০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ৭ শাবান ১৪৪৬
`

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

- ছবি : সংগৃহীত

দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়ে এই বৈঠক শেষ হয় দুপুর ১টায়।

বৈঠকে অংশ নেয়া সবাই গুলশান কার্যালয়ে বসেন ও তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

দলীয় সূত্র জানায়, বুধ ও বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘর-বাড়ি, স্থাপনা ও নামফলক ভেঙ্গে ফেলার ঘটনায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দলের করণীয় নির্ধারণে লন্ডন সময় ভোর সাড়ে ৫টায় দলের নীতিনির্ধারকদের সাথে জরুরি বৈঠকে বসেন তারেক রহমান। সাধারণত প্রতি সোমবার লন্ডন সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়) স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে বৈঠক করেন তিনি।

বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস (অনলাইনে), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ডক্টর আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (অনলাইনে), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (অনলাইনে), সালাউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (অনলাইনে), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন (অনলাইনে)।

বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘দেশের চলমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। বর্তমান অবস্থায় আমরা বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় অবস্থান জানিয়েছি। আরো যেসব সিদ্ধান্ত সেগুলো সামনে আসবে।’

এদিকে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিতে বিএনপি একটি বিবৃতি দিয়েছে।

বিবৃতিতে বিএনপি জানিয়েছে, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উস্কানিমূলক আচরণ, জুলাই আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতিতে গতকাল বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙ্গে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।’

বিএনপি উল্লেখ করেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ছয় মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে। অথচ জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল, দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানান ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে যখন তখন সড়কে ‘মব কালচারের’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারদের রাষ্ট্রীয় সহযোগীতা এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, নিন্দিত ঘৃণিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, পরাজিত ফ্যাসিস্টদের উস্কানিমূলক তৎপরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অতি জরুরি অগ্রাধিকার, অথচ এসব বিষয়ে দৃশ্যমান এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। এখনো প্রশাসনকে পতিত ফ্যাসিস্ট শাসকের দোসরমুক্ত করা হয়নি, বিচার বিভাগে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিদ্যমান, পুলিশ প্রশাসনে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনো কর্মরত। এমতাবস্থায় সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে।

বিএনপির বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা জরুরি, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা গায়েবি মামলার কোনো সুরাহা এখনো হয়নি। গণতন্ত্রকামী জনগণ ফ্যাসিবাদী আমলের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় এখনো হয়রানির শিকার হচ্ছে, অথচ এ বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখেনি।

বিএনপি জানায়, জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথা শিগগির সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। অথচ জন-আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেরাই এই অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

দলটি দাবি করে, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচারের স্মৃতিচিহ্ন নিশ্চিহ্ন কিংবা নির্মূলের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন নিহিত নয়, বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আদর্শিক চিন্তা, শক্তি ও প্রভাবের আদর্শিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঐক্যকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়া এবং জাতীয় ঐক্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চাই উত্তমপন্থা। জনগণের মধ্যে এই ধরনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে আমাদের সকলেরই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’

তাদের মতে, ‘বিএনপির উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সরকার উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্রবিরোধী দেশী-বিদেশী অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, যার উপসর্গ ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপি আহ্বান জানায়, ‘পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায় দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। সুতরাং কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি।’


আরো সংবাদ



premium cement
আশুলিয়ায় জুমার খুতবায় হেদায়েতের যে উপায় বললেন সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টা শাওন ও সাবাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিলো ডিবি প্রয়োজনে নতুন আইন করে আ’লীগের নেতাকর্মীদের বিচারের আহ্বান টসে জিতে চিটাগংকে ব্যাটিংয়ে পাঠালো বরিশাল অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বব্যাপী কতটুকু সমর্থন পেল পরাধীনতার কারণেই দেশের মানুষ দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছে : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ‘ফেব্রুয়ারিতেই জুলাই গণহত্যা মামলার একাধিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হবে’ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে মালিক-শ্রমিক ঐক্য গড়তে হবে : মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হাসিনা বা আ'লীগের কারো সম্পত্তিতে হামলা না করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার আমিরাতে ক্ষমা পাওয়া সেই প্রবাসীদের আল্টিমেটাম

সকল