ইস্পাত-কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সাথে নিয়ে চক্রান্ত ব্যর্থ করার আহ্বান খালেদা জিয়ার
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:২২
‘ইস্পাত-কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে’ আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির বর্ধিত সভায় যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে বেলা ১১টা ৫ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়ার মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করছেন তারেক রহমান। সমাপনী পর্বে বক্তব্য রাখবেন তিনি।
খালেদা জিয়া বলেন, আজ দীর্ঘ ছয় বছর পর আপনারা আবার একসাথে ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে একত্রিত হতে পেরেছেন। সে জন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন এবং সম্প্রতি জুলাই-আগস্টের ফ্যাসিবাদী শাসকদের নির্মম, ভয়াবহ দমননীতির কারণে গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যারা আহত হয়েছেন, তাদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা।
‘চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও আমি সবসময় আপনাদের পাশেই আছি।’
খালেদা জিয়া বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য, আমার মুক্তির জন্য আপনারা যে নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন এবং আমাদের অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং প্রায় সোয়া লাখ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়ে এখনো আদালতের বারান্দায় ন্যায়বিচারের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন- আপনাদের এ ত্যাগ শুধু দল নয়, জাতি চিরকাল স্মরণে রাখবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশ আজ এক সঙ্কটময় সময় অতিক্রম করছে। আপনাদের এবং ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শাসকেরা বিদায় নিয়েছে। একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র মেরামতের নূন্যতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা।
তিনি বলেন, আমার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে নিরন্তর কাজ করে দলকে সুসংহত করেছেন। আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি আপনারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে আরো উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে আমাদের এতদিনকার সংগ্রাম, আত্মত্যাগ বিফলে যায়। আমাদের সবসময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি মনে রাখা দরকার- ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ আজ এক ইতিবাচক গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের কাজ করতে হবে।’
‘এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসররা ও বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ইস্পাত-কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সাথে নিয়ে এ চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সকলকে এক যোগে কাজ করতে হবে। আসুন, আমরা আগামী দিনগুলোতে শহীদ জিয়ার স্বপ্নের আধুনিক, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করি এবং এত ত্যাগের বিনিময়ে প্রাপ্ত এ অর্জনকে সুসংহত এবং ঐক্যকে আরো বেগবান করি।
তিনি আরো বলেন, আমি যুক্তরাজ্য থেকে অসুস্থ অবস্থায় আপনাদের আহ্বান জানাতে চাই যে আসুন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে পূর্বের ন্যায় আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদানে আরো ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহতভাবে গড়ে তুলি।
বেগম জিয়া বলেন, আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে আহ্বান রাখতে চাই যে আসুন, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ নয়, পারস্পারিক ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে আমরা সবাই মিলে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি বাসযোগ্য, উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করি।