০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১, ১ শাবান ১৪৪৬
`

‘ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান - ছবি : নয়া দিগন্ত

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান বলেছেন, বাংলাদেশ এখন যে ষড়যন্ত্রের জালের মধ্যে আটকে গেছে, সেই জাল ছিঁড়ে ফেলতে হবে। সেই জাল ছিঁড়তে হলে কঠিন এবং কঠোর রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রয়োজন। আর এই রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য মানুষের সমষ্টিগত একটি সরকার দরকার। সেই সরকার যদি আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তাহলে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মিরপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা স্কুল মাঠে মুক্তিযুদ্ধ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিষয়ক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মামুন হাসান বলেন, ‘মানুষ তার পছন্দের দলের প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে যেন ভোট দিতে পারে, এটিই হচ্ছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ। কোনো সরকারের পেছনে যদি জনগণ থাকে, দেশবাসী থাকে, তাহলে সেই সরকারের পক্ষে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব এবং সেটি কার্যকর করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘অর্ন্তবর্তী সরকার ও প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের খবর পাচ্ছি। নতুন দল নিয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই। তবে, রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে, প্রশাসনকে ব্যবহার করে কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে দেশবাসী মেনে নেবে না। রাজনৈতিক দল গঠন করতে হলে জনমত তৈরি করেন। কিন্তু আরেক দলকে কটাক্ষ করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটের চেষ্টা করা হলে আমরা বসে থাকব না। কঠোরভাবে জবাব দেয়া হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা জানতাম স্বৈরাচার পতন হবে। কিন্তু কোন তারিখে হবে সেটা নিশ্চিত না। সেই বিশ্বাস থেকে দেশের মানুষের সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছে বিএনপি। স্বৈরাচার যেভাবে দেশ ধ্বংস করে দিয়ে গেছে, সেই দেশকে মেরামত করতে হবে। দলের পক্ষ থেকে ৩১ দফায় যা যা বলা হয়েছে, সেই সবই বর্তমান সরকারের সংস্কার কমিশন রিপোর্ট আকারে জমা দিয়েছে। কিন্তু সরকার হিসেবে একটু এদিকে-ওদিকে বলার চেষ্টা করবেই। তবে মূল বিষয় আমাদের ৩১ দফার বাইরে নয়।’

মিরপুর ‘শত্রুমুক্ত’ হওয়ার ইতিহাস তুলে ধরে মামুন হাসান বলেন, ‘মিরপুরে মুক্ত দিবস আজ। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুর মুক্তকরণ যুদ্ধ সংগঠিত হয় ও পরদিন ৩১ জানুয়ারি সকালে রাজধানীর ঢাকার মিরপুর এলাকা মুক্ত হয়। মিরপুরের যুদ্ধে জিয়াউল হক লোদী, লেফটেন্যান্ট সেলিমসহ ৪১ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য, শতাধিক পুলিশ এবং মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২০০১ সালে জানুয়ারির ৩১ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মিরপুরে মুক্ত দিবস পালন করা হয়।’

জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক এই নেতা বলেন, ‘১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের একেবারে শেষ দিকের ঘটনা এটি। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানী এবং এ কে এম শফিউল্লাহ এক দিন দুপুরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। সেখানে তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়ন অবস্থান করছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন মইনুল হোসেন চৌধুরী। তিনি পরবর্তী সময়ে মেজর জেনারেল হিসেবে সামরিক বাহিনী থেকে অবসরগ্রহণ করেন এবং ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী তার ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক’ বইতে বর্ণনা করেন, ‘ওসমানী আমাকে বলেন, বিহারী, রাজাকার ও তাদের সহযোগীদের গ্রেফতারের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে যাবে। পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগীদের একটা লিস্টও তারা তৈরি করেছে। তিনি পুলিশকে সৈন্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেন। জেনারেল ওসমানীর আদেশ পেয়ে, তৎকালীন ক্যাপ্টেন হেলাল মোর্শেদের (পরে মেজর জেনারেল এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান) নেতৃত্বে সৈন্যদের মিরপুরে পাঠানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাসিন্দারা তখন বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা হলেও শহরের উপকণ্ঠে মিরপুর তখনো ‘স্বাধীন’ হয়নি। বিষয়টি তখন এরকম ছিল যে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই সেটিকে স্বাধীন বাংলাদেশে ‘এক টুকরো পাকিস্তান’ হিসেবে বর্ণনা করেন। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ারও অনেকদিন পরে ঢাকার উপকণ্ঠে মিরপুর ‘শত্রুমুক্ত’ হয়েছিল তীব্র এক যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি পুরো বাংলাদেশে গণহত্যা সংক্রান্ত যে গবেষণা চালায় তাতে, এটা প্রতীয়মান হয় যে, পুরো দেশে প্রায় পাঁচ হাজার ছোট বড় বধ্যভূমি রয়েছে। এর মধ্যে ৯২০টি বধ্যভূমিকে শনাক্ত করা গেছে পুরো দেশে। ঢাকায় শুধু মিরপুরে বধ্যভূমির সংখ্যা ২৩টি।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতির সামঞ্জস্য রেখেই মিরপুরের উন্নয়ন হবে। মিরপুরের মানুষের সুখে দুঃখের সাথী হয়ে থাকতে চাই। আপনাদের সবার সহযোগিতা আর পরামর্শ নিয়ে আগামীর মিরপুরকে সাজাতে চাই। আপনারা সব সময় আমার পাশে থাকবেন। আমাকে পাশে রাখবেন। আমি আপনাদের সেবায় নিয়োজিত।’

অনুষ্ঠানের আয়োজন করে টিম-১৩, সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন কাফরুল থানা যুবদলের সদস্য সচিব মো: হাফিজুল ইসলাম বাবু।


আরো সংবাদ



premium cement