জানাজা শেষে হঠাৎ অসুস্থ শায়রুল কবির খান
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২১ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৫৭, আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯, ২১:৪৬
বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম ব্যারিস্টার আমিনুল হকের নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করতে আসেন তিনি।
নামাজে জানাজা শেষে তিনি হঠাৎ করেই অসুস্থ বোধ করেন এবং মাটিতে পড়ে যান। পরে তাকে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিক ভাবে নয়া পল্টনে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন। সেখানে তাকে দেখতে ও চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে যান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে শায়রুলের চিকিৎসা চলছে। আশা করছি তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন শায়রুল কবির খান। তিনি এখনো আশংকামুক্ত নন বলে জানান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা মুহাম্মদ এরশাদ খান।
আরো পড়ুন : অবৈধ সংসদে গিয়ে বৈধতা দেব না, এটাই বিএনপির সিদ্ধান্ত : গয়েশ্বর
নয়া দিগন্ত অনলাইন ২১ এপ্রিল ২০১৯
এই সরকার অবৈধ, এই অবৈধ সরকারের অধীনে আমাদের ছয়জন সংসদ সদস্য কীভাবে যে নির্বাচিত হয়েছে আমরা জানি না। যেহেতু এদেশে ভোট হয় নাই। আমরা বলতে চাই, এই অবৈধ সংসদে গিয়ে বৈধ্যতা দেব না-এটাই হলো বিএনপির সিদ্ধান্ত। রোববার এক মানবন্ধনে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এই মন্তব্য করেছেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী দলীয় নেতাদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শের কর্মী যারাই মনে করে- তারা জয়লাভ করছে, আমি বিশ্বাস করি তারা এই সংসদে যাওয়া তো দূরের কথা তার আশপাশ দিয়েও হাঁটবে না। তার আশপাশ দিয়ে হাঁটলে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ তাদের ক্ষমা করার সুযোগ পাবে না, দলীয় নেতাকর্মীদের কথা বাদই দিলাম।’
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘সেই কারণেই বলছি, নেত্রী জেলে থাকবেন এবং আমরা সংসদে গিয়ে মজা নেব আর শেখ হাসিনাকে সন্তুষ্ট করব- এমন ব্যক্তি বিএনপিতে আছে কি না আমার জানা নাই।’
‘যদি থাকে যথাসময়ে যথাযথ উত্তর তাদের জন্য অপেক্ষা করছে, ঘরে-বাইরে-রাস্তায় সব জায়গায়।’
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ছয়টি আসনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থীরা। তারা হলেন- বগুড়া-৬ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ থেকে উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ থেকে হারুনুর রশীদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ থেকে আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ থেকে জাহিদুর রহমান এবং বগুড়া-৪ আসন থেকে মোশাররফ হোসেন।
আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নিলে ওই আসনগুলোতে পুনরায় নির্বাচন হবে। খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার বিনিময়ে তারা শপথ নিতে পারেন বলে একটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
ওই খবর ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তারপরেও প্রায় প্রতিদিনই এ বিষয়ে কথা বলছেন বিএনপি নেতারা।
মানববন্ধনে বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করে আগের দিন ভোট বাক্স ভর্তি করে জোর করে সেদিন আওয়ামী লীগের নির্বাচনে তাদের রায় ঘোষণা করেছেন।’
‘এই সরকার অবৈধ, এই অবৈধ সরকারের অধীনে আমাদের ছয়জন সংসদ সদস্য কীভাবে যে নির্বাচিত হয়েছে আমরা জানি না। যেহেতু এদেশে ভোট হয় নাই। আমরা বলতে চাই, এই অবৈধ সংসদে গিয়ে বৈধ্যতা দেব না-এটাই হলো বিএনপির সিদ্ধান্ত।’
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি অভিযোগ করে গয়েশ্বর বলেন, ‘আজকে সংসদ সংসদ বলা হচ্ছে, কিসের সংসদ? যেখানে জনগণ ভোট দিতে পারে নাই, যেখানে ২৯ ডিসেম্বর বিকাল থেকে ফজরের আজান পর্যন্ত সব শেষ, ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা অপেক্ষা করে নাই। ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে নির্বাচন হয়েছে, ৩০ তারিখের নির্বাচন তো বাকি রয়েছে। এই নির্বাচনটা কবে হবে সেটা জনগণ দেখবে।’
নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, এখনও বলছি, ৩০০ আসনে কেউ জয়লাভ করে নাই, কেউ পরাজিত হয় নাই। বিএনপি ৩০০ আসনে পরাজিত হয় নাই। জনগণ যেখানে ভোট দেয় নাই সেখানে জয়-পরাজয়ের হিসাব কে করবে?’
‘জনগণ নির্ধারণ করে জয়-পরাজয়। আমরা পরাজিত নই। যারা আছে তারা রাতের অন্ধকারে এই নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তা-ব্যক্তিরা মনের মতো করে সারা রাত জনগণের ভোট চুরি করেছে। সুতরাং এই চুরিকৃত ভোটের ফলাফল জনগণ কখনও মানতে পারে না।’
সরকারের কঠোর সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, ‘চোখ ধাঁধানো বড় বড় প্রজেক্ট সামনে রেখে যারা টাকা লুটপাট ও বিদেশে পাচার করে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেখবেন বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন জায়গায় আছে। আজকে দেশে একটা নীরব অভাব চলছে। সেই অভাব চলছে মধ্যবিত্ত পরিবার এবং ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে। আজকে ব্যাংকে গেলে টাকা পাওয়া যায় না, ব্যাংকে টাকা নাই, তার কোনো হিসাবও নাই।’
‘সেই কারণে আজকে এই দেউলিয়া অর্থনীতি দিয়ে বেশি পথ চলার সুযোগ তাদের নাই। আর গণতন্ত্রের পথ পরিহার করে কেউ কোনো দিন রেহাই পেয়েছে তার ইতিহাস আমাদের জানা নাই। এই অন্যায়-অপকর্মের মিছিল দিন দিন বাড়ছে, অবশ্যই এর প্রতিরোধ ও প্রতিকার অবশ্যই হবে।’
নেতাকর্মীদের খালেদা জিয়ার মতো ‘আপসহীন’ মনোভাব নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘কোনো প্যারোল নয়, মধ্যরাতের কোনো আপসরফার মাধ্যমে দেশনেত্রী মুক্ত হতে পারেন না। আপস বলে কোনো শব্দ উনি শেখেন নাই, শহীদ রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মহানায়ক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনগণের নেত্রী, উনি কখনও আপস করতে পারেন না।’
‘আমাদের নেত্রী, গণতন্ত্রের মাতা আন্দোলন ও আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মুক্ত হয়ে আসবেন। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মতো ইনশাল্লাহ অচিরেই নেত্রী মুক্ত হয়ে আসবেন এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বানের পানির মতো ভেসে যাবে এই সরকার ও অগণতান্ত্রিক সমস্ত বিধি ব্যবস্থা- আমরা সেই প্রত্যাশা কামনা করছি।’
মানববন্ধনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেননি।
জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে আয়োজিত এই মানবন্ধনে রফিকুল ইসলাম মাহতাবের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম মিয়ার পরিচালনায় মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিম চৌধুরী, জাকির হোসেন খান, ফারুক পাটোয়ারী, এনডিপির সভাপতি আবু তাহের প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।