পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সাথে ভারত সরাসরি জড়িত : ডা: তাহের
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৫৩

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সাথে ভারত সরাসরি জড়িত মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে। ভারত আওয়ামী লীগকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা রাখার স্বপ্ন দেখিয়ে আওয়ামী সরকারের মদদে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ড পরিচালিত করেছে ভারতীয় আজ্ঞাবহ বিডিআর জওয়ানরা। কিন্তু তাদের কোনো বিচার না করে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের আটক করে বিচারের নামে অবিচার করে দণ্ড দিয়েছে, চাকুরীচ্যুত করেছে।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলরুমে ২০০৯ সালে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনা-কর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপিসহ সব দলকে পাঁচ বিষয়ে ঐক্যমত্য হয়ে জাতির সামনে শপথ করার আহ্বান জানিয়ে ডা: সৈয়দ আবদুল্ল্যাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নো কম্প্রোমাইজ (কোনো আপস নয়), দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, জাতীয় স্বার্থে এক ও অভিন্ন, দেশের উন্নয়নে জন্য দলের চেয়ে দেশ বড় নীতি অবলম্বন এই পাঁচ বিষয়ে ঐক্যমত্য হয়ে জাতির সামনে শপথ গ্রহণ করতে না পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেয়ারও আহ্বান জানান।’
তিনি বলেন,‘ভিন্ন মত ও দল থাকবে, থাকতে পারে। কিন্তু দেশ ও জাতির স্বার্থে এই পাঁচ বিষয়ে ঐক্যমত হতে পারলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ হবে একটি শক্তিশালী জাতি ও রাষ্ট্র।’
তিনি আরো বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিনিধিদল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিসে নেতাদের সাথে আলোচনা করতে আসেন। সে সময় তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, ১৯৬৭ সালে স্বাধীন হয়ে এতো অল্প সময়ে কিভাবে সিঙ্গাপুর এতো সমৃদ্ধ হলো?-প্রতিনিধিদলের একজন এ মুহূর্তে জবাব দিলেন, আমরা একজন সৎ যোগ্য ও দেশপ্রেমিক আদর্শিক নেতা পেয়েছি। যিনি আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন।’ ডা: তাহের বলেন, ‘পক্ষান্তরে বাংলাদেশের জনগণ দেশ স্বাধীনের পর একজন চোর, দুর্নীতিবাজ নেতা পেয়েছে। সেজন্যই আমাদেরকে আজও সংগ্রাম করতে হয়। ১৯৪৭ সালে আমরা প্রথম স্বাধীন হয়েছি তারপর ১৯৭১ সালে। কিন্তু জনগণ পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পায়নি বলেই ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই তথা ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আর কোনো সংগ্রাম, সঙ্ঘাত নয় উল্লেখ করে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আহ্বান জানান।’
প্রথমবারের মতো জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে আড়াল করতে নানা রকম ষড়যন্ত্রের আয়োজন করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ছিল একটি কালো অধ্যায়। স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়েও অধিক সেনা-কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। এমনকি বাছাই করে করে উচ্চপদস্থ সেনা-কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে। সেনা-কর্মকর্তাদের হত্যা করা হচ্ছে সেনানিবাসে সংবাদ দিলেও সেনাপ্রধান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং তারা তখন পিকনিক করে বিরিয়ানি খাচ্ছে। বিরিয়ানি খেয়ে জাহাঙ্গীর আলম নানক আর মির্জা আজমকে পাঠানো হয়েছে পিলখানায় সেনা-কর্মকর্তাদের উদ্ধার করতে! এর দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় সরকারের সরাসরি মদদে পিলখানা হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।’
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত কমিশন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে তদন্ত করতে হবে এবং সঠিক বিচারের মাধ্যমে জড়িতদের ফাঁসি দিতে হবে। এ সময় তিনি পিলখানা হত্যাকাণ্ডসহ প্রতিটি হত্যার বিচারের দাবি জানান।’
