২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তিস্তা চুক্তি নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার দরকার নেই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার কিছুতেই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চাচ্ছে না। অন্য দিকে তিস্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতের সাথে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। ‘আমরা ইতোমধ্যেই নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছি। আশা করি একে একে সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। এর আগেও কঠিন কঠিন সমস্যার সমাধান করেছি। তবে তিনি পানি দেননি। আমরা চাইলাম পানি, আর দিলেন বিদ্যুৎ। ভালোই হলো। নদী নিয়ে আমরা ডেল্টা প্ল্যান করেছি। তা বাস্তবায়ন করা গেলে পানির জন্য আর কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না বাংলাদেশকে।’

গতকাল রোববার বিকলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ডে ১১ দিনের সফর সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ভারত থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরো নেবো। সাবস্টেশন হচ্ছে, দেশের ৯৯ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, বাকি আছে যেটুকু ২০২১ সালের মধ্যে সেটাও হয়ে যাবে। তখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ যাবে। ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারব।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার (তারেক) নাম নিতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। আমাদের অনেকেরই আবার দরদ উথলে ওঠে। তারা কিভাবে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা ভুলে যায়? কিভাবে এতগুলো মানুষকে হত্যা করল। মানুষ হত্যাকারী, এতিমের টাকা আত্মসাৎকারীদের জন্য এত দরদ হয় কেন? তাহলে ন্যায়বিচার হবে কী করে। তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা যুক্তরাজ্যের সাথে কথা বলে যাচ্ছি। তাকে শাস্তি পেতেই হবে। কথা দিচ্ছি তার শাস্তি কার্যকর করা হবে।’

পাসপোর্ট ছাড়া পাইলটের কাতার গমনের বিষয় সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে যখনই বিমানে উঠি, তখনই ঘটনা ঘটে বা নিউজ হয়। পাইলট হয়তো পাসপোর্ট ভুলে রেখে যেতে পারে, ভুল হতে পারে। এখানে ইমিগ্রেশনে যারা ছিল, তাদের তো চেক করতে হবে। তারা কী করেছে তা খতিয়ে দেখতে বলেছি। তবে আরেকটি কথা বলব, ইমিগ্রেশন এখন পাওয়ারফুল। এখন তো সবাই ভিআইপি, ভিভিআইপি, আরো ভি লাগবে। কিন্তু কাউকে ছাড়া হবে না। প্রতিটি পাসপোর্ট সিল মারা আছে কি না চেক করা হবে। ভিভিআইপি লাগেজও সবকিছু চেক করা হবে।

তিনি বলেন, এত দিন এত পরিশ্রম করে প্লেন কিনে এ অবস্থায় এসেছে। আরো নতুন রুটে যাবো ঠিক তখনই একেকটি ঘটনা ঘটে। এটার কারণ আমার যেটা মনে হয়, আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা বিমানকে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেছে। কিছুই তো ছিল না। জঘন্য অবস্থা ছিল। হোম মিনিস্টার নামই ছিল ‘ক্যাসিও বাবর’। ব্রিটিশ এবং অস্ট্রেলিয়া নিষেধাজ্ঞা দিলো। আমরা সেগুলো ঠিক করেছি। দীর্ঘদিন ধরে যারা বিমান নিয়ে খেলছে তাদের আঁতে ঘা লাগতে পারে। আবার কেউ কেউ বিমানে অবৈধভাবে সিটের ব্যবসা করে, আমরা সেটা বন্ধ করেছি। তাদেরও আঁতে ঘা লাগতে পারে। এটা আপনাদেরও খতিয়ে দেখা উচিত কেন হচ্ছে।’

মিয়ানমার কিছুতেই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আলাদাভাবে যখন ভারত, চীন, জাপানের সাথে কথা বলি তখন প্রত্যেকেই মেনে নেয় যে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, তাই তাদেরই ফিরিয়ে নেয়া উচিত। আমরাও কাজ করে যাচ্ছি। মিয়ানমারের সাথে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে মিয়ানমার কিছুতেই ফেরত নিতে চায় না, এটাই সমস্যা।’

তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ফিরে যাক তা এখানকার সংস্থাগুলোও মনে হয় চাচ্ছে না। যারা এখানে স্বেচ্ছাশ্রম দেয় বা কাজ করে, এরা কোনো দিনই চায় না রিফিউজি তাদের দেশে ফিরে যাক। কারণ ওরা ফিরে গেলে তাদের রেশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কারো কারো চাকরিও চলে যেতে পারে। আমরা চুক্তি করলাম, তালিকা করলাম। তখনই রোহিঙ্গারা আন্দোলন শুরু করল যাবে না। কারা এই আন্দোলন উসকে দিলো?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা সব সময় ভয় পায়, ফিরে গেলে তাদের ওপর আবার অত্যাচার হবে। যে কারণে কিন্তু সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সেখানে গিয়ে ঘুরে দেখেছিলেন। কিন্তু সংস্থাগুলো এখনো চায় না, রোহিঙ্গারা ফিরে যাক।’

আগামী মাসে চীন সফর করবেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘চীন সফরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু সময়ের অভাবে পারিনি। জুলাই মাসে চীন সফরে যেতে পারি। আশা করি তখন রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে সবাই চায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাক। কিন্তু মিয়ানমারের সাড়াটা পাই না। তারাই আগ্রহী না।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বিজিবি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী আছে। সবসময় টহলসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

