খুনের বিচার না হলে খুনের সংস্কৃতি চলতেই থাকবে : জামায়াত আমির
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:১৮, আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:২০
‘খুনের বিচার না হলে খুনের সংস্কৃতি চলতেই থাকবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা সব খুনের ন্যায় বিচার চাই। এ বিচার না হলে খুনের সংস্কৃতি চলতে থাকবে। খুনিরা আরো উৎসাহিত হবে। আমরা আশা করি, এই সব খুনের সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে সুন্দর সমাধান হবে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিরপুরের দক্ষিণ মনিপুরে জামায়াতে ইসলামী মিরপুর পূর্ব থানা আয়োজিত বিশিষ্ট নাগরিকদের সাথে জামায়াতে ইসলামীর মতবিনিময় এবং বায়তুস সালাম জামে মসজিদে এশার নামাজের পর মুসল্লিদের সাথে মতবিনিময়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘আল্লাহ কাউকে জোর করে হেদায়েত দেন না। হেদায়েতের জন্য কাঙ্গাল হয়ে আল্লাহর কাছে চাইতে হয়। সেভাবে যদি কেউ চায় আল্লাহ তাকে হেদায়েত করেন।’
বিশিষ্টজনের সাথে বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা এটা ধারণা করি যুদ্ধ আমাদের শেষ হয়নি। আমাদের আরো অনেক যুদ্ধ বাকি আছে। আমাদের শাহাদাতের পেয়ালা পান করা শেষ হয়নি। শুরু হলো। আমাদের ত্যাগ-কুরবানির যাত্রা শুরু হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল না। তারা অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে গদিতে থাকার জন্য যা ইচ্ছা তাই করেছে। তাই তাদের বিদায়টাও মোটেই সম্মানজনক হয়নি। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় এমন লজ্জাজনক বিদায় অতীতে কারোরই হয়নি। আর যারা এভাবে একবার বিদায় নিয়েছে তারা আর কখনোই দৃশ্যপটে ফিরে আসতে পারেনি বরং তাদেরকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের পতিত স্বৈরাচার আবারো ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিচ্ছে। নানাভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের দাবি ছিল খুবই যৌক্তিক। কিন্তু তারা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে সমাধান করতে চায়নি বরং রাষ্ট্রীয় শক্তির অপব্যবহার করে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। মূলত, তারা অতি ছোট দাবিকে উপেক্ষা করতেই হাজার হাজার মানুষ খুন করে নির্মম পাশবিকতার পরিচয় দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা শুধু আবু সাঈদ বা মুগ্ধের মতো ছাত্রদের নয় বরং সকল শ্রেণি ও মানুষের ওপর নির্মমভাবে গুলি চালিয়েছে। তাদের জিঘাংসা থেকে রেহাই পায়নি নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও। মায়ের কোলে দুগ্ধজাত সন্তানও নিরাপদ ছিল না। এরপরও ফ্যাসিবাদীরা ক্ষমতায় দিবাস্বপ্নে বিভোর। কিন্তু জনগণ তাদেরকে সে সুযোগ কখনো দেবে না বরং যেকোনো মূল্যে দেশে ফ্যাসিবাদী অপতৎপরতা ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী অপশাসন-দুঃশাসনে রাষ্ট্রের সকল সেক্টর ধ্বংস করা হয়েছে। তারা ব্যাংক-বিমাসহ অর্থনৈতিক সকল প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। মূলত, তারা জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের কথা বলে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে নিয়েছেন। জনগণ তাদের এমন অপশাসন ও দুঃশাসনে ফিরতে চায় না।’
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘নিজেদের অতীতের দিকে তাকান। ভালো করলে জনগণ আপনাদেরকে আবারো বেছে নেবেন। অন্যথায় অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করবে। তিনি জনগণকে আস্থায় নিয়ে রাজনীতিবিদদের রাজনীতি করার আহ্বান জানান। তাহলেই জনগণকে আপনাদেরকে সাদরে গ্রহণ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘মিরপুরের এই মাটিতে শহীদ মীর কাসেম আলী ক্ষুধা, দারিদ্র্য মুক্ত ইনসাফ ও কল্যাণমূলক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে তাকে বিচারে নামে অবিচার করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। এর বিচার এই বাংলার মাটিতে হবে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আর অতীতের বর্বর শাসন ব্যবস্থার কাছে ফিরে যেতে চায় না। মানুষ এখন মুক্তি চায়। ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, সকল প্রকার জুলুম ও নিপীড়নমুক্ত, চাঁদাবাজ দখলবাজ টেন্ডারমুক্ত আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চাই। আমরা জনগণের সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
থানা আমির শাহ আলম তুহিনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ওয়াহিদুল ইসলাম সাদীর পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, মহানগরীর সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান ও ডা: ফখরুদ্দিন মানিক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা