১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ শাবান ১৪৪৬
`

আবু সাঈদকে প্রাণঘাতী ধাতব গুলি ব্যবহার করে হত্যা করা হয়েছে : জাতিসঙ্ঘ প্রতিবেদন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রথম শহিদ আবু সাঈদ - ফাইল ছবি

জাতিসঙ্ঘের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রাণঘাতী ধাতব গুলিতে শহীদ এবং তিনি ইচ্ছাকৃত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সঠিক ময়নাতদন্ত না হওয়া সত্ত্বেও নথিপত্র অনুযায়ী ক্ষত এবং সম্পর্কিত ভিডিও ফুটেজ এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে যে আবু সাঈদকে কমপক্ষে দু’টি প্রাণঘাতী ধাতব গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবু সাঈদ পুলিশের ইচ্ছাকৃত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।

মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয় বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ‘বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের বিক্ষোভের সাথে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন’ শীর্ষক একটি তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

আবু সাঈদ (২৩) পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন। সাঈদ তার পরিবারের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি শুরু থেকেই কোটা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।

গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে হাজার হাজার স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিক্ষোভ দেখায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী জড়ো হওয়ার ফলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

ওএইচসিএইচআর-কে দেয়া পুলিশের নিজস্ব প্রতিবেদন অনুসারে, বিক্ষোভকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) সমর্থক ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় এবং পুলিশ ‘শিক্ষার্থী ও জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য টিয়ার গ্যাস শেল ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ শুরু করে।’

জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশ বিশেষভাবে আবু সাঈদের বিষয়ে আরো বলেছে, তিনি গুরুতর আহত হন এবং পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘মাথায় আঘাত লাগা ও গুলিবিদ্ধ’ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য ও ঘটনার ধারাবাহিক শিকার ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও ভিডিওর ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআরের এটা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে তার হত্যাকাণ্ডে পুলিশ সরাসরি সম্পৃক্ত ও দায়ী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগ সমর্থকদের সহযোগিতায় পুলিশ লাঠি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আবু সাঈদও মারধরের শিকার হন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও শটগান থেকে প্রাণঘাতী ধাতব গুলি ছুঁড়ে। গুলিবর্ষণে বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়, যার মধ্যে একজন বিক্ষোভকারী আংশিকভাবে অন্ধ হয়ে যায়।

পুলিশ যখন জনতার ওপর গুলি চালাতে শুরু করে তখন আবু সাঈদ তার হাত ওপরে তুলে ধরেন। ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, এক হাতে বাঁশের খুঁটি ধরে থাকা অবস্থায় তিনি প্রায় ১৪-১৫ মিটার দূরে অবস্থানরত পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য কোনো হুমকি হয়ে দাঁড়াননি।

ওএইচসিএইচআরের সাথে সাক্ষাৎকার দেয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, যখন তিনি পুলিশকে চিৎকার করে বলেন, ‘আমাকে গুলি করো’, তখন দুই পুলিশ অফিসার তাকে প্রাণঘাতী ধাতব গুলি ভর্তি শটগান দিয়ে সরাসরি তার দেহ লক্ষ্য করে একাধিকবার গুলি করে।

ওএইচসিএইচআর ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবি পরীক্ষা করেছে এবং সাক্ষ্য প্রমাণের সত্যতা নিশ্চিত করতে ও হত্যাকাণ্ড কিভাবে ঘটেছে তা অনুধাবন করতে ডিজিটাল ফরেনসিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে একজন চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, গুলি আবু সাঈদের ফুসফুসে প্রবেশ করার কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছিল। ওএইচসিএইচআরের ফরেনসিক চিকিৎসক আবু সাঈদের বিষয়ে প্রাপ্ত মেডিক্যাল রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখেন যে আন্তর্জাতিক ফরেনসিক মান অনুসারে যথাযথ ময়নাতদন্ত করা হয়নি।

‘চিকিৎসক লাশের ছবিসহ মেডিক্যাল প্রমাণ পরীক্ষা করে শটগানের ক্ষত পেয়েছেন। তার বুকের ডানদিকে কমপক্ষে ৪০টি ধাতব গুলি এবং বাম দিকে ৫০টি গুলি বিদ্ধ হয়েছে। যার মধ্যে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও পেটের চারপাশের অংশ রয়েছে।’

জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আঘাতের ধরন ও বিস্তার অনুযায়ী আবু সাঈদকে প্রায় ১৪ মিটার দূর থেকে প্রাণঘাতী ধাতব গুলি ভর্তি শটগান দিয়ে কমপক্ষে দুইবার গুলি করা হয়েছিল।’

ভিডিও ফুটেজের ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আবু সাঈদকে গুলি করার ফলে তার ঘাড়, বুক ও বাহু থেকে দৃশ্যমান রক্তপাত হচ্ছিল। তারপরে হাইপোভোলেমিয়া ও মাথা ঘোরার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল।

প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্লেষণে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় আবু সাঈদের মাথা মাটিতে পড়ে আঘাত পাওয়ার মতো মাথায় এমন কোনো গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি যা তার মৃত্যুর বিকল্প কারণ হতে পারে।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
রামুতে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে তারেক রহমানের বাণী চবি শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ১২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার তিন ঘণ্টা পর খাগড়াছড়ি কারাগারের জেলারকে উদ্ধার, দায়িত্ব হস্তান্তর চট্টগ্রামের সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ডে ৩০ টন লোহার স্ক্র্যাপসহ ২৮ দুষ্কৃতিকারী আটক ইসলামী শাসন ব্যবস্থাই জাতিগঠনের একমাত্র পথ : প্রফেসর আসাদুল্লাহ ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তার অপপ্রচার মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে’ খালেদা জিয়া রোজার ঈদের পরে দেশে ফিরতে পারেন ‘বিশেষ কম্বিং অপারেশন’-এ বাংলাদেশ নৌবাহিনী যুদ্ধজাহাজ আখতার উদ্দিন ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ বিএনপি আ’লীগ থেকে কতটা আলাদা

সকল