ওআইসি সম্মেলনে দেয়া বক্তব্য সম্পর্কে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সম্মেলনে এশিয়ার পক্ষ থেকে আমি বক্তব্য দিয়েছি। এতে জঙ্গিবাদ ও রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি। ভালোভাবে তুলে ধরি এসব বিষয়। মুসলিম দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার বিষয়েও কথা হয়। আমি বলেছি, ওআইসি সদস্যদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব থাকলে তা কেন আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হচ্ছে না। আজকে মুসলমানই মুসলমানকে হত্যা করছে। মুসলিম দেশের মধ্যে খুনোখুনি হচ্ছে। মুসলিম দেশ রণক্ষেত্র হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে অস্ত্র ব্যবসায়ী ও অস্ত্র সরবরাহকারীরা।’

আল্লাহ কাউকে শেষ বিচারের দায়িত্ব দেননি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কে সঠিক আর কে সঠিক নয়, কে ভালো মুসলমান আর কে ভালো মুসলমান নয় সেই বিচারের মালিক আল্লাহ। সেই দায়িত্ব তিনি কাউকে দেননি। তাহলে কেন একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমকে হত্যা করে সেই বিচারের দায়িত্ব নেবে?’

এখন ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাস ও উগ্রবাদে জড়াচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক সময় মনে করা হতো কওমি মাদরাসার ছাত্ররা সন্ত্রাস করে। কিন্তু বর্তমানে দেখছি ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরাই সন্ত্রাস ও উগ্রবাদে জড়াচ্ছে। যাদের শিক্ষার জন্য বাবা মা তাদের সব সম্পদ ব্যয় করছে। কার তরিকা ভালো আর কার তরিকা ভালোনা তা বিচারের জন্য আল্লাহ কাউকে দায়িত্ব দেননি। এটা মনে রাখতে হবে।’

যারা ফিনল্যান্ড বা বিশ্বের অন্য দেশের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করে তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের বিশাল এলাকা। অত্যন্ত রিসোর্সফুল জায়গা। আমাদের জায়গা তো অনেক কম। অনেকে তুলনা করেন। কিন্তু যারাই করুক, তাদের মাথায় রাখা উচিত, বাংলাদেশের মতো এই ভূখণ্ড দিয়ে ১৬ কোটি মানুষকে বসিয়ে দেই? কতটুকু সুস্বাস্থ্য আর কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারবে তারা?’

সংবাদ সম্মেলনে ঈদ শুভেচ্ছা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তিন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। প্রথমে জাপান সফরের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপান সফরে কিছু চুক্তি সই করেছি। কয়েকটি প্রকল্পে তারা বিনিয়োগ করছে। ২৫০ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি সই হয়েছে।’ ঢাকার হোলে আর্টিজানে নিহত জাপানিদের স্বজনদের সাথে দেখা করে তাদের সমবেদনা জানানোর বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

নিক্কেই সম্মেলনে কি-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তৃতার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে বক্তৃতায় এশিয়ার দরিদ্র ও গরিব দেশগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করি।’
জাপান সফর শেষে সৌদি সফরের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান থেকে সৌদি আরব যাই। যাওয়ার সময় পাইলট যখন জানালেন, আমরা চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে যাচ্ছি, তখন মনে হলো, কোথায় যাচ্ছি? নিজের দেশে নেমেই যাই, পরের দিন যাই (সৌদি আরবে)।’

তিনি এসময় বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটাকে আন্তর্জাতিক রুটের সাথে সংযুক্ত করার কাজ চলছে। এখানে জ্বালানি নেবে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটগুলো। শুধু জ্বালানিই নেবে না, সুযোগ পেলে ঘুরবেও। যদি আমরা সেভাবে সি-বিচটাকে দেখাতে পারি। কিছু কিছু এলাকা বিদেশী পর্যটকদের জন্য ডেডিকেটেড (তাদের উপযোগী) করে দেবো। এটা করতে পারলে আমরা পর্যটনে আরো এগিয়ে যাবো।’ তিনি সৌদি আরবে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দেয়ার পর মক্কায় ওমরাহ পালন এবং মদিনায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর রওজা জিয়ারতের কথা তুলে ধরেন।

সৌদির পর ফিনল্যান্ড সফরের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা হয়েছে। এটি শান্তিপূর্ণ দেশ। আইসিটিতে তারা খুবই এক্সপার্ট। এ খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ মে জাপান দিয়ে ত্রিদেশীয় এই সফর শুরু করেন শেখ হাসিনা। পরে সেখান থেকে সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড যান তিনি। সফরে তৃতীয় ও শেষ দেশ ফিনল্যান্ড থেকে শনিবার সকালে দেশে পৌঁছান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement
ববিতে ‘সোচ্চার স্টুডেন্টস নেটওয়ার্ক’ এর যাত্রা শুরু মতামত গ্রহণে ওয়েবসাইট চালু করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন কপ-২৯ সম্মেলনে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও এলডিসি’র ‘ওয়াকআউট’ আলোচনায় 'না' ভোট এবং 'ভোট রিকল' হাসানের জোড়া উইকেটের পরও ৩০০ পার করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের বিতর্কিত করে অভ্যুত্থান ব্যর্থ প্রমাণের অপচেষ্টা চলছে : উপদেষ্টা নাহিদ ফরিদপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম তালুকদার গ্রেফতার ঢাকাবাসীকে যেকোনো উপায়ে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে : ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের ইস্যু তুলেও ঝাড়খণ্ডে জিততে পারেনি বিজেপি

সকল