১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ শাবান ১৪৪৬
`

জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার ছাড়া গণতন্ত্র ব্যর্থ হবে : দুদু

বক্তব্য রাখছেন দুদু - ছবি : নয়া দিগন্ত

জনগণের ম্যান্ডেডপ্রাপ্ত সরকার ছাড়া গণতন্ত্র ব্যর্থ হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, সেজন্য আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। গণতন্ত্রের উত্তরণের জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ছাত্র জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ও যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুদু বলেন, দেশে একটা ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে। ফ্যাসিবাদের গ্রাস থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে। এত বড় একটা পরিবর্তনের পরেও বাংলাদেশের মানুষ আশায় বুকে বেঁধেছিল, তাদের জীবন ধারণের জন্য অন্তত গত সরকারের আমলের তুলনায় এবার অনেক ভালো থাকবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুরুতেই দ্রব্যমূল্যের দাম একটু কমের দিকে গেলেও পরে বেড়ে যায়। মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা যে সঠিক দাম পাওয়ার প্রত্যাশা করেছে, সেটির ধারেকাছেও তারা যেতে পারেনি। এ দেশের কৃষক শ্রমিক সবসময় অবহেলিত থেকেছে এবং নিমর্মতার স্বীকার হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি গরিব মানুষের দল। বিএনপি খেটে খাওয়া মানুষের দল। কামার, কুমার, কুলি, মজুরের মতো মধ্যবিত্তেরও দল। সব শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে বিএনপি। সেই বিএনপি আজকে এ সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানালো। কিন্তু সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ছয় মাস চলে যাওয়ার পরেও ব্যর্থ হয়েছে বলে সবাই মনে করছে। এ সরকার বাজারদর এখনো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারেনি।

এ সময় সরকার দেশের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমরা শুরুতেই বলেছিলাম, সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন। বর্তমান সরকার তার সমর্থনকে কাজে লাগানোর যে দক্ষতার দরকার ছিল, সেটা তারা করতে পারেনি। কিন্তু এ সরকারকে এখন পর্যন্ত আমরা সমর্থন করি। এ সরকারের সমালোচনা করি সঠিক পথে থাকার জন্য। হয়তো তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অসন্তুষ্ট হতে পারে। কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো ছাড়া কোনো পথ নেই। কারণ, তারা যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এর অংশীদার আমাদেরকেও হতে হবে। সরকারের সমালোচনার কারণ হলো, তারা যেন সফল হয়। এ সরকারকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে চাই না।

ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, দেশের মধ্যে এক ধরনের নির্বাচনের আমেজ তৈরি হতে যাচ্ছে। সেই জায়গায় কিছু কিছু রাজনৈতিক দল প্রয়োজনীয় সংস্কার নয়, সংস্কার করে নির্বাচনের কথা বলছেন। বলতেই পারে! সকল রাজনৈতিক দল তো স্বাধীন। সকল রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কর্মসূচি আছে। তারা যদি মনে করে যে এই সরকারের সংস্কার দরকার, সেই কথা তারা বলতে পারে। আমার কাছে মনে হয়, নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিয়ে সংস্কার করতে পারে। জনগণের ম্যান্ডেডপ্রাপ্ত সরকার যদি কেউ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে গণতন্ত্র গ্রহণ করতে তারা ব্যর্থ হবে। সেজন্য আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরো বলেন, যদি নির্বাচন পরিত্যাগ করে, নির্বাচন গ্রহণ না করে, তাহলে তো তিন বছর, চার বছর, পাঁচ বছর পরপর গণঅভ্যুত্থান করতে হবে। আর আরেকটা হলো সামরিক অভ্যুত্থান। সেজন্য আমরা নির্বাচনের কথা বলেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যারা নির্বাচনের বিষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন, নির্বাচনের স্রোতে আসেন, জনগণের পাশে দাঁড়ান। ভয়-ভীতি সন্দেহ রেখে যদি সময় বিলম্বিত করেন; তবে পার্শ্ববর্তী দেশে বসে থাকা ফ্যাসিস্ট শক্তি পাবে, আরো বেশি উৎসাহিত হবে।

আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা এম নাজমুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সভাপতি সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ-তথ্যবিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, মৎস্যজীবী দলের সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী, জাতীয়তাবাদী চালক দলের সভাপতি জসিম উদ্দিন কবিরসহ প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement