ধানমন্ডির ঘটনা নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম যা বলছে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:১৭
কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলা সংবাদপত্র 'আনন্দবাজার পত্রিকা', 'এই সময়', 'বর্তমান' থেকে শুরু করে ইংরেজি সংবাদপত্র 'দ্য টেলিগ্রাফ', 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এ বাংলাদেশের বুধবার রাতের ঘটনাবলীর বিষয়ে প্রতিবেদন রয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের তত্ত্বাবধানে 'ভেঙেপড়া' আইন পরিস্থিতির বিষয়ে যেমন বলা হয়েছে, তেমনই উল্লেখ করা হয়েছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ওই ভবনটির স্মৃতি-বিজড়িত ঐতিহ্যের কথাও।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ঠিক ছয় মাস আগে আগস্টের ৫ তারিখ সন্ধ্যায় আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল ঢাকায় ৩২ নম্বর রোডে শেখ মুজিবুর রহমানের বসতবাড়িটি। টিকেছিল কংক্রিটের কাঠামোটুকু।’
অর্ধেক বছর পরে আচমকা কর্মসূচি নিয়ে সেই কাঠামো ক্রেন, ড্রিল ও ভ্যাকুয়াম মেশিন দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিলো 'ছাত্র-জনতা’।
অন্যদিকে, বুধবার রাতের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে 'দ্য টেলিগ্রাফ'-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির কথা।
'দ্য টেলিগ্রাফ'-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের নৈরাজ্যের পরিস্থিতির কথা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় যখন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকাস্থিত ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে একদল মানুষ সহিংস হামলা চালান।’
‘মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে 'শিক্ষা' হাসিনাকে’
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় ধানমন্ডির ঘটনা সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তার শিরোনাম- মুজিবের বাড়ি গুঁড়িয়ে 'শিক্ষা' হাসিনাকে।
প্রথম দুই অনুচ্ছেদে ঘটনার বিবরণের পর ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘গোটা দেশ সেই ধ্বংসযজ্ঞের টাটকা সম্প্রচার যখন অবাক চোখে দেখছে’।
‘এই ধ্বংসযজ্ঞ চলার সময়ে, দেশছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগের কর্মীদের উদ্দেশে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় বলছেন, ধানমন্ডির এই ছোট্ট বাড়িটি আমার মা তিলে তিলে অর্থ সঞ্চয় করে গড়েছিলেন। এই বাড়ি থেকেই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।’
‘রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পরেও বাবা এই বাড়িতেই থেকে গিয়েছিলেন। কত রাষ্ট্রপ্রধান এই বাড়িতে পদার্পণ করেছেন। বিশ্বাসঘাতকেরা এই বাড়িতেই বাবা-মাসহ গোটা পরিবারকে হত্যা করেছে।’
‘আজ এই বাড়ি গুঁড়িয়ে শুধু আমাদের দুই বোনের স্মৃতিকে ধ্বংস করা হলো না, বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি প্রামাণ্য দলিলকে নষ্ট করল ইউনূসের বাহিনী।’
‘নতুন বাংলাদেশ! গুঁড়িয়ে দেয়া হলো বঙ্গবন্ধুর বাড়ি’
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঘটনা নিয়ে বাংলা সংবাদপত্র বর্তমানের প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তার শিরোনাম, 'নতুন বাংলাদেশ! গুঁড়িয়ে দেয়া হলো বঙ্গবন্ধুর বাড়ি'।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে...', মধ্যরাতে স্লোগান তুলল 'নতুন' বাংলাদেশ। 'বুলডোজার মিছিল' করে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো ৩২, ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন। শেখ হাসিনা তখন দিল্লিতে বসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বার্তা দিচ্ছেন সমর্থকদের।’
‘বাংলাদেশে হাসিনা সরকার পতনের ছ’মাস পূর্তির দিনেই ঢাকায় মৌলবাদী নিশানায় শেখ মুজিবুর রহমান। তার দেশত্যাগের পরই বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়েছিল 'বিপ্লবী ছাত্র-জনতা।’ বুধবার, ফের তাদের আক্রোশ আছড়ে পড়ল ওই বাড়িতে।’
একইসাথে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কিভাবে আরো একবার 'অশান্ত' হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
'ঢাকায় তাণ্ডব মুজিব-ঘরে, অ্যাকশনে বুলডোজারও'
বাংলা সংবাদপত্র 'এই সময়'-এর প্রথম পাতার অ্যাঙ্কর পোজিশনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘ফের নিশানায় ৩২ নম্বর ধানমন্ডি! বাংলাদেশে আবারো প্রবল জনরোষ আছড়ে পড়ল বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি-বিজড়িত বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুরের পর উত্তেজিত জনতার একাংশ আগুনও লাগিয়ে দিলো বাড়ির দ্বিতীয় তলার একাংশে। গভীর রাতে অ্যাকশনে নামল বুলডোজারও। পরপর দেওয়াল-পিলার গুঁড়িয়ে গেল নিমেষে।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, উপস্থিত থাকলেও 'নীরব দর্শক'-এর ভূমিকা নেয় সেনা-পুলিশ। তার মধ্যেই উত্তাল স্লোগান- 'জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে'। একইসাথে ওঠে ‘জুলাই বিপ্লবে গণহত্যার দায়ে’ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিও!’