সভায় কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির বলেন, ‘সে দিন পিলখানার দরবার হলে শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেদিন সেখানে কেন যাননি?- কারণ পিলখানা হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত তাই তিনি সেখানে যাননি। হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা বিডিআর সদস্যদের চায়ের দাওয়াত দিয়ে সেনা-সদস্যদের রক্তের সাথে শুধু বেঈমানি নয় ঠাড্ডা করা হয়েছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের আটক না করে হাসিনার নির্দেশে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের আটক করা হয়েছে। চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি চাকুরীচ্যুতদের চাকুরি ফিরিয়ে দিতে এবং ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের দাবি জানান।’
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণে সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনকে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার প্রতি বছর এই দিনে উল্লাস করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে নামে-বেনামে অনুষ্ঠান করেছে। কারণ পিলখানা হত্যাকাণ্ড জনগণের মন থেকে মুছে দিতে পারলে তারা এই হত্যাকাণ্ড দায় থেকে রেহাই পেয়ে যাবে। কিন্তু রেহাই পাওয়া যাবে না। পিলখানা হত্যাকাণ্ডসহ প্রতিটি হত্যার বিচার করতে হবে এটা শুধু জামায়াতে ইসলামীর দাবি নয় এটা পুরো জাতির দাবি। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘যারা বলে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে দেয়া হবে না প্রয়োজনে তারা জীবন দিবে! তারা যদি ক্ষমতা লোভী না হতো তাহলে তারা আগে গণহত্যা জন্য আগে শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হতো। আমাদের সকলকে হাসিনার ফাঁসি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।’
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘২০০১ সালের ১৫, ১৬, ১৮ এপ্রিল আমাদের বিডিআর সদস্যরা ভারতীয় বিএসএফ বাহিনীর দখলদারিত্বের যেই উপযুক্ত জবাব দিয়েছে সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে আওয়ামী সরকারের কাঁধে ভর করে ভারত সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে হাসিনাকে নিদের্শ দিয়েছে। হাসিনা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে ভারতের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে দেশপ্রেমিক ৫৭ জন সেনা-কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে। জামায়াতে ইসলামী পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরপরই এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই দাবি অব্যাহত থাকবে।’
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আরেক সহকারী সেক্রেটারি শামসুর রহমান বলেন, ‘পিলখানার হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত। আমাদের চারদিকে যেই রাষ্ট্রটি রয়েছে তারা কখনো চায় না বাংলাদেশের জনগণ শান্তিতে থাকে। তারা আমাদের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত আনতে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার শর্তে আওয়ামী লীগকে দিয়ে পিলখানা হত্যাকাণ্ড চালিয়ে দেশপ্রেমিক ৫৭ জন সেনকর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার কিছু দিনের মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনা-কর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা এক ঢিলে পাঁচ পাখি মেরেছে। প্রথমত ৫৭ জন চৌকস সেনা-কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে, দ্বিতীয়ত চৌকস দেশপ্রেমিক সেনা-কর্মকর্তাদের হত্যা করার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে চেয়েছে, তৃতীয় শেখ হাসিনা পিতা হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করেছে, চতুর্থত বিডিআরকে নিঃস্ব করেছে, পঞ্চমত বিডিআরকে নিঃশেষ করে নতুন বাহিনী গঠন করে তাদের নতজানু বাহিনী সৃষ্টি করেছে। এতে ভারতের আধিপত্যবাদ বিস্তারের পথ সুগম করেছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর ইতোপূর্বে যেই তদন্ত করা হয়েছে সেই তদন্ত একতরফা এবং নিজেদের মনগড়া তদন্ত। নতুন করে তদন্তে গঠিত কমিশনের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনার বিচার করতে হবে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় এ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বারের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, পল্টন থানা আমীর শাহিন আহমেদ খান প্রমুখ।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য যথাক্রমে সৈয়দ সিরাজুল হক, শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমীর শরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগীয় সহকারী সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন প্রমুখ।
বিজ্ঞপ্তি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা