যে।
সরকারের হস্তক্ষেপে বিচার বিভাগে খালেদা জিয়া সুবিচার পাচ্ছে না উল্লেখ করে তার মুক্তি রাজপথে আন্দোলনেই আনতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, আমরা আগে বলেছি- হলের ভেতরে শ্লোগান দিয়ে, পোস্টার-ব্যানার লাগিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। জাতীয় বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে রাজপথে নামতে হবে, তাকে(খালেদা জিয়া) কারাগার থেকে মুক্ত করতে হবে। এই লড়াই জনগনের অধিকারের লড়াই, গণতন্ত্রের লড়াই, পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের লড়াই, এই লড়াইয়ে আমাদেরকে জিততে হবে।
বিএনপির প্রতি অনুরোধ রেখে তিনি বলেন, দলের ঐক্য বজায় রেখে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। এককভাবে কোনো দল আন্দোলন করে স্বৈরাচারকে পতন করাতে পারবে না। বিড়াল মারার জন্য লাঠি লাগে, সাপ মারার জন্য লাঠি লাগে, শিয়াল ও বাঘ মারার জন্য অস্ত্র লাগে। স্বৈরাচারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হলে সেই অস্ত্র হলো জনগনের ঐক্য, এছাড়া কোনো বিকল্প নাই।
খালেদা জিয়ার সাহসের প্রশংসা করে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আমি বলব, জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাহস আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি মনে করি উনি সারাদেশের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা। মনোবল দিয়ে কী করতে হয়, শারীরিক সব কিছু অতিক্রম করে মনোবল দিয়ে উনি কিভাবে এখনো লড়াই করছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমি উনাকে স্যালুট জানাই।
রেজা কিবরিয়া বলেন, উনার নিঃশর্ত মুক্তি বিএনপির দাবি, ঐক্যফ্রন্টেরও দাবি। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যেটা আমি নিজে দেখেছি- এটা বাংলাদেশের জনগনের দাবি।
জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া বলেন, আমার বাবা-মা শিখিয়েছেন, আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধে যারা বড় একটা ভুমিকা পালন করেছেন তাদেরকে সন্মান করা দরকার।
একজন বীরোত্তমকে সন্মান না করে আমি বুঝতে পারছি না যে এই দেশটা কিভাবে চলবে? শহীদ জেনারেল জিয়াউর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং উনি প্রথম সারির মুক্তিযোদ্ধা।
প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, অঙ্গসংগঠনের হাবিব উন নবী খান সোহেল, আহসানউল্লাহ হাসান, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া ২০ দলীয় জোটের খেলাফত মজলিশের মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এম এ রকীব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নুর হোসেইন কাসেমী, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খোন্দকার লুফর রহমান, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন নিজ নিজ দলের পক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিলকিস জাহান শিরিন, শিরিন সুলতানা, আশরাফউদ্দিন নিজান, মোরতাজুল করীম বাদরুসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।