'হাসিনার অনলাইন বক্তৃতার সময় মুজিবুরের বাড়িতে আগুন দিলো বিক্ষোভকারীরা'
ইংরেজি সংবাদপত্র 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর ১২ পাতায়, 'প্রোটেস্টার্স টর্চ হোম অফ মুজিবুর ডিউরিং হাসিনাস অনলাইন স্পিচ' প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘বিক্ষোভকারীদের একটি বড় দল বুধবার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঢাকাস্থিত বাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং আগুল ধরিয়ে দেয় যে সময় তার কন্যা, পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনলাইনে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।’
‘প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রাজধানীর ধানমন্ডি যা স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, সেই অঞ্চলে সন্ধ্যা থেকে জড়ো হতে শুরু করেন। এর নেপথ্যে ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহ্বান জানানো ‘বুলডোজার প্রসেশন’ যার আয়োজন করা হয়েছিল রাত ৯টার সময় শেখ হাসিনার বক্তৃতার বিরুদ্ধে।’
‘আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন, যা এখন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেই ছাত্রলীগের আয়োজনে হাসিনা ভাষণ দেন এবং সেখানে জাতিকে বর্তমান শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।’
শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের সময়ই ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগ।
তার ভাষণের একটি অংশ উল্লেখ করে 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘হাসিনা বলেছেন, জাতীয় পতাকা, সংবিধান এবং লাখ লাখ মানুষ শহীদ হওয়ার মূল্য দিয়ে অর্জন করা স্বাধীনতাকে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার সাহস জোটাতে ওদের দম লাগবে।’
'মুজিবের বাড়িতে হামলা'
'দ্য টেলিগ্রাফ' সংবাদপত্রের দ্বিতীয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম, 'মুজিব হোম অ্যাটাকড’ যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায়, 'মুজিবের বাড়িতে হামলা'।
প্রতিবেদনের শুরুতেই বুধবার রাতের ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘বাংলাদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, কিছু হামলাকারী যাদের মধ্যে বেশিভাগই যুবক ছিলেন, ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক ও ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে বিবেচিত ওই ভবনের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে, পুরো বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার আগে ভবনে থাকা একটি স্মৃতিসৌধ ভাঙচুর করে।’
‘এটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান... মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের এক শ্রেণির মানুষের হাত থেকে দেশটিকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে, যারা বাংলাদেশের ইতিহাস মুছে ফেলতে চায়। এই ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করার জন্য বাংলাদেশ একটি উপযুক্ত জায়গা,’ বলেছেন, ব্যারিস্টার তানিয়া আমির।
প্রতিবেদনে ওই ভবনের বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ করা হয়েছে, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনা অভ্যুত্থানের সময়, রহমানকে তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ এই বাড়িতেই হত্যা করা হয়েছিল। যার পর প্রায় ১৬ বছর দেশ শাসন করে সেনা স্বৈরশাসকরা।’
ঘটনা প্রসঙ্গে 'দ্য টেলিগ্রাফ' বাংলাদেশের সাংবাদিকের মন্তব্য উল্লেখ করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের এক প্রবীণ সাংবাদিক বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে এই বাড়িটিকে জাদুঘরে পরিণত করেছিলেন। আওয়ামী লীগ নিজেদের নতুন করে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে, এ কারণেই তাদের বিরোধী শক্তি বেকায়দায় পড়ছে। ক্ষমতাসীনরা যে ভীত, এই হামলা তারই প্রমাণ।’
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা