ছাত্ররাজনীতি একজন শিক্ষার্থীর প্রাপ্য গণতান্ত্রিক অধিকার : ছাত্রদল সভাপতি
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৪০

‘ছাত্ররাজনীতি একজন শিক্ষার্থীর প্রাপ্য গণতান্ত্রিক অধিকার’ মন্তব্য করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ নম্বর ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর)-এর ধারা নম্বর ১৯, ২১ ও ২২ অনুসারে বাকস্বাধীনতার চর্চা ও সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করা বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থীর স্বীকৃত অধিকার। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের সেই ন্যায়সংগত অধিকারের কথা বলে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ক্রীড়া কক্ষে ছাত্রদল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জাম শিপন, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকসহ ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির।
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল হাসান রাকিব বলেন, ‘খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) একটি চরম অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। পাল্টাপাল্টি হামলায় মারাত্মকভাবে হতাহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সর্বপ্রথমে আহতদের শিগগিরই সুস্থতা কামনা করার সাথে সাথে উক্ত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এসব ন্যাক্কারজনক হামলায় ও হামলার উস্কানিতে জড়িত যেই হোক না কেন, সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক তাদের সকলকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ নম্বর ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর)-এর ধারা নম্বর ১৯, ২১ ও ২২ অনুসারে বাকস্বাধীনতার চর্চা ও সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণ করা বাংলাদেশের সকল শিক্ষার্থীর স্বীকৃত অধিকার। সেটি সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতার কারণে বর্তমানে ফ্যাসিবাদ ও দখলদারিত্বের চর্চা যখন অসম্ভব। ঠিক তখনই সেই ফ্যাসিবাদ ও দখলদারিত্বের সংস্কৃতির ধারক-বাহক গুপ্ত ও নিষিদ্ধ সংগঠন শিবির ও ছাত্রলীগ সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত ও অবৈধ উপায়ে ক্যাম্পাসসমূহে সাধারণ শিক্ষার্থীর বেশ ধরে গণতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করে ক্যাম্পাসসমূহে নিজেদের অঘোষিত দখলদারিত্ব জারি রাখার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।’
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের পরাজিত শক্তি এবং ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী সময়ে যারা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের সহযোগী হিসেবে তাদের সকল অপকর্মের বৈধতা প্রদানে ভূমিকা রেখেছিল সেইসব শিক্ষার্থী নামধারী অপশক্তি বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গোপনে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক চর্চায় বাধাগ্রস্ত করে মব সংস্কৃতির মাধ্যমে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি করছে এবং নাগরিক হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকে অতীতের ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো অগণতান্ত্রিক আচরণের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে।’
ঘটনার ছাত্রদলের সম্পৃক্ততার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম, সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী পর্যবেক্ষণ করে জানা গেছে, সহিংসতায় ছাত্রদলের উক্ত সমর্থকেরা কেবলমাত্র ভুক্তভোগী হিসেবে জড়িত ছিলেন। তাদের তিনজনই কুয়েটের সম্মান কোর্সের নিয়মিত শিক্ষার্থী। যেহেতু কুয়েটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কোনো কমিটি গঠিত হয়নি, এবং এখনো পর্যন্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে সদস্য ফরম পূরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি, সেহেতু তারা তিনজন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নিবন্ধিত কর্মীও নন। তাই তাদেরকে কেন্দ্র করে ঘটা কোনো ঘটনাকে ‘ছাত্রদলের হামলা’ শীর্ষক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা সর্বৈবভাবে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি কাজ। আবার এসব ঘটনা চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে কোনোরূপ তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই স্থানীয় জনতার সাথে কুয়েট শিক্ষার্থীদের এই ন্যাক্কারজনক সহিংসতাকে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ছাত্রদলের হামলা’ বলে পুরো ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সময়ের সাথে যত বেশি তথ্য উন্মোচিত হচ্ছে, তত আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনাটির প্রকৃত সত্য রূপ যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা হতে সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন।’
সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশে যারা আত্মপ্রকাশ করতে ভয় পেয়েছে, তারা ছাত্রদলের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা যদি হামলা না করতো এমন সঙ্ঘাত কখনোই হতো না। পরে গ্রামবাসীর সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ছাত্রদলের নামে মব সৃষ্টি করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে চাওয়া ফ্যাসিবাদী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। ছাত্রদের রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নিতে চাওয়া অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। প্রকাশ্য রাজনীতি করার অধিকার সকলের রয়েছে। কুয়েটে ছাত্রদল প্রকাশ্য রাজনীতি চর্চা করতে চায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশে রাজনীতি করার সুযোগ দিলে যেকোনো ধরনের সঙ্ঘাত এড়ানো সম্ভব। কথিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে গোপন সংগঠন এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের আড়ালে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করা হলে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস হবে এবং শুধু বাংলাদেশবিরোধী গোপন নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর তৎপরতা বাড়বে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা